করোনার মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

বিদায়ী বছরের শেষ কার্যদিবসে দেশে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। গত বুধবার দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী এক বছরের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের সঙ্গে রপ্তানি আয় বেড়েছে। এ কারণে রিজার্ভের পরিমাণ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। প্রথমবারের মতো দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ২৩ জুন। এর আগে ৩ জুন রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ১ সেপ্টেম্বর অতিক্রম করে ৩৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। করোনাভাইরাসের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের নি¤œগতি থাকলেও প্রবাসী আয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করেছে। দেশে উন্নয়নশীল অংশীদারদের বিনিয়োগও আসা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

গত কয়েক বছর ধরেই রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। দশ বছর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরের জুন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষে সেই রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে গত বছরের অক্টোবরে। চলতি বছরের ৩০ জুন সেই রিজার্ভ বেড়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে উঠে। তারপর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর তা ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। অক্টোবরের ৮ তারিখে ছাড়ায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৮৮২ কোটি ৫৬ লাখ ( ৮.৮২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। আর চলতি নভেম্বর মাসের ২৫ দিনে অর্থাৎ ১ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সবমিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এর আগে এই মহামারীর মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

রেমিট্যান্সকেই রিজার্ভ বৃদ্ধির মূল নিয়ামক হিসেবে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা যায়, জুলাই মাসে প্রবাসীরা দেশে ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে কোন একক মাসে এতো রেমিট্যান্স কখনও আসেনি। আর নভেম্বরে তারা ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৯০ কোটি ৪৪ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা)। রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এর আগে প্রবাসীদের উৎসাহ দিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। গত ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এর ফলে করোনার মধ্যেও রেকর্ড গড়ছে রেমিট্যান্স। একই সঙ্গে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে মন্দা কাটাতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৫ লাখ টাকা কোন যাচাই-বাছাই ছাড়া ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। আগে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত কোন যাচাই-বাছাই ছাড়া নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছিল।

শুক্রবার, ০১ জানুয়ারী ২০২১ , ১৭ পৌষ ১৪২৭, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

করোনার মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

বিদায়ী বছরের শেষ কার্যদিবসে দেশে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। গত বুধবার দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে আগামী এক বছরের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের সঙ্গে রপ্তানি আয় বেড়েছে। এ কারণে রিজার্ভের পরিমাণ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। প্রথমবারের মতো দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ২৩ জুন। এর আগে ৩ জুন রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ১ সেপ্টেম্বর অতিক্রম করে ৩৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। করোনাভাইরাসের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের নি¤œগতি থাকলেও প্রবাসী আয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করেছে। দেশে উন্নয়নশীল অংশীদারদের বিনিয়োগও আসা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

গত কয়েক বছর ধরেই রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। দশ বছর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরের জুন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষে সেই রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে গত বছরের অক্টোবরে। চলতি বছরের ৩০ জুন সেই রিজার্ভ বেড়ে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে উঠে। তারপর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর তা ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। অক্টোবরের ৮ তারিখে ছাড়ায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৮৮২ কোটি ৫৬ লাখ ( ৮.৮২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। আর চলতি নভেম্বর মাসের ২৫ দিনে অর্থাৎ ১ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সবমিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এর আগে এই মহামারীর মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

রেমিট্যান্সকেই রিজার্ভ বৃদ্ধির মূল নিয়ামক হিসেবে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা যায়, জুলাই মাসে প্রবাসীরা দেশে ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে কোন একক মাসে এতো রেমিট্যান্স কখনও আসেনি। আর নভেম্বরে তারা ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৯০ কোটি ৪৪ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯২ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা)। রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এর আগে প্রবাসীদের উৎসাহ দিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। গত ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এর ফলে করোনার মধ্যেও রেকর্ড গড়ছে রেমিট্যান্স। একই সঙ্গে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে মন্দা কাটাতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৫ লাখ টাকা কোন যাচাই-বাছাই ছাড়া ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। আগে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত কোন যাচাই-বাছাই ছাড়া নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছিল।