যুক্তরাষ্ট্রে যুবলীগ নেতাকে অভ্যর্থনা মিল্কি হত্যার আসামি চঞ্চলের

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন চলতি মাসের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে রয়েছেন। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ইসমাইল হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গেলে তাকে এয়ারপোর্টে অভ্যর্থনা জানান মিল্কি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি যুবলীগ মহানগর উত্তরের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেইসবুক পেইজে পোস্ট দেয়া বেশ কিছু ভিডিও ও স্থির ছবি গত কয়দিন ধরে রাজনীতিবিদদের আলোচনায় এসেছে।

এসব ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে এয়ারপোর্টে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন পুলিশের খাতায় পালাতক মিল্কি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল। প্রায় আট বছর আগে রাজধানীর গুলশানে ফিল্মি স্টাইলে খুন করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে।

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে ফিল্মি স্টাইলে রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকা-ের পর তার ছোটভাই মেজর রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটির প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পান র‌্যাবের সহকারী পুলিশ কাজেমুর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল ১১ জনকে অভিযুক্ত করে তিনি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেন মামলার বাদী। পরে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস অধিকতর তদন্তে আরও সাতজনকে অভিযুক্ত করে ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৮ আসামি হলেন সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর ম-ল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিদউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে লোপাসহ ছয়জন বিভিন্ন সময় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আলোচিত এই মামলার বিচারকাজ এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ৮ বছর আগে সংঘটিত এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার ১৮ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক রয়েছেন। বাকি ১৪ জন আছেন জামিনে। মামলার শুরু থেকেই পলাতক চার আসামির মধ্যে অন্যতম প্রধান আসামি ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছেন।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচার চলছে ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে। এই মামলায় নিহত মিল্কির ছোট ভাই ও মামলার বাদী মেজর রাশেদুল হক খান এবং মিল্কির গাড়িচালক মারুফ রেজা সাগরসহ তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে লোপাসহ ছয়জন বিভিন্ন সময় আদালতে স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আর হত্যাকা-ের পর যুবলীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সম্পাদক এসএম জাহিদ সিদ্দিক তারেক ও চঞ্চলকে আওয়ামী যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের পর ২৯ জুলাই তারেককে উত্তরার ফরচুন হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন ৩০ জুলাই র‌্যাবের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান তারেক।

পলাতক খুনের আসামির সঙ্গে নিজ দলের একজন সক্রিয় নেতা চলাফেরা করায় নেতাকর্মীরা অনেকেই বিব্রত বোধ করছেন। এ বিষয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৫ আশ্বিন ১৪২৮ ১১ সফর ১৪৪৩

যুক্তরাষ্ট্রে যুবলীগ নেতাকে অভ্যর্থনা মিল্কি হত্যার আসামি চঞ্চলের

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন চলতি মাসের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে রয়েছেন। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ইসমাইল হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গেলে তাকে এয়ারপোর্টে অভ্যর্থনা জানান মিল্কি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি যুবলীগ মহানগর উত্তরের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেইসবুক পেইজে পোস্ট দেয়া বেশ কিছু ভিডিও ও স্থির ছবি গত কয়দিন ধরে রাজনীতিবিদদের আলোচনায় এসেছে।

এসব ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে এয়ারপোর্টে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন পুলিশের খাতায় পালাতক মিল্কি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল। প্রায় আট বছর আগে রাজধানীর গুলশানে ফিল্মি স্টাইলে খুন করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে।

২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে ফিল্মি স্টাইলে রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকা-ের পর তার ছোটভাই মেজর রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটির প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পান র‌্যাবের সহকারী পুলিশ কাজেমুর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল ১১ জনকে অভিযুক্ত করে তিনি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেন মামলার বাদী। পরে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস অধিকতর তদন্তে আরও সাতজনকে অভিযুক্ত করে ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৮ আসামি হলেন সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর ম-ল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিদউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে লোপাসহ ছয়জন বিভিন্ন সময় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আলোচিত এই মামলার বিচারকাজ এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ৮ বছর আগে সংঘটিত এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার ১৮ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক রয়েছেন। বাকি ১৪ জন আছেন জামিনে। মামলার শুরু থেকেই পলাতক চার আসামির মধ্যে অন্যতম প্রধান আসামি ঢাকা মহানগর যুবলীগের (উত্তর) তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছেন।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচার চলছে ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে। এই মামলায় নিহত মিল্কির ছোট ভাই ও মামলার বাদী মেজর রাশেদুল হক খান এবং মিল্কির গাড়িচালক মারুফ রেজা সাগরসহ তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে লোপাসহ ছয়জন বিভিন্ন সময় আদালতে স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আর হত্যাকা-ের পর যুবলীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সম্পাদক এসএম জাহিদ সিদ্দিক তারেক ও চঞ্চলকে আওয়ামী যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের পর ২৯ জুলাই তারেককে উত্তরার ফরচুন হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন ৩০ জুলাই র‌্যাবের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান তারেক।

পলাতক খুনের আসামির সঙ্গে নিজ দলের একজন সক্রিয় নেতা চলাফেরা করায় নেতাকর্মীরা অনেকেই বিব্রত বোধ করছেন। এ বিষয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।