ভারী বর্ষণে

কক্সবাজারে পাহাড়ধসের আশঙ্কা

হুমকির মুখে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় প্লাবনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে হরেক রকম ক্ষেত ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা। এর পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিংহভাগ ঝুপড়িঘর ও জেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা। যে কোন মুহূর্তে পাহাড়ধসের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। ফলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিচু এলাকার লোকজন ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

সূত্র মতে, এক সপ্তাহ ধরে ভারী বর্ষণ ও ঝড়োবাতাসে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে পাহাড়ধস ও প্রাণহানির ঘটনা। এ আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশ বা চূড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরে যেতে নির্দেশ দিয়ে মাইকিং শুরু হয়েছে। স্বেচ্ছায় না সরলে অভিযানের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেয়া হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবনের শিকার হয়েছে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া, মহেশখালীর ধলঘাটা এবং কক্সবাজার সদরসহ চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ২০টির অধিক গ্রাম।

জেলা প্রশাসনের সূত্র মতে, গতকাল সকাল থেকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরত জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হয়। বিশেষ করে শহরে পাহাড়বেষ্টিত লাইট হাউসপাড়া, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, কবরস্থানপাড়া, পাহাড়তলী, সাহিত্যিকা পল্লী, সার্কিট হাউসপাড় এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়। নিজেরা সরে না গেলে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরিয়ে নেয়ারও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

কক্সবাজার সদর ভূমি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোকতার সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ সব এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে বর্তমানে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত চলছে। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত জেলায় আরও কয়েকদিন স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজার বন বিভাগের টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন জানান, উখিয়া-টেকনাফে পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাস গড়া হয়েছে। নির্বিচারে পাহাড় ন্যাড়া করে বাসা করায় এখানেই পাহাড়ধসের আশঙ্কা বিরাজ করছে।

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে কক্সবাজার পৌরসভার অধীন ৬টি ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী হাজারো পরিবারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মাইকিং করে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। এরপরও যদি সরে না যান, তা হলে বৃষ্টিপাতের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হবে।

টানা বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

এদিকে ইতোমধ্যে প্রবল বর্ষণের কারণে বান্দরবানের থানছি রুমা সড়কসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের সাঙ্গু কক্সবাজারের মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়তে থাকায় বেশ কিছু দুর্গম জায়গায় পর্যটকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী। প্রবল বর্ষণের কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডের অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরটি পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। শিবিরের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন পাশের উঁচু স্থানের পাহাড়ে। রোহিঙ্গা শিবিরটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রহিম জানান, গত শনিবার থেকে টানা বর্ষণের কারণে রোহিঙ্গা শিবিরে তুমব্রু খালের পানি প্রবেশ করায় সেটি তলিয়ে গেছে। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছটিয়ে পড়েছেন। টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিন দিনের বৃষ্টিতে রোহিঙ্গাদের ২৭৩টি আশ্রয়স্থল নষ্ট হয়েছে বলে জানায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। ইউএনএইচসিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক খবর অনুযায়ী বৃষ্টিপাতের কারণে ২৬টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। জরুরি সহায়তার জন্য শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমরা অস্থায়ীভাবে ২ হাজার ১৩৭ জনকে সরিয়ে নিয়েছি। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বা বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০১৯ , ২৫ আষাঢ় ১৪২৫, ৫ জ্বিলকদ ১৪৪০

ভারী বর্ষণে

কক্সবাজারে পাহাড়ধসের আশঙ্কা

হুমকির মুখে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

প্রতিনিধি, কক্সবাজার

image

কক্সবাজার : ভারী বর্ষণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প তলিয়ে যাচ্ছে -সংবাদ

এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় প্লাবনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে হরেক রকম ক্ষেত ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা। এর পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিংহভাগ ঝুপড়িঘর ও জেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা। যে কোন মুহূর্তে পাহাড়ধসের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। ফলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিচু এলাকার লোকজন ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

সূত্র মতে, এক সপ্তাহ ধরে ভারী বর্ষণ ও ঝড়োবাতাসে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে পাহাড়ধস ও প্রাণহানির ঘটনা। এ আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশ বা চূড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরে যেতে নির্দেশ দিয়ে মাইকিং শুরু হয়েছে। স্বেচ্ছায় না সরলে অভিযানের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেয়া হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবনের শিকার হয়েছে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া, মহেশখালীর ধলঘাটা এবং কক্সবাজার সদরসহ চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ২০টির অধিক গ্রাম।

জেলা প্রশাসনের সূত্র মতে, গতকাল সকাল থেকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরত জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হয়। বিশেষ করে শহরে পাহাড়বেষ্টিত লাইট হাউসপাড়া, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, কবরস্থানপাড়া, পাহাড়তলী, সাহিত্যিকা পল্লী, সার্কিট হাউসপাড় এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়। নিজেরা সরে না গেলে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরিয়ে নেয়ারও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

কক্সবাজার সদর ভূমি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোকতার সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ সব এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে বর্তমানে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত চলছে। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত জেলায় আরও কয়েকদিন স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজার বন বিভাগের টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন জানান, উখিয়া-টেকনাফে পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাস গড়া হয়েছে। নির্বিচারে পাহাড় ন্যাড়া করে বাসা করায় এখানেই পাহাড়ধসের আশঙ্কা বিরাজ করছে।

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে কক্সবাজার পৌরসভার অধীন ৬টি ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী হাজারো পরিবারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মাইকিং করে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। এরপরও যদি সরে না যান, তা হলে বৃষ্টিপাতের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হবে।

টানা বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

এদিকে ইতোমধ্যে প্রবল বর্ষণের কারণে বান্দরবানের থানছি রুমা সড়কসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের সাঙ্গু কক্সবাজারের মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়তে থাকায় বেশ কিছু দুর্গম জায়গায় পর্যটকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী। প্রবল বর্ষণের কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডের অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরটি পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। শিবিরের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন পাশের উঁচু স্থানের পাহাড়ে। রোহিঙ্গা শিবিরটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রহিম জানান, গত শনিবার থেকে টানা বর্ষণের কারণে রোহিঙ্গা শিবিরে তুমব্রু খালের পানি প্রবেশ করায় সেটি তলিয়ে গেছে। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছটিয়ে পড়েছেন। টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিন দিনের বৃষ্টিতে রোহিঙ্গাদের ২৭৩টি আশ্রয়স্থল নষ্ট হয়েছে বলে জানায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। ইউএনএইচসিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক খবর অনুযায়ী বৃষ্টিপাতের কারণে ২৬টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। জরুরি সহায়তার জন্য শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমরা অস্থায়ীভাবে ২ হাজার ১৩৭ জনকে সরিয়ে নিয়েছি। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বা বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।