বিসানির আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন

বাংলা ভাষাকে আরও সমৃদ্ধ করতে বাংলাদেশ এবং কলকাতাসহ পৃথিবীর ৪০ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ববাংলা সাহিত্য নিকেতন (বিসানি) আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ২০১৯-এ কবিতা পাঠ, গুণীজন সম্মাননা ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান। মন্ত্রী তার বক্তব্যে অচিরেই বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে বলে জানান। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা। প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিসানির মুখ্য উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর, কবি ও গবেষক গগণ ঘোষ এবং ভারতের কবি ও সাহিত্যিক প্রবীর কুমার চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আসামের বিশ্ববাংলা সাহিত্য নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা যুথিকা দাস, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান শাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আরমান হাফিজ ও কলকাতার বাচিকশিল্পী মধুমিতা বসু।

মোজাম্মেল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেষ্টায় ২০০২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আজ ২১ ফেব্রুয়ারি সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে। এখন বর্তমান সরকার বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। খুব দ্রুত জাতিসংঘ তার অন্যতম দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করবে।

মন্ত্রী বলেন, সাহিত্যকে দেয়াল দিয়ে ভাগ করা যায় না। অথচ পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরকে পড়ানো বন্ধ করে দিয়ে আইয়ুব খান সেই চেষ্টাই করেছিল। কিন্তু ১৯৬১ সালে আইয়ুব খানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বরীন্দ্রজয়ন্তী উদ্যাপন করা হয়। কাজেই বাংলা ভাষাভাষীকে পৃথিবীর কোন দেয়াল এবং দূরত্ব পৃথক করতে পারবে না। তিনি বলেন, বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা, যা শত শত বছর ধরে সমাদৃত হয়ে আসছে। আমাদের মনের ভাষা সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারলেই বাংলা ভাষা সার্থক হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা অন্যের ভাষা শিখব, তবে নিজের ভাষাকে অবজ্ঞা করে নয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার অন্যতম উদাহরণ। তিনি নিজের ভাষাকে অবহেলা করে অন্য ভাষায় সাহিত্য রচনা করে ব্যর্থ হয়ে আবার মাতৃভাষায় ফিরে এসেছেন।

পশ্চিমবঙ্গে ধীরে ধীরে বাংলা ভাষার ব্যবহার কমে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে এখন বাংলা ভাষা থেকে হিন্দি বেশি ব্যবহার হয়। হিন্দি তাদের জাতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার করবে। তবে নিজের মায়ের ভাষাকে অবজ্ঞা করে নয়। ভারতের সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ ভাষা ব্যবহার করতে পারবে। তাই ওপার বাংলার মানুষের কাছে অনুরোধ রেখে বলেন, তারা যেন বাংলা ও বাংলা ভাষাকে ত্যাগ না করে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত শুদ্ধতার কবি অসীম সাহা বলেন, পৃথিবীর সব শিল্পের মধ্যে কবিতা একমাত্র বিশুদ্ধ শিল্প। কারণ এই শিল্পে শুধু কবি ছাড়া অন্য কারও স্পর্শ থাকে না। তিনি বলেন, কবি একা নিভৃতে কবিতা লেখেন, যা পৃথিবীতে যুগে যুগে সমাদৃত হয়। এক লাইনে দিয়েও কবিতা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কবিতা হচ্ছে ক্লাসিকাল বিষয়। হৃদয় থেকে আগত শব্দ দিয়ে কবিতা তৈরি হয়। বাহ্যিক দিক দেখে যে কবিতা লেখেন তা দিয়ে কবিতা হয় না। আর কবিরা কখনও সাবেক হয় না। সেজন্য বিশুদ্ধ চিন্তাভাবনা দিয়ে সাহিত্য করতে হবে। তাহলে তা স্বার্থকতা লাভ করবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে দুই বাংলার কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ এবং গান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানের শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৫, ৯ জিলকদ ১৪৪০

বিসানির আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাংলা ভাষাকে আরও সমৃদ্ধ করতে বাংলাদেশ এবং কলকাতাসহ পৃথিবীর ৪০ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ববাংলা সাহিত্য নিকেতন (বিসানি) আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ২০১৯-এ কবিতা পাঠ, গুণীজন সম্মাননা ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান। মন্ত্রী তার বক্তব্যে অচিরেই বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে বলে জানান। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা। প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিসানির মুখ্য উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর, কবি ও গবেষক গগণ ঘোষ এবং ভারতের কবি ও সাহিত্যিক প্রবীর কুমার চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আসামের বিশ্ববাংলা সাহিত্য নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা যুথিকা দাস, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান শাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আরমান হাফিজ ও কলকাতার বাচিকশিল্পী মধুমিতা বসু।

মোজাম্মেল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেষ্টায় ২০০২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আজ ২১ ফেব্রুয়ারি সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে। এখন বর্তমান সরকার বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। খুব দ্রুত জাতিসংঘ তার অন্যতম দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করবে।

মন্ত্রী বলেন, সাহিত্যকে দেয়াল দিয়ে ভাগ করা যায় না। অথচ পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরকে পড়ানো বন্ধ করে দিয়ে আইয়ুব খান সেই চেষ্টাই করেছিল। কিন্তু ১৯৬১ সালে আইয়ুব খানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বরীন্দ্রজয়ন্তী উদ্যাপন করা হয়। কাজেই বাংলা ভাষাভাষীকে পৃথিবীর কোন দেয়াল এবং দূরত্ব পৃথক করতে পারবে না। তিনি বলেন, বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা, যা শত শত বছর ধরে সমাদৃত হয়ে আসছে। আমাদের মনের ভাষা সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারলেই বাংলা ভাষা সার্থক হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা অন্যের ভাষা শিখব, তবে নিজের ভাষাকে অবজ্ঞা করে নয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার অন্যতম উদাহরণ। তিনি নিজের ভাষাকে অবহেলা করে অন্য ভাষায় সাহিত্য রচনা করে ব্যর্থ হয়ে আবার মাতৃভাষায় ফিরে এসেছেন।

পশ্চিমবঙ্গে ধীরে ধীরে বাংলা ভাষার ব্যবহার কমে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে এখন বাংলা ভাষা থেকে হিন্দি বেশি ব্যবহার হয়। হিন্দি তাদের জাতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার করবে। তবে নিজের মায়ের ভাষাকে অবজ্ঞা করে নয়। ভারতের সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ ভাষা ব্যবহার করতে পারবে। তাই ওপার বাংলার মানুষের কাছে অনুরোধ রেখে বলেন, তারা যেন বাংলা ও বাংলা ভাষাকে ত্যাগ না করে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত শুদ্ধতার কবি অসীম সাহা বলেন, পৃথিবীর সব শিল্পের মধ্যে কবিতা একমাত্র বিশুদ্ধ শিল্প। কারণ এই শিল্পে শুধু কবি ছাড়া অন্য কারও স্পর্শ থাকে না। তিনি বলেন, কবি একা নিভৃতে কবিতা লেখেন, যা পৃথিবীতে যুগে যুগে সমাদৃত হয়। এক লাইনে দিয়েও কবিতা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কবিতা হচ্ছে ক্লাসিকাল বিষয়। হৃদয় থেকে আগত শব্দ দিয়ে কবিতা তৈরি হয়। বাহ্যিক দিক দেখে যে কবিতা লেখেন তা দিয়ে কবিতা হয় না। আর কবিরা কখনও সাবেক হয় না। সেজন্য বিশুদ্ধ চিন্তাভাবনা দিয়ে সাহিত্য করতে হবে। তাহলে তা স্বার্থকতা লাভ করবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে দুই বাংলার কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠ এবং গান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানের শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।