হামলা-সংঘর্ষ ককটেল বিস্ফোরণ

রেহাই পাননি সাংবাদিকও

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, হামলা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ এবং দলের বিদ্রোহী তাদের সমর্থকদের এবং বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে এ হামলা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল নির্বাচনী সহিংসতা থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকরাও। সর্বশেষ নয়াপল্টনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে অনেক স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলেও তারা ছিল নিরব। আবার তাদের সামনে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সড়কের পাশ দিয়ে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল যাচ্ছিল। তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষ থেকেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি জামিল হাসান জানান, নির্বাচন পরবর্তী দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। নয়াপল্টন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

ভোটগ্রহণের শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আবুল বাশার ও বিদ্রোহী মুন্সি কামরুজ্জামান কাজলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল বাশারের লোকজন বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুজ্জামান কাজলকে মারধর করে। পরে তাকে পুলিশের গাড়িতে করে হাসপাতালে নেয়া হয়। পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ভোটগ্রহণের শেষে দুই পক্ষের প্রার্থীর মধ্যেই উচ্চবাক্য হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এতে কামরুজ্জামান আহত হলে তাকে পুলিশ হাসপাতালে পাঠায়। অন্য পক্ষকেও সরিয়ে দেয়া হয়।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বকশিবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ৮টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। প্রায় ২০ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই কেন্দ্রে আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী ওমর বিন আবদাল আজিজ তামিম ও তার সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটের দিকেবিএনপির প্রার্থী শাহেদা মোরশেদের সমর্থকরা নাজিম উদ্দিন রোড দিয়ে কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। পরে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মঈনুল ইসলাম নিজের ভোট দিতে গিয়েছিলেন নয়াটোলা মাদ্রাসায়। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়ে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সেই লাইন না এগোনোয় সামনে গিয়ে কারণ জানতে চান তিনি। গেটে অবস্থানরত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। কেন্দ্রের আশপাশে আর না আসার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন ওই নেতারা। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রকৌশলী তৈমুর রেজা খোকনের নেতাকর্মীদের এমন ব্যবহারে হতাশা প্রকাশ করে মঈনুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে ভোটকেন্দ্রগুলোতে এ কারণেই ভোটাররা যেতে চান না। যাদের ভোট ওরা নিশ্চিত পাবে, শুধু তাদেরই কেন্দ্রে যেতে দেয়া হচ্ছে। অন্যদের লাইনে আটকে রাখা হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রাজধানীর বনশ্রীর বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলে ভোট শুরু হওয়ার পর পরই বিএনপির পোলিং এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ওই কেন্দ্রে গিয়ে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ডিএনসিসির ইব্রাহিমপুর এলাকার ১৬নং ওয়ার্ডের ব্রাইটডন কেন্দ্রে ভোট শুরু হতে না হতেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান রাব্বির লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এতে এক নারীসহ দু’জন গুরুতর আহত হন, আর ১৪ জন স্থানীয় হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে অভিযোগ হাবিবুরের। উত্তর সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান তার এজেন্টদের নিয়ে নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে গেলে ভেতরে ঢোকার সময় তাদের বাধা দেন ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আফসার উদ্দিন খানের লোকজন। কিন্তু বাধা উপেক্ষা করে মোস্তাফিজুর রহমান তার এজেন্টদের নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে আফসার উদ্দিন খানের লোকজন তাদের হাত দিয়ে ধাক্কা দেন। একপর্যায়ে পুলিশের সামনেই মোস্তাফিজুর রহমানকে মারধর করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সাংবাদিকদের ওপর হামলা, খবর সংগ্রহে বাধা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জাফরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে অস্ত্র মহড়ার ছবি তুলতে গিয়ে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্যাডার বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান সুমন নামে এক সাংবাদিক। ক্যাডাররা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ওই সাংবাদিককে জখম করে। গুরুত্বর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একাধিক সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা এসব হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঢাকা উত্তরের মোহাম্মদপুর ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের জাফরাবাদ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের খোকনের সমর্থকরা অস্ত্র নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছিল। আগামী নিউজ নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ক্রাইম রিপোর্টার মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ছবি তোলেন। ছবি তোলার সময় কাউন্সিলর প্রার্থী খোকনের সমর্থকরা দেখে ফেলে এবং ছবি তোলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুমনকে কোপাতে থাকে। এ সময় তারা ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়েও সুমনের মাথায় আঘাত করে। ব্যাপক রক্তক্ষরণ হওয়ায় ঘটনাস্থলে অচেতন হয়ে পড়েন সুমন। ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তারা এগিয়ে আসেননি। পরে সহকর্মীরা সুমনকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আলোকিত সময়ের সাংবাদিক আজমী আনোয়ার জানান, সাদেক খান রোডের একটি ভোটকেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হচ্ছিল। খবর পেয়ে সুমন সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে যায়। ওই সময় জাফরাবাদ এলাকার সাদেক খান রোডে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী খোকনের সমর্থকরা ২০-৩০ জনের একটি দল নিয়ে শোডাউন করছিলেন। সুমন সেই ছবি তুললে তারা সুমনকে আক্রমণ করে। এদিকে মোহাম্মদপুরে আরও কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সমকাল, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ কয়েক পত্রিকার সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের হামলার শিকার হন। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণের গেন্ডারিয়া এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ওই এলাকার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রিয়াদের নেতৃত্বে একটি ইংরেজি দৈনিকের ক্রাইম রিপোর্টার নুরুল আলম জাহাঙ্গীরকে লাঞ্চিত করা হয়। তাকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধে করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়। পরে মোবাইলে তোলা ছবি ডিলিট করে দেয়া হয়। পুলিশের সামনে এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এগিয়ে আসেনি। পরে এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে উদ্ধার করে। এদিকে, নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সংবাদকর্মীই নানা ধরনের বাধার মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সারাবাংলার কর্মী রাজনীন ফারজানা নামের এক সাংবাদিক রোষানলে পড়েন। তিনি বলেন, ‘বাড্ডা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আমরা কয়েকজন সংবাদকর্মী দাঁড়িয়ে তথ্য আদান-প্রদান করছিলাম। এ সময় ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা (এএসআই দেলোয়ার) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন ১০ মিনিটের বেশি সেখানে থাকা যাবে না। এর জবাবে আমি ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে এ ধরনের কোন নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আপনি মহিলা মানুষ, আপনি কেন কথা বলেন?’ ভোটারদের অসুবিধা হচ্ছে জানিয়ে এএসআই দেলোয়ার আমাদের চলে যেতে বলেন। অথচ ওই সময় সেখানে কোন ভোটারই ছিল না। একপর্যায়ে আমরা ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হই। পরিবর্তন ডটকমের ফটো সাংবাদিক ওসমান গনি বেলা সোয়া ১১টা নাগাদ মারধরের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, টিকাটুলি কামরুননেছা উচ্চবিদ্যালয়ে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছিল। এ সময় আমি ছবি নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ২০/২৫ জন মানুষ আমার ওপর চড়াও হন। তারা আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। তারা আমার মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা কেড়ে নেন। পরে সেখানে উপস্থিত অন্য সংবাদকর্মীরা আমাকে তাদের হাত থেকে বাঁচান। এ সময় তাদের অনুরোধে আমার মোবাইল ও ক্যামেরা ফেরত দেয়া হলেও তারা আমার সব ছবি আর ভিডিও ডিলিট করে দেন। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় খবর সংগ্রহের সময় মারাত্মকভাবে আহত হন বার্তাসংস্থা প্রেস বাংলা এজেন্সি পিবিএর বিশেষ প্রতিনিধি জিসাদ ইকবাল। সাংবাদিক জিসাদ জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে নিকুঞ্জের জান-ই-আলম সরকার উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইসহাক মিয়ার সমর্থকদের হাতে তিনি মারধরের শিকার হয়েছেন। ওই কেন্দ্রে ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়ার পর ভোটারদের বের করে দিয়ে শিশুদের দিয়ে ভোট দেয়া হচ্ছিল। এ ঘটনা ক্যামেরাবন্দী করতে গেলে বাধা দেয়া হয়। একপর্যায়ে তার ওপর হামলা করা হয়। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন ও তার ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। পরে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রাজধানী টিকাটুলি কামরুননেছা? উচ্চবিদ্যালয়ে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়ার ছবি তোলার সময় পরিবর্তন ডটকমের ফটো সাংবাদিক ওসমান গনিকে মারধর করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তার মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা কেড়ে নেয়া হয়েছে। ডিএসিসির খবর সংগ্রহের সময় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন সাংবাদিক জিসাদ ইকবাল। তিনি বার্তাসংস্থা প্রেস বাংলা এজেন্সি-পিবিএ’র বিশেষ প্রতিনিধি। তবে সিসি টিভির ফুটেজ দেখে সাংবাদিকদের ওপর হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক।

