এরশাদ আর নেই

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই। গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। গত ১০ দিন ধরে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। এরশাদ রক্তের ক্যানসার মাইডোলিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন। শেষ দিকে তার ফুসফুসে দেখা দিয়েছিল সংক্রমণ, কিডনিও কাজ করছিল না বলে জানান তার ছোট ভাই জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এরশাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ছুটে যান সিএমএইচ হাসপাতালে। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় নেতারা। চারটি জানাজা শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আগামীকাল বিকালে ঢাকায় সেনাবাহিনী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে দলীয় সূত্র জানা গেছে।

গতকাল বাদ জোহর ঢাকা সেনানিবাসে সেনা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এরশাদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, এরশাদের ভাই জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, এরশাদের বড় ছেলে সাদ এরশাদসহ জাতীয় পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার এক ঘণ্টা আগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় পতাকা ও সেনাবাহিনীর পতাকা মোড়ানো এরশাদের কফিন মসজিদ প্রাঙ্গণে আনা হয়। প্রথম জানাজা শেষে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এরশাদের মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিরোধীদলীয় নেতার দ্বিতীয় জানাজা হবে। নেতাকর্মীসহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের মরদেহ আজ দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাখা হবে। ওইদিন বাদ আসর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তৃতীয় জানাজার পর এরশাদের মরদেহ আবারও সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হবে। আজ এরশাদের মরদেহ তার নির্বাচনী এলাকা রংপুরে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ‘প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে’ সম্ভব হচ্ছে না। বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মরদেহ মঙ্গলবার সকালে রংপুরে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শহরের ঈদগাহ মাঠে ‘পেয়ারা’ নামে পরিচিত রংপুরের সন্তান এরশাদের চতুর্থ জানাজা হবে। হেলিকপ্টারে ঢাকার আনার পর ওই দিনই বাদ জোহর বাংলাদেশের চতুর্থ সেনাপ্রধানের মরদেহ সেনা কবরস্থানে দাফন করা হবে। পরদিন বুধবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে এরশাদের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে দলীয় সূত্র জানায়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত এরশাদ সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় আশির দশকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আট বছর দেশ শাসন করে। ১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের আগের সরকারে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বপালনকারী এরশাদ বর্তমান সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বে ছিলেন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলসহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতিবাচক অনেক ধারা সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত এরশাদ। ৯০-এর গণ-আন্দোলনের সময় তাকে নিয়েই ‘বিশ্ব বেহায়া’ চিত্রকর্মটি এঁকেছিলেন শিল্পী কামরুল হাসান। আর্থিক কেলেঙ্কারি, নারীদের নিয়ে কেলেঙ্কারি, রাজনীতিতে একের পর এক ‘ডিগবাজি’ দিয়েও সমালোচিত ছিলেন তিনি। তবে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের কাছে এরশাদ ছিলেন নায়কসম; তারা ‘পল্লীবন্ধু’ হিসেবেই ডাকতেন তাকে। এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে। অবিভক্ত ভারতে শিশুকাল কুচবিহারে কাটে তার। ভারত ভাগের পর তার পরিবার চলে আসে রংপুরে। এরশাদের কলেজের পড়াশোনা চলে রংপুরেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এরশাদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় পশ্চিম পাকিস্তানেই ছিলেন এরশাদ। তার ভাষ্য, তিনি বন্দী হিসেবে সেখানে ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে অনেকে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পাকিস্তান থেকে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে ফেরার পর মামা রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়ার (বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী) সুপারিশে এরশাদকে সেনাবাহিনীর চাকরিতে ফেরত নেয়া হয় বলে সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম তার বইয়ে লিখেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার পর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হন তিনি, তখন তার পদমর্যাদা ছিল কর্নেল। ১৯৭৫ সালে এরশাদ ভারতের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে প্রতিরক্ষা কোর্সে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। ওই বছরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকা-ের সময় তিনি সেখানেই ছিলেন। ওই ঘটনার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হওয়ার পর তার উদ্যোগে ভারত থেকে এনে এরশাদকে করা হয় সেনাবাহিনীর উপপ্রধান, মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে। পাকিস্তান প্রত্যাগত এরশাদকে জিয়ার এই পদোন্নতি দেয়া তখন ভালো চোখে দেখেননি মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তারা। জিয়া রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে এরশাদকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপ্রধান করেন। কিন্তু সেই এরশাদই তার জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়ান বলে বিএনপি নেতারা এখন বলছেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে যে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন, তার পেছনে এরশাদই কলকাঠি নেড়েছিলেন বলে জিয়ার স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অভিযোগ। ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নেতা মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে তখন হত্যা করা হয়েছিল, সেই হত্যার মামলা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বইতে হয়েছে এরশাদকে, যদিও রায় হয়নি।

জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এরশাদ। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। নিজেকে সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে সামরিক শাসন জারি করেন তিনি, স্থগিত করেন সংবিধান। প্রথমে বিচারপতি এ এফ এম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির পদে বসিয়েছিলেন এরশাদ। তার এক বছর পর আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসেন এরশাদ; যার এই ক্ষমতারোহণ অবৈধ বলে পরে রায় আসে আদালতের।

ক্ষমতায় বসার পর প্রথমে জনদল নামে একটি দল এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল, যা ছিল তার রাজনীতিতে নামার প্রথম ধাপ। এরপর বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় পার্টি’, মৃত্যু পর্যন্ত এই দলটির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতেই। এরশাদের নয় বছরের শাসনকালে অবকাঠামোর উন্নতির দিকটিই তার সমর্থকরা বেশি করে দেখান, তবে অবাধ দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরিতে এরশাদের আগ্রহ ছিল বলে সমালোচকরা বলেন। উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য কৃতিত্ব নেন এরশাদ; কিন্তু তাও তার রাজনৈতিক অভিলাষ বাস্তবায়নের ধাপ হিসেবেই দেখেন সমালোচকরা। এরশাদ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী এনে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যুক্ত করেন, যা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র বদলে দেয় বলে সমালোচনা করলেও এরপর সংবিধান সংশোধন হলেও স্পর্শকাতর এই বিষয়টি কেউ স্পর্শ করতে চাননি। ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনসহ আরও নানা পদক্ষেপে বিতর্কিত ছিলেন এরশাদ। তখন গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও ছিল সীমিত। এর মধ্যেও এরশাদের সময়ে স্বাস্থ্যনীতি প্রশংসা পায় সমালোচকদেরও। তার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প ও পথশিশুদের জন্য পথকলি ট্রাস্টও ছিল আলোচিত।

এরশাদের সময়েই ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে একের পর এক বিদেশ সফর নিয়েও সমালোচিত ছিলেন এরশাদ। নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দিতে চাইতেন এরশাদ; ক্ষমতায় থাকার সময় তার তার লেখা কবিতা-গান রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে শোনানো হতো, তবে সেগুলো আদতে তার লেখা ছিল কি না, তা নিয়ে ছিল মানুষের সন্দেহ। দমন-পীড়ন দিয়ে নিজের শাসন বজায় রেখেছিলেন এরশাদ, তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৯০ সালে প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয় তাকে। ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ বন্দী হন তখন, তার বিরুদ্ধে হয় অনেক দুর্নীতির মামলা। কিন্তু তার মধ্যেই চমক দেখিয়ে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৫টি আসন থেকে বিজয়ী হন এরশাদ। এরপর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টিতে এরশাদই একটি অবস্থান পেয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময় ৪২টির মতো মামলা হয়েছিল এরশাদের বিরুদ্ধে। তাকে বাগে আনতে এসব মামলার ব্যবহারও পরে দেখা গেছে। ওই সব মামলার একটিতে কেবল তার সাজা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের শাসনামলে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান এরশাদ। দলের নেতৃত্বভার নেন স্ত্রী রওশন এরশাদের কাছ থেকে। এরপর বিভিন্ন সময় নানা ভাগ হয় এরশাদের দল। মূল দল নিয়ে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেন তিনি। এরপর টানাপোড়েন ও নানা অনুযোগ করলেও আওয়ামী লীগের কাছাকাছিই থেকেছিলেন এরশাদ। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধীদলের আসনে বসেন তিনি। নিজে হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদে প্রধান বিরোধীদলের নেতার আসনে বসেন তিনি। এই পদে থেকেই পৃথিবী থেকে চিরপ্রস্থান ঘটেছে তার।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন মহলের শোক :

সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক বিবৃতিতে তারা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। এদিকে এরশাদের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রীরা শোক প্রকাশ করেছেন। এরশাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পৃথক বিবৃতি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শ্রমপ্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ প্রমুখ।

এরশাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিএনপি। এক শোকবার্তায় দলটির পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। এছাড়া শোক জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও মহাসচিব জাফরুল্লাহ খান চৌধুরী লাহরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এদিকে এরশাদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর ও সম্মানী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ। পৃথক এক শোকবার্তায় এরশাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তারা। এছাড়া এরশাদের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী।

সোমবার, ১৫ জুলাই ২০১৯ , ১ শ্রাবন ১৪২৫, ১১ জিলকদ ১৪৪০

এরশাদ আর নেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই। গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। গত ১০ দিন ধরে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। এরশাদ রক্তের ক্যানসার মাইডোলিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন। শেষ দিকে তার ফুসফুসে দেখা দিয়েছিল সংক্রমণ, কিডনিও কাজ করছিল না বলে জানান তার ছোট ভাই জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এরশাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ছুটে যান সিএমএইচ হাসপাতালে। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় নেতারা। চারটি জানাজা শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আগামীকাল বিকালে ঢাকায় সেনাবাহিনী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে দলীয় সূত্র জানা গেছে।

গতকাল বাদ জোহর ঢাকা সেনানিবাসে সেনা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এরশাদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, এরশাদের ভাই জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, এরশাদের বড় ছেলে সাদ এরশাদসহ জাতীয় পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার এক ঘণ্টা আগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় পতাকা ও সেনাবাহিনীর পতাকা মোড়ানো এরশাদের কফিন মসজিদ প্রাঙ্গণে আনা হয়। প্রথম জানাজা শেষে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এরশাদের মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিরোধীদলীয় নেতার দ্বিতীয় জানাজা হবে। নেতাকর্মীসহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের মরদেহ আজ দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাখা হবে। ওইদিন বাদ আসর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তৃতীয় জানাজার পর এরশাদের মরদেহ আবারও সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হবে। আজ এরশাদের মরদেহ তার নির্বাচনী এলাকা রংপুরে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ‘প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে’ সম্ভব হচ্ছে না। বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মরদেহ মঙ্গলবার সকালে রংপুরে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শহরের ঈদগাহ মাঠে ‘পেয়ারা’ নামে পরিচিত রংপুরের সন্তান এরশাদের চতুর্থ জানাজা হবে। হেলিকপ্টারে ঢাকার আনার পর ওই দিনই বাদ জোহর বাংলাদেশের চতুর্থ সেনাপ্রধানের মরদেহ সেনা কবরস্থানে দাফন করা হবে। পরদিন বুধবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে এরশাদের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে দলীয় সূত্র জানায়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত এরশাদ সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় আশির দশকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আট বছর দেশ শাসন করে। ১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের আগের সরকারে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বপালনকারী এরশাদ বর্তমান সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বে ছিলেন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলসহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতিবাচক অনেক ধারা সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত এরশাদ। ৯০-এর গণ-আন্দোলনের সময় তাকে নিয়েই ‘বিশ্ব বেহায়া’ চিত্রকর্মটি এঁকেছিলেন শিল্পী কামরুল হাসান। আর্থিক কেলেঙ্কারি, নারীদের নিয়ে কেলেঙ্কারি, রাজনীতিতে একের পর এক ‘ডিগবাজি’ দিয়েও সমালোচিত ছিলেন তিনি। তবে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের কাছে এরশাদ ছিলেন নায়কসম; তারা ‘পল্লীবন্ধু’ হিসেবেই ডাকতেন তাকে। এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে। অবিভক্ত ভারতে শিশুকাল কুচবিহারে কাটে তার। ভারত ভাগের পর তার পরিবার চলে আসে রংপুরে। এরশাদের কলেজের পড়াশোনা চলে রংপুরেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এরশাদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় পশ্চিম পাকিস্তানেই ছিলেন এরশাদ। তার ভাষ্য, তিনি বন্দী হিসেবে সেখানে ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে অনেকে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পাকিস্তান থেকে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে ফেরার পর মামা রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়ার (বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী) সুপারিশে এরশাদকে সেনাবাহিনীর চাকরিতে ফেরত নেয়া হয় বলে সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম তার বইয়ে লিখেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার পর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হন তিনি, তখন তার পদমর্যাদা ছিল কর্নেল। ১৯৭৫ সালে এরশাদ ভারতের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে প্রতিরক্ষা কোর্সে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। ওই বছরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকা-ের সময় তিনি সেখানেই ছিলেন। ওই ঘটনার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হওয়ার পর তার উদ্যোগে ভারত থেকে এনে এরশাদকে করা হয় সেনাবাহিনীর উপপ্রধান, মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে। পাকিস্তান প্রত্যাগত এরশাদকে জিয়ার এই পদোন্নতি দেয়া তখন ভালো চোখে দেখেননি মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তারা। জিয়া রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে এরশাদকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপ্রধান করেন। কিন্তু সেই এরশাদই তার জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়ান বলে বিএনপি নেতারা এখন বলছেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে যে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন, তার পেছনে এরশাদই কলকাঠি নেড়েছিলেন বলে জিয়ার স্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অভিযোগ। ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নেতা মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে তখন হত্যা করা হয়েছিল, সেই হত্যার মামলা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বইতে হয়েছে এরশাদকে, যদিও রায় হয়নি।

জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এরশাদ। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। নিজেকে সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে সামরিক শাসন জারি করেন তিনি, স্থগিত করেন সংবিধান। প্রথমে বিচারপতি এ এফ এম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির পদে বসিয়েছিলেন এরশাদ। তার এক বছর পর আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসেন এরশাদ; যার এই ক্ষমতারোহণ অবৈধ বলে পরে রায় আসে আদালতের।

ক্ষমতায় বসার পর প্রথমে জনদল নামে একটি দল এরশাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল, যা ছিল তার রাজনীতিতে নামার প্রথম ধাপ। এরপর বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় পার্টি’, মৃত্যু পর্যন্ত এই দলটির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতেই। এরশাদের নয় বছরের শাসনকালে অবকাঠামোর উন্নতির দিকটিই তার সমর্থকরা বেশি করে দেখান, তবে অবাধ দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরিতে এরশাদের আগ্রহ ছিল বলে সমালোচকরা বলেন। উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য কৃতিত্ব নেন এরশাদ; কিন্তু তাও তার রাজনৈতিক অভিলাষ বাস্তবায়নের ধাপ হিসেবেই দেখেন সমালোচকরা। এরশাদ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী এনে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যুক্ত করেন, যা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র বদলে দেয় বলে সমালোচনা করলেও এরপর সংবিধান সংশোধন হলেও স্পর্শকাতর এই বিষয়টি কেউ স্পর্শ করতে চাননি। ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনসহ আরও নানা পদক্ষেপে বিতর্কিত ছিলেন এরশাদ। তখন গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও ছিল সীমিত। এর মধ্যেও এরশাদের সময়ে স্বাস্থ্যনীতি প্রশংসা পায় সমালোচকদেরও। তার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প ও পথশিশুদের জন্য পথকলি ট্রাস্টও ছিল আলোচিত।

এরশাদের সময়েই ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে একের পর এক বিদেশ সফর নিয়েও সমালোচিত ছিলেন এরশাদ। নিজেকে কবি হিসেবে পরিচয় দিতে চাইতেন এরশাদ; ক্ষমতায় থাকার সময় তার তার লেখা কবিতা-গান রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে শোনানো হতো, তবে সেগুলো আদতে তার লেখা ছিল কি না, তা নিয়ে ছিল মানুষের সন্দেহ। দমন-পীড়ন দিয়ে নিজের শাসন বজায় রেখেছিলেন এরশাদ, তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৯০ সালে প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয় তাকে। ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ বন্দী হন তখন, তার বিরুদ্ধে হয় অনেক দুর্নীতির মামলা। কিন্তু তার মধ্যেই চমক দেখিয়ে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৫টি আসন থেকে বিজয়ী হন এরশাদ। এরপর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টিতে এরশাদই একটি অবস্থান পেয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময় ৪২টির মতো মামলা হয়েছিল এরশাদের বিরুদ্ধে। তাকে বাগে আনতে এসব মামলার ব্যবহারও পরে দেখা গেছে। ওই সব মামলার একটিতে কেবল তার সাজা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের শাসনামলে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান এরশাদ। দলের নেতৃত্বভার নেন স্ত্রী রওশন এরশাদের কাছ থেকে। এরপর বিভিন্ন সময় নানা ভাগ হয় এরশাদের দল। মূল দল নিয়ে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেন তিনি। এরপর টানাপোড়েন ও নানা অনুযোগ করলেও আওয়ামী লীগের কাছাকাছিই থেকেছিলেন এরশাদ। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধীদলের আসনে বসেন তিনি। নিজে হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদে প্রধান বিরোধীদলের নেতার আসনে বসেন তিনি। এই পদে থেকেই পৃথিবী থেকে চিরপ্রস্থান ঘটেছে তার।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন মহলের শোক :

সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক বিবৃতিতে তারা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। এদিকে এরশাদের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রীরা শোক প্রকাশ করেছেন। এরশাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পৃথক বিবৃতি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শ্রমপ্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ প্রমুখ।

এরশাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিএনপি। এক শোকবার্তায় দলটির পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। এছাড়া শোক জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও মহাসচিব জাফরুল্লাহ খান চৌধুরী লাহরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এদিকে এরশাদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর ও সম্মানী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ। পৃথক এক শোকবার্তায় এরশাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তারা। এছাড়া এরশাদের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল মুজাদ্দেদী।