রাজশাহীতে ৩শ’ কোটি টাকার আম বাণিজ্য

সংরক্ষণাগার না থাকায় বিপাকে চাষিরা

রাজশাহীর আম, নামেই যার খ্যাতি। আর রাজশাহীকে বলা হয় আমের রাজধানী। তবে কেবল নামেই কি আমের রাজধানী? মোটেও নয়। দর্শন, গুণ ও ফলেই পরিচয়। তাই তো বছর ঘুরে চিরচেনা রূপ নিয়ে ফিরেছে রাজশাহী। সর্বত্রই এখন আম আর আম। মৌসুমের শেষ মুহূর্তে ‘আমময়’ হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়ের এ ছোট্ট পরিপাটি শহরটি। হাট-মাঠ, পথ-প্রান্তর, বাগান, পাড়ার অলিগলিতে এখন শুধুই আমের হাঁকডাক। রাজশাহীর বিভিন্ন সড়ক ও মোহনাগুলো এখন কাঁচা-পাকা আমে ছেয়ে গেছে। বড় বড় ঝুড়ি ও প্লাস্টিকের খাঁচা বোঝাই করে আম আসছে রাজশাহী ও এর আশপাশ এলাকার নতুন-পুরনো বাগান থেকে। এ কারণে রাজশাহীর বাতাসে এখন আমের ম-ম সৌরভ ভেসে বেড়াচ্ছে। ঝড়, দাবদাহ ও শিলাবৃষ্টিতে এ বছর কমেছে আমের ফলন, বেড়েছে দাম। বেঁধে দেয়া সময়েরও পরই পরিপক্ব আম পাড়া হচ্ছে গাছ থেকে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে হাটবাজার থেকে বিদায় নিয়েছে গোপালভোগ ও মোহনভোগ। এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছে ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ নানা জাতের বাহারি নামের স্বাদের আম।

এদিকে আমের সময় রাজশাহীর সাহেববাজার, শালবাগান বাজার, শিরোইল বাস টার্মিনাল, বিন্দুর মোড়, বাঘা, চারঘাটসহ প্রতিটি উপজেলার বাজারে জমে উঠে আমের ব্যবসা। উৎপাদন বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর রাজশাহীতে অন্তত সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। তবে আম পচনশীল হওয়ায় তা ধরে রাখাও সম্ভব হয় না। অন ইয়ারে আমের বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বিগত সময়ে হিমাগার না থাকায় আম সংরক্ষণ করতে পারেননি। আম সংরক্ষণের অভাব ও পরিবহনে অনিয়মে প্রচুর আম নষ্ট হয় এবং কম দামে তা বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকে না। এ অবস্থার রাজশাহী অঞ্চলের চাষি ও ব্যবসায়ীদের কাছে হিমাগারের প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভূত হয়। বিরামহীন বেচাকেনা চলছে প্রাচীন এই জনপদে। রাজশাহীজুড়ে এখন কেবল আমেরই রাজত্ব। বাগানে বাগানে চলছে গাছ থেকে আম ভাঙার কাজ। এতে শেষ মুহূর্তে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ব্যবসা। কেবল হাটবাজার নয়, আমকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতিও।

রাজশাহী অঞ্চলের দুটি বড় আমের মোকাম রাজশাহীর বানেশ্বর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে দুই কোটি টাকার আম। আমের কারবার নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৌসুমি কর্মসংস্থানও হয়েছে। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের পরও জুনজুড়েই চলবে ‘আমবাণিজ্য’। তাই আম বাগানের শ্রমিক ও আমের ঝুড়ি বানানোসহ নানা সহায়ক কাজে নিয়োজিত লোকজনের কর্মসংস্থানে উত্তরের এ জনপদ কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এ বছরও রোজার মধ্যে শুরু হয় আমের মৌসুম। তবে তখন ব্যাপকভাবে আম না ভাঙায় ঈদের পর জমে ওঠে রাজশাহীর আম বাজার। এখন বাজারে রয়েছে ক্ষীরসাপাত (হিমসাগর) ও ল্যাংড়া জাতের আম। এর সঙ্গে রয়েছে লক্ষ্মণভোগসহ নতুন নতুন জাতের গুটি আম। দাম চড়া হলেও আমের বেচাকেনা বেড়েছে। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে গোপালভোগ আম নেই। ক্ষীরসাপাত বা হিমসাগর আম আছে। চলতি সপ্তাহে বেশি উঠেছে ল্যাংড়া জাতের আম। রয়েছে লক্ষ্মণভোগও। চাষিরা গাছ থেকে আম নামিয়ে ঝুড়ি বা প্লাস্টিকের খাঁচায় করে এ আম হাটে আনছেন। দরদামের পর ঝুড়িসহ তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। দিনরাত সমানতালে চলছে আমের কারবার।

এবার ফলন কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা খুশি। বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী হোসেন আলী জানান, রোববার বাজারে প্রতি মণ ক্ষীরসাপাত আম ২ হাজার ৮০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ ও ল্যাংড়া ২ হাজার ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি মণ লক্ষ্মণভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। আর আম্রপালি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি কেন প্রশ্নে হোসেন তিনি বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই ঘন কুয়াশা ও পরে ঝড়, শিলাবৃষ্টি এবং টানা দাবদাহের কারণে এবার আমের ফলন কমেছে। তাই সরবরাহ কম, দাম একটু বেশি। গত বছর এসব আমের দাম প্রতি মণে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা কম ছিল। তবে ভালো জাতের আমের দাম বেশি হলেও বিভিন্ন জাতের গুটি ও নতুন জাতের আমের দাম কম। এসব আম ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী জানান, চাঁপাইনবাগঞ্জে আম গবেষণা কেন্দ্র ও রাজশাহীতে ফল গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। আমের জাত সংরক্ষণ, গবেষণা ও বাগান তৈরি করলেই শুধু হবে না। আমভিত্তিক শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হবে। রাজশাহী অঞ্চলে এই মৌসুমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হয়ে থাকে। মৌসুমি ফল হিসেবে রাজশাহী অঞ্চলে যে পরিমাণ আম উৎপাদিত হয়, তা বাজারজাতকরণে যে পরিমাণ লোকের কর্মসংস্থান হয়, তা নেহাত কম নয়। তবে বছরের সীমিত সময় দুই থেকে আড়াই মাস আমের বিপণন প্রক্রিয়া চলে বলে এতে খুব বেশিসংখ্যক জনশক্তি কমংসংস্থানের সুযোগ থাকে না। এক্ষেত্রে আমের প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে যদি সঠিকভাবে উচ্চমানের বাজারজাত করা সম্ভব হয়, তাহলে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে।

রাজশাহী চেম্বারের সাবেক সভাপতি মো. আবু বাক্কার আলী বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আপেল, আঙুর, নাশপাতি ও আমের মতো পচনশীল ফলের উন্নতমানের সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। যেসব দেশে আম হয়, সেখানে গড়ে উঠেছে আমভিত্তিক শিল্প-কারখানা। কিন্তু আমাদের দেশে আমের জুস, জ্যাম-জেলি, আচার ও বার তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে সবই রাজশাহীর বাইরে। রাজশাহী অঞ্চলের আম বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের জন্য শিল্প-কারখানা স্থাপনে ব্যাংক, ব্যবসায়ী ও সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ফলন কমের কারণে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও সমস্যা হবে না। যে ফলন হবে, তা দিয়ে রাজশাহীসহ সারাদেশে আমের চাহিদা পূরণ সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

image
আরও খবর
বাস্তবায়ন হয়নি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা
মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদকে চিহ্নিত করবে সরকার
আজও সাকিবে ভর করে অজিদের হারাতে চায় টাইগাররা
বাংলাদেশের কাঁধে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা
অজি পেস আক্রমণ নিয়ে আমরা চিন্তিত নই : সাকিব
দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ২৪১
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা হচ্ছে
ঢাকার সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে কমিটি
মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল
অবশেষে পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ল ডন আল-আমিন
আ’লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সাব কমিটির সম্মেলন
বিশ্বে শরণার্থী ৭০ মিলিয়ন
পিডব্লিউসির বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা টিআইবির
জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০১৯ , ৫ আষাঢ় ১৪২৫, ১৫ শাওয়াল ১৪৪০

রাজশাহীতে ৩শ’ কোটি টাকার আম বাণিজ্য

সংরক্ষণাগার না থাকায় বিপাকে চাষিরা

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

image

রাজশাহীর আম, নামেই যার খ্যাতি। আর রাজশাহীকে বলা হয় আমের রাজধানী। তবে কেবল নামেই কি আমের রাজধানী? মোটেও নয়। দর্শন, গুণ ও ফলেই পরিচয়। তাই তো বছর ঘুরে চিরচেনা রূপ নিয়ে ফিরেছে রাজশাহী। সর্বত্রই এখন আম আর আম। মৌসুমের শেষ মুহূর্তে ‘আমময়’ হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়ের এ ছোট্ট পরিপাটি শহরটি। হাট-মাঠ, পথ-প্রান্তর, বাগান, পাড়ার অলিগলিতে এখন শুধুই আমের হাঁকডাক। রাজশাহীর বিভিন্ন সড়ক ও মোহনাগুলো এখন কাঁচা-পাকা আমে ছেয়ে গেছে। বড় বড় ঝুড়ি ও প্লাস্টিকের খাঁচা বোঝাই করে আম আসছে রাজশাহী ও এর আশপাশ এলাকার নতুন-পুরনো বাগান থেকে। এ কারণে রাজশাহীর বাতাসে এখন আমের ম-ম সৌরভ ভেসে বেড়াচ্ছে। ঝড়, দাবদাহ ও শিলাবৃষ্টিতে এ বছর কমেছে আমের ফলন, বেড়েছে দাম। বেঁধে দেয়া সময়েরও পরই পরিপক্ব আম পাড়া হচ্ছে গাছ থেকে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে হাটবাজার থেকে বিদায় নিয়েছে গোপালভোগ ও মোহনভোগ। এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছে ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ নানা জাতের বাহারি নামের স্বাদের আম।

এদিকে আমের সময় রাজশাহীর সাহেববাজার, শালবাগান বাজার, শিরোইল বাস টার্মিনাল, বিন্দুর মোড়, বাঘা, চারঘাটসহ প্রতিটি উপজেলার বাজারে জমে উঠে আমের ব্যবসা। উৎপাদন বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর রাজশাহীতে অন্তত সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। তবে আম পচনশীল হওয়ায় তা ধরে রাখাও সম্ভব হয় না। অন ইয়ারে আমের বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বিগত সময়ে হিমাগার না থাকায় আম সংরক্ষণ করতে পারেননি। আম সংরক্ষণের অভাব ও পরিবহনে অনিয়মে প্রচুর আম নষ্ট হয় এবং কম দামে তা বিক্রি করা ছাড়া উপায় থাকে না। এ অবস্থার রাজশাহী অঞ্চলের চাষি ও ব্যবসায়ীদের কাছে হিমাগারের প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভূত হয়। বিরামহীন বেচাকেনা চলছে প্রাচীন এই জনপদে। রাজশাহীজুড়ে এখন কেবল আমেরই রাজত্ব। বাগানে বাগানে চলছে গাছ থেকে আম ভাঙার কাজ। এতে শেষ মুহূর্তে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ব্যবসা। কেবল হাটবাজার নয়, আমকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতিও।

রাজশাহী অঞ্চলের দুটি বড় আমের মোকাম রাজশাহীর বানেশ্বর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে দুই কোটি টাকার আম। আমের কারবার নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৌসুমি কর্মসংস্থানও হয়েছে। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের পরও জুনজুড়েই চলবে ‘আমবাণিজ্য’। তাই আম বাগানের শ্রমিক ও আমের ঝুড়ি বানানোসহ নানা সহায়ক কাজে নিয়োজিত লোকজনের কর্মসংস্থানে উত্তরের এ জনপদ কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এ বছরও রোজার মধ্যে শুরু হয় আমের মৌসুম। তবে তখন ব্যাপকভাবে আম না ভাঙায় ঈদের পর জমে ওঠে রাজশাহীর আম বাজার। এখন বাজারে রয়েছে ক্ষীরসাপাত (হিমসাগর) ও ল্যাংড়া জাতের আম। এর সঙ্গে রয়েছে লক্ষ্মণভোগসহ নতুন নতুন জাতের গুটি আম। দাম চড়া হলেও আমের বেচাকেনা বেড়েছে। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে গোপালভোগ আম নেই। ক্ষীরসাপাত বা হিমসাগর আম আছে। চলতি সপ্তাহে বেশি উঠেছে ল্যাংড়া জাতের আম। রয়েছে লক্ষ্মণভোগও। চাষিরা গাছ থেকে আম নামিয়ে ঝুড়ি বা প্লাস্টিকের খাঁচায় করে এ আম হাটে আনছেন। দরদামের পর ঝুড়িসহ তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। দিনরাত সমানতালে চলছে আমের কারবার।

এবার ফলন কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা খুশি। বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী হোসেন আলী জানান, রোববার বাজারে প্রতি মণ ক্ষীরসাপাত আম ২ হাজার ৮০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ ও ল্যাংড়া ২ হাজার ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি মণ লক্ষ্মণভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। আর আম্রপালি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি কেন প্রশ্নে হোসেন তিনি বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই ঘন কুয়াশা ও পরে ঝড়, শিলাবৃষ্টি এবং টানা দাবদাহের কারণে এবার আমের ফলন কমেছে। তাই সরবরাহ কম, দাম একটু বেশি। গত বছর এসব আমের দাম প্রতি মণে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা কম ছিল। তবে ভালো জাতের আমের দাম বেশি হলেও বিভিন্ন জাতের গুটি ও নতুন জাতের আমের দাম কম। এসব আম ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী জানান, চাঁপাইনবাগঞ্জে আম গবেষণা কেন্দ্র ও রাজশাহীতে ফল গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। আমের জাত সংরক্ষণ, গবেষণা ও বাগান তৈরি করলেই শুধু হবে না। আমভিত্তিক শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হবে। রাজশাহী অঞ্চলে এই মৌসুমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হয়ে থাকে। মৌসুমি ফল হিসেবে রাজশাহী অঞ্চলে যে পরিমাণ আম উৎপাদিত হয়, তা বাজারজাতকরণে যে পরিমাণ লোকের কর্মসংস্থান হয়, তা নেহাত কম নয়। তবে বছরের সীমিত সময় দুই থেকে আড়াই মাস আমের বিপণন প্রক্রিয়া চলে বলে এতে খুব বেশিসংখ্যক জনশক্তি কমংসংস্থানের সুযোগ থাকে না। এক্ষেত্রে আমের প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে যদি সঠিকভাবে উচ্চমানের বাজারজাত করা সম্ভব হয়, তাহলে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে।

রাজশাহী চেম্বারের সাবেক সভাপতি মো. আবু বাক্কার আলী বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আপেল, আঙুর, নাশপাতি ও আমের মতো পচনশীল ফলের উন্নতমানের সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। যেসব দেশে আম হয়, সেখানে গড়ে উঠেছে আমভিত্তিক শিল্প-কারখানা। কিন্তু আমাদের দেশে আমের জুস, জ্যাম-জেলি, আচার ও বার তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে সবই রাজশাহীর বাইরে। রাজশাহী অঞ্চলের আম বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের জন্য শিল্প-কারখানা স্থাপনে ব্যাংক, ব্যবসায়ী ও সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ফলন কমের কারণে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও সমস্যা হবে না। যে ফলন হবে, তা দিয়ে রাজশাহীসহ সারাদেশে আমের চাহিদা পূরণ সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।