কক্সবাজার পুলিশে একযোগে ১৩০৯ সদস্যকে বদলি

দেশে মাদকের প্রবেশদ্বার বলে পরিচিত ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত সব পুলিশকে বদলি করা হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপারের পর একযোগে জেলার ৩৪ পরিদর্শককে বদলির পর, এবার কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত ১৩০৯ জনকে বদলি করা হয়েছে। গতকাল এক জেলা থেকে একযোগে এতো পুলিশ সদস্যকে বদলি রীতিমতো নজির সৃষ্টি করেছে পুলিশের রদবদল পর্যায়ে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী কনস্টেবল থেকে ওসি পর্যন্ত ১৪৪৮ জনকে বের করা হবে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িসহ দায়িত্বপূর্ণ কর্মস্থল থেকে। এর পরিবর্তে সেখানে নতুন করে পোস্টিং দেয়া হবে ১৫০৭ জনকে। গত দুই দিনে যাদের বদলি করা হয়েছে ইতোমধ্যে তাদের স্থলে নতুনরা যোগদান শুরু করেছেন। মূলত মাদক, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের ক্রাইম জেলা কক্সবাজারে পুলিশিং ব্যবস্থায় নতুন পরিবর্তনের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুধু কক্সবাজারই নয় পার্বত্য অঞ্চল, সমুদ্র বেষ্টিত দেশের একমাত্র বিভাগ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের পুলিশ রেঞ্জের সবগুলো জেলায় একই উদ্যোগ নেয়া হবে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, একযোগে এতো পুলিশ সদস্যকে বদলি পুলিশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। তবে বদলি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ। অতীতে বিভিন্ন জেলায়, বিভাগে, থানায়, এমনকি মেট্রোপলিটনে নানা প্রয়োজনে বদলি হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় পুলিশের এমন বদলিকে পুলিশ সদর দফতর স্বাভাবিক বললেও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে একই জেলায় থেকে পুলিশের অনেক সদস্য, কর্মকর্তারা নিজেরাও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে মাদকের মতো অপরাধে পুলিশ সদস্যরা নানা বাণিজ্যে জড়িতে পুলিশের দায়িত্ব ও পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছেন। অপরাধ করতে করতে তারা এমন পর্যায়ে গিয়েছেন যে, কোন আইন বা নিজেদের ক্ষমতার থোরাই কেয়ার করা ভুলে গেছেন। যার পরিণতি মেরিন ড্রাইভে অবসরপ্রাপ্ত একজন সেনা সদস্যকে হত্যা। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা এবং মাদকসহ নানা অপরাধে বিতর্কিত হওয়া পুলিশ সদস্যদের কক্সবাজার থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া এ বদলি। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশে এমন কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন যারা ঘুরে ফিরে একই জায়গায় দায়িত্ব পালন করেন। শুধু কক্সবাজারই নয়, দেশের প্রত্যেক রেঞ্জ, মেট্রোপটিলন এলাকায় ঘুরেফিরে একই কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে কনস্টেবল থেকে ওসি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এছাড়া এসআই এসএসআই এবং কনস্টেবলরা ঘুরেফিরে একই জেলায় বছরের পর বছর কাজ করে। একই জেলায় থাকার সুবাধে অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশের এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়। এর ফলে তারা নানারকম অনৈতিক সুবিধায় জড়িয়ে পড়েন। প্রায়ই পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শোনা যায়। পুলিশ সদর দফতরেও আইজিপি কমপ্লেইন সেলে অভিযোগ জমা পড়ছে। আদালতেও মামলা হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। ফলে ব্যক্তিগত অপরাধ করেও অনেক পুলিশ পার পেয়ে যায়। শুধু চট্টগ্রাম রেঞ্জই নয়, দেশের প্রত্যেক রেঞ্জ, মেট্রোপটিল এবং জেলাগুলোতে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী পুলিশদেরও বদলি করা জরুরি। বিশেষ করে রাজধানীতে অনৈক ওসি, এসআই, ডিসি, এডিসি এবং এসি রয়েছেন যারা বছরের পর বছর একই জায়গায় আছেন। জনমুখী পুলিশ গঠন করতে হলে কোন পুলিশকে একটি জায়গায় এক থেকে দুই বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করতে দেয়া উচিত নয়।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের বদলিজনিত ইতিহাসে একটি জেলায় একযোগে এতো পুলিশের বদলি প্রথম ঘটনা। ভিন্ন চোখে দেখা হলেও এ বদলি স্বাভাবিক হিসেবে দেখছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশিং ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এমন বদলি ঘটনা অহরত হলেও একসঙ্গে এতো বদলি কখনও হয়নি। বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ থাকলে অথবা কোন জাতীয় ইস্যুতে দায়িত্ব অবহেলাসহ নানা কারণে বদলি হয়ে থাকে। কিন্তু মাদকসহ নানা ইস্যুতে কক্সবাজার এখন দেশের অপরাধের পকেট জেলা হিসেবে পরিচিত। এ জেলা মাদক পাচারের প্রধান রুট। বিশেষ করে এ জেলার সীমান্ত ব্যবহার করে পার্শ¦বর্তী দেশ মায়ানমার থেকে গত কয়েক বছর ধরে ইয়াবা আসছে। ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের চোরাচালনকে ঘিরে জেলায় নানা ধরনের অপরাধ বেড়ে গেছে। এছাড়া কক্সবাজার একটি পর্যটন জেলা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক প্রতিদিনই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ নানা স্থানে ঘুরতে যায়। সম্প্রতি পর্যটকদের অপহরণ, ছিনতাই, চুরিসহ নানা অপরাধও বেড়ে গেছে। এছাড়া পর্যটন, মৎস্য ব্যবসা, মাদককে ঘিরে চাঁদাবাজিও বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব জেলায় পুলিশের একটি অংশ ঘুরে ফিরে এক থানা থেকে অন্য থানায় পোস্টিং নিচ্ছে। এসব পুলিশ সদস্যদের উপর মাদক উদ্ধার, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার, চোরাচালান প্রতিরোধসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকলেও একটি অংশ মাদক সেবন, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, অপরাধীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে অনেক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি কক্সবাজারে একটি চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়। ওই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় পুলিশকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ঘটনার নেপথ্যে তদন্তও করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ওই ঘটনায় একটি মামলায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা জেলে থাকলেও এ জেলায় দীর্ঘদিন ধরে ঘুরেফিরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসে পুলিশ সদস দফতরে। এসব অভিযোগ তদন্তের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলাসহ চট্টগ্রাম রেঞ্জকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রাম রেঞ্জে ডিআইজি হিসেবে পুলিশের সবচেয়ে ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে বদলি করা হয়। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন কাজ করতে গিয়ে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। এছাড়া তিনি আগে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি অপারেশন হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। সব মিলিয়ে অপরাধ জোন চট্টগ্রামের কক্সবাজারসহ রেঞ্জের সবগুলো জেলায় জনমুখী পুলিশিং ব্যবস্থা চালু, পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন করে পোস্টিং শুরু হয়েছে।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশকে নতুন আঙ্গীকে সাজানো হচ্ছে। আর এরজন্য কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সবাইকে বদলি করা হচ্ছে। শুধু কক্সবাজারই নয়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের সব জেলায় এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হবে। দীর্ঘদিন ধরে একই রেঞ্জে যারা ঘুরেফিরে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের তালিকা করে অন্যত্র বদলি করা হবে। প্রধান টার্গেট হচ্ছেÑ কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম রেঞ্জের অপরাধপ্রবণ জেলাগুলোতে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আনা। আর নতুন পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তাদের পদায়নের মাধ্যমে পুলিশিং ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। যাতে সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে ন্যায়গত বিষয়ে আইনি সেবা দ্রুত সময়ে পেতে পারে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা থেকে ওসি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ১৪৮৭ জনকে বদলি করা হবে। নতুন পোস্টিং দেয়া হবে ১৫০৭ জনকে। এরমধ্যে গত বুধবার ৩৪ নিরস্ত্র পুলিশ পরির্দশক, শহর ও যানবাহন পুলিশ পরিদর্শক ১০ জন, সশস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক (আরআরআই) ৬ জন, এসআই (নিরস্ত্র) ১৫৪ জন, এসআই (সশস্ত্র) ২৫ জন, সার্জেন্ট ৮ জন, টিএসআই ৫ জন, এএসআই (নিরস্ত্র) ১৪৮ জন, এএসআই (সশস্ত্র) ২১ জন, এটিএসআই ১৯ জন, নায়েক ৫০ জন এবং কনস্টেবল ১ হাজার ৭ জন বদলি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সদর দফতর সূত্র জানায়, বদলিকৃত স্থানে এর পরিবর্তে কক্সবাজার জেলায় নতুন করে নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক ৩৭ জন, শহর ও যানবাহন পুলিশ পরিদর্শক ১০ জন, সশস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক (আরআরসহ) ৬ জন, এসআই (নিরস্ত্র) ১৭০ জন, সার্জেন্ট ৮ জন, টিএসআই ৫ জন, এএসআই (নিরস্ত্র) ১৬৩ জন, এএসআই (সশস্ত্র) ২০ জন, এটিএসআই ১৯ জন, নায়েক ৪৬ জন এবং কনস্টেবল ১ হাজার জন পোস্টিং দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত দুইদিনে ৩৪ ওসি এবং কনস্টেবল টু এসআই পর্যন্ত ১৩০৯ জনের স্থলে নতুন পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তারা যোগদান শুরু করেছেন।

