টিকার নিবন্ধন কাল থেকে শুরু

করোনার টিকা নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধন শুরু হচ্ছে আগামীকাল। নিবন্ধনের ওয়েবপোর্র্টাল গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করেছে সরকারের আইসিটি বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এরপরই টিকা গ্রহীতাদের নিবন্ধন শুরু হবে। টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকার তিনটি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সকে গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

চুক্তির আওতায় কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ গতকাল দেশে পৌঁছেছে। এই টিকা গতকালই টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের নিজস্ব ওয়্যারহাউজে রাখা হয়।

প্রথমদিন কুর্মিটোলা হাসপাতালে ২০ জনকে টিকা দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরদিন কুর্মিটোলাসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী জেনারেল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) টিকা দেয়া হবে। এই পাঁচ হাসপাতালে টিকা গ্রহীতাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ শেষে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে সাত হাজার ৩৪৪টি হাসপাতাল কেন্দ্রে করোনার টিকা দেয়া হবে।

ইতোমধ্যে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে আসা ২০ লাখ ডোজ দিয়ে ঢাকায় কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এই টিকার পুরোটাই ঢাকার মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দেয়া হবে।

প্রথমদিন ২০ জনকে টিকা

প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল বিকেল সাড়ে তিনটায় করোনার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। ওইদিন মোট ২০ জনকে টিকা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রথম পাঁচজনের টিকা দেয়ার সময় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকবেন। এরপর আরও ১৫ জনকে টিকা দেয়া হবে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘উদ্বোধনী টিকাদান অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। বক্তব্য দেবেন শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রী।’ এ অনুষ্ঠানে টিকা গ্রহীতাদের নিবন্ধনের সময় পরিবর্তনের বিষয়ে জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আগের ঘোষণা অনুযায়ী ২৬ জানুয়ারি টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর নিবন্ধন শুরু হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বিটিভি সরাসরি সম্প্রচার করবে।

নিবন্ধন ‘অ্যাপ’ হস্তান্তর

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সুরক্ষা অবহিতকরণ সভায় টিকা নিবন্ধনের ওয়েবপোর্র্টাল হস্তান্তর করা হয়। ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট ও অ্যাপে নিবন্ধন করে সব নাগরিক পর্যায়ক্রমে করোনা টিকা পাবেন। করোনার টিকা (ভ্যাকসিন) পেতে নিবন্ধনের জন্য ‘সুরক্ষা’ প্লাটফর্ম তৈরি করেছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। এই প্লাটফর্ম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম প্রমুখ।

টিকা নেয়ার নিবন্ধন প্রক্রিয়া

আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম জানিয়েছেন, প্রথমে ওয়েবপোর্টালে (www.surokkha.gov.bd) প্রবেশ করতে হবে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করা যাবে। এরপর নিবন্ধন বাটনে ক্লিক করে নাগরিক শ্রেণী (সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক,আধা-সামরিক, প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কার্যালয়, গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সিটি ও পৌরকর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, ইত্যাদি মোট ১৮টি ক্যাটাগরি) সিলেক্ট করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে। এরপর যাচাই বাটনে ক্লিক করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে বাংলা ও ইংরেজিতে নাম ফর্মে দেখা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি রোগবিধি আছে কিনা হ্যাঁ অথবা না সিলেক্ট করতে হবে।

পরবর্তী ধাপগুলোতে নিবন্ধনকারী নাগরিকের পেশা এবং সরকারি কোভিড-১৯ কাজের সঙ্গে জড়িত কিনা তা নির্বাচন করতে হবে। যে মোবাইলে ভ্যাকসিনের তথ্য ও ভেরিফিকেশন এসএমএস পেতে চান তা নিবন্ধনের সময় তা দিতে হবে। ফরমে বর্তমান ঠিকানা ও টিকাদান কেন্দ্র নির্বাচন করতে হবে এবং সব শেষে মোবাইলে প্রাপ্ত OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন হয়ে গেলে ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনকারীর মোবাইল ফোন নম্বরে নির্ধারিত সময়ে এসএমএসে টিকা গ্রহণের তারিখ ও কেন্দ্র জানিয়ে দেয়া হবে। টিকা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় প্রিন্টেড টিকা কার্ড ও এনআইডি কপি সঙ্গে নিতে হবে। প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে পরবর্তী ডোজ টিকা দেয়া হবে। দুটি ডোজ নেয়া হলে সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

বিকল্প ব্যবস্থায়ও নিবন্ধনের সুযোগ

যাদের ইন্টারনেট সুবিধা বা অ্যাপ ব্যবহারের মতো ডিভাইস নেই, তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আগ্রহীদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ফ্রি নিবন্ধন করার সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

ছয় ধরনের নাগরিককে করোনার টিকা নয়

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভায় বলা হয়, ছয় শ্রেণীর নাগরিককে এই মুহূর্তে করোনার টিকা দেয়া হবে না। তারা হলেন- গর্ভবতী নারী, উচ্চ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, ১৮ বছরের নিচে শিশু, করোনা আক্রান্ত হওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে, হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর অসুস্থ এবং নিবন্ধনের বাইরে থাকা নাগরিকরা টিকা পাবেন না। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে এ সিদ্ধান্তও পরিবর্তন হতে পারে।

টিকাদান কেন্দ্র

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে সাত হাজার ৩৪৪টি দল তৈরি করা হয়েছে। একটি দলের মধ্যে ছয়জন সদস্য থাকবে। এরমধ্যে দু’জন টিকাদানকারী (নার্স, স্যাকমো, পরিবারকল্যাণ সহকারী) ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।

দেশে পৌঁছলো চুক্তির ৫০ লাখ ডোজ টিকা

গতকাল সকাল ১০টার কিছু পর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিন ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা পেতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে সেরামের সঙ্গে করেছে বাংলাদেশ। এই টিকার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ গতকাল দেশে এসেছে।

টিকার চালান গ্রহণ করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এখন থেকে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বেক্সিমকোর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসবে। এই ভ্যাকসিন পরিবহনের জন্য আমরা বিশেষ কাভার্ড ভ্যান কিনেছি। যা আমাদের কাছে আগে ছিল না। আজ ৯টি ভ্যান ভ্যাকসিন বহন করছে। মার্চে আরও ভ্যান আসবে।’

মুম্বাই থেকে এই ভ্যাকসিন ঢাকায় এসেছে জানিয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, বিমানবন্দর থেকে এগুলো বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউজে/গুদামে রাখা হবে।

প্রতিটি ভ্যাকসিনই চেক হবে

সরকারকে দেয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি ভ্যাকসিন চেক করে দেখা হবে জানিয়ে পাপন বলেন, ‘কোথাও কোন ত্রুটি, ড্যামেজ বা শর্টেজসহ কোন রকমের সমস্যা থাকলে সেগুলো বেক্সিমকো ফার্মা নিয়ে যাবে। সেগুলোর দায় বেক্সিমকোর। সরকারকে আমরা নিখুঁত ভ্যাকসিন দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি ভ্যাকসিনের স্যাম্পল আমরা ওষুধ প্রশাসনের ল্যাবরেটরিতে পাঠাব টেস্ট করতে। তারা ছাড়পত্র দিলে প্রতিটি জেলায় আমরা পৌঁছে দেব। ধারণা করছি, ৪৮ ঘণ্টা পর থেকে অথবা ৪-৫ দিনের মধ্যে আমরা এই ভ্যাকসিনগুলো দেশের সব জেলায় পৌঁছে দিতে পারব।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩ হাসপাতালের ৮৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার তিনটি হাসপাতালের ৮৫ জন চিকিৎসক ও নার্সকে করোনার টিকা প্রয়োগের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে নজির স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ।

তিনি গতকাল দুপুরে দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। সকাল ১০টা থেকে এই মিলনায়তনে বিএসএমএমইউ, ঢামেক ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮৫ জন চিকিৎসক ও নার্সকে টিকা প্রয়োগের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় মাস্টার ট্রেইনার করে নিয়ে এসেছেন তারা। যারা মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে আসছেন, প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন, তারাই মূলত প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘সব টিকার ছোটখাটো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এটা সবার জন্য না। কারও কারও হতে পারে। সেই বিষয়গুলো যদি হয়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যদি হয়, সেই বিষয়ে আমাদের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা কী হবে, সে বিষয়েও আমরা আজকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমাদের চিকিৎসক, সেবিকারা যেসব হাসপাতালে এই ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হবে, তারা এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত হবেন। কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে সে বিষয়ে তারা ব্যবস্থাপনা দিয়ে থাকবেন।’

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২১ , ১২ মাঘ ১৪২৭, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

