বেপরোয়া মাটি ব্যবসায়ীরা ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের ফেলু মোল্লারপাড়া গ্রামে অবৈধভাবে এস্কেভেটর দিয়ে জোরপূর্বক মাটি কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে ওই গ্রামটি বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জমির মালিক ও স্থানীয়রা একাধিকবার বাধা দিয়েও মাটি খেকোদের রোধ করতে পারেনি।

জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলটি পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত হওয়ায়, প্রতিবছর শতশত পরিবার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে। অপরদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন যে, মাটি খেকো চক্রটি কয়েক বছর ধরে ফসলি জমি মাটি কেটে গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে বলে জানান তারা। স্থানীয় রহমান খান অভিযোগ করে বলেন, মাটি আনা নেয়ার সময় আশপাশের পরিবেশ ধুলোয় আচ্ছন্ন হয়ে যায় বাড়ির উঠানে বসে থাকা যায় না।

স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন যে, ওই চক্রটি বিভিন্ন প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় এই ব্যবসা করে থাকে প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। এলাকাবাসী বলেন, এই ফসলি জমি কেটে ফেলাতে যেমন ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে অন্য দিকে নদী ভাঙনের হুমকিতে পড়ছে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার বিভিন্ন গ্রাম। নাম প্রকাশে না শর্তে সংশ্লিষ্ট এলাকর অনেকেই বলেন যে মাটি কাটা চক্রটি এতোই শক্তিশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করেনা জীবনের ভয়ে। স্থানীয় ফরমান শেখ জানান, ২ সপ্তাহ আগে আমার নিজের জমিতে আমাকে না জানিয়ে স্থানীয় বেলায়েত, খোকন, ফারুক, ওহাবসহ কয়েকজন খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটা শুরু করে। আমি বাঁধা দিলে তখন তারা চলে যায়। আবার দুইদিন ধরে আমার জমিতে তারা জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কোন বাঁধাই তারা মানতে নারাজ।

স্থানীয় আ. সালাম মোল্লাসহ অনেকেই জানান, গত বছর বর্ষায় ভয়াবহ নদী ভাঙন হয়। এ অবস্থায় গ্রামটি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ে। এই শুষ্ক মৌসুমে এখানে মাটি খনন করা হলে আগামী বছর হয়ত এই গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতির মধ্যে গ্রামের অন্তত ২শ পরিবারকে ঝুকিতে ফেলে অবৈধভাবে মাটি খনন করা হচ্ছে। এটা বন্ধ না হলে আগামী বর্ষায় গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সরকারি খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে একাধিক খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে লোড করা হচ্ছে। এর মাত্র কয়েকশ গজ দূরে মূল পদ্মা নদী। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভেসে গেলেও বর্তমানে সেখানে হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ। এখান থেকে কাটা মাটি ট্রাকে করে পরিবহনের জন্য করা হয়েছে অস্থায়ী রাস্তা। এ সময় সেখানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকটি ট্রাক দ্রুতগতিতে পালিয়ে যায়। আটক করা হয় দুইটি খনন যন্ত্র ও একটি ট্রাক।

গ্রেফতার করা হয় ৬ জনকে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কিয়ামউদ্দিন পাড়া গ্রামের জয়নাল মোল্লার ছেলে ফারুক মোল্লা (৩০), উত্তর দৌলতদিয়া ৬নং ওয়ার্ডের তারক আলীর ছেলে বেলায়েত মণ্ডল (৫০), সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়া গ্রামের ইমরান হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৩), রাজবাড়ী সদর উপজেলার চর খানখানাপুর গ্রামের আক্কাছ মোল্লার ছেলে লিটন মোল্লা (২৭), মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার বর্ধমানকান্দি গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে রবিউল আওয়াল (২২), ফরিদপুর সদর উপজেলার আড়োয়াডাঙ্গি গ্রামের ইউছুফ খানের ছেলে জসিম খান (৩১)। এদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন।

দণ্ডপ্রাপ্ত বেলায়েত হোসেন দাবে করেন, জমির মালিকদের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে মাটি কিনে তা খনন যন্ত্র দিয়ে কাটা হচ্ছিল। জোর জবরদস্তি করে কারও মাটি কাটা হয়নি। তিনি আরও বলেন, গত বর্ষায় জমি-জমা ভেঙ্গে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন তারা জমির মাটি বিক্রি করে কিছু নগদ টাকা হাতে পাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সরকারী খাস জমি অথবা মালিকানাধীন জমিতে ইচ্ছে মত মাটি খনন করা আইনত অপরাধ। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে খনন কাজ বন্ধ করা সহ একটি ট্রাক, দুইটি এক্সকাভেটর (খনন যন্ত্র) জব্দ করা হয়। এছাড়া এই বেআইনী কাজে জড়িত থাকার দায়ে ৬ জনকে দণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

image

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : পদ্মাপাড়ের ফেলুমোল্লারপাড়া গ্রামে এস্কেভেটরে এভাবেই কাটা হচ্ছে মাটি -সংবাদ

আরও খবর
ফুলপুর এলএসডির ওসির বিরুদ্ধে ধান সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ
রাজাপুরে ছোট ভাইয়ের কোপে বড় ভাই নিহত
৪ ইটভাটা জরিমানা ১ লাখ ৬০ হাজার
ইজারাদারের সুবিধায় নিরাপদ নৌযান সি-ট্রাকের তলা পরিবর্তন
কেরানীগঞ্জে নারীর মরদেহ উত্তোলন
কলমাকান্দায় ৬০টি ভারতীয় গরু নিলাম সরকার পেল ২৮ লাখ
নওগাঁয় আলুর বাম্পার ফলন ৪ লাখ টন উৎপাদনের প্রত্যাশা
সেনবাগে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ডাকাত সর্দার হত
সালথায় স্কুল কমিটি দ্বন্দ্বে প্রধান শিক্ষক পরিবারের ওপর হামলার অভিযোগ
তারাকান্দায় জমি বিবাদে হত ১
বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল নবম শ্রেণীর ছাত্রী

