লাকসামে নদী-খাল-পুকুর দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে

কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলাসহ পৌর শহরের চর্তুদিকে জবর দখলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সরকারি খাল, পুকুর, ডোবা ও নদী। বর্ষাকালের শেষ মুহূর্তেও কোন কোন স্থানে জলাবদ্ধতায় এলাকার খাল-পুকুর ও ডাকাতিয়া নদীর পানি পঁচে গেছে। ফলে অবনর্ণীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের একমাত্র ডাকাতিয়া নদীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক খাল জবর দখলসহ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামার কোন জায়গা নেই। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পৌরশহরসহ উপজেলা দুটোর বর্ষাকাল আসলেই জন চলাচল এবং সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। প্রায় এলাকার মানুষ বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার কারনে হাটে-বাজারে যেতে পারে না।

পৌর শহরের একাধিক গ্রামের কাঁচা সড়ক ছাড়াও উপজেলা দুটোর নিম্নাঞ্চলের একাধিক কাঁচা-পাকা সড়কগুলো এখনও খানা-খন্দে ভরা। লালমাই-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং চাঁদপুর রেলগেইটের উত্তরে সংযোগ সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনায় যেন শহরের পরিবেশকে বেসামাল করে তুলেছে। সরকারি খালগুলো জবর দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা আবাসিক ভবন ও বিপণী বিতান গড়ে তুলেছে।

এদিকে বর্তমান সরকার এলাকার সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের বেশকিছু খাল পুনর্খননের কাজ শুরু করেছে। এতেও ওইসব খাল খননে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার লোকজন। দু’উপজেলায় কয়েক’শ কোটি টাকার নানাহ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা বরাদ্দে লাকসাম পৌর এলাকার নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। যা স্মার্ট সিটিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো আরও জানায়, ডাকাতিয়া নদীসহ সংযোগ খালগুলো এ উপজেলার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। ওইসব খালগুলো জবর দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ গতিহীন। তার ওপর ময়লা আবর্জনাসহ মিল-কারখানার বিষাক্ত পানি জলাবদ্ধ হয়ে এ অঞ্চলের বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে নানা রোগের আতঙ্কে রয়েছে সকল পেশার মানুষ। ইতোমধ্যে খালের ওপর ব্রিজ ও কালভার্টগুলোর প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

পৌর এলাকাসহ উপজেলা দুটোর নিম্নাঞ্চলের ওইসব গ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে অতীতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তেমন কোন প্রদক্ষেপ না নেয়ায় প্রতিনিয়ত বর্ষাকাল আসলেই এলাকার জনজীবন মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলার দক্ষিনাঞ্চল জলাখ্যাত এ উপজেলা দুটোর মধ্যে লাকসাম শহরে ১ম শ্রেণীর একটি পৌরসভা। প্রায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকার এ সমস্যা মারাত্মক দুর্ভোগ বয়ে আনছে। প্রত্যেক বছর বর্ষাকাল আসলেই এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন জবর দখলকারী ও নদী-খালের ভরাট নিরসনে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না নিলে, আগামী দিনগুলোতে মানুষের দুর্ভোগ আরো চরম আকার ধারণ করবে। খাল- নদী, পুকুর-ডোবা ও জলাশয়ের উপচে পড়া পানিতে এলাকার বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া জলাবদ্ধতায় কাঁচা-পাকা সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। শহর এলাকার নদী, খাল ও ড্রেনেজ দিয়ে পানি নামতে না পারলে এলাকার জনদুর্ভোগ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে অভিমত স্থানীয় পরিবেশবিদদের।

লাকসাম পৌরসভার জনৈক কর্মকর্তা জানায়, পৌরশহর এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণে লাকসাম পৌর কর্তৃপক্ষ চলমান অর্থবছরে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নানামুখী উন্নয়ন কর্মকা- এবং শহরের প্রধান প্রধান স্থানে ডাকাতিয়া নদী সংযুক্ত ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছেন এবং এছাড়া নাগরিক সুবিধা বাড়াতে আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরও ব্যাপক নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলাসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক বিভাগ কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বৃহস্পতিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২১ , ২৩ পৌষ ১৪২৭, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