এ পর্যন্ত বদলি ১৩৪৭ জন

জেলা পুলিশের সূত্র মতে গতকাল পর্যন্ত এই বদলির সংখ্যা দাঁড়িয়ে ১৩৪৭ জন। এরমধ্যে রয়েছে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ শীর্ষ ৮ কর্মকর্তা, ৮ থানার ওসিসহ ৩৪ পরিদর্শক, ১৫৮ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ৯২ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), ১০৫৫ জন নায়েক ও কনস্টেবল। সবাইকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের বাইরে ভিন্ন রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। এরা দীর্ঘদিন কক্সবাজার জেলায় ঘুরেফিরে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে বিভিন্ন সুবিধা নেয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, সাধারণ মানুষকে হয়রানি, মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ নেয়ার অভিযোগ আছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বদলি হওয়া শূন্য পদ পূরণে গতকাল চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যোগ দিচ্ছেন ৮ থানার ওসিসহ ৩৭ জন পুলিশ পরিদর্শক, ৮৫ জন এসআই-এএসআই ও ৭৩৪ জন কনস্টেবল। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার জেলা পুলিশে সম্পূর্ণ নতুন স্টাফ যোগদান করবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবজার জেলা থেকে বদলি হওয়া ৩৪ ওসির মধ্যে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তারের বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধে একজন ইউপি মেম্বারকে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। এছাড়া মহেশখালী থানার ওসি দিদারুলের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পটিয়ায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে ডাবল মার্ডারের অভিযোগে মামলা রয়েছে। এছাড়া রামু থানার ওসি আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত ৩১ জুলাই মেরিন ড্রাইভে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যার অভিযোগে টেকনাফ থানার আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমারসহ কয়েক পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এর পর তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে জেলে পাঠায় আদালত। মেজর সিনহা হত্যার অভিযোগে করা মামলায় কয়েক দফা রিমান্ডে যান ওসি প্রদীপসহ আসামিরা। তখন কক্সবাজার এলাকায় বিভিন্ন সময়ে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে পর্যায়ক্রমে জেলার অন্যান্য থানার ওসিদের বিরুদ্ধে ওইসব মামলা হয়।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে হত্যাকা-ের পর নানা বিতর্কের মধ্যে গত ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনকে রাজশাহীর পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়। আর ঝিনাইদহের এসপি মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে ওসি প্রদীপসহ কয়েক পুলিশের বিরুদ্ধে করা মামলায় এসবি এবিএম মাসুদ হোসেনকে আসামি করার আবেদন করেন সিনহা হত্যা মামলার বাদী তার বোন। যদিও আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেন।

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ রোডে বাহারছড়া পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনার পর কক্সবাজার জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নেয় পুলিশ সদর দফতর। ওই ঘটনায় মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ারের দায়ের করা হত্যা মামলায় টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ ১১ জন পুলিশ সদস্য জেল হাজতে রয়েছেন।

image

টক অব দ্য টাউন : কক্সবাজারের এসপি বদলি হয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে যাচ্ছেন- যেন বর যাত্রা। এ আয়োজন কি বদলি না শুদ্ধি অভিযান। সাবেক মেজর সিনহা হত্যার বিচার এখনও তদন্তাধীন। দোষী নির্দোষ এখনও অন্ধকারে। এমন সময় ঘটা করে বরযাত্রীর মতো অনাড়ম্বর বিদায় নিয়ে কক্সবাজারে গতকাল ছিল ‘টক অব দ্য টাউন’।

আরও খবর
রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি অনুসরণের নির্দেশ
১৯ বছরেও শেষ হয়নি মামলা
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ
একদিনে ২১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৩৮৩
করোনায় ৮৮ চিকিৎসকের মৃত্যু
বরখাস্ত ওসি প্রদীপের ৭ ইন্ধনদাতার বিরুদ্ধে থানায় মামলা
পিয়ারের উচ্চতা জটিলতায় এক মাস যাবত বন্ধ রয়েছে নির্র্মাণ কাজ
সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কোন অবস্থায়ই অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না কাদের
কুড়িগ্রাম নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জে ফের বন্যা
রাজশাহীতে পদ্মায় নৌকাডুবি নিখোঁজ ২ শিক্ষার্থী
ঢাকা-সিঙ্গাপুর রুটে বিমান চলাচল শুরু হচ্ছে ১ অক্টোবর থেকে

শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ০৭ মহররম ১৪৪২, ০৮ আশ্বিন ১৪২৭

কক্সবাজার পুলিশে একযোগে ১৩০৯ সদস্যকে বদলি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

টক অব দ্য টাউন : কক্সবাজারের এসপি বদলি হয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে যাচ্ছেন- যেন বর যাত্রা। এ আয়োজন কি বদলি না শুদ্ধি অভিযান। সাবেক মেজর সিনহা হত্যার বিচার এখনও তদন্তাধীন। দোষী নির্দোষ এখনও অন্ধকারে। এমন সময় ঘটা করে বরযাত্রীর মতো অনাড়ম্বর বিদায় নিয়ে কক্সবাজারে গতকাল ছিল ‘টক অব দ্য টাউন’।

