ভাসানচর যাচ্ছেন আরও সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা

চতুর্থ ধাপের প্রথম অংশে হাজারখানেক পৌঁছাবে আজ

ভাসানচরে যাচ্ছে আরও সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা। গতকালই কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ শরণার্থী শিবির থেকে চতুর্থ ধাপে (প্রথম অংশ) রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে ২১টি বাস। তার মধ্যে প্রায় হাজার খানেক রোহিঙ্গা রয়েছে বলে জানা গেছে। আজ আরেকটি দল যাওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার ও শনিবার সকালে এই রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে বাসে করে আনা হয়। আজ প্রথম অংশ ভাসানচর পৌঁছাচ্ছে।

জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশে গত শনিবার রাত থেকেই রোহিঙ্গারা সপরিবারে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে থাকেন। গতকাল সকালের মধ্যে সেখানে হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে দেখা গেছে। তারা সকালে বাসে করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। সেখানে তাদের নাম নিবন্ধন চলছে। যাদের নিবন্ধন সম্পন্ন হচ্ছে তাদের মালপত্র ট্রাকে তুলে পরিবারের সদস্যদের বাসে ওঠানো হচ্ছে। প্রথম ধাপে ২১টি বাসে তাদের উঠানো হয়। বাসগুলো চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, সন্ধ্যা বা রাতের মধ্যে বাসে উঠা নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্পে পৌঁছাবেন। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় তাদের জাহাজে তোলা হবে। আজ তারা ভাসানচরে পৌঁছাবেন।

এ বিষয়ে ভাসানচর প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩) উপ-প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার এম আনোয়ারুল কবির জানান, চতুর্থ ধাপে (প্রথম অংশ) হাজারখানেক রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া থেকে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছেন। এবার ৩-৪ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্বেচ্ছায় আসতে রাজি হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ ধাপের প্রথম দল গতকাল উখিয়ার বালখালী ক্যাম্প নম্বর-৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ও ১৮ নম্বর ক্যাম্প থেকে এবং আজ কুতুপালং-১ ইস্ট, ২ ইস্ট, এবং ২ ওয়েস্ট ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চট্টগ্রামে নেয়া হবে।

এর আগে তিন দফায় প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় উদ্ধার ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকেও ভাসানচরে নেয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত হয়ে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। এই হিসাব ২০২০ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্য থেকে সরকার ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয়।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

উল্লেখ্য, গত ৩ দফায় স্বেচ্ছায় ভাসানচর গেছেন ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা। চতুর্থ দফায় যাচ্ছেন আরও সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা। ভাসানচরে যারা গেছেন তারা সেখানে উন্নত জীবন-যাপনের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। তারা আত্মীয়স্বজনকেও ভাসানচর যেতে বার্তা পাঠাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২ ফাল্গুন ১৪২৭ ২ রজব ১৪৪২

ভাসানচর যাচ্ছেন আরও সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা

চতুর্থ ধাপের প্রথম অংশে হাজারখানেক পৌঁছাবে আজ

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

image

ভাসানচরে যাচ্ছে আরও সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা। গতকালই কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ শরণার্থী শিবির থেকে চতুর্থ ধাপে (প্রথম অংশ) রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে ২১টি বাস। তার মধ্যে প্রায় হাজার খানেক রোহিঙ্গা রয়েছে বলে জানা গেছে। আজ আরেকটি দল যাওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার ও শনিবার সকালে এই রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে বাসে করে আনা হয়। আজ প্রথম অংশ ভাসানচর পৌঁছাচ্ছে।

জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশে গত শনিবার রাত থেকেই রোহিঙ্গারা সপরিবারে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে থাকেন। গতকাল সকালের মধ্যে সেখানে হাজারখানেক রোহিঙ্গাকে দেখা গেছে। তারা সকালে বাসে করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। সেখানে তাদের নাম নিবন্ধন চলছে। যাদের নিবন্ধন সম্পন্ন হচ্ছে তাদের মালপত্র ট্রাকে তুলে পরিবারের সদস্যদের বাসে ওঠানো হচ্ছে। প্রথম ধাপে ২১টি বাসে তাদের উঠানো হয়। বাসগুলো চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, সন্ধ্যা বা রাতের মধ্যে বাসে উঠা নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের বিএন শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্পে পৌঁছাবেন। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় তাদের জাহাজে তোলা হবে। আজ তারা ভাসানচরে পৌঁছাবেন।

এ বিষয়ে ভাসানচর প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩) উপ-প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার এম আনোয়ারুল কবির জানান, চতুর্থ ধাপে (প্রথম অংশ) হাজারখানেক রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া থেকে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছেন। এবার ৩-৪ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্বেচ্ছায় আসতে রাজি হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ ধাপের প্রথম দল গতকাল উখিয়ার বালখালী ক্যাম্প নম্বর-৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ও ১৮ নম্বর ক্যাম্প থেকে এবং আজ কুতুপালং-১ ইস্ট, ২ ইস্ট, এবং ২ ওয়েস্ট ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চট্টগ্রামে নেয়া হবে।

এর আগে তিন দফায় প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় উদ্ধার ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকেও ভাসানচরে নেয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত হয়ে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। এই হিসাব ২০২০ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্য থেকে সরকার ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয়।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

উল্লেখ্য, গত ৩ দফায় স্বেচ্ছায় ভাসানচর গেছেন ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গা। চতুর্থ দফায় যাচ্ছেন আরও সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা। ভাসানচরে যারা গেছেন তারা সেখানে উন্নত জীবন-যাপনের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। তারা আত্মীয়স্বজনকেও ভাসানচর যেতে বার্তা পাঠাচ্ছেন বলে জানা গেছে।