মাস্টারমাইন্ড শিক্ষার্থীর মৃত্যু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে

প্রেমের ফাঁদে ফেলে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ও লেভেল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্ষরক্ষণে প্রাণ যায় শিক্ষার্থীর। কথিত প্রেমিক ইফতেখার ফারদিন দিহান ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওই শিক্ষার্থীকে অচেতন (মৃত) অবস্থায় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা সেখানে শিক্ষার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে এবং প্রেমিক দিহানসহ ৪ জনকে আটক করে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষার্থীর মরদেহ ময়নাতদন্ত করে ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন চিকিৎসকরাও। চিকিৎসকরা বলছেন অতিরিক্ত রক্ষরক্ষণে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় গ্রেফতার দিহান ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করার দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন কলেজ হাসপাতাল থেকে মাস্টরমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ধর্ষণের পর হত্যা এমন অভিযোগ পেয়ে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় কলাবাগান থানা পুলিশ। রাতেই এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় বন্ধু দিহানকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় ফোন করে ডেকে নেয় বন্ধু দিহান। সেখানে তাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। যদিও পুলিশ এর আগেই এ ঘটনায় বন্ধু দিহানসহ ৪ জনকে আটক করে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে মেয়েটিকে গ্রুফ স্টাডির কথা বলে ফোন করে বাসায় ডেকে নেয় দিহানসহ চার বন্ধু। দুপুর ১টার দিকে মেয়েটির রক্তক্ষরণ শুরু হলে বন্ধুরাই তাকে প্রথম আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসকরা মেয়েটির অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশলে কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়। পরে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে ওই চার বন্ধুকে আটক করে। এরপর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দিহানকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

গতকাল এক অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, কলাবাগানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ ঘটনার পর আমরা শিক্ষার্র্থীর বন্ধুকে গ্রেফতার করেছি। তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তাও তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

মাস্টারমাইন্ড শিক্ষার্থী হত্যা মামলার তদারকি কর্মকর্তা ডিএমপি রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে মেয়েটির বন্ধু ইফতেখার ফারদিন দিহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার দ্বারা সে ধর্ষণের শিকার হতে পারে। তাকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তাও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর বলা যাবে। পুলিশ ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্ব বিবেচনা করে তদন্ত করছে। সেক্ষেত্রে কাউকে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না।

পুলিশের এসি আবুল হাসান বলেন, মেয়েটির শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছে।

অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, মিলেছে ধর্ষণের আলামত

মাস্টারমাইন্ড শিক্ষার্থীর মৃত্যু কিভাবে হয়েছে এমন ইস্যু পরিষ্কার করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরা নমুনায় ধর্ষণের আলামত পেয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে অতিরিক্ত রক্ষরক্ষণে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীর নমুনা সংগ্রহ করে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্ষপাত ঘটে তার। যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে ইনজুরি পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়ানি। তিনি আরও বলেন, ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে। রিপোর্টের জন্য সপ্তাহ দুয়েক অপেক্ষা করতে হবে। এর আগে বয়স নির্ধারণের জন্য মরদেহের প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়। পরে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে যান।

ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে দিহানের জবানবন্দি

এদিকে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার কথিত প্রেমিক ইফতেখার ফারদিন দিহান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালতের আদেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে দিহানকে কারাগারে পাঠানোর জন্য আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামি দিহানকে আদালতে হাজির করে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। পরে দিহান স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

আদালত সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলে মামলাটির এজাহার আদালতে আসে। এরপর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ মামলার এজাহার গ্রহণ করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আ ফ ম আসাদুজ্জামানকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালতে কলাবাগান থানার (নারী ও শিশু) সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা স্বপন জানান, মামলার একমাত্র আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহান (১৮) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এজাহারে বলা হয়, গত ৭ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পর তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হয়ে যান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। মামলার একমাত্র আসামি ‘ও’ লেভেলপড়ুয়া শিক্ষার্থী দিহান দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়েছে। অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসপাতালে পৌঁছান। হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তার কলাবাগান ডলফিন গলির বাসা ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ধর্ষকের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি ন্যাপের

কলাবাগানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মাস্টারমাইন্ডের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ এবং ঘটনার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। একই সঙ্গে তারা ধর্ষকের দ্রুত বিচার দাবি করেন। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো দলের দফতর সম্পাদক মো. নুরুল আমান চৌধুরীর সই করা এক বিবৃতিতে ন্যাপ নেতারা এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, কিশোরী ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রমাণিত হলো ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে না। এজন্য প্রয়োজন আইনের শাসন ও সামাজিক প্রতিরোধ। শীক্ষার্থী ধর্ষণ-হত্যা সামাজিক অসহিষ্ণুতারই বহিঃপ্রকাশ। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দেশজুড়ে একের পর এক ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে তুমুল আন্দোলনের মুখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করলেও প্রশ্ন জাগে আইন করার পরও কি ধর্ষণ কমেছে? নেতারা প্রশ্ন করেন, শুধু আইন করেই কি ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব? ন্যাপ নেতারা বলেন, অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত না করলে আইন সংশোধন করেও কোন ফায়দা হবে না। বিচার নিশ্চিত না করে যত কঠোর আইন-ই হোক, ফলপ্রসূ হবে না। ন্যাপ নেতারা দাবি করেন, রাষ্ট্রের উচিত হবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা।

শনিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২১ , ২৫ পৌষ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

মাস্টারমাইন্ড শিক্ষার্থীর মৃত্যু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

প্রেমের ফাঁদে ফেলে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ও লেভেল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্ষরক্ষণে প্রাণ যায় শিক্ষার্থীর। কথিত প্রেমিক ইফতেখার ফারদিন দিহান ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওই শিক্ষার্থীকে অচেতন (মৃত) অবস্থায় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা সেখানে শিক্ষার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে এবং প্রেমিক দিহানসহ ৪ জনকে আটক করে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষার্থীর মরদেহ ময়নাতদন্ত করে ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন চিকিৎসকরাও। চিকিৎসকরা বলছেন অতিরিক্ত রক্ষরক্ষণে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় গ্রেফতার দিহান ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করার দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন কলেজ হাসপাতাল থেকে মাস্টরমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ধর্ষণের পর হত্যা এমন অভিযোগ পেয়ে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় কলাবাগান থানা পুলিশ। রাতেই এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় বন্ধু দিহানকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাসায় ফোন করে ডেকে নেয় বন্ধু দিহান। সেখানে তাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। যদিও পুলিশ এর আগেই এ ঘটনায় বন্ধু দিহানসহ ৪ জনকে আটক করে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে মেয়েটিকে গ্রুফ স্টাডির কথা বলে ফোন করে বাসায় ডেকে নেয় দিহানসহ চার বন্ধু। দুপুর ১টার দিকে মেয়েটির রক্তক্ষরণ শুরু হলে বন্ধুরাই তাকে প্রথম আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসকরা মেয়েটির অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশলে কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়। পরে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে ওই চার বন্ধুকে আটক করে। এরপর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দিহানকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

গতকাল এক অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, কলাবাগানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ ঘটনার পর আমরা শিক্ষার্র্থীর বন্ধুকে গ্রেফতার করেছি। তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তাও তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

মাস্টারমাইন্ড শিক্ষার্থী হত্যা মামলার তদারকি কর্মকর্তা ডিএমপি রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে মেয়েটির বন্ধু ইফতেখার ফারদিন দিহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার দ্বারা সে ধর্ষণের শিকার হতে পারে। তাকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তাও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর বলা যাবে। পুলিশ ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্ব বিবেচনা করে তদন্ত করছে। সেক্ষেত্রে কাউকে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না।

পুলিশের এসি আবুল হাসান বলেন, মেয়েটির শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করেছে।

অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, মিলেছে ধর্ষণের আলামত

মাস্টারমাইন্ড শিক্ষার্থীর মৃত্যু কিভাবে হয়েছে এমন ইস্যু পরিষ্কার করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরা নমুনায় ধর্ষণের আলামত পেয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে অতিরিক্ত রক্ষরক্ষণে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীর নমুনা সংগ্রহ করে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্ষপাত ঘটে তার। যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে ইনজুরি পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়ানি। তিনি আরও বলেন, ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে। রিপোর্টের জন্য সপ্তাহ দুয়েক অপেক্ষা করতে হবে। এর আগে বয়স নির্ধারণের জন্য মরদেহের প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়। পরে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে যান।

ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে দিহানের জবানবন্দি

এদিকে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার কথিত প্রেমিক ইফতেখার ফারদিন দিহান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালতের আদেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে দিহানকে কারাগারে পাঠানোর জন্য আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামি দিহানকে আদালতে হাজির করে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। পরে দিহান স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

আদালত সূত্র জানায়, গতকাল বিকেলে মামলাটির এজাহার আদালতে আসে। এরপর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ মামলার এজাহার গ্রহণ করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আ ফ ম আসাদুজ্জামানকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালতে কলাবাগান থানার (নারী ও শিশু) সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা স্বপন জানান, মামলার একমাত্র আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহান (১৮) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এজাহারে বলা হয়, গত ৭ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পর তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হয়ে যান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। মামলার একমাত্র আসামি ‘ও’ লেভেলপড়ুয়া শিক্ষার্থী দিহান দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়েছে। অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসপাতালে পৌঁছান। হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তার কলাবাগান ডলফিন গলির বাসা ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ধর্ষকের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি ন্যাপের

কলাবাগানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মাস্টারমাইন্ডের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ এবং ঘটনার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। একই সঙ্গে তারা ধর্ষকের দ্রুত বিচার দাবি করেন। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো দলের দফতর সম্পাদক মো. নুরুল আমান চৌধুরীর সই করা এক বিবৃতিতে ন্যাপ নেতারা এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, কিশোরী ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রমাণিত হলো ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে না। এজন্য প্রয়োজন আইনের শাসন ও সামাজিক প্রতিরোধ। শীক্ষার্থী ধর্ষণ-হত্যা সামাজিক অসহিষ্ণুতারই বহিঃপ্রকাশ। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দেশজুড়ে একের পর এক ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে তুমুল আন্দোলনের মুখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করলেও প্রশ্ন জাগে আইন করার পরও কি ধর্ষণ কমেছে? নেতারা প্রশ্ন করেন, শুধু আইন করেই কি ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব? ন্যাপ নেতারা বলেন, অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত না করলে আইন সংশোধন করেও কোন ফায়দা হবে না। বিচার নিশ্চিত না করে যত কঠোর আইন-ই হোক, ফলপ্রসূ হবে না। ন্যাপ নেতারা দাবি করেন, রাষ্ট্রের উচিত হবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা।