ডায়ানার সাক্ষাৎকার বিতর্ক : ঘটনা ও তদন্ত

জন ওয়্যার

(গতকালের পর)

স্পেন্সার বিবিসিকে বলেন, সে বছর ডায়ানার মধ্যে এই ভয় ভর করে যে উচু পর্যায়ে তার শত্রু আছে। তাই তিনি খুব বিপন্ন আর অস্থির বোধ করতেন সে সময়। কেন এসব হচ্ছে সে সময় তিনি তা বুঝতে চাইছিলেন।

১৯ সেপ্টেম্বর, ডায়ানার সঙ্গে বশিরকে পরিচয় করিয়ে দেন স্পেন্সার। সেই বৈঠকে বশিরের ৩০টির মতো অভিযোগ তুলে ধরেন স্পেন্সার। যার মধ্যে জেফসনও যে ষড়যন্ত্রের অংশ - তাও তুলে ধরেন তিনি।

স্পেন্সার বিবিসিকে জানান সেই বৈঠকের শেষে তার খুব সন্দেহ ঠেকছিল। বৈঠকের পর ডায়ানাকে তিনি সে কথা বলেওছিলেন যে, গল্পগুলো ঠিক মেলানো যাচ্ছে না।

তবে বশির কিন্তু বলছেন, যেসব কথা তখন হয়েছিল বলে এখন বলা হচ্ছে তার অধিকাংশই এসেছিল ডায়ানার কাছ থেকে। তবু ডাইসনের কাছে মনে হয়েছে, ডায়ানা নয়, সিংহভাগই বশিরের কথা।

মার্টিন বশিরের বক্তব্য একদম ভিন্ন। লর্ড ডাইসন তার সম্পর্কে মতামত দেয়ার পরও। বশির তার অবস্থানেই অটল রয়েছেন।

ডায়ানার সঙ্গে এরপর তার অনেক বৈঠক হয়েছে বশিরের। ১৯৯৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ডায়ানা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেয়ার বিষয়ে খুব আগ্রহী ছিলেন। তবে সে বছর নভেম্বরের ৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ওই সাক্ষাৎকারের আগে তার সঙ্গে তার যে বন্ধুদের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল, তারা এ বিষয়ে ডায়ানার মধ্য অনেক পরিবর্তন দেখেছিলেন। জেফসন বলেন, মার্টিন বশিরের জায়গা থেকে আমি ছিলাম বড় বাধা। কারণ আমি থাকলে ডায়ানাকে সাক্ষাৎকার না দেয়ার পরামর্শ দিতাম।

ডায়ানার বন্ধু রোজা মঙ্কটন লিখেছেন, সবাই জানতো কোথাও একটা ভুল হচ্ছে, কিন্তু আমরা কেউ ভুলটা দেখিয়ে দিতে পারিনি।

ডায়ানা অক্টোবরের ৩০ তারিখে বশিরকে সাক্ষাৎকার দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেন তার আইনজীবী লর্ড মিশকনের সঙ্গে কথা বলে। তার কাছে ডায়ানা তার বিরুদ্ধে যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে সন্দেহ করেন তার একটা বিবরণ দেন।

ডায়ানাকে যখন এসব তথ্যের উৎস সম্পর্কে তার আইনজীবী জিজ্ঞেস করেন, ডায়ানা তখন তার তথ্যদাতা বেশ নির্ভরযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। সূত্র জিসিএইচকিউর, বলেন ডায়ানা।

তবে ডায়ানার বিরুদ্ধে যখন গোয়েন্দারা লেগেছিল তখন তাদের কারো কারো সঙ্গে বশিরের সাক্ষাৎ হয়েছিল বলে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন বশির নিজেই। তবে এটাও ঠিক গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত কোন কর্মকর্তার এভাবে কারোর ফোনে আড়িপাতার তথ্য কোন সাংবাদিককে দেয়ার কথা না।

তবে বিবিসির মধ্যে যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে, বা বিচারপতি ডাইসনের কাছেও যেটি একটি প্রশ্ন, সেটি হচ্ছে, বশিরের অভিসন্ধি বা এসব তৎপরতা কীভাবে সেই সময়কার বিবিসির কর্তাব্যক্তিদের চোখ এড়ালো। বিশেষ করে, যখন কোন কিছু সন্দেহ হবে তা তলিয়ে দেখাই বিবিসির ঘোষিত নীতি।

১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরেই বিবিসির বোঝার কথা যে, কিছু একটা হয়েছে। অর্থাৎ সাক্ষাৎকারটি প্রচারের এক মাসের মাথায়। যখন ডিজাইনার উইসলার বিবিসির কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের টিম গার্ডাম ও টিম সুটারকে জানিয়েছিলেন যে তাকে দিয়ে বশির একটা ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানিয়ে নিয়েছে। সাক্ষাৎকারটি প্রচারের পরই তিনি বুঝতে পেরেছেন সেটা কী কাজে করানো হয়েছিল। বিবিসির এই দুজনকে উইসলার জানান এর আগে প্যানারোমার এডিটর স্টিভ হিউলেটকে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাকে বলেছেন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। হিউলেট ২০১৭ সালে মারা যান ক্যান্সারে। তিনি বেঁচে তাকলে হয়তো লর্ড ডাইসন তাকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন বশিরকে এ প্রক্রিয়ায় তিনি কোন ধরনের সহায়তা করেছিলেন কিনা। কেননা হিউলেট কেন ভুয়া আর্থিক লেনদেনের কাগজপত্র তৈরির কথা জানার পরও কর্তৃপক্ষকে জানালেন না?

প্রমাণ রয়েছে হিউলেট প্রথম ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্টের কথা জানতে পারে উইসলার ফ্যাক্সের মাধ্যমে প্যানারোমা প্রযোজক মার্ক কিলিককে বিষয়টি জানানোর পর। উইসলার এর আগে কিলিকের সঙ্গে কাজ করেছেন। কিলিক পেনফোল্ডস কনসালটেন্ট নাম দেখেই চিনতে পারেন। কেননা এর আগে প্যানারোমার দুটো পর্বে এই প্রতিষ্ঠিানটির নাম আসে। ওই দুটো পর্ব ছিল যুক্তরাজ্যের সাবেক ফুটবল ম্যানেজার টেরি ভেনাবেলসের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড নিয়ে। কিলিক তখন ধন্ধে পড়ে যান পেনফোল্ডস কেন আর্ল স্পেনসারের সহকারীকে টাকা দিতে যাবে। অসমাপ্ত

শনিবার, ০৫ জুন ২০২১ , ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ২৩ শাওয়াল ১৪৪২

ডায়ানার সাক্ষাৎকার বিতর্ক : ঘটনা ও তদন্ত

জন ওয়্যার

image

(গতকালের পর)

স্পেন্সার বিবিসিকে বলেন, সে বছর ডায়ানার মধ্যে এই ভয় ভর করে যে উচু পর্যায়ে তার শত্রু আছে। তাই তিনি খুব বিপন্ন আর অস্থির বোধ করতেন সে সময়। কেন এসব হচ্ছে সে সময় তিনি তা বুঝতে চাইছিলেন।

১৯ সেপ্টেম্বর, ডায়ানার সঙ্গে বশিরকে পরিচয় করিয়ে দেন স্পেন্সার। সেই বৈঠকে বশিরের ৩০টির মতো অভিযোগ তুলে ধরেন স্পেন্সার। যার মধ্যে জেফসনও যে ষড়যন্ত্রের অংশ - তাও তুলে ধরেন তিনি।

স্পেন্সার বিবিসিকে জানান সেই বৈঠকের শেষে তার খুব সন্দেহ ঠেকছিল। বৈঠকের পর ডায়ানাকে তিনি সে কথা বলেওছিলেন যে, গল্পগুলো ঠিক মেলানো যাচ্ছে না।

তবে বশির কিন্তু বলছেন, যেসব কথা তখন হয়েছিল বলে এখন বলা হচ্ছে তার অধিকাংশই এসেছিল ডায়ানার কাছ থেকে। তবু ডাইসনের কাছে মনে হয়েছে, ডায়ানা নয়, সিংহভাগই বশিরের কথা।

মার্টিন বশিরের বক্তব্য একদম ভিন্ন। লর্ড ডাইসন তার সম্পর্কে মতামত দেয়ার পরও। বশির তার অবস্থানেই অটল রয়েছেন।

ডায়ানার সঙ্গে এরপর তার অনেক বৈঠক হয়েছে বশিরের। ১৯৯৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ডায়ানা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেয়ার বিষয়ে খুব আগ্রহী ছিলেন। তবে সে বছর নভেম্বরের ৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ওই সাক্ষাৎকারের আগে তার সঙ্গে তার যে বন্ধুদের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল, তারা এ বিষয়ে ডায়ানার মধ্য অনেক পরিবর্তন দেখেছিলেন। জেফসন বলেন, মার্টিন বশিরের জায়গা থেকে আমি ছিলাম বড় বাধা। কারণ আমি থাকলে ডায়ানাকে সাক্ষাৎকার না দেয়ার পরামর্শ দিতাম।

ডায়ানার বন্ধু রোজা মঙ্কটন লিখেছেন, সবাই জানতো কোথাও একটা ভুল হচ্ছে, কিন্তু আমরা কেউ ভুলটা দেখিয়ে দিতে পারিনি।

ডায়ানা অক্টোবরের ৩০ তারিখে বশিরকে সাক্ষাৎকার দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেন তার আইনজীবী লর্ড মিশকনের সঙ্গে কথা বলে। তার কাছে ডায়ানা তার বিরুদ্ধে যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে সন্দেহ করেন তার একটা বিবরণ দেন।

ডায়ানাকে যখন এসব তথ্যের উৎস সম্পর্কে তার আইনজীবী জিজ্ঞেস করেন, ডায়ানা তখন তার তথ্যদাতা বেশ নির্ভরযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। সূত্র জিসিএইচকিউর, বলেন ডায়ানা।

তবে ডায়ানার বিরুদ্ধে যখন গোয়েন্দারা লেগেছিল তখন তাদের কারো কারো সঙ্গে বশিরের সাক্ষাৎ হয়েছিল বলে বিবিসিকে জানিয়েছিলেন বশির নিজেই। তবে এটাও ঠিক গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত কোন কর্মকর্তার এভাবে কারোর ফোনে আড়িপাতার তথ্য কোন সাংবাদিককে দেয়ার কথা না।

তবে বিবিসির মধ্যে যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে, বা বিচারপতি ডাইসনের কাছেও যেটি একটি প্রশ্ন, সেটি হচ্ছে, বশিরের অভিসন্ধি বা এসব তৎপরতা কীভাবে সেই সময়কার বিবিসির কর্তাব্যক্তিদের চোখ এড়ালো। বিশেষ করে, যখন কোন কিছু সন্দেহ হবে তা তলিয়ে দেখাই বিবিসির ঘোষিত নীতি।

১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরেই বিবিসির বোঝার কথা যে, কিছু একটা হয়েছে। অর্থাৎ সাক্ষাৎকারটি প্রচারের এক মাসের মাথায়। যখন ডিজাইনার উইসলার বিবিসির কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের টিম গার্ডাম ও টিম সুটারকে জানিয়েছিলেন যে তাকে দিয়ে বশির একটা ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানিয়ে নিয়েছে। সাক্ষাৎকারটি প্রচারের পরই তিনি বুঝতে পেরেছেন সেটা কী কাজে করানো হয়েছিল। বিবিসির এই দুজনকে উইসলার জানান এর আগে প্যানারোমার এডিটর স্টিভ হিউলেটকে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাকে বলেছেন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। হিউলেট ২০১৭ সালে মারা যান ক্যান্সারে। তিনি বেঁচে তাকলে হয়তো লর্ড ডাইসন তাকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন বশিরকে এ প্রক্রিয়ায় তিনি কোন ধরনের সহায়তা করেছিলেন কিনা। কেননা হিউলেট কেন ভুয়া আর্থিক লেনদেনের কাগজপত্র তৈরির কথা জানার পরও কর্তৃপক্ষকে জানালেন না?

প্রমাণ রয়েছে হিউলেট প্রথম ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্টের কথা জানতে পারে উইসলার ফ্যাক্সের মাধ্যমে প্যানারোমা প্রযোজক মার্ক কিলিককে বিষয়টি জানানোর পর। উইসলার এর আগে কিলিকের সঙ্গে কাজ করেছেন। কিলিক পেনফোল্ডস কনসালটেন্ট নাম দেখেই চিনতে পারেন। কেননা এর আগে প্যানারোমার দুটো পর্বে এই প্রতিষ্ঠিানটির নাম আসে। ওই দুটো পর্ব ছিল যুক্তরাজ্যের সাবেক ফুটবল ম্যানেজার টেরি ভেনাবেলসের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড নিয়ে। কিলিক তখন ধন্ধে পড়ে যান পেনফোল্ডস কেন আর্ল স্পেনসারের সহকারীকে টাকা দিতে যাবে। অসমাপ্ত