সাবেক চেয়ারম্যানের শত কোটি টাকার সম্পদ

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির চৌধুরী। সুনামগঞ্জে ও ঢাকায় একাধিক বাড়ি, ফ্লাট, বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআরসহ এনামুল কবির চৌধুরীর ৯০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এছাড়া নামে বেনামে আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকার অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে তার এতো সম্পদ অর্জনের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুদকের বিশেষ (অনু. ও ত.) শাখা ২-এর উপ পরিচালক মোহা. নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

দুদক সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল কবির ইমনকে সরকারি কাজের কমিশন আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎপূর্বক জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে থেকে সুমানগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সাম্পদক এনামুল কবির এর বিরুদ্ধে সরকারি দলের পদবী ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া, সুনামগঞ্জ শহরে বিলাসবহুল বাড়ি, ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট, ব্যাংকে এফ.ডি.আরসহ নামে বেনামে ৯০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া পাওয়ার গ্রিডের পরিচালক হিসেবে বিভিন্ন প্রকল্প হতে কমিশন বাণিজ্য এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে (চেয়ারম্যান) ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করার অভিযোগ সংক্রান্তে গতকাল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলে গতকাল তার হাজির হওয়ার দিন ছিল। হাজির হিয়ে গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বক্তব্য দিয়েছেন। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তাকে দুদকে হাজির হতে তাকে চিঠি দেয়া হয়। দুদকে হাজির হওয়ার সময় তাকে নিজের ও স্ত্রী, ছেলে, মেয়েসহ তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের (যদি থাকে) ফটোকপি সঙ্গে আনতে বলা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে এসে এনামুল কবির দাবি করেন আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক অর্জনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য একটি মহল দুদকে আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ করেছে। আমার বাবা সুনামগঞ্জের এমপি ছিলেন। তার সুনাম আছে। তার ছেলে হিসেবে আমিও সততার সঙ্গে রাজনীতি করছি। বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির সংশ্লিষ্ট আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা একজন সাংবাদিকের সহায়তা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি জানি দুদকের অনুসন্ধানে সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ডেপুটি রেজিস্ট্রার, সহকারি রেজিস্ট্রার ও উপপরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী অনুসন্ধানাধীন অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আরেফুল আযিম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইঞ্জিনিয়ার মো. হাফিজুর রহমান, এবং উপ-পরিচালক শেখ মুহাম্মদ মুফাজ্জল হুসাইনকে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে অনীয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে দুর্নীতির মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজগে নিজেরা লাভবান হয়েছেন। অবৈধ সম্পদ গড়েছেন।

এদিকে ঋণের টাকা বিতরণ না করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভুয়া ঋণ বন্ড তৈরি করে গ্রাহকের নামে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগে নোয়াখালী সুবর্ণচর শাখার সোনালী বাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক মো. নুরনবী চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে দুদক টিম। এর অগে নোয়াখালী সমন্বিত জেলা দুদকের শাখায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয় (মামলা নং ১)। পরে নোয়াখালীর পুলিশ কেজি স্কুলের সামনে থেকে গ্রেফতার করেছে দুদক।

দুদক জানায়, গ্রাহকদের ঋণের আবেদন সংগ্রহপূর্বক আবেদনকারীদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ও স্বাক্ষর নিয়ে প্রকৃত গ্রাহকদের অনুকূলে ঋণের টাকা বিতরণ না করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভুয়া ঋণ বন্ড তৈরি করে মোট ৫১ জন গ্রাহকের নামে সর্বমোট ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক নুরনবী চৌধুরী। ওই টাকা গ্রাহককে না দিয়ে নিজেই তুলে আত্মসাৎ করেন। দ-বিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২০ , ২ মাঘ ১৪২৬, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ

সাবেক চেয়ারম্যানের শত কোটি টাকার সম্পদ

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির চৌধুরী। সুনামগঞ্জে ও ঢাকায় একাধিক বাড়ি, ফ্লাট, বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআরসহ এনামুল কবির চৌধুরীর ৯০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এছাড়া নামে বেনামে আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকার অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে তার এতো সম্পদ অর্জনের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুদকের বিশেষ (অনু. ও ত.) শাখা ২-এর উপ পরিচালক মোহা. নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

দুদক সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল কবির ইমনকে সরকারি কাজের কমিশন আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎপূর্বক জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে থেকে সুমানগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সাম্পদক এনামুল কবির এর বিরুদ্ধে সরকারি দলের পদবী ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া, সুনামগঞ্জ শহরে বিলাসবহুল বাড়ি, ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট, ব্যাংকে এফ.ডি.আরসহ নামে বেনামে ৯০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া পাওয়ার গ্রিডের পরিচালক হিসেবে বিভিন্ন প্রকল্প হতে কমিশন বাণিজ্য এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে (চেয়ারম্যান) ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করার অভিযোগ সংক্রান্তে গতকাল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলে গতকাল তার হাজির হওয়ার দিন ছিল। হাজির হিয়ে গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বক্তব্য দিয়েছেন। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তাকে দুদকে হাজির হতে তাকে চিঠি দেয়া হয়। দুদকে হাজির হওয়ার সময় তাকে নিজের ও স্ত্রী, ছেলে, মেয়েসহ তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের (যদি থাকে) ফটোকপি সঙ্গে আনতে বলা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে এসে এনামুল কবির দাবি করেন আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক অর্জনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য একটি মহল দুদকে আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ করেছে। আমার বাবা সুনামগঞ্জের এমপি ছিলেন। তার সুনাম আছে। তার ছেলে হিসেবে আমিও সততার সঙ্গে রাজনীতি করছি। বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির সংশ্লিষ্ট আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা একজন সাংবাদিকের সহায়তা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি জানি দুদকের অনুসন্ধানে সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ডেপুটি রেজিস্ট্রার, সহকারি রেজিস্ট্রার ও উপপরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী অনুসন্ধানাধীন অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আরেফুল আযিম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইঞ্জিনিয়ার মো. হাফিজুর রহমান, এবং উপ-পরিচালক শেখ মুহাম্মদ মুফাজ্জল হুসাইনকে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে অনীয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে দুর্নীতির মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজগে নিজেরা লাভবান হয়েছেন। অবৈধ সম্পদ গড়েছেন।

এদিকে ঋণের টাকা বিতরণ না করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভুয়া ঋণ বন্ড তৈরি করে গ্রাহকের নামে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগে নোয়াখালী সুবর্ণচর শাখার সোনালী বাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক মো. নুরনবী চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে দুদক টিম। এর অগে নোয়াখালী সমন্বিত জেলা দুদকের শাখায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয় (মামলা নং ১)। পরে নোয়াখালীর পুলিশ কেজি স্কুলের সামনে থেকে গ্রেফতার করেছে দুদক।

দুদক জানায়, গ্রাহকদের ঋণের আবেদন সংগ্রহপূর্বক আবেদনকারীদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ও স্বাক্ষর নিয়ে প্রকৃত গ্রাহকদের অনুকূলে ঋণের টাকা বিতরণ না করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভুয়া ঋণ বন্ড তৈরি করে মোট ৫১ জন গ্রাহকের নামে সর্বমোট ১৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক নুরনবী চৌধুরী। ওই টাকা গ্রাহককে না দিয়ে নিজেই তুলে আত্মসাৎ করেন। দ-বিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।