ঢাকা সিটি নির্বাচন

ভোট ঘনিয়ে আসছে বাড়ছে উত্তাপ

পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে শঙ্কিত ভোটাররা

ঢাকার দুই সিটিতে ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে; নির্বাচনী উত্তাপ ততই বাড়ছে। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিশের অধিক ওয়ার্ডে এখনও ক্ষমতাসীনদের প্রার্থী-বিদ্রোহীরা মুখোমুখি অবস্থানে আছে। বেশিরভাগ ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলোতে ভোটের আগে পরিবেশ-পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন ভোটাররা।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ (ডিএসসিসি) সিটি করপোরেশনের সবগুলো কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রচারণার বাকি ৪ দিন। দুই সিটিতে দু’জন মেয়র এবং ১৬৮ জন কাউন্সিলর-সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৭শ’ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে আছেন। ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটির অর্ধ কোটিরও বেশি ভোটার ইভিএমে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ পাবেন।

এদিকে ভোটের তারিখ যত ঘনিয়ে আসছে, প্রচারণায় মেয়র-কাউন্সিলর ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। গতকাল, প্রচারণার ১৫তম দিন সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবেই পথসভা, গণসংযোগ করেছেন মেয়র প্রার্থীরা। কেউ সেবক হিসেবে, কেউ সন্তান হিসেবে, কেউ পুরাতন অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আবার কেউ পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে; নানা কৌশলে নিজের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। একে অন্যের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের প্রচারণায়ও নির্বাচনী উত্তাপ ফুটে উঠছে। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় হিসাব-নিকাশ মেলাতে শুরু করেছেন ভোটাররা। প্রার্থীদের নিয়ে এখন আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত তারা। প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি বিবেচনায় হিসাব মিলাতে শুরু করেছেন কাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।

গতকাল ঢাকার কয়েকটি ওয়ার্ড সরেজমিন পরিদর্শন ও কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন অধিকাংশ ওয়ার্ডে। এরমধ্যে অন্তত ২৫টি ওয়ার্ডের বিদ্রোহীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করবেন। এ নিয়ে ওয়ার্ডগুলোতে স্থানীয় নেতারা দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে গেছেন। এ কারণে, যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। গতকাল একাধিক ওয়ার্ডে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। কামরাঙ্গীরচরে তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বুধবার গভীর রাতে বাড্ডায় আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৯ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সংঘর্ষ : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪২নং ওয়ার্ডের বেরাইদে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছ। এতে উভয়পক্ষের নয়জন আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বাড্ডা থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (লাটিম মার্কা) এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্থানীয় সংসদ সদস্য রহমত উল্লাহর ভাগ্নে আইয়ুব আনছার মিন্টুর (ঘুড়ি মার্কা) সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। দুই পক্ষ একে অন্যের আত্মীয়। তবে নির্বাচনকে ঘিরে তাদের এক পক্ষ লাটিম ও অন্যপক্ষ ঘুড়ি প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালান। নির্বাচনী প্রচারণাকে ঘিরেই তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

তাপস : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নৌকার মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস গতকাল নারিন্দা এলাকার গড়িয়ার মঠ সংলগ্ন মোড় থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এদিন তিনি ৪০ ও ৪৫নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান। প্রচারণার সময় তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় অনেক খাল রয়েছে, যেগুলো দখলে রয়েছে। এই খালগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড দখলমুক্ত করতে পারেনি। আমরা সুন্দর ঢাকার আওতায় নিজস্ব উদ্যোগে এই খালগুলো উদ্ধার করে নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করব। আমাদের পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে অন্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সংরক্ষণ করব। আমরা সিটি করপোরেশন থেকে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত থাকব। ঐতিহ্যের ঢাকাকে পুনর্জীবিত করব। যেন বিশ্ববাসী পর্যটক হিসেবে এইসব ঐতিহাসিক স্থানে এসে উপভোগ করতে পারেন। আমরা ঢাকাবাসীর উন্নয়নের ৩০ বছর মেয়াদি যে মহাপরিকল্পনা দিয়েছি তা ঢাকাবাসী ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। আমি আশা করছি ঢাকার উন্নয়নে ঢাকাবাসী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সেবক হিসেবে কাজ করার রায় দেবেন। একজন সেবক হিসেবে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করতে চান বলেও প্রচারণার সময় উল্লেখ করেন।

ইশরাক : দক্ষিণে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন গতকাল ফরিদাবাদ এলাকা থেকে প্রচারণা শুরু করেন। এদিন তিনি ৩৯, ৪০, ৪৫ ও ৪৬নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান। প্রচারণার সময় তিনি বলেন, আগামী ২৭ জানুয়ারি আমি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করব। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিকল্পনামাফিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সেবামূলক কাজের নানা পরিকল্পনা সুস্পষ্টভাবে ইশতেহারে উল্লেখ করা হবে। নগরবাসীদের নানা সমস্যা, সমন্বয়হীনতার কারণে নানা ভোগান্তি, মশক নিধন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা কথা আমি বলে আসছি। ইশতেহারে এসবের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। আমি পুরান ঢাকার সন্তান হিসেবে আপনাদের সেবা করতে চাই। চারদিকে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার শুরু হয়েছে। দুঃশাসনের বিপক্ষে গণজোয়ার শুরু হয়েছে। এই দুঃশাসনের বিপক্ষে আপনারা আগামী ১ ফেব্রুয়ারি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে যাবেন এবং ধানের শীষে ভোট দেবেন।

আতিকুল : উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম গতকাল অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা চালিয়েছেন। গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠে একটি প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচে অংশ নেয়ার পাশাপাশি একটি ব্যবসায়ী সম্মেলনেও যোগ দেন তিনি। এসব অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমাদের যুব সমাজ নানা কারণে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। আমাদের সমাজে এমন কোন ঘর নাই যেখানে কেউ না কেউ এ সমস্যায় আক্রান্ত নয়। আমরা হয়ত লোকলজ্জার ভয়ে সমাজের সামনে বিষয়টি আনি না। খেলাধুলা থাকলে যুবসমাজ এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে বলে আমি মনে করি। আপনাদের ভোটে, জনগণের ভোটে ইনশাল্লাহ আগামী ফেব্রুয়ারিতে নৌকা মার্কায় জয়যুক্ত হলে আমি কথা দিতে পারি মাঠগুলোকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনব। খুশি হবেন যে আমরা ২৪টি পার্ক এবং মাঠের কাজে হাত দিয়েছি, এসব মাঠের মধ্যে কয়েকটি হবে মাল্টিপারপাস। সেখানে ক্রিকেট ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলা করা যাবে। নির্বাচিত হলে কর্মজীবী মানুষের জন্য রাতে খেলার ব্যবস্থাও করব। আমি আমার ৯ মাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আপনাদের সেবা করতে চাই।

তাবিথ : উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল গতকাল বাড্ডা লুৎফুন টাওয়ারের সামনে থেকে প্রচারণা শুরু করেন। এদিন তিনি বনশ্রীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান। প্রচারনার সময় তিনি বলেন, ৩২৫ কিলোমিটার হেঁটে মা-বোনের কা?ছে দোয়া চেয়েছি। এই শহরে অনেক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হ?য়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করা হ?বে। তারা চেষ্টা করছে ভোট থেকে আমাদের সরিয়ে দেয়ার জন্য। এজন্য তারা হামলাও করছে। কিন্তু ভোটের মাঠ থেকে আমরা পিছু হটব না। প্রচারণার সময় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আনিসুলের কবরে ইশরাক-তাবিথ : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের কবর জিয়ারত করেছেন সিটি নির্বাচনে বিএনপির দুই প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। গতকাল তাবিথ আর ইশরাক বনানী কবরস্থানে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সেখানে আনিসুল হকের কবরও তারা জিয়ারত করেন। প্রয়াত মেয়রের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাতেও অংশ নেন বিএনপির দুই প্রার্থী। ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথম নির্বাচনে উত্তরের মেয়র পদে চমক দেখান ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে আসা আনিসুল হক। ভোটের দিন দুপুরে কারচুপির অভিযোগ তুলে সেই নির্বাচন বর্জন করেন তাবিথ। মেয়র হওয়ার পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আনিসুল হক।

শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১১ মাঘ ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ঢাকা সিটি নির্বাচন

ভোট ঘনিয়ে আসছে বাড়ছে উত্তাপ

পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে শঙ্কিত ভোটাররা

ফয়েজ আহমেদ তুষার ও ইমদাদুল হাসান রাতুল

image

ঢাকার দুই সিটিতে ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে; নির্বাচনী উত্তাপ ততই বাড়ছে। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিশের অধিক ওয়ার্ডে এখনও ক্ষমতাসীনদের প্রার্থী-বিদ্রোহীরা মুখোমুখি অবস্থানে আছে। বেশিরভাগ ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলোতে ভোটের আগে পরিবেশ-পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন ভোটাররা।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ (ডিএসসিসি) সিটি করপোরেশনের সবগুলো কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রচারণার বাকি ৪ দিন। দুই সিটিতে দু’জন মেয়র এবং ১৬৮ জন কাউন্সিলর-সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৭শ’ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে আছেন। ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটির অর্ধ কোটিরও বেশি ভোটার ইভিএমে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ পাবেন।

এদিকে ভোটের তারিখ যত ঘনিয়ে আসছে, প্রচারণায় মেয়র-কাউন্সিলর ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। গতকাল, প্রচারণার ১৫তম দিন সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবেই পথসভা, গণসংযোগ করেছেন মেয়র প্রার্থীরা। কেউ সেবক হিসেবে, কেউ সন্তান হিসেবে, কেউ পুরাতন অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আবার কেউ পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে; নানা কৌশলে নিজের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। একে অন্যের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের প্রচারণায়ও নির্বাচনী উত্তাপ ফুটে উঠছে। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় হিসাব-নিকাশ মেলাতে শুরু করেছেন ভোটাররা। প্রার্থীদের নিয়ে এখন আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত তারা। প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি বিবেচনায় হিসাব মিলাতে শুরু করেছেন কাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।

গতকাল ঢাকার কয়েকটি ওয়ার্ড সরেজমিন পরিদর্শন ও কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন অধিকাংশ ওয়ার্ডে। এরমধ্যে অন্তত ২৫টি ওয়ার্ডের বিদ্রোহীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করবেন। এ নিয়ে ওয়ার্ডগুলোতে স্থানীয় নেতারা দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে গেছেন। এ কারণে, যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। গতকাল একাধিক ওয়ার্ডে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। কামরাঙ্গীরচরে তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বুধবার গভীর রাতে বাড্ডায় আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৯ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সংঘর্ষ : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪২নং ওয়ার্ডের বেরাইদে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছ। এতে উভয়পক্ষের নয়জন আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বাড্ডা থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (লাটিম মার্কা) এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্থানীয় সংসদ সদস্য রহমত উল্লাহর ভাগ্নে আইয়ুব আনছার মিন্টুর (ঘুড়ি মার্কা) সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। দুই পক্ষ একে অন্যের আত্মীয়। তবে নির্বাচনকে ঘিরে তাদের এক পক্ষ লাটিম ও অন্যপক্ষ ঘুড়ি প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালান। নির্বাচনী প্রচারণাকে ঘিরেই তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

তাপস : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নৌকার মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস গতকাল নারিন্দা এলাকার গড়িয়ার মঠ সংলগ্ন মোড় থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এদিন তিনি ৪০ ও ৪৫নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান। প্রচারণার সময় তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় অনেক খাল রয়েছে, যেগুলো দখলে রয়েছে। এই খালগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড দখলমুক্ত করতে পারেনি। আমরা সুন্দর ঢাকার আওতায় নিজস্ব উদ্যোগে এই খালগুলো উদ্ধার করে নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন করব। আমাদের পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে অন্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সংরক্ষণ করব। আমরা সিটি করপোরেশন থেকে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত থাকব। ঐতিহ্যের ঢাকাকে পুনর্জীবিত করব। যেন বিশ্ববাসী পর্যটক হিসেবে এইসব ঐতিহাসিক স্থানে এসে উপভোগ করতে পারেন। আমরা ঢাকাবাসীর উন্নয়নের ৩০ বছর মেয়াদি যে মহাপরিকল্পনা দিয়েছি তা ঢাকাবাসী ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। আমি আশা করছি ঢাকার উন্নয়নে ঢাকাবাসী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সেবক হিসেবে কাজ করার রায় দেবেন। একজন সেবক হিসেবে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করতে চান বলেও প্রচারণার সময় উল্লেখ করেন।

ইশরাক : দক্ষিণে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন গতকাল ফরিদাবাদ এলাকা থেকে প্রচারণা শুরু করেন। এদিন তিনি ৩৯, ৪০, ৪৫ ও ৪৬নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান। প্রচারণার সময় তিনি বলেন, আগামী ২৭ জানুয়ারি আমি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করব। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিকল্পনামাফিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সেবামূলক কাজের নানা পরিকল্পনা সুস্পষ্টভাবে ইশতেহারে উল্লেখ করা হবে। নগরবাসীদের নানা সমস্যা, সমন্বয়হীনতার কারণে নানা ভোগান্তি, মশক নিধন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা কথা আমি বলে আসছি। ইশতেহারে এসবের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। আমি পুরান ঢাকার সন্তান হিসেবে আপনাদের সেবা করতে চাই। চারদিকে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার শুরু হয়েছে। দুঃশাসনের বিপক্ষে গণজোয়ার শুরু হয়েছে। এই দুঃশাসনের বিপক্ষে আপনারা আগামী ১ ফেব্রুয়ারি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে যাবেন এবং ধানের শীষে ভোট দেবেন।

আতিকুল : উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম গতকাল অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা চালিয়েছেন। গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠে একটি প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচে অংশ নেয়ার পাশাপাশি একটি ব্যবসায়ী সম্মেলনেও যোগ দেন তিনি। এসব অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমাদের যুব সমাজ নানা কারণে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। আমাদের সমাজে এমন কোন ঘর নাই যেখানে কেউ না কেউ এ সমস্যায় আক্রান্ত নয়। আমরা হয়ত লোকলজ্জার ভয়ে সমাজের সামনে বিষয়টি আনি না। খেলাধুলা থাকলে যুবসমাজ এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে বলে আমি মনে করি। আপনাদের ভোটে, জনগণের ভোটে ইনশাল্লাহ আগামী ফেব্রুয়ারিতে নৌকা মার্কায় জয়যুক্ত হলে আমি কথা দিতে পারি মাঠগুলোকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনব। খুশি হবেন যে আমরা ২৪টি পার্ক এবং মাঠের কাজে হাত দিয়েছি, এসব মাঠের মধ্যে কয়েকটি হবে মাল্টিপারপাস। সেখানে ক্রিকেট ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলা করা যাবে। নির্বাচিত হলে কর্মজীবী মানুষের জন্য রাতে খেলার ব্যবস্থাও করব। আমি আমার ৯ মাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আপনাদের সেবা করতে চাই।

তাবিথ : উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল গতকাল বাড্ডা লুৎফুন টাওয়ারের সামনে থেকে প্রচারণা শুরু করেন। এদিন তিনি বনশ্রীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান। প্রচারনার সময় তিনি বলেন, ৩২৫ কিলোমিটার হেঁটে মা-বোনের কা?ছে দোয়া চেয়েছি। এই শহরে অনেক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হ?য়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করা হ?বে। তারা চেষ্টা করছে ভোট থেকে আমাদের সরিয়ে দেয়ার জন্য। এজন্য তারা হামলাও করছে। কিন্তু ভোটের মাঠ থেকে আমরা পিছু হটব না। প্রচারণার সময় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আনিসুলের কবরে ইশরাক-তাবিথ : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের কবর জিয়ারত করেছেন সিটি নির্বাচনে বিএনপির দুই প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। গতকাল তাবিথ আর ইশরাক বনানী কবরস্থানে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সেখানে আনিসুল হকের কবরও তারা জিয়ারত করেন। প্রয়াত মেয়রের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাতেও অংশ নেন বিএনপির দুই প্রার্থী। ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথম নির্বাচনে উত্তরের মেয়র পদে চমক দেখান ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে আসা আনিসুল হক। ভোটের দিন দুপুরে কারচুপির অভিযোগ তুলে সেই নির্বাচন বর্জন করেন তাবিথ। মেয়র হওয়ার পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আনিসুল হক।