পুঁজিবাজারকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে চান অর্থমন্ত্রী

পুঁজিবাজারের চলমান দুরবস্থায় বিনিয়োগকারীরা যখন রাস্তায় তখন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানালেন, পুঁজিবাজারকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে কাজ করছে সরকার। এ জন্য বাজেটে নানা উদ্যোগের কথাও জানান তিনি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজারে আমার কাজটা হবে একটা সুন্দর অবস্থান তৈরি করে দেয়া। যাতে শেয়ারবাজার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। শেয়ারবাজারে লাভ লোকশানের সঙ্গে সরকারের কোন সম্পৃক্ততা নেই। কেননা পুঁজিবাজারে সরকারের শেয়ার খুব কম রয়েছে। এখান থেকে সরকার শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাবে এমনটি নয়। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার একটি বাজার। যারা এখানে বিনিয়োগ করবেন তারাই লাভবান হবেন। লাভও হতে পারে আবার লোকসানও হতে পারে। প্রত্যেক দেশেই পুঁজিবাজারে মাঝে মধ্যে শেয়ারের দাম কমে। এখন একটা ট্রেড দাম চলছে। সেটা খুব বেশি দিন থাকবে না। কথাবার্তা চলছে আগে যে অস্বাভাবিক অবস্থা ছিল সেটা আর নেই।

‘১৯২৯-৩৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে একবার ট্রেড ওয়ার হয়েছিল। সে সময় ২০ হাজার আইটেমে উপর ট্যারিফ বসানো হয়েছিল। এ কারণে বিশ্বে তখন প্রায় ৬৬ শতাংশ বাণিজ্য কমে হয়েছিল। কয়দিন আগে চায়না-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা সমস্যা সৃষ্টির কারণে ৪-৫ শতাংশের মতো ট্রেড কমে গেছে। এসব জিনিস অনেক সময় শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলে। তবে সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে আসছে।

উল্লেখ, শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য ঘোষিত প্রণোদনারও ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি বাজারে। বরং উল্টো টানা দরপতন ঘটেছে গত ৩০ জুন বাজেট পাসের পর থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের শেয়ারবাজারে গতকাল আবারও বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে।

বড় দরপতনের কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় আড়াই বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুনের পর শেয়ারবাজারে ১০ কার্যদিবস লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৯ দিনই বাজারের সূচক কমেছে। বেড়েছে কেবল ১ দিন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৮৪ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।

মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম কমে আবার বাড়ে। তবে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নজির নেই। ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারতের পুঁজিবাজারে ইনডেক্স এসেছিল ১৮ হাজার থেকে ৭ হাজারে। সেখানে কমেছে আবার বেড়েছে। আমাদের এখানেও বেড়েছে আবার কমেছে। আমাদের পুঁজিবাজারে এখন খুব বেশি উঠানামা নেই। স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের যেটুকু করার সেটুকু করা হবে। আমাদের অর্থনীতি খুব শক্তিশালী এটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তাহলে অর্থনীতির প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ছে না কেনো প্রশ্ন রাখেন তিনি। বলেন, পুঁজিবাজারে এটার প্রভাব আসা উচিত। পুঁজিবাজারে শক্তিশালী বা বড় বিনিয়োগকারী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী থাকা দরকার। তবে আমাদের পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই বেশি।

তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দিলে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়ে। আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা শুধু লাভ করতে চায়। ট্রেড করে ছোট্ট লাভ করে বেরিয়ে যেতে চায়। এটা কিন্তু পুঁজিবাজার না। পুঁজিবাজারের দুটি পদ্ধতি আছে। একটা হচ্ছে আপনি ট্রেড করবেন লাভ করবেন। আবার আপনি ইনভেস্টমেন্ট ধরে রাখবেন যাতে ক্যাপিটাল গেইন পেতে পারেন। আমাদের এখানে দুঃখজনক যে ক্যাপিটাল গেইনের চিন্তায় করে না। তিনি বলেন, ‘আমার ১০০ টাকার শেয়ার কবে ১৫০ টাকা হবে এটা কেউ চিন্তা করে না। আমার কাছে যা ছিল পুঁজিবাজারের জন্য বাজেটে আমি তা করেছি। ডিভিডেন্টের উপর একাধিকবার করারোপ তুলে দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করছাড় দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের তরফ থেকে যা করা দরকার করবো। কারণ এখনো হাজার হাজার মানুষ পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সুতরাং তাদের বাদ দিয়ে দেশের অর্থনীতি চিন্তা করতে পারি না। তাই তাদের সমর্থন দিতে আমরা কাজ করে যাবো।

শুক্রবার, ১৯ জুলাই ২০১৯ , ৪ শ্রাবন ১৪২৫, ১৫ জিলকদ ১৪৪০

পুঁজিবাজারকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে চান অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

পুঁজিবাজারের চলমান দুরবস্থায় বিনিয়োগকারীরা যখন রাস্তায় তখন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানালেন, পুঁজিবাজারকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে কাজ করছে সরকার। এ জন্য বাজেটে নানা উদ্যোগের কথাও জানান তিনি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজারে আমার কাজটা হবে একটা সুন্দর অবস্থান তৈরি করে দেয়া। যাতে শেয়ারবাজার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। শেয়ারবাজারে লাভ লোকশানের সঙ্গে সরকারের কোন সম্পৃক্ততা নেই। কেননা পুঁজিবাজারে সরকারের শেয়ার খুব কম রয়েছে। এখান থেকে সরকার শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাবে এমনটি নয়। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার একটি বাজার। যারা এখানে বিনিয়োগ করবেন তারাই লাভবান হবেন। লাভও হতে পারে আবার লোকসানও হতে পারে। প্রত্যেক দেশেই পুঁজিবাজারে মাঝে মধ্যে শেয়ারের দাম কমে। এখন একটা ট্রেড দাম চলছে। সেটা খুব বেশি দিন থাকবে না। কথাবার্তা চলছে আগে যে অস্বাভাবিক অবস্থা ছিল সেটা আর নেই।

‘১৯২৯-৩৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে একবার ট্রেড ওয়ার হয়েছিল। সে সময় ২০ হাজার আইটেমে উপর ট্যারিফ বসানো হয়েছিল। এ কারণে বিশ্বে তখন প্রায় ৬৬ শতাংশ বাণিজ্য কমে হয়েছিল। কয়দিন আগে চায়না-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা সমস্যা সৃষ্টির কারণে ৪-৫ শতাংশের মতো ট্রেড কমে গেছে। এসব জিনিস অনেক সময় শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলে। তবে সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে আসছে।

উল্লেখ, শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য ঘোষিত প্রণোদনারও ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি বাজারে। বরং উল্টো টানা দরপতন ঘটেছে গত ৩০ জুন বাজেট পাসের পর থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের শেয়ারবাজারে গতকাল আবারও বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে।

বড় দরপতনের কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় আড়াই বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুনের পর শেয়ারবাজারে ১০ কার্যদিবস লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৯ দিনই বাজারের সূচক কমেছে। বেড়েছে কেবল ১ দিন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৮৪ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।

মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম কমে আবার বাড়ে। তবে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নজির নেই। ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভারতের পুঁজিবাজারে ইনডেক্স এসেছিল ১৮ হাজার থেকে ৭ হাজারে। সেখানে কমেছে আবার বেড়েছে। আমাদের এখানেও বেড়েছে আবার কমেছে। আমাদের পুঁজিবাজারে এখন খুব বেশি উঠানামা নেই। স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের যেটুকু করার সেটুকু করা হবে। আমাদের অর্থনীতি খুব শক্তিশালী এটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তাহলে অর্থনীতির প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ছে না কেনো প্রশ্ন রাখেন তিনি। বলেন, পুঁজিবাজারে এটার প্রভাব আসা উচিত। পুঁজিবাজারে শক্তিশালী বা বড় বিনিয়োগকারী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী থাকা দরকার। তবে আমাদের পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই বেশি।

তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দিলে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়ে। আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা শুধু লাভ করতে চায়। ট্রেড করে ছোট্ট লাভ করে বেরিয়ে যেতে চায়। এটা কিন্তু পুঁজিবাজার না। পুঁজিবাজারের দুটি পদ্ধতি আছে। একটা হচ্ছে আপনি ট্রেড করবেন লাভ করবেন। আবার আপনি ইনভেস্টমেন্ট ধরে রাখবেন যাতে ক্যাপিটাল গেইন পেতে পারেন। আমাদের এখানে দুঃখজনক যে ক্যাপিটাল গেইনের চিন্তায় করে না। তিনি বলেন, ‘আমার ১০০ টাকার শেয়ার কবে ১৫০ টাকা হবে এটা কেউ চিন্তা করে না। আমার কাছে যা ছিল পুঁজিবাজারের জন্য বাজেটে আমি তা করেছি। ডিভিডেন্টের উপর একাধিকবার করারোপ তুলে দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করছাড় দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য সরকারের তরফ থেকে যা করা দরকার করবো। কারণ এখনো হাজার হাজার মানুষ পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সুতরাং তাদের বাদ দিয়ে দেশের অর্থনীতি চিন্তা করতে পারি না। তাই তাদের সমর্থন দিতে আমরা কাজ করে যাবো।