ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯

ইংল্যান্ডের সামনে পাকিস্তানের ৩৪৯ রানের টার্গেট

ক্রিকেট বিশ্বে পাকিস্তানের সঙ্গে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ শব্দটা কেন সমার্থক এর প্রমাণ পাওয়া গেলো আরও একবার। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজের পিচে মাত্র ২২ ওভারে ১০৫ রানে অল আউট হওয়া উপমহাদেশীয় দল গতকাল একই ভেন্যুতে আট উইকেটের বিনিময়ে গড়েছে ৩৪৮ রানের বিশাল সংগ্রহ। তাও আবার চলতি আসরের স্বাগতিক তথা শিরোপার অন্যতম দাবিদার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এই রান টপকাতে হলে রেকর্ড গড়া চাই বৃটিশদের। বিশ্বকাপে যে এখনো এত বড় সংগ্রহ টপকে যাওয়ার নজির নেই।

পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের এমন পারফরমেন্স নিঃসন্দেহে ক্রিকেট ভক্তদের ফিরিয়ে নিচ্ছে ইমরান খানের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের কাপ জয়ের সময়ে। সেবার ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়িয়ে ঘরে তুলেিেছল শিরোপা। এবার প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান। পরিসংখ্যানও কথা বলছে উপমহাদেশের দলটার পক্ষে। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৩২৭ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটা আয়ারল্যান্ডের। সেটাও ছিলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১১ সালে।

নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজের পিচ বরাবরই ব্যাটিং স্বর্গ। এমন পিচে টস জিতে পাকিস্তানকে বোলিংয়ের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্তটা নিয়ে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক এউইন মরগান হয়ত আফসোসই করছেন। এই মাঠেই ইংলিশদের রয়েছে ৪৮১ রান তোলার রেকর্ড। আগে ব্যাটিং নিলে কি হতো, তা নিয়ে ভেবে অন্তত এখন কোন লাভ নেই। কিন্তু পাকিস্তান যে লক্ষ্যটা দিয়েছে পর্বতপ্রমাণ।

শুরুতেই ঝড় তুলেছিলেন দুই ওপেনার ফখর জামান এবং ইমাম-উল- হক। ৮২ রানের জুটি গড়ার পর তাদের বিচ্ছিন্ন করেন মঈন আলি। ৩৬ রান করে আউট হন ফখর। ৪৪ রান করেন ইমাম-উল হক। তাকে ক্রিস ওকসের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান মঈন আলী। এরপর বাবর আজম এবং মোহাম্মদ হাফিজ পাকিস্তানের রান ২০০’র কাছাকাছি নিয়ে যান।

১৯৯ রানের মাথায় ৬৬ বলে ৬৩ রান করে বিদায় নেন বাবর আজম। এবারের কৃতিত্বও মঈনের। ক্যাচটাও ধরেন ওকস। বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখিয়ে ৬২ বলে ৮৪ রান করেন মোহাম্মদ হাফিজ। ৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে হাঁকান ২টি ছক্কা। মার্ক উডের বলে ওকসকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। ততক্ষণে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের সঙ্গে দলকে পৌঁছে দেন ২৭৯ রানে। পরে উডের দ্বিতীয় শিকার হয়ে সফেরেন আসিফ আলী (১৪)। গলার কাঁটা হয়ে থাকা সরফরাজকে ৫৫ রানে ফেরান ওকস। পরে শোয়েব মালিক (৮) ও ওয়াহাব রিয়াজকেও (৪) আউট করেন তিনি। শেষ দিকে ৫ বলে ১০ রান করেন হাসান আলী আর ২ বাউন্ডারিতে ১০ রান করেন শাদাব খান।

পাকিস্তানের ইনিংসে লক্ষ্যণীয় বিষয় ছিল পেস বোলিং ভীতি কাটিয়ে ওঠা। উপমহাদেশের দলগুলোর ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট ইংলিশ কন্ডিশনে পেস বোলারদের বিপক্ষে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে বলে ধারণা করা হলেও বাংলাদেশের পর পাকিস্তানও দেখিয়েছে যে, তেমনটা হবার নয়। ইংলিশ দলের ‘এক্স ফ্যাক্টর’ নামে খ্যাতি পাওয়া আলোচিত পেসার জোফরা আর্চারের কাছে পতন ঘটেনি পাকিস্তানের কোন উইকেটের। উল্টো তার কোটার ১০ ওভার থেকে তারা নিয়েছে ৭৯ রান।

ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিস ওকস এবং মঈন আলি শিকার করেন ৩টি করে উইকেট। দুটো উইকেট যায় মার্ক উডের দখলে।

বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই সর্বোচ্চ রান। আগের সেরা ছিল গত আসরে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার ৯ উইকেটে ৩৪২।

২০০৭ আসরে জিতেছিল ৩০১ রানের লক্ষ্য তাড়ায়।

জিততে রেকর্ড গড়তে হবে ইংল্যান্ডকে। এমন মাঠে তারা এই লক্ষ্য পেয়েছে যেখানে তারা দুবার ভেঙেছে ওয়ানডেতে দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। একবার করেছিল ৪৪৪, অন্যবার ৪৮১।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: পাকিস্তান ৫০ ওভারে ৩৪৮/৮ (ইমাম ৪৪, ফখর ৩৬, বাবর ৬৩, হাফিজ ৮৪, সরফরাজ ৫৫, আসিফ ১৪, মালিক ৮, ওয়াহাব ৪, হাসান ১০*, শাদাব ১০*; ওকস ৮-১-৭১-৩, আর্চার ১০-০-৭৯-০, মঈন ১০-০-৫০-৩, উড ১০-০-৫৩-২, স্টোকস ৭-০-৪৩-০, রশিদ ৫-০-৪৩-০)।

মঙ্গলবার, ০৪ জুন ২০১৯ , ২১ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ২৯ রমজান ১৪৪০

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯

ইংল্যান্ডের সামনে পাকিস্তানের ৩৪৯ রানের টার্গেট

বিশেষ প্রতিনিধি

image

ইংলিশ ব্যাটসম্যান জেসন রয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের এলবিডব্লিউ’র সফল আবেদন

ক্রিকেট বিশ্বে পাকিস্তানের সঙ্গে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ শব্দটা কেন সমার্থক এর প্রমাণ পাওয়া গেলো আরও একবার। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজের পিচে মাত্র ২২ ওভারে ১০৫ রানে অল আউট হওয়া উপমহাদেশীয় দল গতকাল একই ভেন্যুতে আট উইকেটের বিনিময়ে গড়েছে ৩৪৮ রানের বিশাল সংগ্রহ। তাও আবার চলতি আসরের স্বাগতিক তথা শিরোপার অন্যতম দাবিদার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এই রান টপকাতে হলে রেকর্ড গড়া চাই বৃটিশদের। বিশ্বকাপে যে এখনো এত বড় সংগ্রহ টপকে যাওয়ার নজির নেই।

পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের এমন পারফরমেন্স নিঃসন্দেহে ক্রিকেট ভক্তদের ফিরিয়ে নিচ্ছে ইমরান খানের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের কাপ জয়ের সময়ে। সেবার ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়িয়ে ঘরে তুলেিেছল শিরোপা। এবার প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পরের ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান। পরিসংখ্যানও কথা বলছে উপমহাদেশের দলটার পক্ষে। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৩২৭ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটা আয়ারল্যান্ডের। সেটাও ছিলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১১ সালে।

নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজের পিচ বরাবরই ব্যাটিং স্বর্গ। এমন পিচে টস জিতে পাকিস্তানকে বোলিংয়ের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্তটা নিয়ে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক এউইন মরগান হয়ত আফসোসই করছেন। এই মাঠেই ইংলিশদের রয়েছে ৪৮১ রান তোলার রেকর্ড। আগে ব্যাটিং নিলে কি হতো, তা নিয়ে ভেবে অন্তত এখন কোন লাভ নেই। কিন্তু পাকিস্তান যে লক্ষ্যটা দিয়েছে পর্বতপ্রমাণ।

শুরুতেই ঝড় তুলেছিলেন দুই ওপেনার ফখর জামান এবং ইমাম-উল- হক। ৮২ রানের জুটি গড়ার পর তাদের বিচ্ছিন্ন করেন মঈন আলি। ৩৬ রান করে আউট হন ফখর। ৪৪ রান করেন ইমাম-উল হক। তাকে ক্রিস ওকসের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান মঈন আলী। এরপর বাবর আজম এবং মোহাম্মদ হাফিজ পাকিস্তানের রান ২০০’র কাছাকাছি নিয়ে যান।

১৯৯ রানের মাথায় ৬৬ বলে ৬৩ রান করে বিদায় নেন বাবর আজম। এবারের কৃতিত্বও মঈনের। ক্যাচটাও ধরেন ওকস। বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখিয়ে ৬২ বলে ৮৪ রান করেন মোহাম্মদ হাফিজ। ৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে হাঁকান ২টি ছক্কা। মার্ক উডের বলে ওকসকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। ততক্ষণে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের সঙ্গে দলকে পৌঁছে দেন ২৭৯ রানে। পরে উডের দ্বিতীয় শিকার হয়ে সফেরেন আসিফ আলী (১৪)। গলার কাঁটা হয়ে থাকা সরফরাজকে ৫৫ রানে ফেরান ওকস। পরে শোয়েব মালিক (৮) ও ওয়াহাব রিয়াজকেও (৪) আউট করেন তিনি। শেষ দিকে ৫ বলে ১০ রান করেন হাসান আলী আর ২ বাউন্ডারিতে ১০ রান করেন শাদাব খান।

পাকিস্তানের ইনিংসে লক্ষ্যণীয় বিষয় ছিল পেস বোলিং ভীতি কাটিয়ে ওঠা। উপমহাদেশের দলগুলোর ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট ইংলিশ কন্ডিশনে পেস বোলারদের বিপক্ষে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে বলে ধারণা করা হলেও বাংলাদেশের পর পাকিস্তানও দেখিয়েছে যে, তেমনটা হবার নয়। ইংলিশ দলের ‘এক্স ফ্যাক্টর’ নামে খ্যাতি পাওয়া আলোচিত পেসার জোফরা আর্চারের কাছে পতন ঘটেনি পাকিস্তানের কোন উইকেটের। উল্টো তার কোটার ১০ ওভার থেকে তারা নিয়েছে ৭৯ রান।

ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিস ওকস এবং মঈন আলি শিকার করেন ৩টি করে উইকেট। দুটো উইকেট যায় মার্ক উডের দখলে।

বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই সর্বোচ্চ রান। আগের সেরা ছিল গত আসরে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার ৯ উইকেটে ৩৪২।

২০০৭ আসরে জিতেছিল ৩০১ রানের লক্ষ্য তাড়ায়।

জিততে রেকর্ড গড়তে হবে ইংল্যান্ডকে। এমন মাঠে তারা এই লক্ষ্য পেয়েছে যেখানে তারা দুবার ভেঙেছে ওয়ানডেতে দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। একবার করেছিল ৪৪৪, অন্যবার ৪৮১।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: পাকিস্তান ৫০ ওভারে ৩৪৮/৮ (ইমাম ৪৪, ফখর ৩৬, বাবর ৬৩, হাফিজ ৮৪, সরফরাজ ৫৫, আসিফ ১৪, মালিক ৮, ওয়াহাব ৪, হাসান ১০*, শাদাব ১০*; ওকস ৮-১-৭১-৩, আর্চার ১০-০-৭৯-০, মঈন ১০-০-৫০-৩, উড ১০-০-৫৩-২, স্টোকস ৭-০-৪৩-০, রশিদ ৫-০-৪৩-০)।