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০ , ১৬ মাঘ ১৪২৬, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪১

বেপরোয়া মাটি ব্যবসায়ীরা ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী

শেখ রাজীব, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

image

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : পদ্মাপাড়ের ফেলুমোল্লারপাড়া গ্রামে এস্কেভেটরে এভাবেই কাটা হচ্ছে মাটি -সংবাদ

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের ফেলু মোল্লারপাড়া গ্রামে অবৈধভাবে এস্কেভেটর দিয়ে জোরপূর্বক মাটি কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে ওই গ্রামটি বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জমির মালিক ও স্থানীয়রা একাধিকবার বাধা দিয়েও মাটি খেকোদের রোধ করতে পারেনি।

জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলটি পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত হওয়ায়, প্রতিবছর শতশত পরিবার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে। অপরদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন যে, মাটি খেকো চক্রটি কয়েক বছর ধরে ফসলি জমি মাটি কেটে গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে বলে জানান তারা। স্থানীয় রহমান খান অভিযোগ করে বলেন, মাটি আনা নেয়ার সময় আশপাশের পরিবেশ ধুলোয় আচ্ছন্ন হয়ে যায় বাড়ির উঠানে বসে থাকা যায় না।

স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন যে, ওই চক্রটি বিভিন্ন প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় এই ব্যবসা করে থাকে প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। এলাকাবাসী বলেন, এই ফসলি জমি কেটে ফেলাতে যেমন ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে অন্য দিকে নদী ভাঙনের হুমকিতে পড়ছে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার বিভিন্ন গ্রাম। নাম প্রকাশে না শর্তে সংশ্লিষ্ট এলাকর অনেকেই বলেন যে মাটি কাটা চক্রটি এতোই শক্তিশালী যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করেনা জীবনের ভয়ে। স্থানীয় ফরমান শেখ জানান, ২ সপ্তাহ আগে আমার নিজের জমিতে আমাকে না জানিয়ে স্থানীয় বেলায়েত, খোকন, ফারুক, ওহাবসহ কয়েকজন খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটা শুরু করে। আমি বাঁধা দিলে তখন তারা চলে যায়। আবার দুইদিন ধরে আমার জমিতে তারা জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কোন বাঁধাই তারা মানতে নারাজ।

স্থানীয় আ. সালাম মোল্লাসহ অনেকেই জানান, গত বছর বর্ষায় ভয়াবহ নদী ভাঙন হয়। এ অবস্থায় গ্রামটি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ে। এই শুষ্ক মৌসুমে এখানে মাটি খনন করা হলে আগামী বছর হয়ত এই গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতির মধ্যে গ্রামের অন্তত ২শ পরিবারকে ঝুকিতে ফেলে অবৈধভাবে মাটি খনন করা হচ্ছে। এটা বন্ধ না হলে আগামী বর্ষায় গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সরকারি খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে একাধিক খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে লোড করা হচ্ছে। এর মাত্র কয়েকশ গজ দূরে মূল পদ্মা নদী। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভেসে গেলেও বর্তমানে সেখানে হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ। এখান থেকে কাটা মাটি ট্রাকে করে পরিবহনের জন্য করা হয়েছে অস্থায়ী রাস্তা। এ সময় সেখানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকটি ট্রাক দ্রুতগতিতে পালিয়ে যায়। আটক করা হয় দুইটি খনন যন্ত্র ও একটি ট্রাক।

গ্রেফতার করা হয় ৬ জনকে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কিয়ামউদ্দিন পাড়া গ্রামের জয়নাল মোল্লার ছেলে ফারুক মোল্লা (৩০), উত্তর দৌলতদিয়া ৬নং ওয়ার্ডের তারক আলীর ছেলে বেলায়েত মণ্ডল (৫০), সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়া গ্রামের ইমরান হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৩), রাজবাড়ী সদর উপজেলার চর খানখানাপুর গ্রামের আক্কাছ মোল্লার ছেলে লিটন মোল্লা (২৭), মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার বর্ধমানকান্দি গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে রবিউল আওয়াল (২২), ফরিদপুর সদর উপজেলার আড়োয়াডাঙ্গি গ্রামের ইউছুফ খানের ছেলে জসিম খান (৩১)। এদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন।

দণ্ডপ্রাপ্ত বেলায়েত হোসেন দাবে করেন, জমির মালিকদের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে মাটি কিনে তা খনন যন্ত্র দিয়ে কাটা হচ্ছিল। জোর জবরদস্তি করে কারও মাটি কাটা হয়নি। তিনি আরও বলেন, গত বর্ষায় জমি-জমা ভেঙ্গে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন তারা জমির মাটি বিক্রি করে কিছু নগদ টাকা হাতে পাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সরকারী খাস জমি অথবা মালিকানাধীন জমিতে ইচ্ছে মত মাটি খনন করা আইনত অপরাধ। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে খনন কাজ বন্ধ করা সহ একটি ট্রাক, দুইটি এক্সকাভেটর (খনন যন্ত্র) জব্দ করা হয়। এছাড়া এই বেআইনী কাজে জড়িত থাকার দায়ে ৬ জনকে দণ্ড প্রদান করা হয়েছে।