খাল বন্ধ করে কালনা সেতুর অ্যাপ্রোচ নির্মাণ

গোপালগঞ্জে ২ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

গোপালগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাটিয়াপাড়া সেচ ও পানি নিষ্কাশন খাল বন্ধ করে কালনা সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়ক বিভাগ ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের অওতায় মধুমতি নদীর ওপর দেশের প্রথম ৬ লেনের কালনা সেতু বাস্তাবায়ন করছে। ওই সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া খাল বন্ধ করে নির্মাণ করায় ৬ গ্রামের ২টি বিলের ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা ভাটিয়াপাড়া খালের পানি সরবরাহ ঠিক রেখে কালনা সেতুর অ্যাপ্রোচ দাবি জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়নবোর্ড ওই খাল বন্ধ না করে খালের ওপর সেতু নির্মাণ করে খালের পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে কালনা সেতুর অ্যাপ্রোচ নির্মাণের জন্য কালনা সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় পাউবোর সেচ ও নিষ্কাশন খালটি একদিকে ধুসর ও বিলপবনের বিল এবং অন্যদিকে মধুমতি নদীর সাথে একটি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামোর মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। বর্তমানে ‘পশ্চিমাঞ্চলীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পুরুলিয়া-চরভাটপাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ উপ-প্রকল্পের পুনর্বাসন কর্মসূচির অধীনে খালটি পুনর্খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ না হলে খাল খননের উদ্যোগ সফল হবে না। ব্রিজ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা হলে খালের উভয়পাড়ে ৩ হাজার হেক্টর আবাদি জমির কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ধুসর ও বিলপবনের বিলের পানি নির্গমণসহ এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি নান্টু শরীফ বলেন, মধুমতি নদীতে কালনা সেতু হচ্ছে। এ সেতুর ৬ লেনের অ্যাপ্রোচ সড়ক হচ্ছে ২টি বিলে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল ভাটিয়াপাড়া খাল বন্ধ করে। এ খালের পানি দিয়ে ভাটিয়াপাড়া, বরাশুর, ধুসর, বুধপাশা, রাতইল ও পোনা গ্রামের ধূসর বিল ও বিলপবনের বিলের চাষাবাদ ও সেচ কাজ করে কৃষক। এ খাল দিয়ে বিলের পানি মধুমতি নদীতে ওঠা নামা করে। এখন এ খাল বন্ধ করে কালনা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ করা হচ্ছে। এমনকি পাইপ লাইনের মাধ্যমে বালু এনে খালের মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মজুদ করছেন । এতে ওই দু’বিলের ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে বোরো আবাদ ও সেচ ব্যবস্থা। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরবে। তাই আমরা পানি উন্নয় বোর্ডের চিঠির বাস্তবায়ন চাচ্ছি।’

খালের তীরবর্তী বরাশুর গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম (৬০) বলেন, ‘খাল ভরাট করে সড়ক নির্মাণ ও খালের মধ্যে বালুর চাতাল করে সেখানে বালু ফেলার পর থেকে একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের বাড়ি-ঘরে পানি উঠে যায়। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের ঘর, রান্না ঘর ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। আমাদের কষ্টের শেষ থাকে না।’

সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘সওজের উদাসিনতা ও খামখেয়ালিপনা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বার্থন্বেষী মনোভাবের কারণে ব্রিজ নির্মাণের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই আমরা ব্রিজ নির্মাণের জন্য এমপি সাহেবের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম কনস্ট্রাকশনের মহাসড়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোনায়েদ রাহবার বলেন, ‘বিষয়টি সম্পূর্ণ সওজ ও পাউবোর ওপর নির্ভর করছে। আমরাতো ঠিকাদার। আমাদের যেভাবে নির্দেশ দেবে, আমরা সেভাবে কাজ করবো। তবে দু’বিভাগের বিষয়টি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গেছে। আমরাও বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখনও কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি।’

নির্মাণাধীন অ্যাপ্রোচ সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিপিএম (সওজ) প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াসউদ্দিন জানান, মূল ডিজাইনে ওখানে কোন ব্রিজ বা কালভার্ট নেই। খালটি অনেক আগে থেকে বন্ধ ছিল। কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘জনগণের দাবিতে ভাটিয়াপাড়া খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। বিষয়টি দু’বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

image
আরও খবর
পোরশায় অতিরিক্ত কীটনাশকে ৬ বিঘা বোরো বীজতলা নষ্ট করল প্রতিপক্ষ
আশুলিয়ায় ছাত্রীকে ধর্ষণ : শিক্ষক আটক
জামালপুরে ট্রেনের ধাক্কায় রিকশা আরোহী নিহত চালক আহত
কালারমারছড়ার তহসিলদার দুদকের হাতে আটক
রায়পুরায় সমবায় পদ্ধতিতে ৮৫ কৃষকের ৫০ একরে চাষাবাদ শুরু
কোরিয়ার সঙ্গে সিকৃবি’র সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত
লেনিনের আদর্শে গণমানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হবে
ভালুকায় ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ হুমকিতে বনসম্পদ জনস্বাস্থ্য
বাগেরহাটে বিনা ভোটে নির্বাচিত হচ্ছেন ৩ প্রার্থী
সৈয়দপুর স্থগিত নির্বাচন ২৮ ফেব্রুয়ারি
ডিমলায় কিশোরীহত্যা : মৃত্যুদণ্ড ১ যাবজ্জীবন ১
৯ জেলায় স্বপ্নের নীড় পাবে ৬৫৮২ অসহায় পরিবার
নাইক্ষ্যংছড়িতে ইয়াবা বিক্রেতা নিহত

শনিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২১ , ৯ মাঘ ১৪২৭, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

খাল বন্ধ করে কালনা সেতুর অ্যাপ্রোচ নির্মাণ

গোপালগঞ্জে ২ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ

image

গোপালগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাটিয়াপাড়া সেচ ও পানি নিষ্কাশন খাল বন্ধ করে কালনা সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়ক বিভাগ ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের অওতায় মধুমতি নদীর ওপর দেশের প্রথম ৬ লেনের কালনা সেতু বাস্তাবায়ন করছে। ওই সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া খাল বন্ধ করে নির্মাণ করায় ৬ গ্রামের ২টি বিলের ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা ভাটিয়াপাড়া খালের পানি সরবরাহ ঠিক রেখে কালনা সেতুর অ্যাপ্রোচ দাবি জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়নবোর্ড ওই খাল বন্ধ না করে খালের ওপর সেতু নির্মাণ করে খালের পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে কালনা সেতুর অ্যাপ্রোচ নির্মাণের জন্য কালনা সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় পাউবোর সেচ ও নিষ্কাশন খালটি একদিকে ধুসর ও বিলপবনের বিল এবং অন্যদিকে মধুমতি নদীর সাথে একটি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামোর মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। বর্তমানে ‘পশ্চিমাঞ্চলীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পুরুলিয়া-চরভাটপাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ উপ-প্রকল্পের পুনর্বাসন কর্মসূচির অধীনে খালটি পুনর্খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ না হলে খাল খননের উদ্যোগ সফল হবে না। ব্রিজ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা হলে খালের উভয়পাড়ে ৩ হাজার হেক্টর আবাদি জমির কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ধুসর ও বিলপবনের বিলের পানি নির্গমণসহ এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি নান্টু শরীফ বলেন, মধুমতি নদীতে কালনা সেতু হচ্ছে। এ সেতুর ৬ লেনের অ্যাপ্রোচ সড়ক হচ্ছে ২টি বিলে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল ভাটিয়াপাড়া খাল বন্ধ করে। এ খালের পানি দিয়ে ভাটিয়াপাড়া, বরাশুর, ধুসর, বুধপাশা, রাতইল ও পোনা গ্রামের ধূসর বিল ও বিলপবনের বিলের চাষাবাদ ও সেচ কাজ করে কৃষক। এ খাল দিয়ে বিলের পানি মধুমতি নদীতে ওঠা নামা করে। এখন এ খাল বন্ধ করে কালনা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ করা হচ্ছে। এমনকি পাইপ লাইনের মাধ্যমে বালু এনে খালের মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মজুদ করছেন । এতে ওই দু’বিলের ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে বোরো আবাদ ও সেচ ব্যবস্থা। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরবে। তাই আমরা পানি উন্নয় বোর্ডের চিঠির বাস্তবায়ন চাচ্ছি।’

খালের তীরবর্তী বরাশুর গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম (৬০) বলেন, ‘খাল ভরাট করে সড়ক নির্মাণ ও খালের মধ্যে বালুর চাতাল করে সেখানে বালু ফেলার পর থেকে একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের বাড়ি-ঘরে পানি উঠে যায়। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের ঘর, রান্না ঘর ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। আমাদের কষ্টের শেষ থাকে না।’

সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘সওজের উদাসিনতা ও খামখেয়ালিপনা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বার্থন্বেষী মনোভাবের কারণে ব্রিজ নির্মাণের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই আমরা ব্রিজ নির্মাণের জন্য এমপি সাহেবের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম কনস্ট্রাকশনের মহাসড়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোনায়েদ রাহবার বলেন, ‘বিষয়টি সম্পূর্ণ সওজ ও পাউবোর ওপর নির্ভর করছে। আমরাতো ঠিকাদার। আমাদের যেভাবে নির্দেশ দেবে, আমরা সেভাবে কাজ করবো। তবে দু’বিভাগের বিষয়টি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গেছে। আমরাও বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখনও কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি।’

নির্মাণাধীন অ্যাপ্রোচ সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিপিএম (সওজ) প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াসউদ্দিন জানান, মূল ডিজাইনে ওখানে কোন ব্রিজ বা কালভার্ট নেই। খালটি অনেক আগে থেকে বন্ধ ছিল। কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।

কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘জনগণের দাবিতে ভাটিয়াপাড়া খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। বিষয়টি দু’বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’