ডাক্তারসহ নানা সংকটে জর্জরিত বক্ষব্যাধি ক্লিনিক

চুয়াডাঙ্গায় কনসালটেন্টসহ শূন্য রয়েছে ১৪টি পদে। ফলে জেলার একমাত্র বক্ষব্যাধি ক্লিনিকটি যক্ষèা নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে না। ৮ বছর যাবত এক্সরে মেশিন অকেজো হয়ে আছে। ক্লিনিকের অনেক যন্ত্রপাতিও অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পেতে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গা বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকের অফিস সহকারী হাফিজুর রহমান জানান, ক্লিনিকে ১ জন মেডিকেল অফিসার রয়েছেন কিন্তু আড়াই বছর থেকে এখানে কোন কনসালটেন্ট না থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া এখানে ২০১১ সাল থেকে এক্সরে মেশিন খারাপ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লেখালেখি করেও এর কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

বর্তমানে ব্র্যাকের সহযোগিতায় এক্সরে সুবিধা দেয়ার কাজ চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার এই বক্ষব্যাধি ক্লিনিকটিতে একজন অফিস সহকারী, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, চারজন অফিস সহায়ক, একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, একজন রেডিওগ্রাফার, একজন গাড়ি চালক, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন সহকারী সেবিকা, ও দুইজন রেডিহম ভিজিটরের পদ শূন্য রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ব্র্যাকের ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেন জানান, যক্ষা নির্মূলের ক্ষেত্রে ব্র্যাক মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের এক্সরে মেশিন খারাপ থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা পুরুষ-নারীদের বিনামূল্যে ব্র্যাকের যক্ষা নির্ণয় কেন্দ্র থেকে এক্সরে সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ফারুক হোসেন আরও জানান, প্রতিদিন ২০-২৫ জন পুরুষ-নারী এখানে সেবা নিতে আসেন। প্রতি মাসে ২০-২৫ জনের দেহে যক্ষার জীবাণু পাওয়া যায়। চিকিৎসা চলাকালীন প্রতিটি গ্রামে কর্মীদের মাধ্যমে ডট পদ্ধতিতে রোগীদের ওষুধ সেবন করানো হয়। ৫ হাজার জনের জন্য ১ জন সেবিকা থাকে। রোগী ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছে কিনা তা তদারকি করে ওই সেবিকা। ২০০৪ সাল থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সরকারের সহযোগী সংস্থা হিসাবে কাজ করছে ব্র্যাক। তথ্য মতে এ কাজের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৩৩ জন রোগীর কফ্ পরীক্ষা করা হয়েছে। কফ্ পরীক্ষার পর ১৪ হাজার ৯৮ জন জীবাণুযুক্ত ফুসফুস আক্রান্ত রোগী, এক্সরে ও অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে ১ হাজার ৪৮৯ জন ফুসফুস আক্রান্ত রোগী, ১ হাজার ৯৬৪ জন ফুসফুস বহির্ভূত রোগী শনাক্ত করা হয়।

পুনরায় আক্রান্ত ৪৩৭ জন রোগী শনাক্ত করা হয়। ২০০৪ হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮৭ জনকে ডট পদ্ধতিতে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা চলাকালীন ৪৬৬ জন রোগী মারা গেছে, ৩২৬ জন রোগী ঠিকমত চিকিৎসা করায়নি ও ৯ জন রোগী চিকিৎসা চলাকালীন নিখোঁজ রয়েছে।

তিনি আরও জানান, শতকরা ৯৬ ভাগ রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করেছে। জাতীয়ভাবে আরোগ্য লাভকারী রোগীর লক্ষমাত্রা শতকরা ৮৬ ভাগ হলেও চুয়াডাঙ্গা জেলায় লক্ষ অর্জিত হয়েছে শতকরা ৯৬ ভাগ। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ.এস.এম.মারুফ হাসান বলেন, বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য কনসালটেন্টসহ অন্যান্য পদে জনবল সঙ্কট রয়েছে। তবে সঙ্গে মেডিকেল অফিসার নিয়মিত রোগী দেখছেন। জনবল সঙ্কটসহ এক্সরে মেশিন সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১৪ পৌষ ১৪২৬, ১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ডাক্তারসহ নানা সংকটে জর্জরিত বক্ষব্যাধি ক্লিনিক

মাহফুজ উদ্দিন খান, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গায় কনসালটেন্টসহ শূন্য রয়েছে ১৪টি পদে। ফলে জেলার একমাত্র বক্ষব্যাধি ক্লিনিকটি যক্ষèা নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে না। ৮ বছর যাবত এক্সরে মেশিন অকেজো হয়ে আছে। ক্লিনিকের অনেক যন্ত্রপাতিও অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পেতে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গা বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকের অফিস সহকারী হাফিজুর রহমান জানান, ক্লিনিকে ১ জন মেডিকেল অফিসার রয়েছেন কিন্তু আড়াই বছর থেকে এখানে কোন কনসালটেন্ট না থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া এখানে ২০১১ সাল থেকে এক্সরে মেশিন খারাপ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লেখালেখি করেও এর কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

বর্তমানে ব্র্যাকের সহযোগিতায় এক্সরে সুবিধা দেয়ার কাজ চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার এই বক্ষব্যাধি ক্লিনিকটিতে একজন অফিস সহকারী, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, চারজন অফিস সহায়ক, একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী, একজন রেডিওগ্রাফার, একজন গাড়ি চালক, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন সহকারী সেবিকা, ও দুইজন রেডিহম ভিজিটরের পদ শূন্য রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ব্র্যাকের ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেন জানান, যক্ষা নির্মূলের ক্ষেত্রে ব্র্যাক মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের এক্সরে মেশিন খারাপ থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা পুরুষ-নারীদের বিনামূল্যে ব্র্যাকের যক্ষা নির্ণয় কেন্দ্র থেকে এক্সরে সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ফারুক হোসেন আরও জানান, প্রতিদিন ২০-২৫ জন পুরুষ-নারী এখানে সেবা নিতে আসেন। প্রতি মাসে ২০-২৫ জনের দেহে যক্ষার জীবাণু পাওয়া যায়। চিকিৎসা চলাকালীন প্রতিটি গ্রামে কর্মীদের মাধ্যমে ডট পদ্ধতিতে রোগীদের ওষুধ সেবন করানো হয়। ৫ হাজার জনের জন্য ১ জন সেবিকা থাকে। রোগী ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছে কিনা তা তদারকি করে ওই সেবিকা। ২০০৪ সাল থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সরকারের সহযোগী সংস্থা হিসাবে কাজ করছে ব্র্যাক। তথ্য মতে এ কাজের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৩৩ জন রোগীর কফ্ পরীক্ষা করা হয়েছে। কফ্ পরীক্ষার পর ১৪ হাজার ৯৮ জন জীবাণুযুক্ত ফুসফুস আক্রান্ত রোগী, এক্সরে ও অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে ১ হাজার ৪৮৯ জন ফুসফুস আক্রান্ত রোগী, ১ হাজার ৯৬৪ জন ফুসফুস বহির্ভূত রোগী শনাক্ত করা হয়।

পুনরায় আক্রান্ত ৪৩৭ জন রোগী শনাক্ত করা হয়। ২০০৪ হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮৭ জনকে ডট পদ্ধতিতে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা চলাকালীন ৪৬৬ জন রোগী মারা গেছে, ৩২৬ জন রোগী ঠিকমত চিকিৎসা করায়নি ও ৯ জন রোগী চিকিৎসা চলাকালীন নিখোঁজ রয়েছে।

তিনি আরও জানান, শতকরা ৯৬ ভাগ রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করেছে। জাতীয়ভাবে আরোগ্য লাভকারী রোগীর লক্ষমাত্রা শতকরা ৮৬ ভাগ হলেও চুয়াডাঙ্গা জেলায় লক্ষ অর্জিত হয়েছে শতকরা ৯৬ ভাগ। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ.এস.এম.মারুফ হাসান বলেন, বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য কনসালটেন্টসহ অন্যান্য পদে জনবল সঙ্কট রয়েছে। তবে সঙ্গে মেডিকেল অফিসার নিয়মিত রোগী দেখছেন। জনবল সঙ্কটসহ এক্সরে মেশিন সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।