পাইলট পাসপোর্ট ছাড়া কাতারে

দুটি তদন্ত কমিটি গঠন

ফিনল্যান্ড সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনার জন্য যাওয়া বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটের পাইলট ক্যাপ্টেন ফজলে মাহমুদকে আটকে দিয়েছে কাতারের দোহা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন। পাসপোর্ট ছাড়া বাংলাদেশ বিমানের ওই পাইলট বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হয়ে বিশেষ ফ্লাইটে কাতারের দোহা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যান। পরে দোহা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পাইলটের পাসপোর্ট দেখতে চাইলে তা দেখাতে না পারায় তাকে হেফাজতে নেয় তারা। ওই ঘটনায় পাইলটকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। অন্য আরেকটি ফ্লাইট পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীকে আনার জন্য। পাইলট ক্যাপ্টেন ফজলে মাহমুদের পাসপোর্ট বিশেষ ব্যবস্থায় তার কাছে পাঠানো হয়। এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের পাইলট কিভাবে পাসপোর্ট ছাড়া ভ্রমণ করল-এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি অনুসন্ধান করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও ইমিগ্রেশন। তবে ক্যাপ্টেন ফজলে মাহমুদ দাবি করেছেন, তিনি ভুলক্রমে পাসপোর্ট ছাড়াই বিমানে উঠে পড়েছিলেন। ইমিগ্রেশনেও তার পাসপোর্টের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়নি।

ফিনল্যান্ড সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনতে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিমানের ড্রিমলাইনার বোয়িং ৭৮৭ উড়োজাহাজ ঢাকা ছেড়ে কাতারের উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু পাসপোর্ট ছাড়াই বিমানটি চালিয়ে কাতারের দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যান পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। আর পাসপোর্ট না থাকায় তাকে আটকে দিয়েছে কাতার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীকে আনতে যাওয়া বিমানের পাইলট কিভাবে পাসপোর্ট ছাড়া ইমিগ্রেশন পার হয়ে কাতারে বিমান নিয়ে গেলো এ নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়। পাসপোর্ট ছাড়া ওই পাইলট কিভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হলেন, এর উত্তর খুঁজতে মাঠে নেমেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বিষয়টি অনুসন্ধান করতে ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদের পাসপোর্ট বিশেষ ব্যবস্থায় রিজেন্ট এয়ারওয়েজে করে কাতার পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার ফ্লাইটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তাকে। তার পরিবর্তে বিমানের অন্য পাইলটকে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, পাসপোর্ট ছাড়া ক্যাপ্টেন ফজলে মাহমুদ কিভাবে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হলেন সে তথ্য অনুসন্ধান করতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বিমানবন্দর ত্যাগ করার সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাইলট বলেন, ‘পাইলটদের বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ত্যাগ ও প্রবেশের তথ্য জেনারেল ডিক্লেয়ারেশনের (জিডি) কপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জিডি’র কপিতে পাইলটের নাম, ফ্লাইট নম্বর, কোন দেশে যাচ্ছেন, এসব তথ্যের পাশাপাশি পাসপোর্ট নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ থাকে। ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট দেখে জিডি’র কপিতে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘পাইলট যখন ইমিগ্রেশন ক্রস করবেন, তখন তার সঙ্গে সব কাগজপত্র থাকলেও তার পাসপোর্টটি দেখতে চাইবেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। পাসপোর্ট চেক ছাড়া কোন পাইলটকে ছাড়ার সুযোগ নেই। এটা বাধ্যতামূলক। পাসপোর্ট ছাড়া কীভাবে পাইলট কাতার গেলেন, আমরা তা জানতে চেয়েছি। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশকে ইতোমধ্যে এই বিষয়টি খুঁজে বের করার জন্য নির্দেশও দিয়েছি। তারা দ্রুত বিষয়টি জানাবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেব।’ কোথায় ত্রুটি ছিল, সেটা দেখা হবে ।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মুহিবুল হক বলেন, ‘পাইলট কীভাবে পাসপোর্ট ছাড়া ইমিগ্রেশন পার হলেন, এটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাসপোর্ট ছাড়া যাওয়ায় পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদকে ভিভিআইপি ফ্লাইটের দায়িত্বে থেকে সরিয়ে দেয়া হয়ছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা।

ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এই ঘটনায় চার থেকে পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযোগ, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় পাইলট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করেননি। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের পাইলট হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাও পাইলটের অসহযোগিতা পেয়েও নমনীয় ছিলেন।

ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। পাইলট যখন ইমিেেগ্রশন পার হয়েছেন, তখন আসলে কী ঘটেছিল? ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার কাছে পাসপোর্ট চেয়েছিলেন কিনা? ওই সময়ে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ইতোমধ্যেই দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তদন্তের জন্য সবকিছু আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে গুরুত্ব দিয়ে।

গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব গাজী তারেক সালমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফজল মাহমুদ চৌধুরী দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাসপোর্ট বিহীন অবস্থায় সেই দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হন। এ ঘটনায় ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে আন্তঃমন্ত্রণালয়। তিন কর্ম দিবসের মধ্যে এ কমিটিকে মন্ত্রপরিষদে সচিবের নিকট প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাসপোর্ট বিহীন বিমানে ভ্রমণ এবং ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি তদন্তের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কর্মপরিধিতে বলা হয়, ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীর পাসপোর্ট বিহীন দোহা ভ্রমণের কারণ, ঢাকায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয় এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মপদ্ধতির ত্রুটি নিরূপণ।

আটক হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ দাবি করেছেন, ভুল ক্রমে তিনি পাসপোর্ট সঙ্গে নিতে ভুলে গেছেন। তিনি দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীকে আনতে যাওয়া বিমান নিয়ে তিনি রওনা দেয়ার সময় ভুলক্রমে তার পাসপোর্টটি ব্যাগে নেননি। তিনি ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় তাকে কেউ পাসপোর্টের বিষয়টি জিজ্ঞেস করেননি। তাহলে তার এ ভুল হতো না। তিনি পাসপোর্ট নিয়েই বিমানে উঠতেন। ক্যাপ্টেন মাহমুদের দাবি, তিনি ফ্লাইটে যাবার সময় যে ব্যাগ সঙ্গে নেন, সেই ব্যাগে তার পাসপোর্ট সব সময় থাকে। গত ৩ জুন ব্যাংকের ব্যক্তিগত কাজের প্রয়োজনে সেখানে পাসপোর্ট নিয়ে যান। পরে ভুলে আর পাসপোর্টটি তার ফ্লাইটের থাকা ব্যাগে নেয়া হয়নি। এ কারণেই এ ভুল করেছেন। তিনি ভেবেছেন পাসপোর্ট তার ফ্লাইটের ব্যাগের মধ্যেই রয়েছে। ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বলেন, ‘কাতারের দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি কাতার ইমিগ্রেশনেও যাননি। তাদের মুখোমুখিও হননি। তিনি বলেন ফ্লাইট নিয়ে গেলে কাতার শহরের ক্রাউন প্লাজা হোটেলে ওঠেন বিমানের পাইলটরা। কিন্তু তার সঙ্গে পাসপোর্ট না থাকায় তিনি আর হোটেলে যাননি। অন্য পাইলট ও ক্রুরা ইমিগ্রেশন হয়ে ক্রাউন প্লাজা হোটেলে চলে যান। তিনি দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকার হোটেল অরিস এয়ারপোর্ট-এ উঠেন। বাংলাদেশ থেকে তার পাসপোর্ট আসার পর তিনি ক্রাউন প্লাজা হোটেলে চলে যান।

ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদের ভাষ্য, ‘ঈদের দিন বিকেলে রওনা হই। ঈদের দিন হওয়ায় সবাই ফেস্টিভ্যাল মুডেই ছিলেন। শাহজালালে ইমিগ্রেশনে তার পাসপোর্ট দেখতে চাইলে এ ভুলটি আর হতো না। তিনি তখনই পাসপোর্ট এনে ফ্লাইটে যেতেন। তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার ইমিগ্রেশনে তাদের জেনারেল ডিক্লেয়ারেশনের (জিডি) কপি দেয়ার পর ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয়। দেখানো ছাড়া পাসপোর্ট আর কোন কাজে লাগে না। কারণ, জিডি কপি আর ফিঙ্গার প্রিন্টেই সব তথ্য পেয়ে যায় ইমিগ্রেশন। তবে অনেক দেশে পাসপোর্ট স্ক্যান করে রাখে।’

বিমানের একধিক সূত্র জানায়, বিমানের পাইলট বা ক্রুদের দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যান। সাধারণ যাত্রীদের মতো পাইলট ও কেবিন ক্রুদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিমানের পাইলটরা জানান, আন্তর্জাতিক ভ্রমণের বেলায় পাইলট ও কেবিন ক্রুদের ভিসার প্রয়োজন নেই। একইসঙ্গে ফ্লাইটে দায়িত্বরত প্রকৌশলীকেও ভিসা নিতে হয় না। তবে সবাইকে অবশ্যই পাসপোর্ট সঙ্গে রাখতে হবে। পাইলটদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) ও ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আএটিএ) কিছু নিয়ম-নীতি আছে। নিয়মানুযায়ী পাইলট ও কেবিন ক্রুরা যে এয়ারলাইনসে কাজ করেন, সেই বিমান সংস্থা থেকে তাদের জন্য জেনারেল ডিক্লারেশন (জিডি) ইস্যু করা হয়। অর্থাৎ পাইলট ও ক্রুদের দায়িত্ব নেয় এয়ারলাইনস। সেজন্য জেনারেল ডিক্লারেশনে কতজন পাইলট ও কেবিন ক্রু ফ্লাইটে যাবেন তাদের নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, ফ্লাইট নম্বর, গন্তব্যসহ প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ থাকে। তবে কয়েকটি দেশে অবশ্য পাইলট ও ক্রুদের ভিসা নিতে হয়। তবে সেটা যাত্রীদের মতো নয়। তাদের জন্য আলাদা ধরনের ভিসা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যাত্রী নিয়ে কোন দেশের বিমানবন্দরে গেলেও সবসময় সেখানে পাইলট ও কেবিন ক্রুদের প্রবেশের প্রয়োজন হয় না। তবে চাইলে তারা প্রবেশ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পাইলট ও ক্রুদের সংশ্লিষ্ট দেশের বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে জেনারেল ডিক্লারেশন (জিডি) কপি ও পাসপোর্ট দেখাতে হয়। এসব দেখে ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে প্রবেশের অনুমতি দেন। পাসপোর্ট অত্যাবশ্যকীয় একটি জিনিস। যেকোন দেশেই পাসপোর্ট দেখতে চাইবে। পাসপোর্ট একজন ব্যক্তির পরিচয় বহন করে। জেনারেল ডিক্লারেশন (জিডি) কপিতে পাইলট ও ক্রুদের নাম লেখা থাকে। কিন্তু যার নাম লেখা আর যিনি জিডির কপি সঙ্গে রেখেছেন, তিনি একই ব্যক্তি কিনা সেটা প্রমাণ হয় পাসপোর্টে।’

পাসপোর্ট ছাড় পাইলটের কাতারে যাওয়া তদন্ত কমিটি

পাসপোর্ট ছাড়া পাইলট কীভাবে কাতার গেলেন, তা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। গতকাল শুক্রবার সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটিকে তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে সুরক্ষা বিভাগে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সভাপতি সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) মোহাম্মদ আজহারুল হক, সদস্য সচিব যুগ্ম সচিব (বহিরাগমন-৪) হেলাল মাহমুদ শরীফ, সদস্য বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট ফজল মাহমুদ কীভাবে পাসপোর্ট ছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন, তা উদ্ঘাটন করা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীর দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করা। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা ও সুষ্ঠু ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনার জন্য ভবিষ্যতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, এ বিষয়ে সুপারিশ প্রদান। তদন্তে উদ্ঘাটিত অন্যান্য বিষয় তুলে ধরা।

শনিবার, ০৮ জুন ২০১৯ , ২৫ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ৪ শাওয়াল ১৪৪০

বিমানের বিশেষ ফ্লাইটের

পাইলট পাসপোর্ট ছাড়া কাতারে

দুটি তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ফিনল্যান্ড সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনার জন্য যাওয়া বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটের পাইলট ক্যাপ্টেন ফজলে মাহমুদকে আটকে দিয়েছে কাতারের দোহা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন। পাসপোর্ট ছাড়া বাংলাদেশ বিমানের ওই পাইলট বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হয়ে বিশেষ ফ্লাইটে কাতারের দোহা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যান। পরে দোহা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পাইলটের পাসপোর্ট দেখতে চাইলে তা দেখাতে না পারায় তাকে হেফাজতে নেয় তারা। ওই ঘটনায় পাইলটকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। অন্য আরেকটি ফ্লাইট পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীকে আনার জন্য। পাইলট ক্যাপ্টেন ফজলে মাহমুদের পাসপোর্ট বিশেষ ব্যবস্থায় তার কাছে পাঠানো হয়। এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের পাইলট কিভাবে পাসপোর্ট ছাড়া ভ্রমণ করল-এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি অনুসন্ধান করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও ইমিগ্রেশন। তবে ক্যাপ্টেন ফজলে মাহমুদ দাবি করেছেন, তিনি ভুলক্রমে পাসপোর্ট ছাড়াই বিমানে উঠে পড়েছিলেন। ইমিগ্রেশনেও তার পাসপোর্টের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়নি।

ফিনল্যান্ড সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনতে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিমানের ড্রিমলাইনার বোয়িং ৭৮৭ উড়োজাহাজ ঢাকা ছেড়ে কাতারের উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু পাসপোর্ট ছাড়াই বিমানটি চালিয়ে কাতারের দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যান পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। আর পাসপোর্ট না থাকায় তাকে আটকে দিয়েছে কাতার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীকে আনতে যাওয়া বিমানের পাইলট কিভাবে পাসপোর্ট ছাড়া ইমিগ্রেশন পার হয়ে কাতারে বিমান নিয়ে গেলো এ নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়। পাসপোর্ট ছাড়া ওই পাইলট কিভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হলেন, এর উত্তর খুঁজতে মাঠে নেমেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বিষয়টি অনুসন্ধান করতে ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদের পাসপোর্ট বিশেষ ব্যবস্থায় রিজেন্ট এয়ারওয়েজে করে কাতার পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার ফ্লাইটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তাকে। তার পরিবর্তে বিমানের অন্য পাইলটকে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, পাসপোর্ট ছাড়া ক্যাপ্টেন ফজলে মাহমুদ কিভাবে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হলেন সে তথ্য অনুসন্ধান করতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বিমানবন্দর ত্যাগ করার সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাইলট বলেন, ‘পাইলটদের বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ত্যাগ ও প্রবেশের তথ্য জেনারেল ডিক্লেয়ারেশনের (জিডি) কপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জিডি’র কপিতে পাইলটের নাম, ফ্লাইট নম্বর, কোন দেশে যাচ্ছেন, এসব তথ্যের পাশাপাশি পাসপোর্ট নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ থাকে। ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট দেখে জিডি’র কপিতে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘পাইলট যখন ইমিগ্রেশন ক্রস করবেন, তখন তার সঙ্গে সব কাগজপত্র থাকলেও তার পাসপোর্টটি দেখতে চাইবেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। পাসপোর্ট চেক ছাড়া কোন পাইলটকে ছাড়ার সুযোগ নেই। এটা বাধ্যতামূলক। পাসপোর্ট ছাড়া কীভাবে পাইলট কাতার গেলেন, আমরা তা জানতে চেয়েছি। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশকে ইতোমধ্যে এই বিষয়টি খুঁজে বের করার জন্য নির্দেশও দিয়েছি। তারা দ্রুত বিষয়টি জানাবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেব।’ কোথায় ত্রুটি ছিল, সেটা দেখা হবে ।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মুহিবুল হক বলেন, ‘পাইলট কীভাবে পাসপোর্ট ছাড়া ইমিগ্রেশন পার হলেন, এটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাসপোর্ট ছাড়া যাওয়ায় পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদকে ভিভিআইপি ফ্লাইটের দায়িত্বে থেকে সরিয়ে দেয়া হয়ছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা।

ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এই ঘটনায় চার থেকে পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযোগ, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় পাইলট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করেননি। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের পাইলট হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাও পাইলটের অসহযোগিতা পেয়েও নমনীয় ছিলেন।

ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। পাইলট যখন ইমিেেগ্রশন পার হয়েছেন, তখন আসলে কী ঘটেছিল? ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার কাছে পাসপোর্ট চেয়েছিলেন কিনা? ওই সময়ে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ইতোমধ্যেই দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তদন্তের জন্য সবকিছু আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে গুরুত্ব দিয়ে।

গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব গাজী তারেক সালমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফজল মাহমুদ চৌধুরী দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাসপোর্ট বিহীন অবস্থায় সেই দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হন। এ ঘটনায় ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে আন্তঃমন্ত্রণালয়। তিন কর্ম দিবসের মধ্যে এ কমিটিকে মন্ত্রপরিষদে সচিবের নিকট প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাসপোর্ট বিহীন বিমানে ভ্রমণ এবং ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি তদন্তের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কর্মপরিধিতে বলা হয়, ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীর পাসপোর্ট বিহীন দোহা ভ্রমণের কারণ, ঢাকায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয় এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মপদ্ধতির ত্রুটি নিরূপণ।

আটক হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ দাবি করেছেন, ভুল ক্রমে তিনি পাসপোর্ট সঙ্গে নিতে ভুলে গেছেন। তিনি দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীকে আনতে যাওয়া বিমান নিয়ে তিনি রওনা দেয়ার সময় ভুলক্রমে তার পাসপোর্টটি ব্যাগে নেননি। তিনি ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় তাকে কেউ পাসপোর্টের বিষয়টি জিজ্ঞেস করেননি। তাহলে তার এ ভুল হতো না। তিনি পাসপোর্ট নিয়েই বিমানে উঠতেন। ক্যাপ্টেন মাহমুদের দাবি, তিনি ফ্লাইটে যাবার সময় যে ব্যাগ সঙ্গে নেন, সেই ব্যাগে তার পাসপোর্ট সব সময় থাকে। গত ৩ জুন ব্যাংকের ব্যক্তিগত কাজের প্রয়োজনে সেখানে পাসপোর্ট নিয়ে যান। পরে ভুলে আর পাসপোর্টটি তার ফ্লাইটের থাকা ব্যাগে নেয়া হয়নি। এ কারণেই এ ভুল করেছেন। তিনি ভেবেছেন পাসপোর্ট তার ফ্লাইটের ব্যাগের মধ্যেই রয়েছে। ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বলেন, ‘কাতারের দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি কাতার ইমিগ্রেশনেও যাননি। তাদের মুখোমুখিও হননি। তিনি বলেন ফ্লাইট নিয়ে গেলে কাতার শহরের ক্রাউন প্লাজা হোটেলে ওঠেন বিমানের পাইলটরা। কিন্তু তার সঙ্গে পাসপোর্ট না থাকায় তিনি আর হোটেলে যাননি। অন্য পাইলট ও ক্রুরা ইমিগ্রেশন হয়ে ক্রাউন প্লাজা হোটেলে চলে যান। তিনি দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকার হোটেল অরিস এয়ারপোর্ট-এ উঠেন। বাংলাদেশ থেকে তার পাসপোর্ট আসার পর তিনি ক্রাউন প্লাজা হোটেলে চলে যান।

ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদের ভাষ্য, ‘ঈদের দিন বিকেলে রওনা হই। ঈদের দিন হওয়ায় সবাই ফেস্টিভ্যাল মুডেই ছিলেন। শাহজালালে ইমিগ্রেশনে তার পাসপোর্ট দেখতে চাইলে এ ভুলটি আর হতো না। তিনি তখনই পাসপোর্ট এনে ফ্লাইটে যেতেন। তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার ইমিগ্রেশনে তাদের জেনারেল ডিক্লেয়ারেশনের (জিডি) কপি দেয়ার পর ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয়। দেখানো ছাড়া পাসপোর্ট আর কোন কাজে লাগে না। কারণ, জিডি কপি আর ফিঙ্গার প্রিন্টেই সব তথ্য পেয়ে যায় ইমিগ্রেশন। তবে অনেক দেশে পাসপোর্ট স্ক্যান করে রাখে।’

বিমানের একধিক সূত্র জানায়, বিমানের পাইলট বা ক্রুদের দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যান। সাধারণ যাত্রীদের মতো পাইলট ও কেবিন ক্রুদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিমানের পাইলটরা জানান, আন্তর্জাতিক ভ্রমণের বেলায় পাইলট ও কেবিন ক্রুদের ভিসার প্রয়োজন নেই। একইসঙ্গে ফ্লাইটে দায়িত্বরত প্রকৌশলীকেও ভিসা নিতে হয় না। তবে সবাইকে অবশ্যই পাসপোর্ট সঙ্গে রাখতে হবে। পাইলটদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) ও ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আএটিএ) কিছু নিয়ম-নীতি আছে। নিয়মানুযায়ী পাইলট ও কেবিন ক্রুরা যে এয়ারলাইনসে কাজ করেন, সেই বিমান সংস্থা থেকে তাদের জন্য জেনারেল ডিক্লারেশন (জিডি) ইস্যু করা হয়। অর্থাৎ পাইলট ও ক্রুদের দায়িত্ব নেয় এয়ারলাইনস। সেজন্য জেনারেল ডিক্লারেশনে কতজন পাইলট ও কেবিন ক্রু ফ্লাইটে যাবেন তাদের নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, ফ্লাইট নম্বর, গন্তব্যসহ প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ থাকে। তবে কয়েকটি দেশে অবশ্য পাইলট ও ক্রুদের ভিসা নিতে হয়। তবে সেটা যাত্রীদের মতো নয়। তাদের জন্য আলাদা ধরনের ভিসা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যাত্রী নিয়ে কোন দেশের বিমানবন্দরে গেলেও সবসময় সেখানে পাইলট ও কেবিন ক্রুদের প্রবেশের প্রয়োজন হয় না। তবে চাইলে তারা প্রবেশ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পাইলট ও ক্রুদের সংশ্লিষ্ট দেশের বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে জেনারেল ডিক্লারেশন (জিডি) কপি ও পাসপোর্ট দেখাতে হয়। এসব দেখে ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে প্রবেশের অনুমতি দেন। পাসপোর্ট অত্যাবশ্যকীয় একটি জিনিস। যেকোন দেশেই পাসপোর্ট দেখতে চাইবে। পাসপোর্ট একজন ব্যক্তির পরিচয় বহন করে। জেনারেল ডিক্লারেশন (জিডি) কপিতে পাইলট ও ক্রুদের নাম লেখা থাকে। কিন্তু যার নাম লেখা আর যিনি জিডির কপি সঙ্গে রেখেছেন, তিনি একই ব্যক্তি কিনা সেটা প্রমাণ হয় পাসপোর্টে।’

পাসপোর্ট ছাড় পাইলটের কাতারে যাওয়া তদন্ত কমিটি

পাসপোর্ট ছাড়া পাইলট কীভাবে কাতার গেলেন, তা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। গতকাল শুক্রবার সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটিকে তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে সুরক্ষা বিভাগে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সভাপতি সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) মোহাম্মদ আজহারুল হক, সদস্য সচিব যুগ্ম সচিব (বহিরাগমন-৪) হেলাল মাহমুদ শরীফ, সদস্য বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট ফজল মাহমুদ কীভাবে পাসপোর্ট ছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন, তা উদ্ঘাটন করা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীর দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করা। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা ও সুষ্ঠু ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনার জন্য ভবিষ্যতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, এ বিষয়ে সুপারিশ প্রদান। তদন্তে উদ্ঘাটিত অন্যান্য বিষয় তুলে ধরা।