সোনারগাঁয়ে লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেছেন, আদি বৈচিত্র্যকে সারাদেশসহ বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছে সরকার। বর্তমান সরকার সংস্কৃতি বান্ধব সরকার, বাংলা সংস্কৃতি ধরে রাখা, তার যথাযথ চর্চা ও রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন। এই প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সরকার কাজ শুরু করেছে। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, এক সময় মসলিন তৈরির জন্য সোনারগাঁ ছিল উপযুক্ত স্থান। বিলুপ্ত সেই মসলিনের হাত ধরে বর্তমানে সোনারগাঁয়ে জামদানি তৈরি হচ্ছে। যা দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। জামদানির কারণে সোনারগাঁকে আন্তর্জাতিক কারুশিল্প শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা যদি কাজগুলো সঠিকভাবে ঠিক সময়ে সমাপ্ত করতে পারি তাহলে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য সোনারগাঁয়ে সাংস্কৃতিক জোন তৈরিসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এই লোকজ উৎসব আমাদের সংস্কৃতির বড় একটি অংশ, আমাদের চিত্ত ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই এই মেলার লক্ষ্য। ইতোমধ্যে ১৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শিল্পাচার্যের জন্মভূমি ময়মনসিংহে শিল্পাচার্যের সংগ্রহশালার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা চাই ময়মনসিংহের সঙ্গে সোনারগাঁয়ের যোগসূত্র ঘটাতে।

বর্তমানে সংস্কৃতির উন্নয়নে যা যা করা দরকার সরকার তাই করবে। মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আহমেদ উল্লাহর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল এমপি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুর রহমান খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আজিুল ইসলাম মুকুল ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি প্রমুখ। মেলা ও উৎসবের উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন। ফাউন্ডেশ কর্তৃপক্ষ জানায়, এবারের মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারু শিল্পীদের পণ্য বিক্রির জন্য ১৫৪টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলার পাশাপাশি লোকজ মঞ্চে প্রতিদিন বাউলগান, কবিগান, পালাগান, জারি-সারি ও ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া গান এবং লোক জীবন প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। এছাড়াও মেলায় দেশের লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন দৃশ্যাবলী স্থানীয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৬৪ জন কারুশিল্পী আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদের শিল্পকর্ম তৈরি প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য। এদের মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ ও মাগুরার শেলাই শিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, চট্টগ্রামের তালপাতার হাতপাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের কাঠের পুতুল, কাঠের কারুশিল্প ও নকশী কাঁথা, সিলেটের শীতল পাটি, ধামরাইয়ের তামা কাঁসা ও পিতলের কারুশিল্প, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কারু পণ্য ও টাঙ্গাইলের বাঁশের কারুশিল্প। লোকজ উৎসব প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এবং চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১ মাঘ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

সোনারগাঁয়ে লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব

প্রতিনিধি, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)

image

সোনারগাঁয়ে কারুমেলা উদ্বোধন শেষে স্টল ঘুরে দেখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী-সংবাদ

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেছেন, আদি বৈচিত্র্যকে সারাদেশসহ বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছে সরকার। বর্তমান সরকার সংস্কৃতি বান্ধব সরকার, বাংলা সংস্কৃতি ধরে রাখা, তার যথাযথ চর্চা ও রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন। এই প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সরকার কাজ শুরু করেছে। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, এক সময় মসলিন তৈরির জন্য সোনারগাঁ ছিল উপযুক্ত স্থান। বিলুপ্ত সেই মসলিনের হাত ধরে বর্তমানে সোনারগাঁয়ে জামদানি তৈরি হচ্ছে। যা দেশ-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। জামদানির কারণে সোনারগাঁকে আন্তর্জাতিক কারুশিল্প শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা যদি কাজগুলো সঠিকভাবে ঠিক সময়ে সমাপ্ত করতে পারি তাহলে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য সোনারগাঁয়ে সাংস্কৃতিক জোন তৈরিসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এই লোকজ উৎসব আমাদের সংস্কৃতির বড় একটি অংশ, আমাদের চিত্ত ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই এই মেলার লক্ষ্য। ইতোমধ্যে ১৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শিল্পাচার্যের জন্মভূমি ময়মনসিংহে শিল্পাচার্যের সংগ্রহশালার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা চাই ময়মনসিংহের সঙ্গে সোনারগাঁয়ের যোগসূত্র ঘটাতে।

বর্তমানে সংস্কৃতির উন্নয়নে যা যা করা দরকার সরকার তাই করবে। মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. আহমেদ উল্লাহর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল এমপি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুর রহমান খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আজিুল ইসলাম মুকুল ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি প্রমুখ। মেলা ও উৎসবের উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন। ফাউন্ডেশ কর্তৃপক্ষ জানায়, এবারের মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারু শিল্পীদের পণ্য বিক্রির জন্য ১৫৪টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলার পাশাপাশি লোকজ মঞ্চে প্রতিদিন বাউলগান, কবিগান, পালাগান, জারি-সারি ও ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া গান এবং লোক জীবন প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। এছাড়াও মেলায় দেশের লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন দৃশ্যাবলী স্থানীয় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৬৪ জন কারুশিল্পী আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদের শিল্পকর্ম তৈরি প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য। এদের মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ ও মাগুরার শেলাই শিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, চট্টগ্রামের তালপাতার হাতপাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের কাঠের পুতুল, কাঠের কারুশিল্প ও নকশী কাঁথা, সিলেটের শীতল পাটি, ধামরাইয়ের তামা কাঁসা ও পিতলের কারুশিল্প, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কারু পণ্য ও টাঙ্গাইলের বাঁশের কারুশিল্প। লোকজ উৎসব প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এবং চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।