টিকার নিবন্ধন কাল থেকে শুরু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

করোনার টিকা নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধন শুরু হচ্ছে আগামীকাল। নিবন্ধনের ওয়েবপোর্র্টাল গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করেছে সরকারের আইসিটি বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এরপরই টিকা গ্রহীতাদের নিবন্ধন শুরু হবে। টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকার তিনটি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সকে গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

চুক্তির আওতায় কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ গতকাল দেশে পৌঁছেছে। এই টিকা গতকালই টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের নিজস্ব ওয়্যারহাউজে রাখা হয়।

প্রথমদিন কুর্মিটোলা হাসপাতালে ২০ জনকে টিকা দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরদিন কুর্মিটোলাসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী জেনারেল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) টিকা দেয়া হবে। এই পাঁচ হাসপাতালে টিকা গ্রহীতাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ শেষে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে সাত হাজার ৩৪৪টি হাসপাতাল কেন্দ্রে করোনার টিকা দেয়া হবে।

ইতোমধ্যে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে আসা ২০ লাখ ডোজ দিয়ে ঢাকায় কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এই টিকার পুরোটাই ঢাকার মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দেয়া হবে।

প্রথমদিন ২০ জনকে টিকা

প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল বিকেল সাড়ে তিনটায় করোনার টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। ওইদিন মোট ২০ জনকে টিকা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রথম পাঁচজনের টিকা দেয়ার সময় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকবেন। এরপর আরও ১৫ জনকে টিকা দেয়া হবে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘উদ্বোধনী টিকাদান অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। বক্তব্য দেবেন শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রী।’ এ অনুষ্ঠানে টিকা গ্রহীতাদের নিবন্ধনের সময় পরিবর্তনের বিষয়ে জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আগের ঘোষণা অনুযায়ী ২৬ জানুয়ারি টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর নিবন্ধন শুরু হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বিটিভি সরাসরি সম্প্রচার করবে।

নিবন্ধন ‘অ্যাপ’ হস্তান্তর

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সুরক্ষা অবহিতকরণ সভায় টিকা নিবন্ধনের ওয়েবপোর্র্টাল হস্তান্তর করা হয়। ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট ও অ্যাপে নিবন্ধন করে সব নাগরিক পর্যায়ক্রমে করোনা টিকা পাবেন। করোনার টিকা (ভ্যাকসিন) পেতে নিবন্ধনের জন্য ‘সুরক্ষা’ প্লাটফর্ম তৈরি করেছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। এই প্লাটফর্ম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম প্রমুখ।

টিকা নেয়ার নিবন্ধন প্রক্রিয়া

আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম জানিয়েছেন, প্রথমে ওয়েবপোর্টালে (www.surokkha.gov.bd) প্রবেশ করতে হবে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করা যাবে। এরপর নিবন্ধন বাটনে ক্লিক করে নাগরিক শ্রেণী (সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামরিক,আধা-সামরিক, প্রতিরক্ষা বাহিনী, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কার্যালয়, গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সিটি ও পৌরকর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, ইত্যাদি মোট ১৮টি ক্যাটাগরি) সিলেক্ট করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিতে হবে। এরপর যাচাই বাটনে ক্লিক করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে বাংলা ও ইংরেজিতে নাম ফর্মে দেখা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি রোগবিধি আছে কিনা হ্যাঁ অথবা না সিলেক্ট করতে হবে।

পরবর্তী ধাপগুলোতে নিবন্ধনকারী নাগরিকের পেশা এবং সরকারি কোভিড-১৯ কাজের সঙ্গে জড়িত কিনা তা নির্বাচন করতে হবে। যে মোবাইলে ভ্যাকসিনের তথ্য ও ভেরিফিকেশন এসএমএস পেতে চান তা নিবন্ধনের সময় তা দিতে হবে। ফরমে বর্তমান ঠিকানা ও টিকাদান কেন্দ্র নির্বাচন করতে হবে এবং সব শেষে মোবাইলে প্রাপ্ত OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন হয়ে গেলে ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনকারীর মোবাইল ফোন নম্বরে নির্ধারিত সময়ে এসএমএসে টিকা গ্রহণের তারিখ ও কেন্দ্র জানিয়ে দেয়া হবে। টিকা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় প্রিন্টেড টিকা কার্ড ও এনআইডি কপি সঙ্গে নিতে হবে। প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে পরবর্তী ডোজ টিকা দেয়া হবে। দুটি ডোজ নেয়া হলে সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

বিকল্প ব্যবস্থায়ও নিবন্ধনের সুযোগ

যাদের ইন্টারনেট সুবিধা বা অ্যাপ ব্যবহারের মতো ডিভাইস নেই, তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আগ্রহীদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ফ্রি নিবন্ধন করার সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

ছয় ধরনের নাগরিককে করোনার টিকা নয়

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভায় বলা হয়, ছয় শ্রেণীর নাগরিককে এই মুহূর্তে করোনার টিকা দেয়া হবে না। তারা হলেন- গর্ভবতী নারী, উচ্চ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, ১৮ বছরের নিচে শিশু, করোনা আক্রান্ত হওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে, হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর অসুস্থ এবং নিবন্ধনের বাইরে থাকা নাগরিকরা টিকা পাবেন না। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে এ সিদ্ধান্তও পরিবর্তন হতে পারে।

টিকাদান কেন্দ্র

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে সাত হাজার ৩৪৪টি দল তৈরি করা হয়েছে। একটি দলের মধ্যে ছয়জন সদস্য থাকবে। এরমধ্যে দু’জন টিকাদানকারী (নার্স, স্যাকমো, পরিবারকল্যাণ সহকারী) ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।

দেশে পৌঁছলো চুক্তির ৫০ লাখ ডোজ টিকা

গতকাল সকাল ১০টার কিছু পর ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিন ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা পেতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে সেরামের সঙ্গে করেছে বাংলাদেশ। এই টিকার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ গতকাল দেশে এসেছে।

টিকার চালান গ্রহণ করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এখন থেকে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বেক্সিমকোর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসবে। এই ভ্যাকসিন পরিবহনের জন্য আমরা বিশেষ কাভার্ড ভ্যান কিনেছি। যা আমাদের কাছে আগে ছিল না। আজ ৯টি ভ্যান ভ্যাকসিন বহন করছে। মার্চে আরও ভ্যান আসবে।’

মুম্বাই থেকে এই ভ্যাকসিন ঢাকায় এসেছে জানিয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, বিমানবন্দর থেকে এগুলো বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউজে/গুদামে রাখা হবে।

প্রতিটি ভ্যাকসিনই চেক হবে

সরকারকে দেয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি ভ্যাকসিন চেক করে দেখা হবে জানিয়ে পাপন বলেন, ‘কোথাও কোন ত্রুটি, ড্যামেজ বা শর্টেজসহ কোন রকমের সমস্যা থাকলে সেগুলো বেক্সিমকো ফার্মা নিয়ে যাবে। সেগুলোর দায় বেক্সিমকোর। সরকারকে আমরা নিখুঁত ভ্যাকসিন দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি ভ্যাকসিনের স্যাম্পল আমরা ওষুধ প্রশাসনের ল্যাবরেটরিতে পাঠাব টেস্ট করতে। তারা ছাড়পত্র দিলে প্রতিটি জেলায় আমরা পৌঁছে দেব। ধারণা করছি, ৪৮ ঘণ্টা পর থেকে অথবা ৪-৫ দিনের মধ্যে আমরা এই ভ্যাকসিনগুলো দেশের সব জেলায় পৌঁছে দিতে পারব।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩ হাসপাতালের ৮৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার তিনটি হাসপাতালের ৮৫ জন চিকিৎসক ও নার্সকে করোনার টিকা প্রয়োগের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে নজির স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ।

তিনি গতকাল দুপুরে দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। সকাল ১০টা থেকে এই মিলনায়তনে বিএসএমএমইউ, ঢামেক ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮৫ জন চিকিৎসক ও নার্সকে টিকা প্রয়োগের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় মাস্টার ট্রেইনার করে নিয়ে এসেছেন তারা। যারা মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে আসছেন, প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন, তারাই মূলত প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘সব টিকার ছোটখাটো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। এটা সবার জন্য না। কারও কারও হতে পারে। সেই বিষয়গুলো যদি হয়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যদি হয়, সেই বিষয়ে আমাদের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা কী হবে, সে বিষয়েও আমরা আজকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমাদের চিকিৎসক, সেবিকারা যেসব হাসপাতালে এই ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হবে, তারা এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত হবেন। কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে সে বিষয়ে তারা ব্যবস্থাপনা দিয়ে থাকবেন।’