খাদ্য সংকটে বন্যপ্রাণি

বন ছেড়ে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হাজির হয়েছে বানরের দল। তাদের এই ‘বনত্যাগের’ এমন দৃশ্য আগেও দেখা গেছে। খাবারের খোঁজে ‘বনত্যাগীদের’ দলে হাতি, বাঘ, শেয়ালসহ অনেক প্রাণিকেই বিভিন্ন সময় নাম লেখাতে দেখা গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বণ্যপ্রাণিগুলোকে লোকালয়ে আসতে হয় কেন। বনের বাইরে তো বটেই, বনের ভেতরেও তাদের মানুষের অত্যাচারই বা সইতে হয় কেন?

গত ২১ জুন সংবাদ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া বিটের আওতায় দেওবাড়ী এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুই শতাধিক বানর লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। খাবারের অভাবে বানরগুলো দুই-তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে স্থানীয় কৃষকের আম, কাঁঠাল, সবজির বাগানসহ শস্যখেতে হানা দিচ্ছে। এমনকি বাড়িতে ঢুকে খেয়ে ফেলছে রান্না করা খাবারও। একইদিনের পত্রিকায় প্রকাশিত আরেকটি খবর থেকে জানা যাচ্ছে, খাবারের খোঁজে সৈয়দপুর শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে দলছুট একটি হনুমান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সখীপুরের শাল (গজারি) বনে বসবাসরত বানরসহ অন্য বন্যপ্রাণি বহেড়া, আমলকি, তিথিজাম, পিড়ালু, মেটে আলু, কুলসহ বিভিন্ন ধরনের বনজ খাবার খেয়েই প্রাণধারণ করে। দেশের অন্যান্য এলাকার মতো টাঙ্গাইলের সখীপুরের বনভূমি সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। শালবন উজাড় হচ্ছে, ফলদ গাছও কমছে। মানুষের বসতি বাড়তে বাড়তে বনে গিয়ে প্রবেশ করেছে। সেখানে ফসলও ফলানো হচ্ছে। ধ্বংস হতে হতে বনের যতটুক অবশিষ্ট আছে সেটুকুর অস্তিত্বও হুমকির সম্মুখীন। এ কারণে সেখানকার বানরগুলোর খাবারে টান পড়েছে। তাই তারা খাবারের খোঁজে চলে আসছে লোকালয়ে।

বন উজার করে প্রাণ ও প্রকৃতি ধ্বংসের আয়োজন অব্যাহাত আছে। বন বিভাগের নাকের ডগার ওপর দিয়েই গাছপালা ধ্বংস করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই ধ্বংসযজ্ঞে বনবিভাগের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত। বন উজার করে কীভাবে নিজের আখের গোছানো যায় তারা সেই চিন্তায় ব্যস্ত। বনের কোন প্রাণি খাবার সংকটে পড়ল তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।

বিচ্ছিন্নভাবে গাছ লাগিয়ে বনের অভাব পূরণ করা যাবে না। বন্যপ্রাণির খাদ্যচক্রকে অঁটুট রাখার জন্য বন রক্ষা করা জরুরি। বনে খাবার থাকলে কোন প্রাণিকে লোকালয়ে এসে মারমুখী মানুষের সামনে পড়তে হবে না। বন সম্প্রসারণের উদ্যোগও নিতে হবে। এক্ষেত্রে কেবল অর্থকরী গাছ লাগালে হবে না। বন্যপ্রাণির খাদ্যচক্রকে বিবেচনায় নিয়ে ফলদ বা প্রয়োজনীয় অন্যান্য গাছ লাগাতে হবে।

বনভূমি সম্প্রসারণ করে বা গাছ লাগিয়ে বন্যপ্রাণির খাদ্য সংস্থান করা সময়সাপেক্ষ কাজ। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে, বানরদের খাবার সরবরাহ করতে হবে। সরকার এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেছে, গত এক বছরে বানরের খাবারের জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তা অপর্যাপ্ত। বানরের খাবারের জন্য চাহিদা অনুযায়ী সাময়িক বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং বরাদ্দ ব্যয়ে যেন কোনরূপ অনিয়ম বা দুর্নীতি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১ , ১০ আষাঢ় ১৪২৮ ১২ জিলকদ ১৪৪২

খাদ্য সংকটে বন্যপ্রাণি

বন ছেড়ে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হাজির হয়েছে বানরের দল। তাদের এই ‘বনত্যাগের’ এমন দৃশ্য আগেও দেখা গেছে। খাবারের খোঁজে ‘বনত্যাগীদের’ দলে হাতি, বাঘ, শেয়ালসহ অনেক প্রাণিকেই বিভিন্ন সময় নাম লেখাতে দেখা গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বণ্যপ্রাণিগুলোকে লোকালয়ে আসতে হয় কেন। বনের বাইরে তো বটেই, বনের ভেতরেও তাদের মানুষের অত্যাচারই বা সইতে হয় কেন?

গত ২১ জুন সংবাদ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া বিটের আওতায় দেওবাড়ী এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুই শতাধিক বানর লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। খাবারের অভাবে বানরগুলো দুই-তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে স্থানীয় কৃষকের আম, কাঁঠাল, সবজির বাগানসহ শস্যখেতে হানা দিচ্ছে। এমনকি বাড়িতে ঢুকে খেয়ে ফেলছে রান্না করা খাবারও। একইদিনের পত্রিকায় প্রকাশিত আরেকটি খবর থেকে জানা যাচ্ছে, খাবারের খোঁজে সৈয়দপুর শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে দলছুট একটি হনুমান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সখীপুরের শাল (গজারি) বনে বসবাসরত বানরসহ অন্য বন্যপ্রাণি বহেড়া, আমলকি, তিথিজাম, পিড়ালু, মেটে আলু, কুলসহ বিভিন্ন ধরনের বনজ খাবার খেয়েই প্রাণধারণ করে। দেশের অন্যান্য এলাকার মতো টাঙ্গাইলের সখীপুরের বনভূমি সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। শালবন উজাড় হচ্ছে, ফলদ গাছও কমছে। মানুষের বসতি বাড়তে বাড়তে বনে গিয়ে প্রবেশ করেছে। সেখানে ফসলও ফলানো হচ্ছে। ধ্বংস হতে হতে বনের যতটুক অবশিষ্ট আছে সেটুকুর অস্তিত্বও হুমকির সম্মুখীন। এ কারণে সেখানকার বানরগুলোর খাবারে টান পড়েছে। তাই তারা খাবারের খোঁজে চলে আসছে লোকালয়ে।

বন উজার করে প্রাণ ও প্রকৃতি ধ্বংসের আয়োজন অব্যাহাত আছে। বন বিভাগের নাকের ডগার ওপর দিয়েই গাছপালা ধ্বংস করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই ধ্বংসযজ্ঞে বনবিভাগের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত। বন উজার করে কীভাবে নিজের আখের গোছানো যায় তারা সেই চিন্তায় ব্যস্ত। বনের কোন প্রাণি খাবার সংকটে পড়ল তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই।

বিচ্ছিন্নভাবে গাছ লাগিয়ে বনের অভাব পূরণ করা যাবে না। বন্যপ্রাণির খাদ্যচক্রকে অঁটুট রাখার জন্য বন রক্ষা করা জরুরি। বনে খাবার থাকলে কোন প্রাণিকে লোকালয়ে এসে মারমুখী মানুষের সামনে পড়তে হবে না। বন সম্প্রসারণের উদ্যোগও নিতে হবে। এক্ষেত্রে কেবল অর্থকরী গাছ লাগালে হবে না। বন্যপ্রাণির খাদ্যচক্রকে বিবেচনায় নিয়ে ফলদ বা প্রয়োজনীয় অন্যান্য গাছ লাগাতে হবে।

বনভূমি সম্প্রসারণ করে বা গাছ লাগিয়ে বন্যপ্রাণির খাদ্য সংস্থান করা সময়সাপেক্ষ কাজ। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে, বানরদের খাবার সরবরাহ করতে হবে। সরকার এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেছে, গত এক বছরে বানরের খাবারের জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তা অপর্যাপ্ত। বানরের খাবারের জন্য চাহিদা অনুযায়ী সাময়িক বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং বরাদ্দ ব্যয়ে যেন কোনরূপ অনিয়ম বা দুর্নীতি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।