স্মৃতিতে জয়াগের ঝর্ণাধারা চৌধুরী

জয়নাল আবেদীন

নোয়াখালীর জয়াগ গান্ধী আশ্রম ও ট্রাস্টের সচিব ঝর্ণাধারা চৌধুরীর অসুস্থতা ও স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা পত্রিকায় দেখে তাকে এক নজর দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি। বুধবার (২৬ জুন) রাতে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয় এবং লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ২৭ জুন ভোরে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। তার মৃত্যুতে আমি আপনজন বিয়োগের বেদনা অনুভব করছি।

তার সাথে ১৯৯৩ সাল থেকে আমার পরিচয়। আমি তখন কৃষি ব্যাংক কুমিল্লা বিভাগীয় কার্যালয়ের ডিজিএম (প্রশাসন)। সিলেটের জাফলং থেকে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ছিল এ অফিসের অধিক্ষেত্র। একদিন কুমিল্লার মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক দশরথ তরফদারকে নিয়ে চলে যাই নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির জয়াগ গান্ধী আশ্রম ও ট্রাস্টে। জিপ থেকে নেমে পরিচয় দেয়ার পরে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় সচিব ঝর্ণাধারা চৌধুরীর অফিস কক্ষে। সাদা পোশাকে আবৃত ঝর্ণাধারা চৌধুরী আমাদের নমস্কার বলে দু’হাত একত্রিত করে স্বাগত জানান। দু’জনই কৃষিব্যাংকের ডিজিএম জেনে খুব খুশি হলেন। ট্রাস্ট ও আশ্রমের যাত্রা শুরু থেকে এ পর্যন্ত জনহিতকর বিভিন্ন কার্যাবলী আমাদের ব্যাখ্যা করেন। চানাচুর, চা দিয়ে আপ্যায়ন করান এবং দুপুরে খেয়ে যেতে আমন্ত্রণ জানান। আলাপ প্রসঙ্গে আমি মানিকগঞ্জে আমার পূর্ব পরিচিত এ আশ্রমের অন্যতম প্রাণপুরুষ বিশ্বরঞ্জন সেন সম্পর্কে জানতে চাই। আমি বিশ্বরঞ্জন সেনকে চিনি ও তার সম্পর্কে আগ্রহ দেখে ঝর্ণাধারা চৌধুরী একটু অবাক হন। তিনি বিশ্বরঞ্জন সেনের সর্বশেষ অবস্থা ও ২৯নং জগৎশেঠলেন, কলকাতার বাসায় আছেন বলে জানান। এই যে পরিচয়ের সূত্রপাত তা স্থবির হয়নি কোন দিন।

আমরা মহাত্মাগান্ধীর জীবন ও মর্মের ওপর আলোকচিত্র দেখি। তার দেহভস্মও দেখার সৌভাগ্য হয়। বিকেলে আমরা কুমিল্লা ফিরি। এরপরে আশ্রমের কাজে তিনি কুমিল্লা একদিন আসেন। ফোন করে জেনে নেন আমি কর্মস্থলে আছি কিনা। অফিসে এসে তিনি দেখা করেন। ঢাকার মতিঝিলের অফিসেও একদিন এসেছিলেন। ফার্মগেটের পশ্চিমে রাজাবাজারের ঠিকানায় তিনি একদিন আমাকে আসার জন্য অনুরাধ করেন। আমি যথাসময়ে তার সাথে দেখা করি। কথাবার্তার মাঝে তিনি জানান, ১৯ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ২০১০, জয়াগে ৬ দিনব্যাপী দক্ষিণ এশিয়ান যুব শান্তি ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ও ভারতের গান্ধী পিস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে। এজন্য আমার পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেন। আমি সামান্য আর্থিক সহায়তা যথাসময়ে পৌঁছে দেই। কর্মসূচি সফলভাবে সমাপ্তের পরে ডাকযোগে একটি সনদ পাই। বিচারপতি গৌর গোপাল সাহা ও ঝর্ণধারা চৌধুরী স্বাক্ষরিত সনদে আমার কর্মের স্বীকৃতি দিল। তার সাথে আমার সর্বশেষ দেখা হয় মহাত্মাগান্ধীর স্মরণিসভা ও শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে ‘গান্ধী’ নাট্যানুষ্ঠানে। জয়াগকে যেন না ভুলি- এ কথা বলতেন। আমি উত্তরে বলতাম ‘চাকরি থেকে অবসরে গেলে আমি সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে আপনার সাথে কাজ করব।’

সমাজকর্ম ও গরিব মানুষের জন্য এমন নিবেদিত প্রাণ নারী বাংলাদেশে খুব কমই আছে।

তিনি বলতেন- নোয়াখালীতে যখন দাঙ্গা হয় তখন তিনি খুবই ছোট। ৭-৮ বছরে তিনি দাঙ্গার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পরিবারের সাথে আসাম চলে যান। মহাত্মা গান্ধীর শান্তি মিশনের কথা ফিরে এসে লোকমুখে শুনে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। গান্ধী চলে যাওয়ার পরে যে কয়জন শিষ্যকে জয়াগে রেখে যান- তাদের কর্মকান্ড দেখে তিনি সমাজকর্মে নিজের জীবন উৎসর্গ করার শপথ নেন। অমৃত্যু তিনি সে শপথ পালন করেছেন।

ঢাকার একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ৪/৫টি সংখ্যায় মহাত্মা গান্ধীর জীবন দর্শন নিয়ে লেখা প্রকাশিত হয়। এ লেখাটির মান ছিল খুবই উন্নত; যা জেনে তিনি পত্রিকাটির সব লেখা পড়তে চান। আমি তাকে সব সংখ্যা পাঠাই। সেগুলো আবার পড়তে নেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। দিদি বহুবার বলেছেন পত্রিকার সংখ্যাগুলো যেন আমি দেবপ্রিয় ভট্টচার্যের ওয়ারীর বাসা থেকে ফেরত নেই।

কুমিল্লায় দ্বিতীয় দফায় (১৯৯৮ সালে) কর্মকালে মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু দিবসের অনুষ্ঠানে জয়াগে গান্ধী আশ্রম ও ট্রাস্টে আমি যোগদান করি কুমিল্লার লাকসাম নবাব ফয়জুননেসা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন আহমেদকে সাথে নিয়ে। আমরা প্রার্থনা সঙ্গীতে অংশ নেই এবং গান্ধীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনাও করি।

এরপরে ফোনে যখনই কথা হতো আমাকে জয়াগে আসতে বলতেন। কিন্তু আর যাওয়া হয়নি জয়াগে। আমি জীবনে যে কয়জন গুণী, ত্যাগী ও প্রকৃত মানবপ্রেমিক মানুষের সংস্পর্শে এসেছি প্রয়াত ঝর্ণাধারা চৌধুরী ছিলেন অন্যতম। এমন মহীয়সী নারীর সাথে পরিচয় হওয়ায় আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।

১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন শৈশবকালে। সংসার করেননি। মানবসেবার জন্য বাংলাদেশের একুশে পদক (২০১৫) ও ভারতের পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন ২০১৩ সালে। এ ছাড়াও তার সমাজসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ আন্তর্জাতিক বাজাজ পুরস্কার (১৯৯৮), শান্তি পুরস্কার (২০০০), দুর্বার নেটওয়ার্ক পুরস্কার (২০০৩), কীর্তিমতি নারী পুরস্কার (২০১০), বেগম রোকেয়া পদক (২০১৩), সাদা মনের মানুষ পদক (২০০৭), ইংরেজি দৈনিক স্টার ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাকে সম্মাননা স্মারকে ভূষিত করে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন।

সমাজ ও মানবতার জন্য কাজ করলে তা যে ব্যর্থ হয় না, ঝর্ণাধারা চৌধুরীর জীবন তার প্রমাণ। বৃষ্টির ফলে উঁচু পাহাড় থেকে পানি ঝর্ণারূপে নিচে পতিত হয়ে তা নদীতে গিয়ে মিশে- সে জলধারা জীবন ও প্রকৃতিকে যেমন সজিব করে ঝর্ণাধারা চৌধুরীও জীবনভর মানুষ ও সমাজকে তার সেবাকর্মের মাধ্যমে সজীব করেছেন। তিনি পরপারে চলে গেলেও তার আদর্শ আমাদের মানবসেবায় অনুপ্রাণিত করবে চিরকাল। এই মহীয়সী নারীকে জানাই শ্রদ্ধা। তার আত্মার শান্তি একান্তভাবে কামনা করি।

[লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ৭১ লেখক, সমাজকর্মী ও ব্যাংক নিবার্হী (অব.)]

বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৫, ৬ জ্বিলকদ ১৪৪০

স্মৃতিতে জয়াগের ঝর্ণাধারা চৌধুরী

জয়নাল আবেদীন

image

নোয়াখালীর জয়াগ গান্ধী আশ্রম ও ট্রাস্টের সচিব ঝর্ণাধারা চৌধুরীর অসুস্থতা ও স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা পত্রিকায় দেখে তাকে এক নজর দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি। বুধবার (২৬ জুন) রাতে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয় এবং লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ২৭ জুন ভোরে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। তার মৃত্যুতে আমি আপনজন বিয়োগের বেদনা অনুভব করছি।

তার সাথে ১৯৯৩ সাল থেকে আমার পরিচয়। আমি তখন কৃষি ব্যাংক কুমিল্লা বিভাগীয় কার্যালয়ের ডিজিএম (প্রশাসন)। সিলেটের জাফলং থেকে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ছিল এ অফিসের অধিক্ষেত্র। একদিন কুমিল্লার মুখ্য আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক দশরথ তরফদারকে নিয়ে চলে যাই নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির জয়াগ গান্ধী আশ্রম ও ট্রাস্টে। জিপ থেকে নেমে পরিচয় দেয়ার পরে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় সচিব ঝর্ণাধারা চৌধুরীর অফিস কক্ষে। সাদা পোশাকে আবৃত ঝর্ণাধারা চৌধুরী আমাদের নমস্কার বলে দু’হাত একত্রিত করে স্বাগত জানান। দু’জনই কৃষিব্যাংকের ডিজিএম জেনে খুব খুশি হলেন। ট্রাস্ট ও আশ্রমের যাত্রা শুরু থেকে এ পর্যন্ত জনহিতকর বিভিন্ন কার্যাবলী আমাদের ব্যাখ্যা করেন। চানাচুর, চা দিয়ে আপ্যায়ন করান এবং দুপুরে খেয়ে যেতে আমন্ত্রণ জানান। আলাপ প্রসঙ্গে আমি মানিকগঞ্জে আমার পূর্ব পরিচিত এ আশ্রমের অন্যতম প্রাণপুরুষ বিশ্বরঞ্জন সেন সম্পর্কে জানতে চাই। আমি বিশ্বরঞ্জন সেনকে চিনি ও তার সম্পর্কে আগ্রহ দেখে ঝর্ণাধারা চৌধুরী একটু অবাক হন। তিনি বিশ্বরঞ্জন সেনের সর্বশেষ অবস্থা ও ২৯নং জগৎশেঠলেন, কলকাতার বাসায় আছেন বলে জানান। এই যে পরিচয়ের সূত্রপাত তা স্থবির হয়নি কোন দিন।

আমরা মহাত্মাগান্ধীর জীবন ও মর্মের ওপর আলোকচিত্র দেখি। তার দেহভস্মও দেখার সৌভাগ্য হয়। বিকেলে আমরা কুমিল্লা ফিরি। এরপরে আশ্রমের কাজে তিনি কুমিল্লা একদিন আসেন। ফোন করে জেনে নেন আমি কর্মস্থলে আছি কিনা। অফিসে এসে তিনি দেখা করেন। ঢাকার মতিঝিলের অফিসেও একদিন এসেছিলেন। ফার্মগেটের পশ্চিমে রাজাবাজারের ঠিকানায় তিনি একদিন আমাকে আসার জন্য অনুরাধ করেন। আমি যথাসময়ে তার সাথে দেখা করি। কথাবার্তার মাঝে তিনি জানান, ১৯ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ২০১০, জয়াগে ৬ দিনব্যাপী দক্ষিণ এশিয়ান যুব শান্তি ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ও ভারতের গান্ধী পিস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে। এজন্য আমার পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেন। আমি সামান্য আর্থিক সহায়তা যথাসময়ে পৌঁছে দেই। কর্মসূচি সফলভাবে সমাপ্তের পরে ডাকযোগে একটি সনদ পাই। বিচারপতি গৌর গোপাল সাহা ও ঝর্ণধারা চৌধুরী স্বাক্ষরিত সনদে আমার কর্মের স্বীকৃতি দিল। তার সাথে আমার সর্বশেষ দেখা হয় মহাত্মাগান্ধীর স্মরণিসভা ও শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে ‘গান্ধী’ নাট্যানুষ্ঠানে। জয়াগকে যেন না ভুলি- এ কথা বলতেন। আমি উত্তরে বলতাম ‘চাকরি থেকে অবসরে গেলে আমি সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে আপনার সাথে কাজ করব।’

সমাজকর্ম ও গরিব মানুষের জন্য এমন নিবেদিত প্রাণ নারী বাংলাদেশে খুব কমই আছে।

তিনি বলতেন- নোয়াখালীতে যখন দাঙ্গা হয় তখন তিনি খুবই ছোট। ৭-৮ বছরে তিনি দাঙ্গার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পরিবারের সাথে আসাম চলে যান। মহাত্মা গান্ধীর শান্তি মিশনের কথা ফিরে এসে লোকমুখে শুনে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। গান্ধী চলে যাওয়ার পরে যে কয়জন শিষ্যকে জয়াগে রেখে যান- তাদের কর্মকান্ড দেখে তিনি সমাজকর্মে নিজের জীবন উৎসর্গ করার শপথ নেন। অমৃত্যু তিনি সে শপথ পালন করেছেন।

ঢাকার একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ৪/৫টি সংখ্যায় মহাত্মা গান্ধীর জীবন দর্শন নিয়ে লেখা প্রকাশিত হয়। এ লেখাটির মান ছিল খুবই উন্নত; যা জেনে তিনি পত্রিকাটির সব লেখা পড়তে চান। আমি তাকে সব সংখ্যা পাঠাই। সেগুলো আবার পড়তে নেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। দিদি বহুবার বলেছেন পত্রিকার সংখ্যাগুলো যেন আমি দেবপ্রিয় ভট্টচার্যের ওয়ারীর বাসা থেকে ফেরত নেই।

কুমিল্লায় দ্বিতীয় দফায় (১৯৯৮ সালে) কর্মকালে মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু দিবসের অনুষ্ঠানে জয়াগে গান্ধী আশ্রম ও ট্রাস্টে আমি যোগদান করি কুমিল্লার লাকসাম নবাব ফয়জুননেসা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন আহমেদকে সাথে নিয়ে। আমরা প্রার্থনা সঙ্গীতে অংশ নেই এবং গান্ধীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনাও করি।

এরপরে ফোনে যখনই কথা হতো আমাকে জয়াগে আসতে বলতেন। কিন্তু আর যাওয়া হয়নি জয়াগে। আমি জীবনে যে কয়জন গুণী, ত্যাগী ও প্রকৃত মানবপ্রেমিক মানুষের সংস্পর্শে এসেছি প্রয়াত ঝর্ণাধারা চৌধুরী ছিলেন অন্যতম। এমন মহীয়সী নারীর সাথে পরিচয় হওয়ায় আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।

১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন শৈশবকালে। সংসার করেননি। মানবসেবার জন্য বাংলাদেশের একুশে পদক (২০১৫) ও ভারতের পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন ২০১৩ সালে। এ ছাড়াও তার সমাজসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ আন্তর্জাতিক বাজাজ পুরস্কার (১৯৯৮), শান্তি পুরস্কার (২০০০), দুর্বার নেটওয়ার্ক পুরস্কার (২০০৩), কীর্তিমতি নারী পুরস্কার (২০১০), বেগম রোকেয়া পদক (২০১৩), সাদা মনের মানুষ পদক (২০০৭), ইংরেজি দৈনিক স্টার ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাকে সম্মাননা স্মারকে ভূষিত করে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন।

সমাজ ও মানবতার জন্য কাজ করলে তা যে ব্যর্থ হয় না, ঝর্ণাধারা চৌধুরীর জীবন তার প্রমাণ। বৃষ্টির ফলে উঁচু পাহাড় থেকে পানি ঝর্ণারূপে নিচে পতিত হয়ে তা নদীতে গিয়ে মিশে- সে জলধারা জীবন ও প্রকৃতিকে যেমন সজিব করে ঝর্ণাধারা চৌধুরীও জীবনভর মানুষ ও সমাজকে তার সেবাকর্মের মাধ্যমে সজীব করেছেন। তিনি পরপারে চলে গেলেও তার আদর্শ আমাদের মানবসেবায় অনুপ্রাণিত করবে চিরকাল। এই মহীয়সী নারীকে জানাই শ্রদ্ধা। তার আত্মার শান্তি একান্তভাবে কামনা করি।

[লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ৭১ লেখক, সমাজকর্মী ও ব্যাংক নিবার্হী (অব.)]