শরীয়তপুরে মনোরম পরিবেশে বই পড়ার আয়োজন!

লাইব্রেরি মানেই ধূলায় জড়ানো তাকে কিছু পুরোনো বই। সেই ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার এক বই প্রেমী। ছাদে গড়ে তুলেছেন ভিন্নধর্মী একটি পাঠাগার। আধুনিকতা আর প্রকৃতির সংমিশ্রণের এক অপূর্ব মিলন মেলা মানিক হোসেনের - উন্মুক্ত গ্রন্থাগারটি।

পাঠাগারটি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা শহরের একটি তিন তলা ছাদের ওপর। দেখলেই, নজর কাড়বে যে কারোর! গাছ, ফুল আর লাতাপাতায় মোড়ানো এক টুকরো ছাদ। দেয়ালগুলো নানান রঙের নকশায় রঙিন। রয়েছে সুন্দর বসার ব্যবস্থা আর ছবি তোলার কর্নারও। এটা তো গেলো বাইরের দৃশ্য। ভিতরে ঢুকতেই দেখা মিলবে ভিন্ন ভিন্ন নক্সায় তৈরি করা বই রাখার তাক আর সেই তাকগুলোতে সারি সারি বই।

তিনটি কক্ষের প্রথমটিতে ৭টি বাহারি সেলফে দেশ বিদেশের লেখকের বইয়ে ঠাসা। দ্বিতীয় কক্ষে প্রবেশ করলে মনে হবে এটা শুধু পাঠাগার নয় সংগ্রহশালাও। বিভিন্ন দেশের কাগজের মুদ্রা শাটানো হয়েছে বিশেষ আলমিরায়। খেলাধুলা উপকরণের জন্য রয়েছে একটি ভিন্ন তাক আর হারিয়ে যাওয়া পুরোনো ঐতিহ্যের কিছু নির্দশন রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় একটি সেলফে। ব্যালকনিতে বসে পড়ার সাথে প্রকৃতি উপভোগেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিন নম্বর কক্ষে ঢুকতেই মিলবে ছবি আর মৃতশিল্পের সমাহার। এখানেও রয়েছে ব্যতিক্রমী নক্সায় তৈরি করা তাকগুলোতে বিভিন্ন লেখকের বই। পাশেই আরাম কেদারায় বসে পড়ার ব্যবস্থাও। এই কক্ষেই শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় খেলনাও রয়েছে। ছোট বেলা থেকেই যাতে বই পড়ায় অভ্যস্ত হয় যেজন্য এ ধরনের আয়োজন রাখা হয়েছে।

গ্রন্থগারটির তিন কক্ষেই সাজানো হয়েছে আলাদা আলাদা চিন্তা চেতনায়। সংগ্রহে রয়েছে ১ হাজার ৭শ বই। শিশু-কিশোর আর বয়ো-বৃদ্ধ সবার জন্য উপযোগী এই পাঠাগারটি উন্মুক্ত হলেও পরিচালিত হয়ে থাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে। পাঠাগারে বসে বই পড়ায় নেই কোন বাধা নিষেধ তবে যদি কেউ বই বাড়ি নিয়ে যেতে চান তাহলে রেজিখাতায় লিপিবদ্ধ করে ১৫ দিনের জন্য তা রাখা যাবে। আবার ফেরত দিলে মিলবে নতুন বই। তবে এখানে বই পড়তে বা নিয়ে যেতে নেই অর্থে কোন বালাই। সম্পূর্ণ সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত লাইব্রেরিটি পুরোপুরি নিরাপত্তা বেষ্টিত। দৃষ্টিনন্দন এই উন্মুক্ত গ্রন্থাগারটিতে আসলে যে কারোরই মন জুড়িয়ে যাবে।

ঈশিতা ইসলাম চৈতি দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। কলেজ বন্ধ, ঘরে বসে বসে এক ঘেয়ে হয়ে উঠেছে সে। করোনার সময় পড়াশুনার গতি থেমে গেছে। তাই বান্ধবীর সাথেই সময় কাটাতে এখানে এসেছে। ঈশিতা বলেন, মনে হচ্ছে এতদিন খুব মিছ করেছি। এতদিন ঘরবন্দী ছিলাম। লাইব্রেরিটির সন্ধান আগে পেলে অনেক কিছুই শিখতে পারতাম। এখন থেকে নিয়মিত আসব।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ। গাছপালায় ঘেরা ছাদের এক কোনে চেয়ারে বসে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন। কাছে যেতেই আচমকা তাকান। কিছু সময় গল্প হয় তার সাথে। গল্পে গল্পে জানা যায় তিনি তেমন অবসর পান না। তারপরও যতটুকু অবসর সময় থাকে সেই সময়টুকু এই পাঠাগারেই বসে কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তিনি গাছপ্রেমী সাথে বই পড়তেও ভালবাসেন। তবে এখানে এসে গাছপালা নিয়ে যত বই আছে সেগুলোই বেশি পড়া হয় তার। তিনি বলেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন একটি লাইব্রেরি গড়ে উঠবে তা কখনও ভাবতে পারিনি। ছোট থেকে বয়স্ক সবার উপযোগী এই লাইব্রেরিটি। প্রাকৃতিক পরিবেশে বসে বই পড়ার ব্যবস্থা আমাদের মুগ্ধ করেছে। আমার মনে হয় ব্যক্তি উদ্যোগে অঞ্চলে এমন লাইব্রেরি এটাই প্রথম।

উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের উদ্যোক্তা মানিক হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই লাইব্রেরি করার চিন্তা মাথায় আসে। মাধ্যমিকে পড়ার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে লাইব্রেরি নিয়ে কথা বলি কিন্তু তার কাছ থেকে কোন সাড়া পাইনি। পড়াশুনা শেষে বিদেশ চলে গেলাম। ১১ বছর পর দেশে ফিরে এলাম। হাতে সময় পেয়ে ভাবলাম লাইব্রেরিটা করেই ফেলি। প্রথমে চিন্তা ছিল একটি সংগ্রশালা করি। পরে দেখলাম এই সংগ্রশালা শুধু আমারই লাভ হবে। দুই একজন বাদে এরফল অন্যরা পাবে না। পরে পাবলিক লাইব্রেরি চিন্তা করি। কিন্তু জায়গা পাওয়া নিয়ে বেশ জটিলাতায় পড়ি। সেটারও অবসান হয়। আমার এক আত্মীয় তার ছাদটি আমার লাইব্রেরির জন্য ছেড়ে দেন। তিনি আরও বলেন, প্রথম থেকেই আমার চিন্তা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার লাইব্রেরি গড়ে তুলব। যেখানে পড়তে এসে যেন একটি প্রশান্তি পাওয়া যায়। যেন বই পড়ার সময়টা আনন্দেই কেটে যায়। উন্মুক্ত গ্রন্থাগারটি নিয়ে আমার আরও পরিকল্পনা রয়েছে। এ ধারণা ছড়িয়ে দিতে চাই সারাদেশে।

আরও খবর
সদরপুরে স্কুল-জনবসতির কাছে ইটভাটা : হুমকিতে জনস্বাস্থ্য
খুলনায় করোনা ভ্যাকসিনের প্রাথমিক চাহিদা ৯৭ হাজার
ঘুষ না পেয়ে জেলেকে হরিণ শিকারি সাজিয়ে মামলা দেয়ার অভিযোগ
কর্মশালায় বক্তারা কিশোরগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি অনেক জেলার তুলনায় ভালো
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯ জুয়াড়ি আটক
আধুনিকতার ছোঁয়ায় কদর নেই হোগলা পাটির
কুড়িয়ে পাওয়া ‘পরিনা’ই মা-বাবার শেষ ভরসা
২ ভাটা জরিমানা ৩ লাখ টাকা
বালিয়ামারী বর্ডার হাট খুলে দিতে ভারতের চিঠি
চকরিয়ায় সওজের জায়গায় নির্মিত ২শ’ দোকান উচ্ছেদ
ব্যবস্থাপনার অভাবে ৮০ টাকার টমেটো ৫ টাকায় বিক্রি চাষিরা দিশেহারা
বালিয়াকান্দিতে হত্যা মামলার আসামির মরদেহ উদ্ধার
রাসিকে দেড়শ’ দোকান উচ্ছেদ

শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২১ , ২ মাঘ ১৪২৭, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

শরীয়তপুরে মনোরম পরিবেশে বই পড়ার আয়োজন!

কাজী মনিরুজ্জামান মনির, শরীয়তপুর

লাইব্রেরি মানেই ধূলায় জড়ানো তাকে কিছু পুরোনো বই। সেই ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার এক বই প্রেমী। ছাদে গড়ে তুলেছেন ভিন্নধর্মী একটি পাঠাগার। আধুনিকতা আর প্রকৃতির সংমিশ্রণের এক অপূর্ব মিলন মেলা মানিক হোসেনের - উন্মুক্ত গ্রন্থাগারটি।

পাঠাগারটি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা শহরের একটি তিন তলা ছাদের ওপর। দেখলেই, নজর কাড়বে যে কারোর! গাছ, ফুল আর লাতাপাতায় মোড়ানো এক টুকরো ছাদ। দেয়ালগুলো নানান রঙের নকশায় রঙিন। রয়েছে সুন্দর বসার ব্যবস্থা আর ছবি তোলার কর্নারও। এটা তো গেলো বাইরের দৃশ্য। ভিতরে ঢুকতেই দেখা মিলবে ভিন্ন ভিন্ন নক্সায় তৈরি করা বই রাখার তাক আর সেই তাকগুলোতে সারি সারি বই।

তিনটি কক্ষের প্রথমটিতে ৭টি বাহারি সেলফে দেশ বিদেশের লেখকের বইয়ে ঠাসা। দ্বিতীয় কক্ষে প্রবেশ করলে মনে হবে এটা শুধু পাঠাগার নয় সংগ্রহশালাও। বিভিন্ন দেশের কাগজের মুদ্রা শাটানো হয়েছে বিশেষ আলমিরায়। খেলাধুলা উপকরণের জন্য রয়েছে একটি ভিন্ন তাক আর হারিয়ে যাওয়া পুরোনো ঐতিহ্যের কিছু নির্দশন রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় একটি সেলফে। ব্যালকনিতে বসে পড়ার সাথে প্রকৃতি উপভোগেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিন নম্বর কক্ষে ঢুকতেই মিলবে ছবি আর মৃতশিল্পের সমাহার। এখানেও রয়েছে ব্যতিক্রমী নক্সায় তৈরি করা তাকগুলোতে বিভিন্ন লেখকের বই। পাশেই আরাম কেদারায় বসে পড়ার ব্যবস্থাও। এই কক্ষেই শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় খেলনাও রয়েছে। ছোট বেলা থেকেই যাতে বই পড়ায় অভ্যস্ত হয় যেজন্য এ ধরনের আয়োজন রাখা হয়েছে।

গ্রন্থগারটির তিন কক্ষেই সাজানো হয়েছে আলাদা আলাদা চিন্তা চেতনায়। সংগ্রহে রয়েছে ১ হাজার ৭শ বই। শিশু-কিশোর আর বয়ো-বৃদ্ধ সবার জন্য উপযোগী এই পাঠাগারটি উন্মুক্ত হলেও পরিচালিত হয়ে থাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে। পাঠাগারে বসে বই পড়ায় নেই কোন বাধা নিষেধ তবে যদি কেউ বই বাড়ি নিয়ে যেতে চান তাহলে রেজিখাতায় লিপিবদ্ধ করে ১৫ দিনের জন্য তা রাখা যাবে। আবার ফেরত দিলে মিলবে নতুন বই। তবে এখানে বই পড়তে বা নিয়ে যেতে নেই অর্থে কোন বালাই। সম্পূর্ণ সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত লাইব্রেরিটি পুরোপুরি নিরাপত্তা বেষ্টিত। দৃষ্টিনন্দন এই উন্মুক্ত গ্রন্থাগারটিতে আসলে যে কারোরই মন জুড়িয়ে যাবে।

ঈশিতা ইসলাম চৈতি দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। কলেজ বন্ধ, ঘরে বসে বসে এক ঘেয়ে হয়ে উঠেছে সে। করোনার সময় পড়াশুনার গতি থেমে গেছে। তাই বান্ধবীর সাথেই সময় কাটাতে এখানে এসেছে। ঈশিতা বলেন, মনে হচ্ছে এতদিন খুব মিছ করেছি। এতদিন ঘরবন্দী ছিলাম। লাইব্রেরিটির সন্ধান আগে পেলে অনেক কিছুই শিখতে পারতাম। এখন থেকে নিয়মিত আসব।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ। গাছপালায় ঘেরা ছাদের এক কোনে চেয়ারে বসে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন। কাছে যেতেই আচমকা তাকান। কিছু সময় গল্প হয় তার সাথে। গল্পে গল্পে জানা যায় তিনি তেমন অবসর পান না। তারপরও যতটুকু অবসর সময় থাকে সেই সময়টুকু এই পাঠাগারেই বসে কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তিনি গাছপ্রেমী সাথে বই পড়তেও ভালবাসেন। তবে এখানে এসে গাছপালা নিয়ে যত বই আছে সেগুলোই বেশি পড়া হয় তার। তিনি বলেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন একটি লাইব্রেরি গড়ে উঠবে তা কখনও ভাবতে পারিনি। ছোট থেকে বয়স্ক সবার উপযোগী এই লাইব্রেরিটি। প্রাকৃতিক পরিবেশে বসে বই পড়ার ব্যবস্থা আমাদের মুগ্ধ করেছে। আমার মনে হয় ব্যক্তি উদ্যোগে অঞ্চলে এমন লাইব্রেরি এটাই প্রথম।

উন্মুক্ত গ্রন্থাগারের উদ্যোক্তা মানিক হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই লাইব্রেরি করার চিন্তা মাথায় আসে। মাধ্যমিকে পড়ার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে লাইব্রেরি নিয়ে কথা বলি কিন্তু তার কাছ থেকে কোন সাড়া পাইনি। পড়াশুনা শেষে বিদেশ চলে গেলাম। ১১ বছর পর দেশে ফিরে এলাম। হাতে সময় পেয়ে ভাবলাম লাইব্রেরিটা করেই ফেলি। প্রথমে চিন্তা ছিল একটি সংগ্রশালা করি। পরে দেখলাম এই সংগ্রশালা শুধু আমারই লাভ হবে। দুই একজন বাদে এরফল অন্যরা পাবে না। পরে পাবলিক লাইব্রেরি চিন্তা করি। কিন্তু জায়গা পাওয়া নিয়ে বেশ জটিলাতায় পড়ি। সেটারও অবসান হয়। আমার এক আত্মীয় তার ছাদটি আমার লাইব্রেরির জন্য ছেড়ে দেন। তিনি আরও বলেন, প্রথম থেকেই আমার চিন্তা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার লাইব্রেরি গড়ে তুলব। যেখানে পড়তে এসে যেন একটি প্রশান্তি পাওয়া যায়। যেন বই পড়ার সময়টা আনন্দেই কেটে যায়। উন্মুক্ত গ্রন্থাগারটি নিয়ে আমার আরও পরিকল্পনা রয়েছে। এ ধারণা ছড়িয়ে দিতে চাই সারাদেশে।