মৌসুমি আমে ভয় নয়

বশিরুল ইসলাম

এখন চলছে আমের মৌসুম। চারদিকে পাকা আমের ম ম গন্ধ। ফলের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে নানা জাতের আম। এমন সময় তো আম খেতে মন চাইবেই। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আম নিয়ে নানান অপপ্রচারের কারণে অনেকেই খেতে ভয় পাচ্ছেন। ভয়ের কারণ- এগুলো খাঁটি আম তো? মানে ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড রাসায়নিক দিয়ে আম পাকানো হয়েছে কিনা? এ চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। আসলে আমের মৌসুম শুরু হলেই এ প্রশ্নগুলো চলে আসে।

আম নিয়ে এরকম বিভ্রান্তি দূর করার জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন- পৃথিবীর সব দেশেই বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই অনেকে বিষমুক্ত, অর্গানিক আম বলে বেশি দাম নেয়। প্রকৃতপক্ষে বাণ্যিজিকভাবে বিষমুক্ত ও অর্গানিক আম কেউ উৎপাদন করে না। তাই বেশি দামে সেগুলো কিনে টাকা অপচয় করার প্রয়োজন নেই। বাজার থেকে আম কিনে ভালো করে ধুয়ে কেটে খেতে হবে- তাহলে কোন সমস্যা হবে না। তবে খালি পেটে বেশি করে আম খেলে এসিডিটি সমস্যা হতে পারে। সেজন্য অল্প করে (১-২টি) আম বারবার খেলে কোন সমস্যা হবে না।

ড. আবদুল লতিফ আরও লিখেছেন- মৌসুমের শুরুতে অপরিপক্ব আম হারভেস্ট করে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হয় বলে সেগুলো খেতে সুস্বাদু হয় না। স্থানীয় প্রশাসন থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহ হতে বিভিন্ন প্রকার আম হারভেস্টের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে; ফলে অপরিপক্ব আম হারভেস্ট হয় না। তাই পাকানোর জন্য কোন কেমিক্যাল দেয়া লাগে না। তাছাড়া নির্দিষ্ট মাত্রায় পাকানোর কেমিক্যাল ব্যবহার মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। তিনি আরও একটি বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, আম সংরক্ষণের জন্য ফরমালিন ব্যবহার করা হয় না। তাই কীটনাশক, পাকানোর কেমিক্যাল (হরমোন) এবং ফরমালিনের ভয়ে আম খাওয়া বন্ধ করা উচিত নয়।

একবার ভাবুন তো- সারা বছর বিদে?শ থেকে এত আপেল, কমলা, নাশপাতি, স্ট্রবেরি, প্যাশন ফ্রুট, ড্রাগন ফ্রুট, আঙ্গুর, খেজুর ইত্যাদি আসে; যেগুলো মাসের পর মাস পচে না। তারা কোনোকিছুই দেয় না? আর আমাদের দেশের আমচাষিদের আম কিনতে গেলে সব বিষে ভরা! আমি মনে করি, এতে দেশীয় আমচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর দেশীয় এ ফলের বাজার চলে যাচ্ছে বিদেশি ফল আমদানিকারকদের হাতে। আমাদের যে ধারণা- দেশি ফল-মূল এবং বিদেশ থেকে আনা ফলে ফরমালিন দেওয়া হয়, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মতে, প্রতিদিন আমাদের ফল এবং সবজি খাওয়া দরকার ৪০০ গ্রাম; সেখানে আমরা খাই মাত্র ২৪৮ গ্রাম। যেখানে আমরা এমনিতেই কম পরিমাণে খাই, সেখানে কেমিক্যালের ভয়ে খাওয়া বন্ধ করে দিলে এর ঘাটতি থেকেই যাবে। ধ্বংস করার আগে এর ক্ষতিকর এবং উপকারের মাত্রা হিসাব-নিকাশ করে তারপর ধ্বংস করা উচিত।

জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিনবিরোধী ২০১৪ সালে অভিযানের কথা অনেকেই হয়তো ভোলেননি। গ্রীষ্মকালীন ফলের ভরা মৌসুম, তখন ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযান চালানো হয়। আমে বিষাক্ত ফরমালিনসহ নানারকম রাসায়নিক মেশানোর অভিযোগ এনে ঢাকা শহরের সব প্রবেশমুখে ব্যাপক তল্লাশি করে ট্রাকভর্তি আম ধ্বংস করা হয়। পরবর্তীকালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, যে যন্ত্র দিয়ে ফরমালিন মাপা হয়েছিল তা বাতাসে ফরমালডিহাইড মাপারযন্ত্র। পরবর্তীতে তিনটি সংস্থার পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে হাইকোর্ট সেই যন্ত্রটিকে অকার্যকর ঘোষণা দেয়। এ আতঙ্ক এখনো বিরাজমান বলে মনে হচ্ছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এরপর ফরমালিন বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে বলা হয়- ফলমূল ও শাকসবজি হচ্ছে তন্তু (ফাইবার) জাতীয় খাবার, যেখানে প্রোটিনের উপস্থিতি অত্যন্ত কম। ফরমালিন হচ্ছে ৩৭ শতাংশ ফরমালডিহাইডের জলীয় দ্রবণ এবং অতি উদ্বায়ী একটি রাসায়নিক যৌগ; যা মূলত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। তাই ফলমূল শাকসবজি সংরক্ষণে ফরমালিনের কোনো ভূমিকা নেই। উপরন্তু প্রকৃতিগতভাবেই প্রত্যেক ফলমূল ও শাকসবজিতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় (গড়ে ৩-৬০ মিলিগ্রাম/কেজি মাত্রায়) ফরমালডিহাইড থাকে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। এর পক্ষে স্বীকৃত সংস্থাগুলোর গবেষণা ও দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীদের অভিমত সামনে এনেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

এ বছরও ভ্রাম্যমাণ আদালত ১ মে কুমিল্লার নিমসার বাজারে অভিযান চালিয়ে ‘ফরমালিন যুক্ত’ এক টন আম ধ্বংস করে। ৯ মে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে পুরান ঢাকার বাদামতলীর বিভিন্ন ফলের আড়তে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অপরিপক্ব আম ধ্বংস করা হয়। ১০ মে কারওয়ানবাজার এলাকায়ও আম ধ্বংস করা হয়।

আমচাষিরা অন্তত ভরা মৌসুমে কেমিক্যাল দেয় না। কারণ হচ্ছে ভরা মৌসুমে আম এমনিতেই পরিপক্ব থাকে এবং আম আধাপাকা অবস্থায় গাছ থেকে পাড়া হয়। এ সময় আম রেখে দিলে বা আম গাছ থেকে পাড়ার পর ট্রান্সপোর্টের সময়টুকুতে আম এমনিতেই পেকে যায়। তাই ভরা মৌসুমে টাকা খরচ করে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে আম পাকানোর কোনো প্রয়োজনই দেখি না। আর ভরা মৌসুমে প্রচুর আম বিক্রি হয়, দোকানে স্টক থাকে না। প্রচুর আম যেমন আসে, তেমনি প্রচুর আম বিক্রিও হয়ে যায়।

তবে মৌসুমের শুরুতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে আম পাকাতে পারে। কারণ তখন অপরিপক্ব আম তাড়াতাড়ি পাকিয়ে বাজারে ছাড়লে বেশি দাম পাওয়া যায়। অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা মৌসুমের শুরুতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে আম পাকাতে পারে। আর মৌসুমের শেষে যখন বাজারে আম খুব কম পাওয়া যায়। কিছুদিন আম ধরে রাখতে পারলে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে তা বিক্রি করতে পারে। ঠিক সেই সময় ব্যবসায়ীরা আমে ফরমালিন দিতে পারে। তাই পুষ্টিকর ভালো আম খেতে চাইলে ফলের মৌসুমে খেতে হবে।

আমরা আসলে ফরমালিন আতঙ্কে ভুগছি। এটা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তৈরি করে ফল-মূল, শাকসবজি। এখন আমরা আতঙ্কে তা খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছি। এটা আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করছে। তাই যারা ফরমালিন আতঙ্কে আম খাওয়া থেকে বিরত আছেন, তারা মনের সন্দেহ ছেড়ে প্রকৃত সময়ে পাকা আম খেতে পারি।

[লেখক : উপ-পরিচালক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়]

সোমবার, ৩১ মে ২০২১ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৮ শাওয়াল ১৪৪২

মৌসুমি আমে ভয় নয়

বশিরুল ইসলাম

image

এখন চলছে আমের মৌসুম। চারদিকে পাকা আমের ম ম গন্ধ। ফলের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে নানা জাতের আম। এমন সময় তো আম খেতে মন চাইবেই। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আম নিয়ে নানান অপপ্রচারের কারণে অনেকেই খেতে ভয় পাচ্ছেন। ভয়ের কারণ- এগুলো খাঁটি আম তো? মানে ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড রাসায়নিক দিয়ে আম পাকানো হয়েছে কিনা? এ চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। আসলে আমের মৌসুম শুরু হলেই এ প্রশ্নগুলো চলে আসে।

আম নিয়ে এরকম বিভ্রান্তি দূর করার জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন- পৃথিবীর সব দেশেই বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই অনেকে বিষমুক্ত, অর্গানিক আম বলে বেশি দাম নেয়। প্রকৃতপক্ষে বাণ্যিজিকভাবে বিষমুক্ত ও অর্গানিক আম কেউ উৎপাদন করে না। তাই বেশি দামে সেগুলো কিনে টাকা অপচয় করার প্রয়োজন নেই। বাজার থেকে আম কিনে ভালো করে ধুয়ে কেটে খেতে হবে- তাহলে কোন সমস্যা হবে না। তবে খালি পেটে বেশি করে আম খেলে এসিডিটি সমস্যা হতে পারে। সেজন্য অল্প করে (১-২টি) আম বারবার খেলে কোন সমস্যা হবে না।

ড. আবদুল লতিফ আরও লিখেছেন- মৌসুমের শুরুতে অপরিপক্ব আম হারভেস্ট করে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হয় বলে সেগুলো খেতে সুস্বাদু হয় না। স্থানীয় প্রশাসন থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহ হতে বিভিন্ন প্রকার আম হারভেস্টের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে; ফলে অপরিপক্ব আম হারভেস্ট হয় না। তাই পাকানোর জন্য কোন কেমিক্যাল দেয়া লাগে না। তাছাড়া নির্দিষ্ট মাত্রায় পাকানোর কেমিক্যাল ব্যবহার মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। তিনি আরও একটি বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, আম সংরক্ষণের জন্য ফরমালিন ব্যবহার করা হয় না। তাই কীটনাশক, পাকানোর কেমিক্যাল (হরমোন) এবং ফরমালিনের ভয়ে আম খাওয়া বন্ধ করা উচিত নয়।

একবার ভাবুন তো- সারা বছর বিদে?শ থেকে এত আপেল, কমলা, নাশপাতি, স্ট্রবেরি, প্যাশন ফ্রুট, ড্রাগন ফ্রুট, আঙ্গুর, খেজুর ইত্যাদি আসে; যেগুলো মাসের পর মাস পচে না। তারা কোনোকিছুই দেয় না? আর আমাদের দেশের আমচাষিদের আম কিনতে গেলে সব বিষে ভরা! আমি মনে করি, এতে দেশীয় আমচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর দেশীয় এ ফলের বাজার চলে যাচ্ছে বিদেশি ফল আমদানিকারকদের হাতে। আমাদের যে ধারণা- দেশি ফল-মূল এবং বিদেশ থেকে আনা ফলে ফরমালিন দেওয়া হয়, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মতে, প্রতিদিন আমাদের ফল এবং সবজি খাওয়া দরকার ৪০০ গ্রাম; সেখানে আমরা খাই মাত্র ২৪৮ গ্রাম। যেখানে আমরা এমনিতেই কম পরিমাণে খাই, সেখানে কেমিক্যালের ভয়ে খাওয়া বন্ধ করে দিলে এর ঘাটতি থেকেই যাবে। ধ্বংস করার আগে এর ক্ষতিকর এবং উপকারের মাত্রা হিসাব-নিকাশ করে তারপর ধ্বংস করা উচিত।

জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিনবিরোধী ২০১৪ সালে অভিযানের কথা অনেকেই হয়তো ভোলেননি। গ্রীষ্মকালীন ফলের ভরা মৌসুম, তখন ঢাকাসহ সারাদেশে অভিযান চালানো হয়। আমে বিষাক্ত ফরমালিনসহ নানারকম রাসায়নিক মেশানোর অভিযোগ এনে ঢাকা শহরের সব প্রবেশমুখে ব্যাপক তল্লাশি করে ট্রাকভর্তি আম ধ্বংস করা হয়। পরবর্তীকালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, যে যন্ত্র দিয়ে ফরমালিন মাপা হয়েছিল তা বাতাসে ফরমালডিহাইড মাপারযন্ত্র। পরবর্তীতে তিনটি সংস্থার পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে হাইকোর্ট সেই যন্ত্রটিকে অকার্যকর ঘোষণা দেয়। এ আতঙ্ক এখনো বিরাজমান বলে মনে হচ্ছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এরপর ফরমালিন বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে বলা হয়- ফলমূল ও শাকসবজি হচ্ছে তন্তু (ফাইবার) জাতীয় খাবার, যেখানে প্রোটিনের উপস্থিতি অত্যন্ত কম। ফরমালিন হচ্ছে ৩৭ শতাংশ ফরমালডিহাইডের জলীয় দ্রবণ এবং অতি উদ্বায়ী একটি রাসায়নিক যৌগ; যা মূলত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। তাই ফলমূল শাকসবজি সংরক্ষণে ফরমালিনের কোনো ভূমিকা নেই। উপরন্তু প্রকৃতিগতভাবেই প্রত্যেক ফলমূল ও শাকসবজিতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় (গড়ে ৩-৬০ মিলিগ্রাম/কেজি মাত্রায়) ফরমালডিহাইড থাকে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। এর পক্ষে স্বীকৃত সংস্থাগুলোর গবেষণা ও দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীদের অভিমত সামনে এনেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

এ বছরও ভ্রাম্যমাণ আদালত ১ মে কুমিল্লার নিমসার বাজারে অভিযান চালিয়ে ‘ফরমালিন যুক্ত’ এক টন আম ধ্বংস করে। ৯ মে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে পুরান ঢাকার বাদামতলীর বিভিন্ন ফলের আড়তে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অপরিপক্ব আম ধ্বংস করা হয়। ১০ মে কারওয়ানবাজার এলাকায়ও আম ধ্বংস করা হয়।

আমচাষিরা অন্তত ভরা মৌসুমে কেমিক্যাল দেয় না। কারণ হচ্ছে ভরা মৌসুমে আম এমনিতেই পরিপক্ব থাকে এবং আম আধাপাকা অবস্থায় গাছ থেকে পাড়া হয়। এ সময় আম রেখে দিলে বা আম গাছ থেকে পাড়ার পর ট্রান্সপোর্টের সময়টুকুতে আম এমনিতেই পেকে যায়। তাই ভরা মৌসুমে টাকা খরচ করে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে আম পাকানোর কোনো প্রয়োজনই দেখি না। আর ভরা মৌসুমে প্রচুর আম বিক্রি হয়, দোকানে স্টক থাকে না। প্রচুর আম যেমন আসে, তেমনি প্রচুর আম বিক্রিও হয়ে যায়।

তবে মৌসুমের শুরুতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে আম পাকাতে পারে। কারণ তখন অপরিপক্ব আম তাড়াতাড়ি পাকিয়ে বাজারে ছাড়লে বেশি দাম পাওয়া যায়। অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা মৌসুমের শুরুতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে আম পাকাতে পারে। আর মৌসুমের শেষে যখন বাজারে আম খুব কম পাওয়া যায়। কিছুদিন আম ধরে রাখতে পারলে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে তা বিক্রি করতে পারে। ঠিক সেই সময় ব্যবসায়ীরা আমে ফরমালিন দিতে পারে। তাই পুষ্টিকর ভালো আম খেতে চাইলে ফলের মৌসুমে খেতে হবে।

আমরা আসলে ফরমালিন আতঙ্কে ভুগছি। এটা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তৈরি করে ফল-মূল, শাকসবজি। এখন আমরা আতঙ্কে তা খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছি। এটা আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করছে। তাই যারা ফরমালিন আতঙ্কে আম খাওয়া থেকে বিরত আছেন, তারা মনের সন্দেহ ছেড়ে প্রকৃত সময়ে পাকা আম খেতে পারি।

[লেখক : উপ-পরিচালক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়]