প্রায় ৯ বছর পর আবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এমপিওভুক্তির কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় জাতীয় সংসদে বাজেটের এই অংশটি পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অসুস্থতা নিয়েই জাতীয় সংসদে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বাজেট উত্থাপন শুরু করার কিছুক্ষণ পর অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাজেট উত্থাপনের অনুরোধ জানান। পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাজেট উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এমপিওভুক্তি (মান্থলি পে অর্ডার বা মূল বেতন ও কিছু ভাতা) হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অংশ পেয়ে থাকেন। এ জন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় এমপিওভুক্তির জন্য সরকারের কাছে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে।
এর আগে ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। ওই সময় আর ৫-৭ হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি থেকে বাদ পড়ে। তখন থেকেই এমপিভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছেন। একপর্যায়ে গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির জন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করে। এরপর গত আগস্টে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেয়া হয়। এতে মোট ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর মধ্যে এমপিও নীতিমালার সব শর্ত পূরণ করে ২ হাজার ৭৬২টি। কিন্তু অর্থের অভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারছিল না। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চাওয়া হয়। এতে মোট ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট বক্তবে এমপিওভুক্তির ঘোষণা এলো।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত অংশের বাজেট বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি সুসংবাদ দিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর প্রথমে আলোকপাত করতে চাই। দীর্ঘদিন আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানাবিধ কারণে এমপিওভুক্তি কার্যক্রমটি বন্ধ ছিল। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এমপিওভুক্তি কার্যক্রমের জন্য এ বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান রাখা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শীঘ্রই নতুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হবে। তবে তা কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। এখন আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য শেষ পর্যায়ের যাচাই-বাছাই চলছে। এছাড়া বাজেট বক্তব্যে মানসম্মত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ (মূলত শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আগামী অর্থবছরে এ বাবদ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
গতকাল বেলা ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অসুস্থ অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেয়া হয়। বাজেট ঘোষণার আগে দুপুর ১টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার, ১৪ জুন ২০১৯ , ২৯ জৈষ্ঠ্য ১৪২৫, ১০ শাওয়াল ১৪৪০
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
প্রায় ৯ বছর পর আবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এমপিওভুক্তির কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় জাতীয় সংসদে বাজেটের এই অংশটি পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অসুস্থতা নিয়েই জাতীয় সংসদে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বাজেট উত্থাপন শুরু করার কিছুক্ষণ পর অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাজেট উত্থাপনের অনুরোধ জানান। পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাজেট উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এমপিওভুক্তি (মান্থলি পে অর্ডার বা মূল বেতন ও কিছু ভাতা) হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অংশ পেয়ে থাকেন। এ জন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় এমপিওভুক্তির জন্য সরকারের কাছে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে।
এর আগে ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। ওই সময় আর ৫-৭ হাজার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি থেকে বাদ পড়ে। তখন থেকেই এমপিভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছেন। একপর্যায়ে গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির জন্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করে। এরপর গত আগস্টে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেয়া হয়। এতে মোট ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর মধ্যে এমপিও নীতিমালার সব শর্ত পূরণ করে ২ হাজার ৭৬২টি। কিন্তু অর্থের অভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারছিল না। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চাওয়া হয়। এতে মোট ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট বক্তবে এমপিওভুক্তির ঘোষণা এলো।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত অংশের বাজেট বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি সুসংবাদ দিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর প্রথমে আলোকপাত করতে চাই। দীর্ঘদিন আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানাবিধ কারণে এমপিওভুক্তি কার্যক্রমটি বন্ধ ছিল। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এমপিওভুক্তি কার্যক্রমের জন্য এ বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান রাখা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শীঘ্রই নতুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হবে। তবে তা কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। এখন আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য শেষ পর্যায়ের যাচাই-বাছাই চলছে। এছাড়া বাজেট বক্তব্যে মানসম্মত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমানে ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ (মূলত শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আগামী অর্থবছরে এ বাবদ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
গতকাল বেলা ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে দাঁড়িয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করলেও পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অসুস্থ অর্থমন্ত্রী নিজ আসনে বসে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেয়া হয়। বাজেট ঘোষণার আগে দুপুর ১টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।