পেনশনারদের সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ছাড়

৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশই

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে উৎসে কর কাটার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিয়েছে সরকার। সঞ্চেয়পত্রের মুনাফায় উৎসে কর ১০ শতাংশ ধার্য করলেও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আগের মতোই কর হার থাকছে। অর্থাৎ ৫ শতাংশ হারেই উৎসে কর কাটা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের এ সংক্রান্ত যে সার্কুলার পাঠিয়েছে, তাতে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনলে সেই মুনাফা থেকে ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটার নির্দেশ দিয়েছে। আর ৫ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারেই কর কাটতে বলা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের অনুরোধে ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০১৯-২০ অর্থবছরের নতুন বাজেটে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সে অনুসারে কর কেটেও রাখা হয়েছে অনেকের হিসাব থেকেও। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ঝড় ওঠে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। সামাজিক নিরাপত্তার অধিনের এই খাতটিকে সরকার ছাড়া না দেয়ায় মনক্ষুন্ন হয় অনেকের। এছাড়া কর হার বাস্তাবায়ন নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়। আগের মুনাফার উপরও ১০ শতাংশ কর কেটে রাখায় হতাশ হন বিনিয়োগকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১০ শতাংশ কর কেটে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে পেনশনারদেরকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণাও দেয়া হয়।

এর আগে ২ জুলাই এনবিআর জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে একটি চিঠি দেয়। সেই চিঠিতে বলা হয়, অর্থ আইন ২০১৯ অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীদেরকে সঞ্চয়পত্রের সুদ/মুনাফা প্রদানের ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তনের হার পরিবর্তন করে ৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে সকল সঞ্চয়পত্রের উপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে আয়কর কর্তন করতে হবে। শুধুমাত্র পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সর্বমোট ৫ লক্ষ টাকার উর্দ্ধে বিনিয়োগের সুদ পরিশোধকালে উপরিউক্ত হারে অর্থাৎ ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন প্রযোজ্য হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে এ বিধান কার্যকর হবে। অর্থাৎ যখনই খরিদ করা হোক না কেনো ১ জুলাই বা তার পর প্রদত্ত সুদ/মুনাফা পরিশোধকালে উপরিউক্ত হারে উৎসে কর কর্তন করতে হবে। ৪ জুলাই সঞ্চয় অধিদপ্তর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি চিঠি দেয়।

উল্লেখ, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৪৩ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। গত বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ করার লক্ষ্য ধরেছিল। পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪৫ কোটি টাকা করা হয়। নতুন বাজেটে এই লক্ষ ধরা হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকা।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল, কিন্তু বিক্রি কমেনি। এর পরেও দুই দফা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমানো হয়নি। বিক্রি কমাতে নতুন বাজেটে মুনাফার উপর কর বাড়ানো হয়েছে। এতোদিন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে সরকার ৫ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখতো। ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ করে কাটবে।

রবিবার, ২১ জুলাই ২০১৯ , ৬ শ্রাবন ১৪২৫, ১৭ জিলকদ ১৪৪০

পেনশনারদের সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ছাড়

৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশই

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে উৎসে কর কাটার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিয়েছে সরকার। সঞ্চেয়পত্রের মুনাফায় উৎসে কর ১০ শতাংশ ধার্য করলেও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আগের মতোই কর হার থাকছে। অর্থাৎ ৫ শতাংশ হারেই উৎসে কর কাটা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের এ সংক্রান্ত যে সার্কুলার পাঠিয়েছে, তাতে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনলে সেই মুনাফা থেকে ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটার নির্দেশ দিয়েছে। আর ৫ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারেই কর কাটতে বলা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের অনুরোধে ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০১৯-২০ অর্থবছরের নতুন বাজেটে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সে অনুসারে কর কেটেও রাখা হয়েছে অনেকের হিসাব থেকেও। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা ঝড় ওঠে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। সামাজিক নিরাপত্তার অধিনের এই খাতটিকে সরকার ছাড়া না দেয়ায় মনক্ষুন্ন হয় অনেকের। এছাড়া কর হার বাস্তাবায়ন নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়। আগের মুনাফার উপরও ১০ শতাংশ কর কেটে রাখায় হতাশ হন বিনিয়োগকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১০ শতাংশ কর কেটে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে পেনশনারদেরকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণাও দেয়া হয়।

এর আগে ২ জুলাই এনবিআর জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে একটি চিঠি দেয়। সেই চিঠিতে বলা হয়, অর্থ আইন ২০১৯ অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীদেরকে সঞ্চয়পত্রের সুদ/মুনাফা প্রদানের ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তনের হার পরিবর্তন করে ৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে সকল সঞ্চয়পত্রের উপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে আয়কর কর্তন করতে হবে। শুধুমাত্র পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সর্বমোট ৫ লক্ষ টাকার উর্দ্ধে বিনিয়োগের সুদ পরিশোধকালে উপরিউক্ত হারে অর্থাৎ ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন প্রযোজ্য হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে এ বিধান কার্যকর হবে। অর্থাৎ যখনই খরিদ করা হোক না কেনো ১ জুলাই বা তার পর প্রদত্ত সুদ/মুনাফা পরিশোধকালে উপরিউক্ত হারে উৎসে কর কর্তন করতে হবে। ৪ জুলাই সঞ্চয় অধিদপ্তর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি চিঠি দেয়।

উল্লেখ, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৪৩ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। গত বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ করার লক্ষ্য ধরেছিল। পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪৫ কোটি টাকা করা হয়। নতুন বাজেটে এই লক্ষ ধরা হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকা।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল, কিন্তু বিক্রি কমেনি। এর পরেও দুই দফা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমানো হয়নি। বিক্রি কমাতে নতুন বাজেটে মুনাফার উপর কর বাড়ানো হয়েছে। এতোদিন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে সরকার ৫ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখতো। ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ করে কাটবে।