লাকসামে নদী-খাল-পুকুর দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে

সংবাদদাতা, লাকসাম (কুমিল্লা)

image

কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলাসহ পৌর শহরের চর্তুদিকে জবর দখলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সরকারি খাল, পুকুর, ডোবা ও নদী। বর্ষাকালের শেষ মুহূর্তেও কোন কোন স্থানে জলাবদ্ধতায় এলাকার খাল-পুকুর ও ডাকাতিয়া নদীর পানি পঁচে গেছে। ফলে অবনর্ণীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের একমাত্র ডাকাতিয়া নদীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক খাল জবর দখলসহ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নামার কোন জায়গা নেই। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পৌরশহরসহ উপজেলা দুটোর বর্ষাকাল আসলেই জন চলাচল এবং সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। প্রায় এলাকার মানুষ বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার কারনে হাটে-বাজারে যেতে পারে না।

পৌর শহরের একাধিক গ্রামের কাঁচা সড়ক ছাড়াও উপজেলা দুটোর নিম্নাঞ্চলের একাধিক কাঁচা-পাকা সড়কগুলো এখনও খানা-খন্দে ভরা। লালমাই-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং চাঁদপুর রেলগেইটের উত্তরে সংযোগ সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনায় যেন শহরের পরিবেশকে বেসামাল করে তুলেছে। সরকারি খালগুলো জবর দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা আবাসিক ভবন ও বিপণী বিতান গড়ে তুলেছে।

এদিকে বর্তমান সরকার এলাকার সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের বেশকিছু খাল পুনর্খননের কাজ শুরু করেছে। এতেও ওইসব খাল খননে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার লোকজন। দু’উপজেলায় কয়েক’শ কোটি টাকার নানাহ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা বরাদ্দে লাকসাম পৌর এলাকার নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। যা স্মার্ট সিটিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো আরও জানায়, ডাকাতিয়া নদীসহ সংযোগ খালগুলো এ উপজেলার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। ওইসব খালগুলো জবর দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ গতিহীন। তার ওপর ময়লা আবর্জনাসহ মিল-কারখানার বিষাক্ত পানি জলাবদ্ধ হয়ে এ অঞ্চলের বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে নানা রোগের আতঙ্কে রয়েছে সকল পেশার মানুষ। ইতোমধ্যে খালের ওপর ব্রিজ ও কালভার্টগুলোর প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

পৌর এলাকাসহ উপজেলা দুটোর নিম্নাঞ্চলের ওইসব গ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে অতীতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তেমন কোন প্রদক্ষেপ না নেয়ায় প্রতিনিয়ত বর্ষাকাল আসলেই এলাকার জনজীবন মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলার দক্ষিনাঞ্চল জলাখ্যাত এ উপজেলা দুটোর মধ্যে লাকসাম শহরে ১ম শ্রেণীর একটি পৌরসভা। প্রায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকার এ সমস্যা মারাত্মক দুর্ভোগ বয়ে আনছে। প্রত্যেক বছর বর্ষাকাল আসলেই এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন জবর দখলকারী ও নদী-খালের ভরাট নিরসনে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না নিলে, আগামী দিনগুলোতে মানুষের দুর্ভোগ আরো চরম আকার ধারণ করবে। খাল- নদী, পুকুর-ডোবা ও জলাশয়ের উপচে পড়া পানিতে এলাকার বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া জলাবদ্ধতায় কাঁচা-পাকা সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। শহর এলাকার নদী, খাল ও ড্রেনেজ দিয়ে পানি নামতে না পারলে এলাকার জনদুর্ভোগ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে অভিমত স্থানীয় পরিবেশবিদদের।

লাকসাম পৌরসভার জনৈক কর্মকর্তা জানায়, পৌরশহর এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণে লাকসাম পৌর কর্তৃপক্ষ চলমান অর্থবছরে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নানামুখী উন্নয়ন কর্মকা- এবং শহরের প্রধান প্রধান স্থানে ডাকাতিয়া নদী সংযুক্ত ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছেন এবং এছাড়া নাগরিক সুবিধা বাড়াতে আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরও ব্যাপক নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলাসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক বিভাগ কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।