সালিশে প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের মূল্য ১৪ হাজার টাকা

ধর্ষিতার বাবাকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে স্ট্যাম্পে সই

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে চতুর্থ শ্রেণীর এক প্রতিবন্ধী শিশুর (১১) ধর্ষণের মূল্য ১৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি আপসরফার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩ জুলাই উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর আবাসন এলাকায়।

সালিশে অভিযুক্তকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও ওই শিশুর পিতাকে দেয়া হয়েছে ৭ হাজার টাকা। বাকি ৭ হাজার টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়েছে উপস্থিত কথিত দুই সাংবাদিকসহ সালিশকারীদের মধ্যে।

শিশুটির পিতা ভবিষ্যতে অভিযুুক্তের বিরুদ্ধে যেন কোনপ্রকার আইনের আশ্রয় নিতে না পারেন এবং বিষয়টি যেন কারও কাছে ফাঁস না করেন সেজন্য ৩০০ টাকা মূল্যের সাদা স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নিয়ে রাখারও ব্যবস্থা করা হয়েছে ওই সালিশে।

জানা যায়, ঘটনার দিন আবাসনের বাসিন্দা ওই রিকশাচালকের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া প্রতিবন্ধী মেয়ে দোকানে জুস নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তাকে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে একই আবাসনের বাসিন্দা মেহেদুল ইসলাম (৩৫)। ঘটনাটি জানাজানি হলে ধামাচাপা দেয়ার জন্য শুরু হয় শিশুর পিতা-মাতার ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপসহ হুমকি। এক পর্যায়ে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে ধর্ষণ ঘটনাটি মীমাংসা করতে বাধ্য করা হয়।

শিশুর পিতা জানান, ঘটনার পর থেকে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এলাকার শফিকুল ইসলাম, ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলাম বাবলু, গ্রাম পুলিশ আব্বাস উদ্দিন ও আবাসনের বাসিন্দা মো. সুজনের চাপে পড়ে ওইদিন বেলা ২টায় আবাসনে সালিশে উপস্থিত থাকেন। সালিশের সময় দুইজন সাংবাদিকও উপস্থিত ছিল। সালিশে ধর্ষক মেহেদুলকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু তিনি পেয়েছেন ৭ হাজার টাকা। বাকি টাকাটা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বৈঠকের ব্যক্তিরা। বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে যেন মামলা মোকদ্দমা না করি সেজন্য সাদা স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নিয়ে স্ট্যাম্পটি সুজনের কাছে রাখা হয়েছে। তবে আইনি সহায়তা নিতে তিনি গত সোমবারফুলবাড়ী শাখা ব্র্যাক মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির এইচআরএলএস কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন।

সালিশ বৈঠকের অন্যতম উদ্যোক্তা মো. সুজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে ঘটনাটি অস্বীকার করে বলে, গ্রামের ঘটনা গ্রামেই বসে মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। ৩০০ টাকা সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে স্ট্যাম্পটি সুজন নিজের কাছে রেখে দেয়। শিশুর পিতা নড়চড় করলে ওই সাদা স্ট্যাম্পে নিজের মতো করে টাকা ধার নেয়ার কথা উল্লেখ করে তাকে শায়েস্তা করা হবে।

গ্রাম পুলিশ আব্বাস উদ্দিন বলেন, শিশুটিকে টানাহিঁচড়া করেছে মাত্র। এ কারণে ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বাবলু, শফিকুল ইসলাম ও সুজন সালিশ বসিয়ে অভিযুক্তি মেহেদুলকে মারধর করে ১৪ হাজার টাকা জরিমানার মাধ্যমে ঘটনাটি মীমাংসা করে দেয়া হয়েছে।

ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বাবলু সালিশে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে গিয়েছিলাম। আবাসনের সুজন জরিমানার ৭ হাজার টাকা মেয়ের পিতা এবং বাকিটার মধ্যে ৩ হাজার দুই সাংবাদিককে দিয়ে বাকিটা নিজেই নিয়েছে।

শিবনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব বলেন, ঘটনাটি জানার পর অভিযুক্ত মেহেদুলমে আবাসন থেকে বের করে দেয়ার জন্য ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বাবলুকে বলা হয়।

ফুলবাড়ী শাখা ব্র্যাক মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির এইচআরএলএস কর্মকর্তা মোছা. জিন্নাতুন নেছা বলেন, থানায় মামলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

থানার ওসি মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম চৌধুরী বলেন, কেউ তাকে জানায়নি। ওই শিশুটির পিতার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার হবে।

বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯ , ২৭ আষাঢ় ১৪২৫, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪০

সালিশে প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের মূল্য ১৪ হাজার টাকা

ধর্ষিতার বাবাকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে স্ট্যাম্পে সই

প্রতিনিধি, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে চতুর্থ শ্রেণীর এক প্রতিবন্ধী শিশুর (১১) ধর্ষণের মূল্য ১৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি আপসরফার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩ জুলাই উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর আবাসন এলাকায়।

সালিশে অভিযুক্তকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও ওই শিশুর পিতাকে দেয়া হয়েছে ৭ হাজার টাকা। বাকি ৭ হাজার টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়েছে উপস্থিত কথিত দুই সাংবাদিকসহ সালিশকারীদের মধ্যে।

শিশুটির পিতা ভবিষ্যতে অভিযুুক্তের বিরুদ্ধে যেন কোনপ্রকার আইনের আশ্রয় নিতে না পারেন এবং বিষয়টি যেন কারও কাছে ফাঁস না করেন সেজন্য ৩০০ টাকা মূল্যের সাদা স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নিয়ে রাখারও ব্যবস্থা করা হয়েছে ওই সালিশে।

জানা যায়, ঘটনার দিন আবাসনের বাসিন্দা ওই রিকশাচালকের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া প্রতিবন্ধী মেয়ে দোকানে জুস নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তাকে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে একই আবাসনের বাসিন্দা মেহেদুল ইসলাম (৩৫)। ঘটনাটি জানাজানি হলে ধামাচাপা দেয়ার জন্য শুরু হয় শিশুর পিতা-মাতার ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপসহ হুমকি। এক পর্যায়ে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে ধর্ষণ ঘটনাটি মীমাংসা করতে বাধ্য করা হয়।

শিশুর পিতা জানান, ঘটনার পর থেকে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এলাকার শফিকুল ইসলাম, ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলাম বাবলু, গ্রাম পুলিশ আব্বাস উদ্দিন ও আবাসনের বাসিন্দা মো. সুজনের চাপে পড়ে ওইদিন বেলা ২টায় আবাসনে সালিশে উপস্থিত থাকেন। সালিশের সময় দুইজন সাংবাদিকও উপস্থিত ছিল। সালিশে ধর্ষক মেহেদুলকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু তিনি পেয়েছেন ৭ হাজার টাকা। বাকি টাকাটা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন বৈঠকের ব্যক্তিরা। বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে যেন মামলা মোকদ্দমা না করি সেজন্য সাদা স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নিয়ে স্ট্যাম্পটি সুজনের কাছে রাখা হয়েছে। তবে আইনি সহায়তা নিতে তিনি গত সোমবারফুলবাড়ী শাখা ব্র্যাক মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির এইচআরএলএস কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন।

সালিশ বৈঠকের অন্যতম উদ্যোক্তা মো. সুজনকে জিজ্ঞাসা করা হলে ঘটনাটি অস্বীকার করে বলে, গ্রামের ঘটনা গ্রামেই বসে মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। ৩০০ টাকা সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে স্ট্যাম্পটি সুজন নিজের কাছে রেখে দেয়। শিশুর পিতা নড়চড় করলে ওই সাদা স্ট্যাম্পে নিজের মতো করে টাকা ধার নেয়ার কথা উল্লেখ করে তাকে শায়েস্তা করা হবে।

গ্রাম পুলিশ আব্বাস উদ্দিন বলেন, শিশুটিকে টানাহিঁচড়া করেছে মাত্র। এ কারণে ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বাবলু, শফিকুল ইসলাম ও সুজন সালিশ বসিয়ে অভিযুক্তি মেহেদুলকে মারধর করে ১৪ হাজার টাকা জরিমানার মাধ্যমে ঘটনাটি মীমাংসা করে দেয়া হয়েছে।

ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বাবলু সালিশে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে গিয়েছিলাম। আবাসনের সুজন জরিমানার ৭ হাজার টাকা মেয়ের পিতা এবং বাকিটার মধ্যে ৩ হাজার দুই সাংবাদিককে দিয়ে বাকিটা নিজেই নিয়েছে।

শিবনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব বলেন, ঘটনাটি জানার পর অভিযুক্ত মেহেদুলমে আবাসন থেকে বের করে দেয়ার জন্য ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বাবলুকে বলা হয়।

ফুলবাড়ী শাখা ব্র্যাক মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির এইচআরএলএস কর্মকর্তা মোছা. জিন্নাতুন নেছা বলেন, থানায় মামলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

থানার ওসি মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম চৌধুরী বলেন, কেউ তাকে জানায়নি। ওই শিশুটির পিতার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার হবে।