ধূমপানে দেশে বছরে মারা যায় এক লাখ ২৬ হাজার

আর্থিক ক্ষতি বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা

আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। অন্য দেশের মতো তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব, তামাকমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পালন করা হবে দিবসটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তামাক ব্যবহার এবং ক্ষতির প্রভাবে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে আছে। তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ২৬ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

তাই ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জনের লক্ষ্য পূরণে তামাকপণ্যে কার্যকরভাবে করারোপ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং বাস্তবায়নের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে তামাকবিরোধী জোটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি সংস্থা প্রগতির জন্য জ্ঞানসহ (প্রজ্ঞা) একাধিক সংস্থা তামাকবিরোধী অবস্থান নিয়ে কাজ করছে। প

গবেষকরা বলছেন গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস), ২০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ বছরোর্ধ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫.৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লাখ)।

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৪৮ শতাংশ, যেখানে অতি উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার মাত্র ২৪ শতাংশ। গ্যাটস ফলাফলে আরও দেখা গেছে, ২০০৯ সালের তুলনায় একজন বিড়ি ব্যবহারকারীর বিড়ি বাবদ মাসিক খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার চিত্র খুবই ভয়াবহ। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন ৪ কোটি ৮ লাখ (৩৯%) মানুষ এবং এক্ষেত্রে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক বেশি। প্রায় ৩৭ শতাংশ নারী বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন, অথচ নারী ধূমপায়ীর হার মাত্র ০.৮ শতাংশ। তামাকের কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুস্বাস্থ্য। সাম্প্রতিক গবেষণায় রাজধানী ঢাকার প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৯৫ শতাংশ শিশুর শরীরে উচ্চমাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে, যার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান।

তামাকবিরোধী জোট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তামাকই পৃথিবীর একমাত্র পণ্য যা আইনগতভাবে বৈধ হলেও লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটায়। তামাকের ক্ষয়ক্ষতি কেবল এর ব্যবহারের মধ্যেই সীমিত নয়, তামাকচাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপণন- সবই জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং সমাজকে অপূরণীয় দুর্দশার দিকে ঠেলে দেয়। কাজেই মানুষ ও পরিবেশের জন্য সমাজ তখনই কল্যাণকর হবে যখন তা হবে তামাকমুক্ত। এ বছর তামাকের সূদরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে কমিট টু কোয়াইট বা তামক ছাড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে ‘আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি’। ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জনে সংকল্পবদ্ধ বাংলাদেশ এবং এ লক্ষ্য পূরণে তামাকপণ্যে কার্যকরভাবে করারোপ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, তামাক ব্যবহারের কারণে মানুষের পশ্বাসতন্ত্র এবং হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। তামাক ব্যবহারে করোনারি হার্ট ডিজিজ এবং স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি ২ থেকে ৪ গুণ বেড়ে যায়। মুখ গহ্বর, ফুসফুস, খাদ্যনালীসহ প্রায় ২০ ধরনের ক্যান্সার হয়।

অধূমপায়ীর তুলনায় ধূমপায়ীর ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে ২৫ গুণ। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুস সংক্রমণে (সিওপিডি) ধূমপায়ীদের মৃত্যুঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় ১৩ গুণ পর্যন্ত বেশি। সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারীতে ধূমপায়ীদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি ৪০ থেকে প৫০ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।

তামাক ছাড়ার অনেক সুফল রয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি টানা ১ বছর তামাকমুক্ত থাকতে পারেন, তবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ধূমপায়ীদের তুলনায় অর্ধেক কমে আসে। ধূমপান ছাড়ার দশ বছরের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি ধূমপায়ীর তুলনায় অর্ধেক কমে যায়। এছাড়া ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে তামাক ছাড়লে তার প্রত্যাশিত আয়ু তামাক ব্যবহারকারীর তুলনায় প্রায় ১০ বছর বেড়ে যায়।

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

ধূমপানে দেশে বছরে মারা যায় এক লাখ ২৬ হাজার

আর্থিক ক্ষতি বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। অন্য দেশের মতো তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব, তামাকমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পালন করা হবে দিবসটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তামাক ব্যবহার এবং ক্ষতির প্রভাবে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে আছে। তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ২৬ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়। তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

তাই ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জনের লক্ষ্য পূরণে তামাকপণ্যে কার্যকরভাবে করারোপ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং বাস্তবায়নের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে তামাকবিরোধী জোটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি সংস্থা প্রগতির জন্য জ্ঞানসহ (প্রজ্ঞা) একাধিক সংস্থা তামাকবিরোধী অবস্থান নিয়ে কাজ করছে। প

গবেষকরা বলছেন গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস), ২০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ বছরোর্ধ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫.৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লাখ)।

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৪৮ শতাংশ, যেখানে অতি উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার মাত্র ২৪ শতাংশ। গ্যাটস ফলাফলে আরও দেখা গেছে, ২০০৯ সালের তুলনায় একজন বিড়ি ব্যবহারকারীর বিড়ি বাবদ মাসিক খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার চিত্র খুবই ভয়াবহ। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন ৪ কোটি ৮ লাখ (৩৯%) মানুষ এবং এক্ষেত্রে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক বেশি। প্রায় ৩৭ শতাংশ নারী বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন, অথচ নারী ধূমপায়ীর হার মাত্র ০.৮ শতাংশ। তামাকের কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুস্বাস্থ্য। সাম্প্রতিক গবেষণায় রাজধানী ঢাকার প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৯৫ শতাংশ শিশুর শরীরে উচ্চমাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে, যার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান।

তামাকবিরোধী জোট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তামাকই পৃথিবীর একমাত্র পণ্য যা আইনগতভাবে বৈধ হলেও লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটায়। তামাকের ক্ষয়ক্ষতি কেবল এর ব্যবহারের মধ্যেই সীমিত নয়, তামাকচাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপণন- সবই জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং সমাজকে অপূরণীয় দুর্দশার দিকে ঠেলে দেয়। কাজেই মানুষ ও পরিবেশের জন্য সমাজ তখনই কল্যাণকর হবে যখন তা হবে তামাকমুক্ত। এ বছর তামাকের সূদরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে কমিট টু কোয়াইট বা তামক ছাড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে ‘আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি’। ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জনে সংকল্পবদ্ধ বাংলাদেশ এবং এ লক্ষ্য পূরণে তামাকপণ্যে কার্যকরভাবে করারোপ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, তামাক ব্যবহারের কারণে মানুষের পশ্বাসতন্ত্র এবং হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। তামাক ব্যবহারে করোনারি হার্ট ডিজিজ এবং স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি ২ থেকে ৪ গুণ বেড়ে যায়। মুখ গহ্বর, ফুসফুস, খাদ্যনালীসহ প্রায় ২০ ধরনের ক্যান্সার হয়।

অধূমপায়ীর তুলনায় ধূমপায়ীর ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে ২৫ গুণ। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুস সংক্রমণে (সিওপিডি) ধূমপায়ীদের মৃত্যুঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় ১৩ গুণ পর্যন্ত বেশি। সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারীতে ধূমপায়ীদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি ৪০ থেকে প৫০ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।

তামাক ছাড়ার অনেক সুফল রয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি টানা ১ বছর তামাকমুক্ত থাকতে পারেন, তবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ধূমপায়ীদের তুলনায় অর্ধেক কমে আসে। ধূমপান ছাড়ার দশ বছরের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি ধূমপায়ীর তুলনায় অর্ধেক কমে যায়। এছাড়া ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে তামাক ছাড়লে তার প্রত্যাশিত আয়ু তামাক ব্যবহারকারীর তুলনায় প্রায় ১০ বছর বেড়ে যায়।