মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে মাথায় গুলিবিদ্ধ নারীর মৃত্যু

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ সেই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। রাজধানী নেপিদোর একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। বিবিসি

৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানী নেপিদোতে বিক্ষোভে অংশ নেন ২০ বছর বয়সী মায়া থোয়েহ থোয়েহ খাইন।

ওই সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান, রাবার বুলেট ও গুলি চালায় মায়ানমারের পুলিশ। এ সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন খাইন। গুরুতর সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালটি থেকে নিশ্চিত করা হয়, মায়া থোয়েহ থোয়েহ খাইন মারা গেছেন। তার লাশের ময়নাতদন্ত হবে। একটি মেডিকেল বোর্ড এই পরীক্ষা করবে। হাসপাতালটির এক চিকিৎসক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা বিচার চাই। তার জন্য আমরা অগ্রসর হব।’ ওই চিকিৎসক জানান, মায়া থোয়েহ থোয়েহ খাইনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেয়ার পর থেকেই হাসপাতালের কর্মীরা কর্তৃপক্ষের ব্যাপক চাপের মুখে পড়েন।

৯ ফেব্রুয়ারি মায়া থোয়েহ থোয়েহ খাইনকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তার মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। এক্স-রেতে দেখা গেছে, এই আঘাত গুলির।

খাইনের পরিবারের সবাই মায়ানমারের নির্বাচিত নেতা শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সমর্থক। নিহত খাইনের ভাই জানান, গত বছরের নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছিলেন খাইন।

এনএলডির মুখপাত্র কি টো ফেইসবুকে বলেন, বিক্ষোভ চলাকালে হেলমেট ভেদ করে গুলিটি খাইনের মাথায় ঢোকে। ৯ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, জলকামান থেকে এক তরুণী নিজেকে রক্ষা করছেন। এ সময় হঠাৎ তিনি মাটিতে পড়ে যান। ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সু চিসহ কয়েক’শ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় বসে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। এদিন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। একই সঙ্গে তারা সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনৈতিক নেতাদের আটক-গ্রেপ্তার করে। এছাড়া, মায়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে। সেনাশাসনের বিরুদ্ধে দেশটিতে টানা বিক্ষোভ করছে হাজারো মানুষ। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে। সামরিক জান্তার কঠোর বিধিনিষেধ, দমন-পীড়ন সত্ত্বেও প্রতিদিন হাজারো মানুষ মায়ানমারের রাজধানী নেপিদো, দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন শহর-নগরে বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন। বিক্ষোভ দমাতে নিরাপত্তা বাহিনী ধরপাকড় চালাচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ৫০০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া মিছিলে গুলি চালানোসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সামরিক জান্তারা।

মায়ানমারে দুই সপ্তাহ ধরে চলা গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভে খাইনই প্রথম দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারালেন।

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৭ ফাল্গুন ১৪২৭ ৭ রজব ১৪৪২

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে মাথায় গুলিবিদ্ধ নারীর মৃত্যু

image

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাঁচ দিন পর খাইনের পোস্টার হাতে মান্দালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা -সিএনএন

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ সেই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। রাজধানী নেপিদোর একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। বিবিসি

৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানী নেপিদোতে বিক্ষোভে অংশ নেন ২০ বছর বয়সী মায়া থোয়েহ থোয়েহ খাইন।

ওই সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান, রাবার বুলেট ও গুলি চালায় মায়ানমারের পুলিশ। এ সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন খাইন। গুরুতর সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালটি থেকে নিশ্চিত করা হয়, মায়া থোয়েহ থোয়েহ খাইন মারা গেছেন। তার লাশের ময়নাতদন্ত হবে। একটি মেডিকেল বোর্ড এই পরীক্ষা করবে। হাসপাতালটির এক চিকিৎসক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা বিচার চাই। তার জন্য আমরা অগ্রসর হব।’ ওই চিকিৎসক জানান, মায়া থোয়েহ থোয়েহ খাইনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেয়ার পর থেকেই হাসপাতালের কর্মীরা কর্তৃপক্ষের ব্যাপক চাপের মুখে পড়েন।

৯ ফেব্রুয়ারি মায়া থোয়েহ থোয়েহ খাইনকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তার মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। এক্স-রেতে দেখা গেছে, এই আঘাত গুলির।

খাইনের পরিবারের সবাই মায়ানমারের নির্বাচিত নেতা শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সমর্থক। নিহত খাইনের ভাই জানান, গত বছরের নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছিলেন খাইন।

এনএলডির মুখপাত্র কি টো ফেইসবুকে বলেন, বিক্ষোভ চলাকালে হেলমেট ভেদ করে গুলিটি খাইনের মাথায় ঢোকে। ৯ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, জলকামান থেকে এক তরুণী নিজেকে রক্ষা করছেন। এ সময় হঠাৎ তিনি মাটিতে পড়ে যান। ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সু চিসহ কয়েক’শ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় বসে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। এদিন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। একই সঙ্গে তারা সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনৈতিক নেতাদের আটক-গ্রেপ্তার করে। এছাড়া, মায়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে। সেনাশাসনের বিরুদ্ধে দেশটিতে টানা বিক্ষোভ করছে হাজারো মানুষ। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে। সামরিক জান্তার কঠোর বিধিনিষেধ, দমন-পীড়ন সত্ত্বেও প্রতিদিন হাজারো মানুষ মায়ানমারের রাজধানী নেপিদো, দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন শহর-নগরে বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন। বিক্ষোভ দমাতে নিরাপত্তা বাহিনী ধরপাকড় চালাচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ৫০০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া মিছিলে গুলি চালানোসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সামরিক জান্তারা।

মায়ানমারে দুই সপ্তাহ ধরে চলা গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভে খাইনই প্রথম দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারালেন।