শাবিপ্রবি দেশের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে

প্রতিষ্ঠার তিন দশক পূর্ণ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। এই তিন দশকে প্রত্যাশা-প্রাপ্তিতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শাবিপ্রবির অবস্থান অনন্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণায় দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শাবিপ্রবি। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তার দায়িত্বের প্রায় সাড়ে তিন বছরে শিক্ষা, গবেষণা, অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন দশক পূর্তিতে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক সংবাদ’-এর সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন দৈনিক সংবাদ’-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোয়াজ্জেম আফরান।

সংবাদ : উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আপনি যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং সর্বপ্রথম কোন বিষয়টিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েছিলেন?

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ: শিক্ষা এবং গবেষণার জায়গায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। শিক্ষা ও গবেষণার নানা সমস্যা ও সংকট দূর করে এর মনোন্নয়ন বৃদ্ধি করা দরকার ছিল। তিন দশকে টিচিংয়ের জায়গায় অনেক এলোমেলা ছিল। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়ম-কানুনে হাত দেই। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মানুবর্তিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা বৃদ্ধি, আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্বারোপ প্রভৃতি করি। এখন সাড়ে তিন বছর পর একটা স্বস্তির জায়গায় আছি।

সংবাদ : দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল, এক্ষেত্রে এই তিন দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতা কতটুকু?

উপাচার্য : শুরু থেকেই দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শাবিপ্রবি নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। আমাদের অনেক উদ্ভাবন দেশ-বিদেশে সুনাম কুঁড়িয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানা উদ্ভাবন দেশের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। মানুষের কাক্সিক্ষত সফলতা ও প্রত্যাশা পূরণ করে যাচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘আইসিটি গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৭’ এবং দেশসেরা ‘ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ অর্জন করেছি।

সংবাদ : সম্প্রতি স্কোপাস ডাটাবেইজের প্রতিবেদনে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে শাবিপ্রবি ১ম স্থান অর্জন করে। এই সাফল্যের পিছনের কারণগুলো কি কি?

উপাচার্য : শিক্ষা ও গবেষণার জায়গায় যে পরিবেশ তৈরি করা দরকার তা মোটামুটি করেছি। এটা এখন ফুলটাইম ইউনিভার্সিটি। এখানে রাতদিন গবেষণা হচ্ছে। ল্যাব সবসময় খোলা থাকে। গবেষণায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ১ম এবং সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করেছি। আগামীতে আমাদের লক্ষ্য উভয়ক্ষেত্রে ১ম স্থান অর্জন করা। নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। ল্যাবে নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় ও গবেষণায় বাজেট সাতগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্ল্যাজারিজমের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত হয়ে গবেষণার মান বৃদ্ধি করতে ‘টার্ন-ইট-ইন’ পদ্ধতি চালু করেছি। শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে গবেষণা ভাতা তিনগুণ বৃদ্ধি, সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের অ্যাল্যাউন্স চালু, আইইএলটিস, জিআরই বা জিম্যাট ইত্যাদির অনুদান চালু, পোস্ট ডক্টরাল গবেষণার জন্য এক বছর সবেতনে শিক্ষাছুটির ব্যবস্থা এবং সেরা গবেষকদের জন্য ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ডিন’স অ্যাওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।

সংবাদ : বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসনে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?

উপাচার্য : সেশনজট নিরসনে সেমিস্টার সিস্টেম অর্ডিন্যান্স হালনাগাদ করা হয়েছে। নন-মেজর কোর্সগুলো স্ব-স্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়েছে। সেমিস্টার পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠান ও অধ্যাদেশ অনুসারে ১৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন স্থস্তির খবর হলো সেশনজট থেকে বেরিয়ে গেছি।

সংবাদ : বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে বলুন

উপাচার্য : প্রায় ১২০০ কোটি টাকার দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে মোট ২৩টি ভবনের ৭-৮টির কাজ শুরু হয়েছে। বাকিগুলোর কাজও দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে। কাজের অগ্রগতি অনেক ভালো। করোনার মধ্যেও কাজ চলছে। এখন কাজের গতি আরও বেড়েছে। কোয়ালিটি ও স্বচ্ছতাও বেড়েছে। সরকারের প্রতিনিধি দল উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেছে। তারা অনেক সন্তুষ্ট। এটি বাস্তায়ন হলে আগামী ১০০ বছর আমাদের আর অবকাঠামোগত কোন সমস্যা থাকবে না। এতে দীর্ঘদিনের দুর্গতি, ভোগান্তি ও সমস্যা দূর হবে। আগামী ২-৩ বছর পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে।

সংবাদ : করোনাকালে সরকারের পাশে থেকে জনসেবায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কেমন ছিল?

উপাচার্য : করোনাকালে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে করোনা শনাক্তকরণ ল্যাব চালু করেছি। ফলে সিলেটের অন্যান্য ল্যাবের ওপর চাপ কমে আসে। এটা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ও নির্ভরযোগ্য কয়েকটি ল্যাবের একটি। একদিনের জন্য বন্ধ হয়নি। এমনকি ঈদের দিনও চালু ছিল। সিলেটের মানুষ অনেক সংগ্রাম করে এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়েছে, তাদের ভালোবাসার জায়গা এটা। আমরা তাদের বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব। এভাবে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি।

সংবাদ: করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম কেমন ছিল?

উপাচার্য: করোনার মধ্যে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ‘অন অফ দ্যা বেস্ট’ ছিল। অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের জন্য ২২৫০ জন শিক্ষার্থীকে ডাটা প্যাকেজ, শিক্ষকদের লজিস্টিক সামগ্রী সংগ্রহ ও ল্যাপটপ ক্রয়ের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সংবাদ: গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় আপনাদের ভূমিকা কেমন হবে?

উপাচার্য: ভর্তি পরীক্ষায় আমরা কো-কনভেনার হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবো। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে যা করা প্রয়োজন আমরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবো।

সংবাদ: বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে সাড়ে তিন বছরে আপনার সফলতা কতটুকু বলে মনে করেন?

উপাচার্য: আমি যে লক্ষ্য নিয়ে এসেছিলাম, শাবিপ্রবিকে রোল মডেল হিসেবে তৈরি করা, শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য অবস্থান নিয়ে যাওয়া। সকল প্রকার নিয়োগ, পদোন্নতি, আপগ্রেডেশন প্রদানের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা, সার্বিক আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণার উন্নত পরিবেশ, অবকাঠামোগত শক্ত অবস্থান, জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ, মানবিক বিশ্ববিদ্যালয়, মানুষের পাঁশে দাড়ানোর অনন্য নজির স্থাপন করেছে। সকলের সহযোগিতা আমরা অনেকটা ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পেরেছি।

সংবাদ : আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও গবেষণায় একটি রোল মডেল হিসেবে তৈরি করতে চাচ্ছেন.....

উপাচার্য : শাবিপ্রবিকে রোল মডেল হিসেবে তৈরি করতে যা প্রয়োজন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তা করে যাচ্ছি। আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নেতৃত্ব দেব। এটা আমার প্রত্যাশা। আমরা যেন কোনভাবে পিছিয়ে না যায়। আমরা দুর্বার গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অগ্রগতি যেন অব্যাহত থাকে। সত্যিকার অর্থে যেন রোল মডেল হিসেবে দেশের মধ্যে অবস্থান ধরে রাখতে পারি। আন্তর্জাতিক পরিম-লেও যেন আমাদের অবস্থান জানান দিতে পারি। এখন আমাদের লক্ষ্য হবে আন্তর্জাতিক পরিম-লে যাওয়া। এই জায়গায় যাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার তা করছি। ইউজিসি ও সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছি। তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা।

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৭ ফাল্গুন ১৪২৭ ৭ রজব ১৪৪২

শাবিপ্রবি দেশের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে

image

প্রতিষ্ঠার তিন দশক পূর্ণ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। এই তিন দশকে প্রত্যাশা-প্রাপ্তিতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শাবিপ্রবির অবস্থান অনন্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণায় দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শাবিপ্রবি। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তার দায়িত্বের প্রায় সাড়ে তিন বছরে শিক্ষা, গবেষণা, অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন দশক পূর্তিতে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক সংবাদ’-এর সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন দৈনিক সংবাদ’-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোয়াজ্জেম আফরান।

সংবাদ : উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আপনি যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং সর্বপ্রথম কোন বিষয়টিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েছিলেন?

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ: শিক্ষা এবং গবেষণার জায়গায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। শিক্ষা ও গবেষণার নানা সমস্যা ও সংকট দূর করে এর মনোন্নয়ন বৃদ্ধি করা দরকার ছিল। তিন দশকে টিচিংয়ের জায়গায় অনেক এলোমেলা ছিল। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়ম-কানুনে হাত দেই। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মানুবর্তিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা বৃদ্ধি, আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্বারোপ প্রভৃতি করি। এখন সাড়ে তিন বছর পর একটা স্বস্তির জায়গায় আছি।

সংবাদ : দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল, এক্ষেত্রে এই তিন দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতা কতটুকু?

উপাচার্য : শুরু থেকেই দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শাবিপ্রবি নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। আমাদের অনেক উদ্ভাবন দেশ-বিদেশে সুনাম কুঁড়িয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানা উদ্ভাবন দেশের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। মানুষের কাক্সিক্ষত সফলতা ও প্রত্যাশা পূরণ করে যাচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘আইসিটি গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৭’ এবং দেশসেরা ‘ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ অর্জন করেছি।

সংবাদ : সম্প্রতি স্কোপাস ডাটাবেইজের প্রতিবেদনে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে শাবিপ্রবি ১ম স্থান অর্জন করে। এই সাফল্যের পিছনের কারণগুলো কি কি?

উপাচার্য : শিক্ষা ও গবেষণার জায়গায় যে পরিবেশ তৈরি করা দরকার তা মোটামুটি করেছি। এটা এখন ফুলটাইম ইউনিভার্সিটি। এখানে রাতদিন গবেষণা হচ্ছে। ল্যাব সবসময় খোলা থাকে। গবেষণায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ১ম এবং সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করেছি। আগামীতে আমাদের লক্ষ্য উভয়ক্ষেত্রে ১ম স্থান অর্জন করা। নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। ল্যাবে নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় ও গবেষণায় বাজেট সাতগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্ল্যাজারিজমের দুষ্টচক্র থেকে মুক্ত হয়ে গবেষণার মান বৃদ্ধি করতে ‘টার্ন-ইট-ইন’ পদ্ধতি চালু করেছি। শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে গবেষণা ভাতা তিনগুণ বৃদ্ধি, সেমিনার, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের অ্যাল্যাউন্স চালু, আইইএলটিস, জিআরই বা জিম্যাট ইত্যাদির অনুদান চালু, পোস্ট ডক্টরাল গবেষণার জন্য এক বছর সবেতনে শিক্ষাছুটির ব্যবস্থা এবং সেরা গবেষকদের জন্য ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ডিন’স অ্যাওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।

সংবাদ : বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসনে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?

উপাচার্য : সেশনজট নিরসনে সেমিস্টার সিস্টেম অর্ডিন্যান্স হালনাগাদ করা হয়েছে। নন-মেজর কোর্সগুলো স্ব-স্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়েছে। সেমিস্টার পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠান ও অধ্যাদেশ অনুসারে ১৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন স্থস্তির খবর হলো সেশনজট থেকে বেরিয়ে গেছি।

সংবাদ : বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে বলুন

উপাচার্য : প্রায় ১২০০ কোটি টাকার দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে মোট ২৩টি ভবনের ৭-৮টির কাজ শুরু হয়েছে। বাকিগুলোর কাজও দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে। কাজের অগ্রগতি অনেক ভালো। করোনার মধ্যেও কাজ চলছে। এখন কাজের গতি আরও বেড়েছে। কোয়ালিটি ও স্বচ্ছতাও বেড়েছে। সরকারের প্রতিনিধি দল উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেছে। তারা অনেক সন্তুষ্ট। এটি বাস্তায়ন হলে আগামী ১০০ বছর আমাদের আর অবকাঠামোগত কোন সমস্যা থাকবে না। এতে দীর্ঘদিনের দুর্গতি, ভোগান্তি ও সমস্যা দূর হবে। আগামী ২-৩ বছর পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে।

সংবাদ : করোনাকালে সরকারের পাশে থেকে জনসেবায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কেমন ছিল?

উপাচার্য : করোনাকালে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে করোনা শনাক্তকরণ ল্যাব চালু করেছি। ফলে সিলেটের অন্যান্য ল্যাবের ওপর চাপ কমে আসে। এটা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ও নির্ভরযোগ্য কয়েকটি ল্যাবের একটি। একদিনের জন্য বন্ধ হয়নি। এমনকি ঈদের দিনও চালু ছিল। সিলেটের মানুষ অনেক সংগ্রাম করে এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়েছে, তাদের ভালোবাসার জায়গা এটা। আমরা তাদের বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব। এভাবে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি।

সংবাদ: করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম কেমন ছিল?

উপাচার্য: করোনার মধ্যে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ‘অন অফ দ্যা বেস্ট’ ছিল। অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের জন্য ২২৫০ জন শিক্ষার্থীকে ডাটা প্যাকেজ, শিক্ষকদের লজিস্টিক সামগ্রী সংগ্রহ ও ল্যাপটপ ক্রয়ের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সংবাদ: গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় আপনাদের ভূমিকা কেমন হবে?

উপাচার্য: ভর্তি পরীক্ষায় আমরা কো-কনভেনার হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবো। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে যা করা প্রয়োজন আমরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবো।

সংবাদ: বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে সাড়ে তিন বছরে আপনার সফলতা কতটুকু বলে মনে করেন?

উপাচার্য: আমি যে লক্ষ্য নিয়ে এসেছিলাম, শাবিপ্রবিকে রোল মডেল হিসেবে তৈরি করা, শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য অবস্থান নিয়ে যাওয়া। সকল প্রকার নিয়োগ, পদোন্নতি, আপগ্রেডেশন প্রদানের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা, সার্বিক আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণার উন্নত পরিবেশ, অবকাঠামোগত শক্ত অবস্থান, জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ, মানবিক বিশ্ববিদ্যালয়, মানুষের পাঁশে দাড়ানোর অনন্য নজির স্থাপন করেছে। সকলের সহযোগিতা আমরা অনেকটা ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পেরেছি।

সংবাদ : আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও গবেষণায় একটি রোল মডেল হিসেবে তৈরি করতে চাচ্ছেন.....

উপাচার্য : শাবিপ্রবিকে রোল মডেল হিসেবে তৈরি করতে যা প্রয়োজন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তা করে যাচ্ছি। আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নেতৃত্ব দেব। এটা আমার প্রত্যাশা। আমরা যেন কোনভাবে পিছিয়ে না যায়। আমরা দুর্বার গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অগ্রগতি যেন অব্যাহত থাকে। সত্যিকার অর্থে যেন রোল মডেল হিসেবে দেশের মধ্যে অবস্থান ধরে রাখতে পারি। আন্তর্জাতিক পরিম-লেও যেন আমাদের অবস্থান জানান দিতে পারি। এখন আমাদের লক্ষ্য হবে আন্তর্জাতিক পরিম-লে যাওয়া। এই জায়গায় যাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার তা করছি। ইউজিসি ও সরকারের সহযোগিতা পাচ্ছি। তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা।