তিন বছরেও নিয়োগ হয়নি ঠিকাদার

প্রকল্প শুরুর আগেই দুই দফা ব্যয় বৃদ্ধি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুর চাপ কমানোর জন্য পৃথক রেলসেতু নির্মাণ পরিকল্পনা নেয়া হয় ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় তিন বছর অতিক্রম হলেও এখনো ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি রেলওয়ে। প্রকল্পের এই ধীরগতির কারণে ইতোমধ্যে দুইদফা বৃদ্ধি হয়েছে এর নির্মাণ ব্যয়। বর্তমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), বাকি ২ হাজার ১০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

২০১৪ সালে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন এই রেলসেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। ওই বছর ডিসেম্বরে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করার সময় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ২৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকায়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে একনেকের প্রাক্কলন অনুসারে এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। ওই বছর ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় প্রকল্পটি পাস হয়। প্রকল্পটির আওতায় বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ৩শ’ মিটার উজানে প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার ডেডিকেটেড ডুয়েলগেজ স্টিল ব্রিজ তৈরি করা হবে। এতে প্রায় তিন কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণের পাশাপাশি ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ লাইন নির্মাণ করা হবে। জাপানি কোম্পানি ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেডসহ যৌথভাবে কয়েকটি কোম্পানিকে প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ নামে এ প্রকল্পের আওতায় বিস্তারিত ডিজাইন, দরপত্র সহায়তা ও তদারকি কাজ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৪ কোটি ৬৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। সব প্রস্তুতি শেষে চলতি বছরের শেষ দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

জানা গেছে, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুটি চালু করা হয় ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন। কিন্তু সেতুটি চালুর সাত বছরের মাথায় এটিতে ফাটল ধরা পড়ে। ট্রেন চলাচলের সময় সৃষ্ট কম্পনের ফলে এই ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানায় বিশেষজ্ঞরা। পরবর্তীতে যমুনা সেতুর ফাটল মেরামত করা হলেও ট্রেন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পারাপারের সময় গতি অনেক কমিয়ে দেয়া হয়। পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ রয়েছে সেতুটি দিয়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ইতোমধ্যে সেতুটির সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রেল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেতু। কিন্তু এই সেতু দিয়ে বাস ও ট্রেন একই সঙ্গে চলাচল করায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে আলাদা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেয় সেতু বিভাগ। এই পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে সেতুটি কে নির্মাণ করবেÑ তা নিয়ে প্রথমদিকে সেতু বিভাগ ও রেল বিভাগের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়। উভয় বিভাগই দাবি করে সেতুটি নির্মাণ করার। নিজেদের সপক্ষে দাবি জানিয়ে পৃথক চিঠি দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পৃথক রেলসেতু নির্মাণের দায়িত্ব রেল বিভাগকে দেয়া হয় বলে সংস্থাটির সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল আহসান সংবাদকে বলেন, সবকিছুর প্রস্তুতি শেষে চলতি বছরের শেষ দিকে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য দুই অংশে বিভক্ত করে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হবে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা কম। কাজ শুরু করতে একটু দেরি হলেও ২০২৩ সালের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের সেতুটি নির্মাণ করা হবে। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে রেলসেতুটি নির্মাণ করা হবে। এর উভয় দিকে ভায়াডাক্ট থাকবে ৫৮০ মিটার। যমুনা ইকোপার্কের পাশ দিয়ে এটি বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। এজন্য ৩ দশমিক ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্ল্যাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। রেল সেতুর পূর্বপাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩টি কালভার্ট ও দুটি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের সময় নদী শাসন করায় এ খাতে এখন আর ব্যয় হবে না।

নির্মিতব্য সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলে গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। এছাড়া কনটেইনার ট্রেন চলবে ৮০ কিলোমিটার গতিতে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার গতিতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। আর পণ্যবাহী ও কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল নিষিদ্ধ। গতি বাড়ায় নতুন সেতু দিয়ে দৈনিক ৬০ শতাংশ যাত্রীবাহী যান চলাচল বাড়ানো যাবে। আর পণ্য পরিবহন বাড়ানো যাবে ১৬০ শতাংশ। ফলে দৈনিক মালবাহী ট্রেনে সাড়ে ৩২ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে। ইতোমধ্যে যমুনা নদীতে পৃথক রেলসেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করে কানাডীয় ক্যানারেল কোম্পানি লিমিটেড। সেতুটির বিস্তারিত নকশাও প্রণয়ন করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে অর্থায়ন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

এ ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জল হোসাইন সংবাদকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু হবে যমুনা নদীতে নির্মিতব্য ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু’। তবে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্পটি আরও বড়। কিন্তু তা সড়ক সেতুর সঙ্গে হওয়ায় পৃথকভাবে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুটি দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে সেতু। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে চলতি বছরের শেষে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে।

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯ , ৯ শ্রাবন ১৪২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪০

বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল রেলসেতু

তিন বছরেও নিয়োগ হয়নি ঠিকাদার

প্রকল্প শুরুর আগেই দুই দফা ব্যয় বৃদ্ধি

মাহমুদ আকাশ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুর চাপ কমানোর জন্য পৃথক রেলসেতু নির্মাণ পরিকল্পনা নেয়া হয় ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় তিন বছর অতিক্রম হলেও এখনো ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি রেলওয়ে। প্রকল্পের এই ধীরগতির কারণে ইতোমধ্যে দুইদফা বৃদ্ধি হয়েছে এর নির্মাণ ব্যয়। বর্তমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), বাকি ২ হাজার ১০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

২০১৪ সালে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন এই রেলসেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। ওই বছর ডিসেম্বরে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করার সময় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ২৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকায়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে একনেকের প্রাক্কলন অনুসারে এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। ওই বছর ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় প্রকল্পটি পাস হয়। প্রকল্পটির আওতায় বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ৩শ’ মিটার উজানে প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার ডেডিকেটেড ডুয়েলগেজ স্টিল ব্রিজ তৈরি করা হবে। এতে প্রায় তিন কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণের পাশাপাশি ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ লাইন নির্মাণ করা হবে। জাপানি কোম্পানি ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেডসহ যৌথভাবে কয়েকটি কোম্পানিকে প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ নামে এ প্রকল্পের আওতায় বিস্তারিত ডিজাইন, দরপত্র সহায়তা ও তদারকি কাজ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৪ কোটি ৬৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। সব প্রস্তুতি শেষে চলতি বছরের শেষ দিকে নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

জানা গেছে, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুটি চালু করা হয় ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন। কিন্তু সেতুটি চালুর সাত বছরের মাথায় এটিতে ফাটল ধরা পড়ে। ট্রেন চলাচলের সময় সৃষ্ট কম্পনের ফলে এই ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানায় বিশেষজ্ঞরা। পরবর্তীতে যমুনা সেতুর ফাটল মেরামত করা হলেও ট্রেন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পারাপারের সময় গতি অনেক কমিয়ে দেয়া হয়। পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ রয়েছে সেতুটি দিয়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ইতোমধ্যে সেতুটির সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে। বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রেল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেতু। কিন্তু এই সেতু দিয়ে বাস ও ট্রেন একই সঙ্গে চলাচল করায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে আলাদা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেয় সেতু বিভাগ। এই পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে সেতুটি কে নির্মাণ করবেÑ তা নিয়ে প্রথমদিকে সেতু বিভাগ ও রেল বিভাগের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়। উভয় বিভাগই দাবি করে সেতুটি নির্মাণ করার। নিজেদের সপক্ষে দাবি জানিয়ে পৃথক চিঠি দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পৃথক রেলসেতু নির্মাণের দায়িত্ব রেল বিভাগকে দেয়া হয় বলে সংস্থাটির সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল আহসান সংবাদকে বলেন, সবকিছুর প্রস্তুতি শেষে চলতি বছরের শেষ দিকে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য দুই অংশে বিভক্ত করে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হবে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা কম। কাজ শুরু করতে একটু দেরি হলেও ২০২৩ সালের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের সেতুটি নির্মাণ করা হবে। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে রেলসেতুটি নির্মাণ করা হবে। এর উভয় দিকে ভায়াডাক্ট থাকবে ৫৮০ মিটার। যমুনা ইকোপার্কের পাশ দিয়ে এটি বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। এজন্য ৩ দশমিক ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্ল্যাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। রেল সেতুর পূর্বপাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩টি কালভার্ট ও দুটি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের সময় নদী শাসন করায় এ খাতে এখন আর ব্যয় হবে না।

নির্মিতব্য সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলে গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। এছাড়া কনটেইনার ট্রেন চলবে ৮০ কিলোমিটার গতিতে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার গতিতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। আর পণ্যবাহী ও কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল নিষিদ্ধ। গতি বাড়ায় নতুন সেতু দিয়ে দৈনিক ৬০ শতাংশ যাত্রীবাহী যান চলাচল বাড়ানো যাবে। আর পণ্য পরিবহন বাড়ানো যাবে ১৬০ শতাংশ। ফলে দৈনিক মালবাহী ট্রেনে সাড়ে ৩২ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে। ইতোমধ্যে যমুনা নদীতে পৃথক রেলসেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করে কানাডীয় ক্যানারেল কোম্পানি লিমিটেড। সেতুটির বিস্তারিত নকশাও প্রণয়ন করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে অর্থায়ন করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

এ ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জল হোসাইন সংবাদকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু হবে যমুনা নদীতে নির্মিতব্য ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু’। তবে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্পটি আরও বড়। কিন্তু তা সড়ক সেতুর সঙ্গে হওয়ায় পৃথকভাবে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুটি দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে সেতু। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে চলতি বছরের শেষে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে।