করোনা ও লকডাউনে

চুয়াডাঙ্গায় কোরবানির পশু খামারিদের বেহাল দশা

করোনা মোকাবিলায় চলমান লকডাউনে ও গো-হাট স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গার কয়েক হাজার খামারি ও গৃহস্থ। গত বছর কোরবানিতে গরু বিক্রি করে ভালো দাম পাননি তারা। এবারও অভিন্ন অবস্থা। সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় ভারতীয় গরুর আমদানির সম্ভাবনা কম। তাই খামারিদের প্রত্যাশা ছিল ভালো দাম পাওয়ার। কিন্ত সম্প্রতি করোনাভাইরাস বেড়ে যাওয়ায় দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন।

প্রতিবছর মৌসুম শুরুর একমাস আগে থেকে গরু বেপারীদের আনাগোনা শুরু হয়। তারা পছন্দের গরুটি বায়না বা ক্রয় করেন। এবার করোনার বিধি নিষেধের কারণে স্থায়ী পশু হাটও বন্ধ। সে কারণে ভরা মৌসুমে দেখা নেই গরু বেপারীদের। ঈদুল আযহার (কোরবানি ঈদের) আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। এ অবস্থা বাণিজ্যিক খামারিদের পাশাপাশি চাকরিজীবি, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ তাদের পালিত ১ লাখ ১২ হাজার ৮৫৫টি কোবানির পশু বিক্রি নিয়ে রয়েছেন বিপাকে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এবারও বসে নেই চুয়াডাঙ্গার গরু খামারিরা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু-ছাগল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ২০-২৫ হাজার পরিবার ও কয়েকশ খামারি নেপিয়ার বা পাকচুন ঘাস, ধানের কুড়া, গম, ভূট্টা, বিচালী, খৈল, ডাবলি ভুষি, ভাত, কাঁচাঘাস কাঁঠালের পাতাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরু-ছাগল মোটাতাজা করছেন।

চাকরি-ব্যবসাসহ দিনমজুর, ছাত্র ও গৃহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ তাদের নিজ নিজ পেশার পাশাপাশি ২-১টি গরু-ছাগল পালন করছেন। এতে বছর শেষে তারা বাড়তি মোটা অংকের টাকা আয় করছেন। সেই লাভ থেকে মিটিয়ে থাকেন বাড়তি চাহিদাও।

জেলায় শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু এবং ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন করা হয়। এসব গরু-ছাগল স্থানীয় হাট ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন পশু হাটে বিক্রি করা হয়। গত বছরের তুলনায় সব ধরনের গরুর খাবারের দাম বেড়ে গেছে। আগে একটি গরুর খাবারের জন্য মাসে খরচ হতো ৮০০-৯০০ টাকা।

বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০০-১৩০০ টাকা। গো খাদ্যের দাম বাড়তি ও উপযুক্ত দাম না পেয়ে অনেকেই গরু পালন করা বন্ধ করে দিয়েছেন। গত ৫ বছররে তুলনায় এ বছর গরু ছাগল খামারির সংখ্যা অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, চুয়াডাঙ্গার ৪ উপজেলায় কোরবানি ঈদের জন্য বাণিজ্যিকভাবে ৭ হাজার ৭৪৫টি খামারসহ পারিবারিকভাবে পালন করা হয়েছে ২৯ হাজার ৯৩৯টি গরু ও ৮২ হাজার ২৩৬টি ছাগল এবং ৭৮০টি ভেড়া। এর মধ্যে সদর উজেলায় ৩ হাজার ৫৫৫টি গরু এবং ছাগল ও ভেড়া ১৭ হাজার ৭৫৮টি।

আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৬ হাজার ৯৫৮টি গরু এবং ছাগল ও ভেড়া ২১ হাজার ৮২৩টি। দামুড়হুদা উপজেলায় ৪ হাজার ৬১৪টি গরু এবং ছাগল ও ভেড়া ২১ হাজার ৪৬২টি এবং জীবননগর উপজেলায় ৪ হাজার ৫১২টি গরু এবং ছাগল ও ভেড়া ২১ হাজার ৯৭৩টি রয়েছে।

জেলায় দেশি গরুর পাশাপাশি শাহীওয়াল, গীর, ব্রাহামা, মুন্ডি ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু এবং ব্লাক বেঙ্গল জাতর ছাগল পালন করা হয়। বিশ্ববিখ্যাত ব্লাক বেঙ্গল গোট চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্য। দেশের মধ্যে এই জাতের ছাগল বেশি পালন হওয়ায় চুয়াডাঙ্গার ব্রান্ড হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। রোগ বালাই কম ও লাভজনক হওয়ায় গ্রামঞ্চলের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে ছাগল পালন করে থাকে।

আবার অনেক খামারি ২০/৩০টি ছাগল পালন করে বছরে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করছে। যা দিয়ে তাদের সংসারের বেশিরভাগ চাহিদা মেটাতে পারছেন। দরিদ্র কৃষক, বেকার যুবক ও যুবতীরা জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি জাতিকে পুষ্টি সরবরাহ করছে। জেলার ৪ উপজেলায় বছরে ৫ লাখ ছাগল পালন হয়ে থাকে। এর থেকে ২৩ হাজার মেট্রিক মাংস উৎপাদন হয়। যা থেকে আয় হয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

আলমডাঙ্গা উপজেলার মাজহাদ গ্রামের আবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য হাজ্জাত বলেন, ২০০৭ সাল ১৪টি গরু দিয়ে তিনি খামার ব্যবসা শুরু করেন। এ বছর কোরবানির উপযুক্ত ৮০টি গরু তৈরি করেছিল। ইতোমধ্যে ৪১টি গরু ঢাকার বিভিন্ন পার্টি কিনে নিয়ে গেছে। বর্তমানে আরও ৩৯টি বিক্রয় যোগ্য গরু রয়েছে। শাহীওয়াল, অস্টাল ও ফ্রিজিয়ান জাতের। এগুলো তিনি চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুস্টিয়া অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করেন। দেশীয় এই গরুগুলো তিনি উপযুক্ত করেই বিক্রি করেন। তার গরুগুলো দেশ সেরা হওয়ায় দেশব্যাপী তার খামার তাজ এগ্রো সুনাম রয়েছে। তার খামারের গরুগুলোর বাজার মূল্য দেড় লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা। গো খাদ্যের দাম কমানো গেলে আমরা কম দামে গরু বিক্রি করতে পারবো। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হুচুকপাড়ার সজিব হোসেন বলেন, ঢাকা পলিটেকনিক্যাল থেকে ইলেকট্রিক্যালে লেখাপড়া শেষ করে ২০১১ তে বিএসসি ভর্তি হয়। ওই বছর কোরিয়া চলে যাই। বৈশিক মহামারীর কারণে দেশে ফিরে আসি। এরপর নিজেই মিশ্র খামার গড়ে তুলি। প্রথম শুরু ৪টা গরু দিয়ে। এ বছর তার খামারে ১৯টি গরু ও ৪২টি ছাগল রয়েছে। বিক্রয়যোগ্য গরু রয়েছে ১০টি আর ছাগল ৫টা।

এরমধ্যে ২টি গরু তিনি ৩ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। এবার ঈদে তিনি গরুদুটি ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পাবেন বলে আশা করছেন। বাকি ৮টি গরু ১০ লাখ টাকায় এবং প্রতিটি ছাগল ২০-২৫ হাজার টাকায় তিনি বিক্রি করতে আগ্রহী। সাধারণ খাবারের পাশপাশি তিনি নিয়মিত গরুকে ক্রিমিনাশক ঔষধ খাওয়ান। তিনি বলেন দ্রুত গো হাটগুলো খুলে না দিলে এবং লকডাউন অব্যাহত থাকলে এবারও তাদের লোকসান গুনতে হবে।

চুয়াডাঙ্গার ঝোড়াঘাটা গ্রামের খোকন হোসেন বলেন, এ বছর তার খামারে কোরবানিতে বিক্রয় যোগ্য গরু রয়েছে ৮টি। জাত দেশি শাহীওয়াল। প্রতিটি গরু ৫ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে চান। তিন মাস আগে তিনি তার খামারের বড় গরুটি মেহেরপুর থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় ক্রয় করেন। আসন্ন ঈদে তিনি তা বিক্রি করতে চান ৫ লাখ টাকায়। তিনি বলেন এসএসসি পাশ করে তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গরুর খামার করেছেন। বর্তমানে তার খামারে ১৭টি গরু হয়েছে। এছাড়া তিনি ৮বিঘা জমিতে দেড়লাখ টাকা খরচ করে পাকচুন ঘাস লাগিয়েছেন। যা থেকে তিনি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন।

পৌর এলাকার তালতলার ছোট বুড়ি বলেন, এ বছর তিনি দেশি জাতের ২টি ছাগল পালন করছেন। একটি ৬ মাস আগে ৪ হাজার ২শত টাকায় অপরটি ৪ মাস আগে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। প্রতিমাসে তাদের খাবার বাবদ খরচ হয়েছে ৭০০-৮০০ টাকা। এবার ঈদে ছাগল দুটি ২২-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছেন।

শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৮ ২০ জিলক্বদ ১৪৪২

করোনা ও লকডাউনে

চুয়াডাঙ্গায় কোরবানির পশু খামারিদের বেহাল দশা

আবদুস সালাম, চুয়াডাঙ্গা

image

করোনা মোকাবিলায় চলমান লকডাউনে ও গো-হাট স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গার কয়েক হাজার খামারি ও গৃহস্থ। গত বছর কোরবানিতে গরু বিক্রি করে ভালো দাম পাননি তারা। এবারও অভিন্ন অবস্থা। সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় ভারতীয় গরুর আমদানির সম্ভাবনা কম। তাই খামারিদের প্রত্যাশা ছিল ভালো দাম পাওয়ার। কিন্ত সম্প্রতি করোনাভাইরাস বেড়ে যাওয়ায় দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন।

প্রতিবছর মৌসুম শুরুর একমাস আগে থেকে গরু বেপারীদের আনাগোনা শুরু হয়। তারা পছন্দের গরুটি বায়না বা ক্রয় করেন। এবার করোনার বিধি নিষেধের কারণে স্থায়ী পশু হাটও বন্ধ। সে কারণে ভরা মৌসুমে দেখা নেই গরু বেপারীদের। ঈদুল আযহার (কোরবানি ঈদের) আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। এ অবস্থা বাণিজ্যিক খামারিদের পাশাপাশি চাকরিজীবি, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ তাদের পালিত ১ লাখ ১২ হাজার ৮৫৫টি কোবানির পশু বিক্রি নিয়ে রয়েছেন বিপাকে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এবারও বসে নেই চুয়াডাঙ্গার গরু খামারিরা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু-ছাগল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ২০-২৫ হাজার পরিবার ও কয়েকশ খামারি নেপিয়ার বা পাকচুন ঘাস, ধানের কুড়া, গম, ভূট্টা, বিচালী, খৈল, ডাবলি ভুষি, ভাত, কাঁচাঘাস কাঁঠালের পাতাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরু-ছাগল মোটাতাজা করছেন।

চাকরি-ব্যবসাসহ দিনমজুর, ছাত্র ও গৃহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ তাদের নিজ নিজ পেশার পাশাপাশি ২-১টি গরু-ছাগল পালন করছেন। এতে বছর শেষে তারা বাড়তি মোটা অংকের টাকা আয় করছেন। সেই লাভ থেকে মিটিয়ে থাকেন বাড়তি চাহিদাও।

জেলায় শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু এবং ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন করা হয়। এসব গরু-ছাগল স্থানীয় হাট ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন পশু হাটে বিক্রি করা হয়। গত বছরের তুলনায় সব ধরনের গরুর খাবারের দাম বেড়ে গেছে। আগে একটি গরুর খাবারের জন্য মাসে খরচ হতো ৮০০-৯০০ টাকা।

বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০০-১৩০০ টাকা। গো খাদ্যের দাম বাড়তি ও উপযুক্ত দাম না পেয়ে অনেকেই গরু পালন করা বন্ধ করে দিয়েছেন। গত ৫ বছররে তুলনায় এ বছর গরু ছাগল খামারির সংখ্যা অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, চুয়াডাঙ্গার ৪ উপজেলায় কোরবানি ঈদের জন্য বাণিজ্যিকভাবে ৭ হাজার ৭৪৫টি খামারসহ পারিবারিকভাবে পালন করা হয়েছে ২৯ হাজার ৯৩৯টি গরু ও ৮২ হাজার ২৩৬টি ছাগল এবং ৭৮০টি ভেড়া। এর মধ্যে সদর উজেলায় ৩ হাজার ৫৫৫টি গরু এবং ছাগল ও ভেড়া ১৭ হাজার ৭৫৮টি।

আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৬ হাজার ৯৫৮টি গরু এবং ছাগল ও ভেড়া ২১ হাজার ৮২৩টি। দামুড়হুদা উপজেলায় ৪ হাজার ৬১৪টি গরু এবং ছাগল ও ভেড়া ২১ হাজার ৪৬২টি এবং জীবননগর উপজেলায় ৪ হাজার ৫১২টি গরু এবং ছাগল ও ভেড়া ২১ হাজার ৯৭৩টি রয়েছে।

জেলায় দেশি গরুর পাশাপাশি শাহীওয়াল, গীর, ব্রাহামা, মুন্ডি ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু এবং ব্লাক বেঙ্গল জাতর ছাগল পালন করা হয়। বিশ্ববিখ্যাত ব্লাক বেঙ্গল গোট চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্য। দেশের মধ্যে এই জাতের ছাগল বেশি পালন হওয়ায় চুয়াডাঙ্গার ব্রান্ড হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। রোগ বালাই কম ও লাভজনক হওয়ায় গ্রামঞ্চলের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে ছাগল পালন করে থাকে।

আবার অনেক খামারি ২০/৩০টি ছাগল পালন করে বছরে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করছে। যা দিয়ে তাদের সংসারের বেশিরভাগ চাহিদা মেটাতে পারছেন। দরিদ্র কৃষক, বেকার যুবক ও যুবতীরা জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি জাতিকে পুষ্টি সরবরাহ করছে। জেলার ৪ উপজেলায় বছরে ৫ লাখ ছাগল পালন হয়ে থাকে। এর থেকে ২৩ হাজার মেট্রিক মাংস উৎপাদন হয়। যা থেকে আয় হয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

আলমডাঙ্গা উপজেলার মাজহাদ গ্রামের আবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য হাজ্জাত বলেন, ২০০৭ সাল ১৪টি গরু দিয়ে তিনি খামার ব্যবসা শুরু করেন। এ বছর কোরবানির উপযুক্ত ৮০টি গরু তৈরি করেছিল। ইতোমধ্যে ৪১টি গরু ঢাকার বিভিন্ন পার্টি কিনে নিয়ে গেছে। বর্তমানে আরও ৩৯টি বিক্রয় যোগ্য গরু রয়েছে। শাহীওয়াল, অস্টাল ও ফ্রিজিয়ান জাতের। এগুলো তিনি চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুস্টিয়া অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করেন। দেশীয় এই গরুগুলো তিনি উপযুক্ত করেই বিক্রি করেন। তার গরুগুলো দেশ সেরা হওয়ায় দেশব্যাপী তার খামার তাজ এগ্রো সুনাম রয়েছে। তার খামারের গরুগুলোর বাজার মূল্য দেড় লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা। গো খাদ্যের দাম কমানো গেলে আমরা কম দামে গরু বিক্রি করতে পারবো। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হুচুকপাড়ার সজিব হোসেন বলেন, ঢাকা পলিটেকনিক্যাল থেকে ইলেকট্রিক্যালে লেখাপড়া শেষ করে ২০১১ তে বিএসসি ভর্তি হয়। ওই বছর কোরিয়া চলে যাই। বৈশিক মহামারীর কারণে দেশে ফিরে আসি। এরপর নিজেই মিশ্র খামার গড়ে তুলি। প্রথম শুরু ৪টা গরু দিয়ে। এ বছর তার খামারে ১৯টি গরু ও ৪২টি ছাগল রয়েছে। বিক্রয়যোগ্য গরু রয়েছে ১০টি আর ছাগল ৫টা।

এরমধ্যে ২টি গরু তিনি ৩ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। এবার ঈদে তিনি গরুদুটি ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পাবেন বলে আশা করছেন। বাকি ৮টি গরু ১০ লাখ টাকায় এবং প্রতিটি ছাগল ২০-২৫ হাজার টাকায় তিনি বিক্রি করতে আগ্রহী। সাধারণ খাবারের পাশপাশি তিনি নিয়মিত গরুকে ক্রিমিনাশক ঔষধ খাওয়ান। তিনি বলেন দ্রুত গো হাটগুলো খুলে না দিলে এবং লকডাউন অব্যাহত থাকলে এবারও তাদের লোকসান গুনতে হবে।

চুয়াডাঙ্গার ঝোড়াঘাটা গ্রামের খোকন হোসেন বলেন, এ বছর তার খামারে কোরবানিতে বিক্রয় যোগ্য গরু রয়েছে ৮টি। জাত দেশি শাহীওয়াল। প্রতিটি গরু ৫ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে চান। তিন মাস আগে তিনি তার খামারের বড় গরুটি মেহেরপুর থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় ক্রয় করেন। আসন্ন ঈদে তিনি তা বিক্রি করতে চান ৫ লাখ টাকায়। তিনি বলেন এসএসসি পাশ করে তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গরুর খামার করেছেন। বর্তমানে তার খামারে ১৭টি গরু হয়েছে। এছাড়া তিনি ৮বিঘা জমিতে দেড়লাখ টাকা খরচ করে পাকচুন ঘাস লাগিয়েছেন। যা থেকে তিনি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন।

পৌর এলাকার তালতলার ছোট বুড়ি বলেন, এ বছর তিনি দেশি জাতের ২টি ছাগল পালন করছেন। একটি ৬ মাস আগে ৪ হাজার ২শত টাকায় অপরটি ৪ মাস আগে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। প্রতিমাসে তাদের খাবার বাবদ খরচ হয়েছে ৭০০-৮০০ টাকা। এবার ঈদে ছাগল দুটি ২২-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছেন।