অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা

ড. আনু মাহ্মুদ

বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতে অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা-‘সেন্টার ফর ইকোনমিক লিগ টেবিল-২০২১’ রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশে^র ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। এ রিপোর্ট মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বে কোন দেশের অর্থনীতি কি হারে বাড়বে তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ধাপ উপরে উঠে ২৫ নম্বরে পৌঁছে যাবে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশে^র ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মানুষের বর্তমান মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার।

কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষি জমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশষ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশে^ উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশে^র গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান দশম স্থানে। বাংলাদেশ আজ চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত দেশ। ২০১৯ সালে বিশে^ মাছের উৎপাদনে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে। এসব সাফল্য অর্জিত হয়েছে সরকারের সঠিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কারণে।

একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না-এ লক্ষ্য সামনে রেখে ‘মুজিব শতবর্ষ’ উপলক্ষে দুই শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক একক গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ করে দেয়ার কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে আট লাখ ৮৫ হাজার ৫২২ পরিবারকে গৃহনির্মাণ ও ব্যারাকের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।

ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিআইবিআর) ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল-২০২১-এ যে অর্থনৈতিক সূচক প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশ ২০২০ সালে ৪১তম, ২০২৫ সালে ৩৪তম, ২০৩০ সালে ২৮তম এবং ২০৩৫ সালে ২৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে মর্মে উপস্থাপন করা হয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারীজনিত কারণে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা কিছুটা শ্লথ হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছর প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ৫.২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

মথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২,০৬৪ মার্কিন ডলারে। ২০১৯ সালে দারিদ্র্য ও অতি দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২৫.৫ ও ১০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি দিক নির্দেশনায় সরকার সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্বলিত ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা (জিডিপির ৪.৩৪ শতাংশ) ১১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যার বাস্তবায়নের কাজ বর্তমানে পুরোদমে চলছে।

গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়, শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অগ্রগতি সাধন করেছে। যার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি কর্তৃক প্রকাশিত ‘হিউম্যান ডেভলাপমেন্ট ইনডেক্স-২০২০ অনুযায়ী ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিগত বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়ে হয়েছে ১৩৩তম।

তবে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী হতে উত্তরণে সরকার কর্তৃক সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক প্রবাস আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক, মুদ্রা সরবরাহ, মূল্যস্ফীতি প্রভৃতি মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালক-সমূহের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক। সার্বিক লেনদেন ভারসাম্য উদ্বৃত্ত অবস্থা বিরাজ করছে। টাকা-ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি ঘুঁরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সরকারের মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আবার ফিরে আসছে। আমদানি বিশেষত মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানিতে গতি ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।

করোনার প্রভাবে মোট সরকারি ব্যয় ৭.৫৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, তবে সামনের দিনগুলোতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ৮.৯ শতাংশে, যা বিগত অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৮.৩ শতাংশ।

রাজস্ব খাতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে রাজস্ব আদায়ে গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এনবিআরের তথ্যমতে প্রথম প্রান্তিক এনবিআর কম রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.১১ শতাংশ। প্রবাসের আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৮.৫৪ শতাংশে; যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬.৮১ শতাংশ। সরকার কর্তৃক ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান ও রেমিট্যান্স প্রেরণ প্রক্রিয়া সহজীকরণের কারণে প্রবাসে আয় বিপুলভাবে বেড়েছে এবং আগামীতে এখাতে প্রবৃদ্ধির চলমান ধারা অব্যাহত থাকবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

করোনাকালীন সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্টভাবে এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিসমূহ আমাদের অগ্রাধিকারভুক্ত কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম।

কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় আমরা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতাভুক্ত সুবিধাসমূহের ব্যাপ্তি বাড়িয়েছি। যেমন, সামাজিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১১২টি উপজেলায় সব দারিদ্র্যপ্রবণ ব্যক্তিকে বয়স্কভাতার আওতায় আনার লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে ভাতাভোগকারীর সংখ্যা ৪৪ লাখ জন থেকে ৪৯ লাখ জনে উন্নীত করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে উক্ত খাতের জন্য বাজেটে ২,১৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

একইভাবে সর্বাধিক দারিদ্রপ্রবণ ১১২টি উপজেলার সব বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তদের ভাতার আওতায় আনার লক্ষ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বিধবা ও স্বামী নিগৃহিতা মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৭ লাখ জন থেকে ২০ লাখ ৫০ জনে উন্নীত করা হবে।

পুনরায়, দেশের সব প্রতিবন্ধীকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের সংখ্যা ১৫ লাখ ৪৫ হাজার জন থেকে ১৮ লাখ জনে উন্নীত করে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

[লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়]

anumahmud@yahoo.com

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩১ মাঘ ১৪২৭, ৩১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা

ড. আনু মাহ্মুদ

বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতে অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা-‘সেন্টার ফর ইকোনমিক লিগ টেবিল-২০২১’ রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশে^র ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। এ রিপোর্ট মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বে কোন দেশের অর্থনীতি কি হারে বাড়বে তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ধাপ উপরে উঠে ২৫ নম্বরে পৌঁছে যাবে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশে^র ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মানুষের বর্তমান মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার।

কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষি জমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশষ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশে^ উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশে^র গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান দশম স্থানে। বাংলাদেশ আজ চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত দেশ। ২০১৯ সালে বিশে^ মাছের উৎপাদনে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে। এসব সাফল্য অর্জিত হয়েছে সরকারের সঠিক ও সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কারণে।

একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না-এ লক্ষ্য সামনে রেখে ‘মুজিব শতবর্ষ’ উপলক্ষে দুই শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানপূর্বক একক গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ করে দেয়ার কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে আট লাখ ৮৫ হাজার ৫২২ পরিবারকে গৃহনির্মাণ ও ব্যারাকের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।

ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিআইবিআর) ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল-২০২১-এ যে অর্থনৈতিক সূচক প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশ ২০২০ সালে ৪১তম, ২০২৫ সালে ৩৪তম, ২০৩০ সালে ২৮তম এবং ২০৩৫ সালে ২৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে মর্মে উপস্থাপন করা হয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারীজনিত কারণে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা কিছুটা শ্লথ হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছর প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ৫.২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

মথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২,০৬৪ মার্কিন ডলারে। ২০১৯ সালে দারিদ্র্য ও অতি দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২৫.৫ ও ১০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি দিক নির্দেশনায় সরকার সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্বলিত ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা (জিডিপির ৪.৩৪ শতাংশ) ১১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যার বাস্তবায়নের কাজ বর্তমানে পুরোদমে চলছে।

গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়, শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অগ্রগতি সাধন করেছে। যার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি কর্তৃক প্রকাশিত ‘হিউম্যান ডেভলাপমেন্ট ইনডেক্স-২০২০ অনুযায়ী ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিগত বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়ে হয়েছে ১৩৩তম।

তবে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী হতে উত্তরণে সরকার কর্তৃক সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক প্রবাস আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক, মুদ্রা সরবরাহ, মূল্যস্ফীতি প্রভৃতি মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালক-সমূহের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক। সার্বিক লেনদেন ভারসাম্য উদ্বৃত্ত অবস্থা বিরাজ করছে। টাকা-ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি ঘুঁরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সরকারের মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আবার ফিরে আসছে। আমদানি বিশেষত মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানিতে গতি ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।

করোনার প্রভাবে মোট সরকারি ব্যয় ৭.৫৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, তবে সামনের দিনগুলোতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ৮.৯ শতাংশে, যা বিগত অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৮.৩ শতাংশ।

রাজস্ব খাতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে রাজস্ব আদায়ে গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এনবিআরের তথ্যমতে প্রথম প্রান্তিক এনবিআর কম রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.১১ শতাংশ। প্রবাসের আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৮.৫৪ শতাংশে; যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬.৮১ শতাংশ। সরকার কর্তৃক ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান ও রেমিট্যান্স প্রেরণ প্রক্রিয়া সহজীকরণের কারণে প্রবাসে আয় বিপুলভাবে বেড়েছে এবং আগামীতে এখাতে প্রবৃদ্ধির চলমান ধারা অব্যাহত থাকবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

করোনাকালীন সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্টভাবে এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিসমূহ আমাদের অগ্রাধিকারভুক্ত কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম।

কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় আমরা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতাভুক্ত সুবিধাসমূহের ব্যাপ্তি বাড়িয়েছি। যেমন, সামাজিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১১২টি উপজেলায় সব দারিদ্র্যপ্রবণ ব্যক্তিকে বয়স্কভাতার আওতায় আনার লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে ভাতাভোগকারীর সংখ্যা ৪৪ লাখ জন থেকে ৪৯ লাখ জনে উন্নীত করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে উক্ত খাতের জন্য বাজেটে ২,১৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

একইভাবে সর্বাধিক দারিদ্রপ্রবণ ১১২টি উপজেলার সব বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তদের ভাতার আওতায় আনার লক্ষ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বিধবা ও স্বামী নিগৃহিতা মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৭ লাখ জন থেকে ২০ লাখ ৫০ জনে উন্নীত করা হবে।

পুনরায়, দেশের সব প্রতিবন্ধীকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের সংখ্যা ১৫ লাখ ৪৫ হাজার জন থেকে ১৮ লাখ জনে উন্নীত করে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

[লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়]

anumahmud@yahoo.com