মামলা রমনা থানায়
ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রক যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিায় ১৯৫ কোটি টাকা পাচার করেছেন। বিপুল পরিমাণ এ অর্থ পাচারের জন্য সম্রাট ও আরমান দেশের বাইরে ৪১ বার যাতায়াত করেছে। টাকা পাচারে সহযোগিতা করেছেন তার অন্যতম সহযোগী যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমান। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এদিকে অর্থ পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের এসআই মো. রাশেদুজ্জামান বাদী হয়ে গতকাল মামলা করেছে। মামলায় এনামুল হক আরমানকেও আসামি করা হয়েছে।
সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার জিসানুল হক জানান, ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসলাম চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠে। গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। দীর্ঘ অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে ১৯৫ কোটি টাকা সিঙ্গাপুর ও মালেয়শিয়ায় পাচারের সত্যতা পাওয়া যায়। এ পুরো টাকা সে যুবলীগের আরেক নেতা তার সহযোগী এনামুল হক আরমানের মাধ্যমে পাচার করেছে। অর্থ পাচারের জন্য সম্রাট ও আরমান সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, দুবাইতে ৪১ বার যাতায়াত করেছেন। অর্থ পাচারের অভিযোগে করা মামলা বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত কাকরাইলের মেসার্স হিল মুভিজে অবস্থান করে অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। বিদেশ গমনের নথিপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, সম্রাট ও আরমান দেশের বাইরে ৪১ বার গিয়েছে। এরমধ্যে সিঙ্গাপুরই গিয়েছে ৩৫ বার। এছাড়া মালয়েশিয়ায় ৩ বার, দুবাইয়ে ২ বার এবং হংকং ১ বার গিয়েছে। ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরেই ভ্রমণ করেছে ২৩ বার।
সিআইডি সূত্র জানায়, ইসলাম চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ৩টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এর বাইরে দেশের বাইরে অর্থ পাচারের অভিযোগে করা মামলাটি সিআইডি তদন্ত করবে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আকস্মিক উত্থান ঘটে যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের। যুবলীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতির পদ পায় ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতির পদ পাওয়ার পর বেপরোয় হয়ে পড়ে সম্রাট। রাজনৈতিক শীর্ষ নেতাদের মদদে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধ ক্যাসিনোব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোন অপকর্ম নেই যা সে করেনি। ঢাকা দক্ষিণের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য সম্রাট গড়ে তোলেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীও। মূলত ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সমাবেশে লোকজন দিয়ে নজরে আসে সম্রাট। সভা সমাবেশ সফল করতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সমাবেশে উপস্থিতি বাড়াতে সম্রাট টাকায় লোকজন ভাড়া করতো। এসব লোকজন সম্রাটের নামে স্লোগান দিয়ে সমাবেশে যোগ দিতো। এতে অনেকেই মনে করতো সম্রাট অনেক বেশি জনপ্রিয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঢাকা দক্ষিণের অফিস পাড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি শুরু করে সম্রাট বাহিনী। এমনকি আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের ভবন নির্মাণের সময়ও সম্রাটের লোকজন চাঁদা না পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। মতিঝিলসহ ঢাকা দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ক্লাবে জুয়া, মদ, ক্যাসিনোসহ নানা কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ নেয় সম্রাট।
গোয়েন্দ সূত্র জানায়, অবৈধ টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে সম্রাট। ক্ষমতাসীন দলের এক এমপির সঙ্গে সম্রাটের ঘনিষ্টতা ছিল। ওই এমপিকে নিয়ে ক্যাসিনো খেলতে সিঙ্গাপুরে যেতো সম্রাট। এক ঘণ্টায় সম্রাট ক্যাসিনো খেলে ৫০ কোটি টাকা হারিয়েছে। এভাবে যতবারই সিঙ্গাপুর, দুবাই, হংকং, ও মালয়েশিয়ায় যেতো ক্যাসিনো খেলায় অংশ নিতো সম্রাট। ক্যাসিনো খেলে শত কোটি টাকারও বেশি অর্থ খুইয়েছে সম্রাট।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, সম্রাট জেলে থাকলেও তার বাহিনীর অনেকেই এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। অনেকেই দেশের বাইরে আত্মগোপনে থেকে সম্রাটের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। সম্রাটের অন্যতম সহযোগী সাবেক কমিশনার মমিনুল হক সাঈদসহ অনেক নেতাই আত্মগোপনে আছে। এছাড়া অনেকেই আবার নতুনভাবে নতুন সম্রাট তৈরি করার মিশনে নেমেছে।
সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ২৪ মহররম ১৪৪২, ২৬ ভাদ্র ১৪২৭
মামলা রমনা থানায়
সাইফ বাবলু
ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রক যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিায় ১৯৫ কোটি টাকা পাচার করেছেন। বিপুল পরিমাণ এ অর্থ পাচারের জন্য সম্রাট ও আরমান দেশের বাইরে ৪১ বার যাতায়াত করেছে। টাকা পাচারে সহযোগিতা করেছেন তার অন্যতম সহযোগী যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমান। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এদিকে অর্থ পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের এসআই মো. রাশেদুজ্জামান বাদী হয়ে গতকাল মামলা করেছে। মামলায় এনামুল হক আরমানকেও আসামি করা হয়েছে।
সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার জিসানুল হক জানান, ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসলাম চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠে। গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। দীর্ঘ অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে ১৯৫ কোটি টাকা সিঙ্গাপুর ও মালেয়শিয়ায় পাচারের সত্যতা পাওয়া যায়। এ পুরো টাকা সে যুবলীগের আরেক নেতা তার সহযোগী এনামুল হক আরমানের মাধ্যমে পাচার করেছে। অর্থ পাচারের জন্য সম্রাট ও আরমান সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, দুবাইতে ৪১ বার যাতায়াত করেছেন। অর্থ পাচারের অভিযোগে করা মামলা বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত কাকরাইলের মেসার্স হিল মুভিজে অবস্থান করে অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। বিদেশ গমনের নথিপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, সম্রাট ও আরমান দেশের বাইরে ৪১ বার গিয়েছে। এরমধ্যে সিঙ্গাপুরই গিয়েছে ৩৫ বার। এছাড়া মালয়েশিয়ায় ৩ বার, দুবাইয়ে ২ বার এবং হংকং ১ বার গিয়েছে। ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরেই ভ্রমণ করেছে ২৩ বার।
সিআইডি সূত্র জানায়, ইসলাম চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ৩টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এর বাইরে দেশের বাইরে অর্থ পাচারের অভিযোগে করা মামলাটি সিআইডি তদন্ত করবে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আকস্মিক উত্থান ঘটে যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের। যুবলীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতির পদ পায় ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতির পদ পাওয়ার পর বেপরোয় হয়ে পড়ে সম্রাট। রাজনৈতিক শীর্ষ নেতাদের মদদে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধ ক্যাসিনোব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোন অপকর্ম নেই যা সে করেনি। ঢাকা দক্ষিণের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য সম্রাট গড়ে তোলেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীও। মূলত ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সমাবেশে লোকজন দিয়ে নজরে আসে সম্রাট। সভা সমাবেশ সফল করতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সমাবেশে উপস্থিতি বাড়াতে সম্রাট টাকায় লোকজন ভাড়া করতো। এসব লোকজন সম্রাটের নামে স্লোগান দিয়ে সমাবেশে যোগ দিতো। এতে অনেকেই মনে করতো সম্রাট অনেক বেশি জনপ্রিয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঢাকা দক্ষিণের অফিস পাড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি শুরু করে সম্রাট বাহিনী। এমনকি আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের ভবন নির্মাণের সময়ও সম্রাটের লোকজন চাঁদা না পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। মতিঝিলসহ ঢাকা দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ক্লাবে জুয়া, মদ, ক্যাসিনোসহ নানা কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ নেয় সম্রাট।
গোয়েন্দ সূত্র জানায়, অবৈধ টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে সম্রাট। ক্ষমতাসীন দলের এক এমপির সঙ্গে সম্রাটের ঘনিষ্টতা ছিল। ওই এমপিকে নিয়ে ক্যাসিনো খেলতে সিঙ্গাপুরে যেতো সম্রাট। এক ঘণ্টায় সম্রাট ক্যাসিনো খেলে ৫০ কোটি টাকা হারিয়েছে। এভাবে যতবারই সিঙ্গাপুর, দুবাই, হংকং, ও মালয়েশিয়ায় যেতো ক্যাসিনো খেলায় অংশ নিতো সম্রাট। ক্যাসিনো খেলে শত কোটি টাকারও বেশি অর্থ খুইয়েছে সম্রাট।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, সম্রাট জেলে থাকলেও তার বাহিনীর অনেকেই এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। অনেকেই দেশের বাইরে আত্মগোপনে থেকে সম্রাটের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। সম্রাটের অন্যতম সহযোগী সাবেক কমিশনার মমিনুল হক সাঈদসহ অনেক নেতাই আত্মগোপনে আছে। এছাড়া অনেকেই আবার নতুনভাবে নতুন সম্রাট তৈরি করার মিশনে নেমেছে।