দেশে মাদকের প্রবেশদ্বার বলে পরিচিত ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত সব পুলিশকে বদলি করা হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপারের পর একযোগে জেলার ৩৪ পরিদর্শককে বদলির পর, এবার কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত ১৩০৯ জনকে বদলি করা হয়েছে। গতকাল এক জেলা থেকে একযোগে এতো পুলিশ সদস্যকে বদলি রীতিমতো নজির সৃষ্টি করেছে পুলিশের রদবদল পর্যায়ে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী কনস্টেবল থেকে ওসি পর্যন্ত ১৪৪৮ জনকে বের করা হবে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িসহ দায়িত্বপূর্ণ কর্মস্থল থেকে। এর পরিবর্তে সেখানে নতুন করে পোস্টিং দেয়া হবে ১৫০৭ জনকে। গত দুই দিনে যাদের বদলি করা হয়েছে ইতোমধ্যে তাদের স্থলে নতুনরা যোগদান শুরু করেছেন। মূলত মাদক, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের ক্রাইম জেলা কক্সবাজারে পুলিশিং ব্যবস্থায় নতুন পরিবর্তনের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুধু কক্সবাজারই নয় পার্বত্য অঞ্চল, সমুদ্র বেষ্টিত দেশের একমাত্র বিভাগ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের পুলিশ রেঞ্জের সবগুলো জেলায় একই উদ্যোগ নেয়া হবে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, একযোগে এতো পুলিশ সদস্যকে বদলি পুলিশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। তবে বদলি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ। অতীতে বিভিন্ন জেলায়, বিভাগে, থানায়, এমনকি মেট্রোপলিটনে নানা প্রয়োজনে বদলি হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় পুলিশের এমন বদলিকে পুলিশ সদর দফতর স্বাভাবিক বললেও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে একই জেলায় থেকে পুলিশের অনেক সদস্য, কর্মকর্তারা নিজেরাও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে মাদকের মতো অপরাধে পুলিশ সদস্যরা নানা বাণিজ্যে জড়িতে পুলিশের দায়িত্ব ও পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছেন। অপরাধ করতে করতে তারা এমন পর্যায়ে গিয়েছেন যে, কোন আইন বা নিজেদের ক্ষমতার থোরাই কেয়ার করা ভুলে গেছেন। যার পরিণতি মেরিন ড্রাইভে অবসরপ্রাপ্ত একজন সেনা সদস্যকে হত্যা। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা এবং মাদকসহ নানা অপরাধে বিতর্কিত হওয়া পুলিশ সদস্যদের কক্সবাজার থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া এ বদলি। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশে এমন কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন যারা ঘুরে ফিরে একই জায়গায় দায়িত্ব পালন করেন। শুধু কক্সবাজারই নয়, দেশের প্রত্যেক রেঞ্জ, মেট্রোপটিলন এলাকায় ঘুরেফিরে একই কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে কনস্টেবল থেকে ওসি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এছাড়া এসআই এসএসআই এবং কনস্টেবলরা ঘুরেফিরে একই জেলায় বছরের পর বছর কাজ করে। একই জেলায় থাকার সুবাধে অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশের এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়। এর ফলে তারা নানারকম অনৈতিক সুবিধায় জড়িয়ে পড়েন। প্রায়ই পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শোনা যায়। পুলিশ সদর দফতরেও আইজিপি কমপ্লেইন সেলে অভিযোগ জমা পড়ছে। আদালতেও মামলা হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। ফলে ব্যক্তিগত অপরাধ করেও অনেক পুলিশ পার পেয়ে যায়। শুধু চট্টগ্রাম রেঞ্জই নয়, দেশের প্রত্যেক রেঞ্জ, মেট্রোপটিল এবং জেলাগুলোতে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী পুলিশদেরও বদলি করা জরুরি। বিশেষ করে রাজধানীতে অনৈক ওসি, এসআই, ডিসি, এডিসি এবং এসি রয়েছেন যারা বছরের পর বছর একই জায়গায় আছেন। জনমুখী পুলিশ গঠন করতে হলে কোন পুলিশকে একটি জায়গায় এক থেকে দুই বছরের বেশি দায়িত্ব পালন করতে দেয়া উচিত নয়।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের বদলিজনিত ইতিহাসে একটি জেলায় একযোগে এতো পুলিশের বদলি প্রথম ঘটনা। ভিন্ন চোখে দেখা হলেও এ বদলি স্বাভাবিক হিসেবে দেখছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশিং ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এমন বদলি ঘটনা অহরত হলেও একসঙ্গে এতো বদলি কখনও হয়নি। বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ থাকলে অথবা কোন জাতীয় ইস্যুতে দায়িত্ব অবহেলাসহ নানা কারণে বদলি হয়ে থাকে। কিন্তু মাদকসহ নানা ইস্যুতে কক্সবাজার এখন দেশের অপরাধের পকেট জেলা হিসেবে পরিচিত। এ জেলা মাদক পাচারের প্রধান রুট। বিশেষ করে এ জেলার সীমান্ত ব্যবহার করে পার্শ¦বর্তী দেশ মায়ানমার থেকে গত কয়েক বছর ধরে ইয়াবা আসছে। ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের চোরাচালনকে ঘিরে জেলায় নানা ধরনের অপরাধ বেড়ে গেছে। এছাড়া কক্সবাজার একটি পর্যটন জেলা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক প্রতিদিনই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ নানা স্থানে ঘুরতে যায়। সম্প্রতি পর্যটকদের অপহরণ, ছিনতাই, চুরিসহ নানা অপরাধও বেড়ে গেছে। এছাড়া পর্যটন, মৎস্য ব্যবসা, মাদককে ঘিরে চাঁদাবাজিও বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব জেলায় পুলিশের একটি অংশ ঘুরে ফিরে এক থানা থেকে অন্য থানায় পোস্টিং নিচ্ছে। এসব পুলিশ সদস্যদের উপর মাদক উদ্ধার, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার, চোরাচালান প্রতিরোধসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকলেও একটি অংশ মাদক সেবন, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, অপরাধীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে অনেক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি কক্সবাজারে একটি চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়। ওই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় পুলিশকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ঘটনার নেপথ্যে তদন্তও করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ওই ঘটনায় একটি মামলায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা জেলে থাকলেও এ জেলায় দীর্ঘদিন ধরে ঘুরেফিরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসে পুলিশ সদস দফতরে। এসব অভিযোগ তদন্তের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলাসহ চট্টগ্রাম রেঞ্জকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রাম রেঞ্জে ডিআইজি হিসেবে পুলিশের সবচেয়ে ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে বদলি করা হয়। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন কাজ করতে গিয়ে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। এছাড়া তিনি আগে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি অপারেশন হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। সব মিলিয়ে অপরাধ জোন চট্টগ্রামের কক্সবাজারসহ রেঞ্জের সবগুলো জেলায় জনমুখী পুলিশিং ব্যবস্থা চালু, পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন করে পোস্টিং শুরু হয়েছে।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশকে নতুন আঙ্গীকে সাজানো হচ্ছে। আর এরজন্য কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সবাইকে বদলি করা হচ্ছে। শুধু কক্সবাজারই নয়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের সব জেলায় এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হবে। দীর্ঘদিন ধরে একই রেঞ্জে যারা ঘুরেফিরে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের তালিকা করে অন্যত্র বদলি করা হবে। প্রধান টার্গেট হচ্ছেÑ কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম রেঞ্জের অপরাধপ্রবণ জেলাগুলোতে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আনা। আর নতুন পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তাদের পদায়নের মাধ্যমে পুলিশিং ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। যাতে সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে ন্যায়গত বিষয়ে আইনি সেবা দ্রুত সময়ে পেতে পারে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা থেকে ওসি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ১৪৮৭ জনকে বদলি করা হবে। নতুন পোস্টিং দেয়া হবে ১৫০৭ জনকে। এরমধ্যে গত বুধবার ৩৪ নিরস্ত্র পুলিশ পরির্দশক, শহর ও যানবাহন পুলিশ পরিদর্শক ১০ জন, সশস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক (আরআরআই) ৬ জন, এসআই (নিরস্ত্র) ১৫৪ জন, এসআই (সশস্ত্র) ২৫ জন, সার্জেন্ট ৮ জন, টিএসআই ৫ জন, এএসআই (নিরস্ত্র) ১৪৮ জন, এএসআই (সশস্ত্র) ২১ জন, এটিএসআই ১৯ জন, নায়েক ৫০ জন এবং কনস্টেবল ১ হাজার ৭ জন বদলি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সদর দফতর সূত্র জানায়, বদলিকৃত স্থানে এর পরিবর্তে কক্সবাজার জেলায় নতুন করে নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক ৩৭ জন, শহর ও যানবাহন পুলিশ পরিদর্শক ১০ জন, সশস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক (আরআরসহ) ৬ জন, এসআই (নিরস্ত্র) ১৭০ জন, সার্জেন্ট ৮ জন, টিএসআই ৫ জন, এএসআই (নিরস্ত্র) ১৬৩ জন, এএসআই (সশস্ত্র) ২০ জন, এটিএসআই ১৯ জন, নায়েক ৪৬ জন এবং কনস্টেবল ১ হাজার জন পোস্টিং দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত দুইদিনে ৩৪ ওসি এবং কনস্টেবল টু এসআই পর্যন্ত ১৩০৯ জনের স্থলে নতুন পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তারা যোগদান শুরু করেছেন।

