এক মাসের বিদ্যুৎ বিল ১২৮ কোটি টাকা!

দুই কিলোওয়াটের সংযোগ ব্যবহার করা ভারতের উত্তর প্রদেশের এক দরিদ্র পরিবারকে এক মাসের বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে ১২৮ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪৪ রুপি। ভুল শোধরাতে কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েক দফা ধরনা দিয়েও কাজ হয়নি; উল্টো বিল পরিশোধের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সংযোগই কেটে নেয়া হয়েছে। ভুতুড়ে এ বিলের বোঝার পাশাপাশি এখন স্ত্রীকে নিয়ে অন্ধকারেই দিন কাটাতে হচ্ছে উত্তর প্রদেশের হাপুরের চামরি গ্রামের দরিদ্র শামীমকে, জানিয়েছে এনডিটিভি, আনন্দবাজার।

হাপুর ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে। ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে শামীম জানান, বিলের ভুল সংশোধন করতে তিনি স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যালয়ে গেলেও সেখানকার কর্মকর্তারা তাকে ১২৮ কোটি রুপির বিল পরিশোধেই তাগাদা দেন। ‘কেউ আমাদের আবেদন শোনেনি। কী করে আমরা এ টাকা দেব? যখন আমরা অভিযোগ করতে গেলাম, আমাদের বলা হলো- বিল শোধ না হওয়া পর্যন্ত তারা আমাদের সংযোগ চালু করতে পারবেন না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেছি, কিন্তু কেউই শোনেনি। মনে হচ্ছে, বিদ্যুৎ বিভাগ আমাকে পুরো হাপুরের বিলই ধরিয়ে দিয়েছে,’ বলেন শামীম। এর আগে প্রতি মাসে গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রুপি বিল আসত বলে জানান তিনি। ‘আমরা শুধু লাইট ও ফ্যান চালাই। কিভাবে এত টাকা বিল হলো? আমরা দরিদ্র, কিভাবে আমরা এত টাকা শোধ করব,’ প্রশ্ন শামীমের স্ত্রী খাইরুন্নিসার।

দুই কিলোওয়াটের সংযোগ ব্যবহারকারী কী করে ১২৮ কোটিরও বেশি রুপির বিদ্যুৎ বিল পেলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তর প্রদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের এক প্রকৌশলী বলেন, ‘এটি মোটেও বড় কোন ব্যাপার নয়। বিদ্যুৎ বিভাগে বিলটি পাঠিয়ে দেয়া হলেই ওই ‘কারিগরি ত্রুটি’ ঠিক করে নতুন বিল দেয়া যাবে। অবশ্যই এটি কারিগরি ত্রুটি। তারা যদি আমাদের বিলটি দেয়, আমরা কারিগরি ত্রুটি ঠিক করে নতুন বিল ইস্যু করতে পারব। এটা বড় কোন ব্যাপার নয়। এ ধরনের কারিগরি ত্রুটি হয়ই,’ এএনআইকে বলেছেন প্রকৌশলী রাম শরণ। উত্তর প্রদেশে এরকম ‘আজগুবি’ বিল পাঠানোর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও দুই কিলোওয়াটের সংযোগ ব্যবহার করা কানৌজের এক ব্যক্তিকে ২৩ কোটি রুপির বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। গত বছর মে মাসে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গবাদের এক সবজি বিক্রেতা বিদ্যুৎ বিল দেখে আত্মহত্যা করেছিলেন; তাকে ওই বছরের মার্চের বিল হিসেবে পাঠানো হয়েছিল ৮ লাখ ৬৪ হাজার রুপি। বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ পরে জানায়, দশমিকের উলটপালট হওয়ায় জগন্নাথ নেহাজি শেলকে নামের ওই ব্যক্তির কাছে এমন অদ্ভুতুড়ে বিল গিয়েছিল। ৩৬ বছর বয়সী ওই সবজি বিক্রেতা রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানে কয়েকবার ধরনা দেয়ার পর আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ আত্মীয়স্বজনের। প্রথমে নিজেদের দায় অস্বীকার করলেও বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ পরে এ ঘটনায় তাদের এক সহকারী হিসাবরক্ষককে বরখাস্ত করে।

সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯ , ৭ শ্রাবন ১৪২৫, ১৮ জিলকদ ১৪৪০

এক মাসের বিদ্যুৎ বিল ১২৮ কোটি টাকা!

