এবার ব্রিটিশ কূটনীতিকদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার ‘কোণঠাসা’ জনসনের

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার বরিস জনসন চাপের মুখে পড়ে ব্রিটিশ কূটনীতিকদের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার করেছেন। এমনকি প্রয়োজনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করতেও তিনি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। রয়টার্স, এপি।

ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগের ফলে প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বরিস জনসন। গত মঙ্গলবার টেলিভিশন বিতর্কে তিনি সমর্থন না জানানোর ফলেই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কিম ডারচ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে দেশটির বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে। সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে সংকটের সময় দেশের কূটনীতিকদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত ননÑ এমন একটা ধারণা প্রার্থী হিসেবে জনসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এমনকি টোরি দলের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে জনসনের ঘনিষ্ঠতা ও তার প্রতি ‘আনুগত্য’ ব্রিটেনের স্বার্থ খর্ব করতে পারে বলেও অভিযোগ উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে চাপের মুখে কোণঠাসা জনসন বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ কূটনীতিকদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার করছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি ট্রাম্পের সামনে বলিষ্ঠ অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক বর্তমান যুগের সবচেয়ে কৌশলগত বাস্তব। কিন্তু তিনি নিজে আগেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জনসন বৈশ্বিক উন্নয়ন ও ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে মার্কিন প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন বলে এ দিন স্মরণ করান উপস্থিত সবাইকে।

জনপ্রিয় ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য সান’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পুরো ঘটনায় নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করেন বরিস। ডারচের পদত্যাগের জন্য তাকে যেভাবে দায়ী করা হচ্ছে, সে বিষয়টিকে তিনি ‘অদ্ভুত’ হিসেবে উল্লেখ করেন। জনসন বলেন, কিম ডারচের সঙ্গে তিনি অনেক বছর কাজ করেছেন এবং তার বড় সমর্থক তিনি। জনসনের প্রতিদ্বন্দ্বী ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট শুরু থেকেই কিম ডারচের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানান, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ব্রিটিশ কূটনীতিকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনে কঠোর অবস্থান নিতেও প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার তিনি ব্রিটিশ কূটনীতিকদের উদ্দেশে কোনো ভয়ভীতি ছাড়া ভবিষ্যতেও খোলামেলাভাবে মতপ্রকাশ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। হান্ট বলেন, একমাত্র ব্রিটেনের সরকারই জাতীয় স্বার্থে কূটনীতিকদের নিয়োগ করে থাকে। এদিকে দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিও বরিস জনসনের কড়া সমালোচনা করেছে। দলটির পক্ষ থেকে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র প্রতি নতুন প্রধানমন্ত্রীর হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের আগেই ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। লেবার দলের মতে, ক্ষমতায় এসে জনসন যাতে পছন্দের প্রার্থীকে এ পদে নিয়োগ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে এমনটা করা প্রয়োজন। তবে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ডারচের উত্তরসূরি খোঁজা কঠিন হবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্য নীতিগতভাবে কূটনীতিকদেরই রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করে। নির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ওই সিদ্ধান্ত নেন। সাধারণত রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তিত্বকে এমন পদে নিযুক্ত করা হয় না। বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে সেই রীতি ভঙ্গ করে তিনি ব্রেক্সিটপন্থি ও ট্রাম্পের পছন্দের কোনো ব্যক্তিকে ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্রেক্সিট পার্টির নেতা মাইকেল ফারাজের নাম বারবার উঠে আসছে।

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৫, ৯ জিলকদ ১৪৪০

এবার ব্রিটিশ কূটনীতিকদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার ‘কোণঠাসা’ জনসনের

সংবাদ ডেস্ক

image

বরিস জনসন

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার বরিস জনসন চাপের মুখে পড়ে ব্রিটিশ কূটনীতিকদের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার করেছেন। এমনকি প্রয়োজনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করতেও তিনি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। রয়টার্স, এপি।

ওয়াশিংটনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের পদত্যাগের ফলে প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বরিস জনসন। গত মঙ্গলবার টেলিভিশন বিতর্কে তিনি সমর্থন না জানানোর ফলেই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কিম ডারচ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে দেশটির বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে। সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে সংকটের সময় দেশের কূটনীতিকদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত ননÑ এমন একটা ধারণা প্রার্থী হিসেবে জনসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এমনকি টোরি দলের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে জনসনের ঘনিষ্ঠতা ও তার প্রতি ‘আনুগত্য’ ব্রিটেনের স্বার্থ খর্ব করতে পারে বলেও অভিযোগ উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে চাপের মুখে কোণঠাসা জনসন বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ কূটনীতিকদের স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার করছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি ট্রাম্পের সামনে বলিষ্ঠ অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক বর্তমান যুগের সবচেয়ে কৌশলগত বাস্তব। কিন্তু তিনি নিজে আগেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জনসন বৈশ্বিক উন্নয়ন ও ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে মার্কিন প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন বলে এ দিন স্মরণ করান উপস্থিত সবাইকে।

জনপ্রিয় ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য সান’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পুরো ঘটনায় নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করেন বরিস। ডারচের পদত্যাগের জন্য তাকে যেভাবে দায়ী করা হচ্ছে, সে বিষয়টিকে তিনি ‘অদ্ভুত’ হিসেবে উল্লেখ করেন। জনসন বলেন, কিম ডারচের সঙ্গে তিনি অনেক বছর কাজ করেছেন এবং তার বড় সমর্থক তিনি। জনসনের প্রতিদ্বন্দ্বী ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট শুরু থেকেই কিম ডারচের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানান, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ব্রিটিশ কূটনীতিকদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনে কঠোর অবস্থান নিতেও প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার তিনি ব্রিটিশ কূটনীতিকদের উদ্দেশে কোনো ভয়ভীতি ছাড়া ভবিষ্যতেও খোলামেলাভাবে মতপ্রকাশ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। হান্ট বলেন, একমাত্র ব্রিটেনের সরকারই জাতীয় স্বার্থে কূটনীতিকদের নিয়োগ করে থাকে। এদিকে দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিও বরিস জনসনের কড়া সমালোচনা করেছে। দলটির পক্ষ থেকে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র প্রতি নতুন প্রধানমন্ত্রীর হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের আগেই ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। লেবার দলের মতে, ক্ষমতায় এসে জনসন যাতে পছন্দের প্রার্থীকে এ পদে নিয়োগ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে এমনটা করা প্রয়োজন। তবে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ডারচের উত্তরসূরি খোঁজা কঠিন হবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্য নীতিগতভাবে কূটনীতিকদেরই রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করে। নির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ওই সিদ্ধান্ত নেন। সাধারণত রাজনৈতিক কোনো ব্যক্তিত্বকে এমন পদে নিযুক্ত করা হয় না। বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে সেই রীতি ভঙ্গ করে তিনি ব্রেক্সিটপন্থি ও ট্রাম্পের পছন্দের কোনো ব্যক্তিকে ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্রেক্সিট পার্টির নেতা মাইকেল ফারাজের নাম বারবার উঠে আসছে।