৪ কিমি. রাস্তার পিচ ৭ দিনেই উঠে যাচ্ছে, অসংখ্য ফাটল

নির্মাণের সাত দিনের মধ্যেই উঠে যাচ্ছে রাস্তার পিচ। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ডাকবাংলা পর্যন্ত মোট ২২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ ১৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রায় ৪ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। কিন্ত নির্মাণের ৭ দিনের মাথায় নির্মাণকৃত সড়কের অংশের পিচ উঠে যাচ্ছে। এছাড়াও নতুন সড়কেই অসংখ্য ফাঁটল দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর জন্য এটা হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, বৃষ্টির মধ্যে অল্প কিছু অংশে রাস্তার কাজ করার কারণে এমন হয়েছে। রাস্তা তৈরির তিন বছরের মধ্যে কোন ক্ষতি হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার দায়ভার বহন করবেন।

এদিকে সোমবার বিকালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বেশি ভেঙে যাওয়া অংশে পুনর্র্র্র্র্নির্মাণের জন্য শ্রমিক লাগিয়ে পিচ উঠিয়ে ফেলছেন। এলাকাবাসীর দাবি যতটুকু নির্মাণ করা হয়েছে সবটুকুই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। ফলে নির্মিত সম্পূর্ণ অংশটাই তুলে রাস্তাটি পুনরায় নির্মাণ করতে হবে।

সোমবার বিকেলে সরেজমিন গেলে দেখা যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে গান্না হয়ে ডাকবাংলা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তা মজবুতিসহ ওয়ারিং এর কাজ চলছে।

কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে পাকাকরণের জন্য কার্পেটিং বা বিচিকরণের কাজ শুরু করে ৪ থেকে ৫ দিনে ৪ কমপক্ষে কিলোমিটর কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু এরই মধ্যে সড়কের শ্রীরামপুর এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার অংশে রাস্তার পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এলাকবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে শ্রমিক লাগিয়ে বেশি খারাপ অংশের পিচ তুলে ফেলছেন। খুলনার মুজাহার ইন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পান। কিন্তু হাত বদল হয়ে রাস্তার কাজটি করছেন ঝিনাইদহের ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুম মিয়া।

এ রাস্তার জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৯ কোটি টাকা। টেন্ডার শেষে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের কাজ শুরু হয় তিন বছর আগে। রাস্তা খোড়া এবং ইট বালুর কাজ শেষ হয়েছে ছয় মাস আগেই।

এরপর সম্প্রতি শুরু করেছে কার্পেটিং এর কাজ। সড়কটির কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারনে এমটি হয়েছে। তবে সিডিউল অনুযায়ী সড়কে কাজ সম্পন্নের তিন বছরের মধ্যে কোন সমস্যা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুন:মেরামত করবেন। বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে রাস্তার সমস্যা হয়েছে। তবে কাজ শুরু হলে আগে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানের কাজ করা হবে।ওই গ্রামের বাসিন্দা আশানুর রহমান জানান, নির্মিত সড়টির বেশি খারাপ অংশটুকু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুনর্নির্মাণের কথা বলছেন। কিন্ত নির্মিত সবটুকু রাস্তা পুনর্নির্মাণ না করলে অল্প দিনের মধ্যেই এ সড়কটি আবার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তাহলে কয়দিন টিকবে জানি না। তিনি বলেন, নির্মিত প্রায় ৪ কিলোমিটারের মতো সমস্ত অংশটুকুই নিম্নমানের জিনিস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

ফলে সম্পূর্ণটাই তুলে ফেলতে হবে। এদিকে কাজের ঠিকাদার মিজানুর রহমান ওরফে মাসুম মিয়া রাস্তার কাজে কোন নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে না দাবি করে জানান, যেখানে রাস্তা উঠে যাচ্ছে, সেখানে টিউবওয়েলের পানি যায়। যে কারনে এমন হয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টির দিনে কাজ করায় এমনটি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তা পুনরায় করা হবে বলে যোগ করেন স্থানীয় এই ঠিকাদার।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্দ জিয়াউল হায়দারের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলে ফোন রিসিভ করেননি। পরে পরিচয় জানিয়ে ক্ষুদে বার্তা দিলেও ফোন রিসিভ করেননি।এদিকে নির্মিত সড়কের অংশটুকু তিনি নিজে গিয়েছিলেন। তিনি রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি নিজে দেখে জেলা প্রশাসক মহোদয় ঝিনাইদহকে জানিয়েছেন।

বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৪ মহররম ১৪৪২, ০৫ আশ্বিন ১৪২৭

৪ কিমি. রাস্তার পিচ ৭ দিনেই উঠে যাচ্ছে, অসংখ্য ফাটল

প্রতিনিধি, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

image

নির্মাণের সাত দিনের মধ্যেই উঠে যাচ্ছে রাস্তার পিচ। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ডাকবাংলা পর্যন্ত মোট ২২ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ ১৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রায় ৪ কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে। কিন্ত নির্মাণের ৭ দিনের মাথায় নির্মাণকৃত সড়কের অংশের পিচ উঠে যাচ্ছে। এছাড়াও নতুন সড়কেই অসংখ্য ফাঁটল দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর জন্য এটা হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, বৃষ্টির মধ্যে অল্প কিছু অংশে রাস্তার কাজ করার কারণে এমন হয়েছে। রাস্তা তৈরির তিন বছরের মধ্যে কোন ক্ষতি হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার দায়ভার বহন করবেন।

এদিকে সোমবার বিকালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বেশি ভেঙে যাওয়া অংশে পুনর্র্র্র্র্নির্মাণের জন্য শ্রমিক লাগিয়ে পিচ উঠিয়ে ফেলছেন। এলাকাবাসীর দাবি যতটুকু নির্মাণ করা হয়েছে সবটুকুই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। ফলে নির্মিত সম্পূর্ণ অংশটাই তুলে রাস্তাটি পুনরায় নির্মাণ করতে হবে।

সোমবার বিকেলে সরেজমিন গেলে দেখা যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে গান্না হয়ে ডাকবাংলা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তা মজবুতিসহ ওয়ারিং এর কাজ চলছে।

কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে পাকাকরণের জন্য কার্পেটিং বা বিচিকরণের কাজ শুরু করে ৪ থেকে ৫ দিনে ৪ কমপক্ষে কিলোমিটর কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু এরই মধ্যে সড়কের শ্রীরামপুর এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার অংশে রাস্তার পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এলাকবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে শ্রমিক লাগিয়ে বেশি খারাপ অংশের পিচ তুলে ফেলছেন। খুলনার মুজাহার ইন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পান। কিন্তু হাত বদল হয়ে রাস্তার কাজটি করছেন ঝিনাইদহের ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুম মিয়া।

এ রাস্তার জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৯ কোটি টাকা। টেন্ডার শেষে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের কাজ শুরু হয় তিন বছর আগে। রাস্তা খোড়া এবং ইট বালুর কাজ শেষ হয়েছে ছয় মাস আগেই।

এরপর সম্প্রতি শুরু করেছে কার্পেটিং এর কাজ। সড়কটির কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারনে এমটি হয়েছে। তবে সিডিউল অনুযায়ী সড়কে কাজ সম্পন্নের তিন বছরের মধ্যে কোন সমস্যা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুন:মেরামত করবেন। বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে রাস্তার সমস্যা হয়েছে। তবে কাজ শুরু হলে আগে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানের কাজ করা হবে।ওই গ্রামের বাসিন্দা আশানুর রহমান জানান, নির্মিত সড়টির বেশি খারাপ অংশটুকু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুনর্নির্মাণের কথা বলছেন। কিন্ত নির্মিত সবটুকু রাস্তা পুনর্নির্মাণ না করলে অল্প দিনের মধ্যেই এ সড়কটি আবার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তাহলে কয়দিন টিকবে জানি না। তিনি বলেন, নির্মিত প্রায় ৪ কিলোমিটারের মতো সমস্ত অংশটুকুই নিম্নমানের জিনিস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

ফলে সম্পূর্ণটাই তুলে ফেলতে হবে। এদিকে কাজের ঠিকাদার মিজানুর রহমান ওরফে মাসুম মিয়া রাস্তার কাজে কোন নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে না দাবি করে জানান, যেখানে রাস্তা উঠে যাচ্ছে, সেখানে টিউবওয়েলের পানি যায়। যে কারনে এমন হয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টির দিনে কাজ করায় এমনটি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তা পুনরায় করা হবে বলে যোগ করেন স্থানীয় এই ঠিকাদার।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্দ জিয়াউল হায়দারের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলে ফোন রিসিভ করেননি। পরে পরিচয় জানিয়ে ক্ষুদে বার্তা দিলেও ফোন রিসিভ করেননি।এদিকে নির্মিত সড়কের অংশটুকু তিনি নিজে গিয়েছিলেন। তিনি রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি নিজে দেখে জেলা প্রশাসক মহোদয় ঝিনাইদহকে জানিয়েছেন।