সংবাদ ডেস্ক

দুই কিলোওয়াটের সংযোগ ব্যবহার করা ভারতের উত্তর প্রদেশের এক দরিদ্র পরিবারকে এক মাসের বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছে ১২৮ কোটি ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪৪ রুপি। ভুল শোধরাতে কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েক দফা ধরনা দিয়েও কাজ হয়নি; উল্টো বিল পরিশোধের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সংযোগই কেটে নেয়া হয়েছে। ভুতুড়ে এ বিলের বোঝার পাশাপাশি এখন স্ত্রীকে নিয়ে অন্ধকারেই দিন কাটাতে হচ্ছে উত্তর প্রদেশের হাপুরের চামরি গ্রামের দরিদ্র শামীমকে, জানিয়েছে এনডিটিভি, আনন্দবাজার।

হাপুর ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে। ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে শামীম জানান, বিলের ভুল সংশোধন করতে তিনি স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যালয়ে গেলেও সেখানকার কর্মকর্তারা তাকে ১২৮ কোটি রুপির বিল পরিশোধেই তাগাদা দেন। ‘কেউ আমাদের আবেদন শোনেনি। কী করে আমরা এ টাকা দেব? যখন আমরা অভিযোগ করতে গেলাম, আমাদের বলা হলো- বিল শোধ না হওয়া পর্যন্ত তারা আমাদের সংযোগ চালু করতে পারবেন না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেছি, কিন্তু কেউই শোনেনি। মনে হচ্ছে, বিদ্যুৎ বিভাগ আমাকে পুরো হাপুরের বিলই ধরিয়ে দিয়েছে,’ বলেন শামীম। এর আগে প্রতি মাসে গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রুপি বিল আসত বলে জানান তিনি। ‘আমরা শুধু লাইট ও ফ্যান চালাই। কিভাবে এত টাকা বিল হলো? আমরা দরিদ্র, কিভাবে আমরা এত টাকা শোধ করব,’ প্রশ্ন শামীমের স্ত্রী খাইরুন্নিসার।

দুই কিলোওয়াটের সংযোগ ব্যবহারকারী কী করে ১২৮ কোটিরও বেশি রুপির বিদ্যুৎ বিল পেলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তর প্রদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের এক প্রকৌশলী বলেন, ‘এটি মোটেও বড় কোন ব্যাপার নয়। বিদ্যুৎ বিভাগে বিলটি পাঠিয়ে দেয়া হলেই ওই ‘কারিগরি ত্রুটি’ ঠিক করে নতুন বিল দেয়া যাবে। অবশ্যই এটি কারিগরি ত্রুটি। তারা যদি আমাদের বিলটি দেয়, আমরা কারিগরি ত্রুটি ঠিক করে নতুন বিল ইস্যু করতে পারব। এটা বড় কোন ব্যাপার নয়। এ ধরনের কারিগরি ত্রুটি হয়ই,’ এএনআইকে বলেছেন প্রকৌশলী রাম শরণ। উত্তর প্রদেশে এরকম ‘আজগুবি’ বিল পাঠানোর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও দুই কিলোওয়াটের সংযোগ ব্যবহার করা কানৌজের এক ব্যক্তিকে ২৩ কোটি রুপির বিল ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। গত বছর মে মাসে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গবাদের এক সবজি বিক্রেতা বিদ্যুৎ বিল দেখে আত্মহত্যা করেছিলেন; তাকে ওই বছরের মার্চের বিল হিসেবে পাঠানো হয়েছিল ৮ লাখ ৬৪ হাজার রুপি। বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ পরে জানায়, দশমিকের উলটপালট হওয়ায় জগন্নাথ নেহাজি শেলকে নামের ওই ব্যক্তির কাছে এমন অদ্ভুতুড়ে বিল গিয়েছিল। ৩৬ বছর বয়সী ওই সবজি বিক্রেতা রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানে কয়েকবার ধরনা দেয়ার পর আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ আত্মীয়স্বজনের। প্রথমে নিজেদের দায় অস্বীকার করলেও বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ পরে এ ঘটনায় তাদের এক সহকারী হিসাবরক্ষককে বরখাস্ত করে।