এ পর্যন্ত বদলি ১৩৪৭ জন

জেলা পুলিশের সূত্র মতে গতকাল পর্যন্ত এই বদলির সংখ্যা দাঁড়িয়ে ১৩৪৭ জন। এরমধ্যে রয়েছে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ শীর্ষ ৮ কর্মকর্তা, ৮ থানার ওসিসহ ৩৪ পরিদর্শক, ১৫৮ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ৯২ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), ১০৫৫ জন নায়েক ও কনস্টেবল। সবাইকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের বাইরে ভিন্ন রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। এরা দীর্ঘদিন কক্সবাজার জেলায় ঘুরেফিরে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে বিভিন্ন সুবিধা নেয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, সাধারণ মানুষকে হয়রানি, মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ নেয়ার অভিযোগ আছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বদলি হওয়া শূন্য পদ পূরণে গতকাল চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে যোগ দিচ্ছেন ৮ থানার ওসিসহ ৩৭ জন পুলিশ পরিদর্শক, ৮৫ জন এসআই-এএসআই ও ৭৩৪ জন কনস্টেবল। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার জেলা পুলিশে সম্পূর্ণ নতুন স্টাফ যোগদান করবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবজার জেলা থেকে বদলি হওয়া ৩৪ ওসির মধ্যে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তারের বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধে একজন ইউপি মেম্বারকে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। এছাড়া মহেশখালী থানার ওসি দিদারুলের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পটিয়ায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে ডাবল মার্ডারের অভিযোগে মামলা রয়েছে। এছাড়া রামু থানার ওসি আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত ৩১ জুলাই মেরিন ড্রাইভে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যার অভিযোগে টেকনাফ থানার আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমারসহ কয়েক পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এর পর তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে জেলে পাঠায় আদালত। মেজর সিনহা হত্যার অভিযোগে করা মামলায় কয়েক দফা রিমান্ডে যান ওসি প্রদীপসহ আসামিরা। তখন কক্সবাজার এলাকায় বিভিন্ন সময়ে মাদক ব্যবসায়ী সাজিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে পর্যায়ক্রমে জেলার অন্যান্য থানার ওসিদের বিরুদ্ধে ওইসব মামলা হয়।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে হত্যাকা-ের পর নানা বিতর্কের মধ্যে গত ১৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনকে রাজশাহীর পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়। আর ঝিনাইদহের এসপি মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে ওসি প্রদীপসহ কয়েক পুলিশের বিরুদ্ধে করা মামলায় এসবি এবিএম মাসুদ হোসেনকে আসামি করার আবেদন করেন সিনহা হত্যা মামলার বাদী তার বোন। যদিও আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেন।

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ রোডে বাহারছড়া পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনার পর কক্সবাজার জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নেয় পুলিশ সদর দফতর। ওই ঘটনায় মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ারের দায়ের করা হত্যা মামলায় টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ ১১ জন পুলিশ সদস্য জেল হাজতে রয়েছেন।