ঢামেক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৬ জন : ঢামেক হাসপাতাল পুলিশবক্সের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সকাল-দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলায় সাংবাদিকসহ প্রায় ১৬ জন আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগই ইট-পাটকেলের আঘাত পেয়েছেন। এছাড়া দু’জনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। রাজধানীর ডেমরা, তেজগাঁও নাখালপাড়া, কাঁঠালবাগান, মোহাম্মদপুর ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকার এসব ঘটনায় আহতরা চিকিৎসা নিয়েছেন।

রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১৯ মাঘ ১৪২৬, ৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ভোটের পর নয়াপল্টন

হামলা-সংঘর্ষ ককটেল বিস্ফোরণ

রেহাই পাননি সাংবাদিকও

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, হামলা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ এবং দলের বিদ্রোহী তাদের সমর্থকদের এবং বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে এ হামলা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গতকাল নির্বাচনী সহিংসতা থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকরাও। সর্বশেষ নয়াপল্টনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে অনেক স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলেও তারা ছিল নিরব। আবার তাদের সামনে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সড়কের পাশ দিয়ে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল যাচ্ছিল। তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষ থেকেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি জামিল হাসান জানান, নির্বাচন পরবর্তী দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। নয়াপল্টন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

ভোটগ্রহণের শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আবুল বাশার ও বিদ্রোহী মুন্সি কামরুজ্জামান কাজলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল বাশারের লোকজন বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুজ্জামান কাজলকে মারধর করে। পরে তাকে পুলিশের গাড়িতে করে হাসপাতালে নেয়া হয়। পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ভোটগ্রহণের শেষে দুই পক্ষের প্রার্থীর মধ্যেই উচ্চবাক্য হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এতে কামরুজ্জামান আহত হলে তাকে পুলিশ হাসপাতালে পাঠায়। অন্য পক্ষকেও সরিয়ে দেয়া হয়।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বকশিবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপির প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ৮টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। প্রায় ২০ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই কেন্দ্রে আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী ওমর বিন আবদাল আজিজ তামিম ও তার সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটের দিকেবিএনপির প্রার্থী শাহেদা মোরশেদের সমর্থকরা নাজিম উদ্দিন রোড দিয়ে কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। পরে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মঈনুল ইসলাম নিজের ভোট দিতে গিয়েছিলেন নয়াটোলা মাদ্রাসায়। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়ে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সেই লাইন না এগোনোয় সামনে গিয়ে কারণ জানতে চান তিনি। গেটে অবস্থানরত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। কেন্দ্রের আশপাশে আর না আসার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন ওই নেতারা। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রকৌশলী তৈমুর রেজা খোকনের নেতাকর্মীদের এমন ব্যবহারে হতাশা প্রকাশ করে মঈনুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে ভোটকেন্দ্রগুলোতে এ কারণেই ভোটাররা যেতে চান না। যাদের ভোট ওরা নিশ্চিত পাবে, শুধু তাদেরই কেন্দ্রে যেতে দেয়া হচ্ছে। অন্যদের লাইনে আটকে রাখা হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রাজধানীর বনশ্রীর বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলে ভোট শুরু হওয়ার পর পরই বিএনপির পোলিং এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ওই কেন্দ্রে গিয়ে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ডিএনসিসির ইব্রাহিমপুর এলাকার ১৬নং ওয়ার্ডের ব্রাইটডন কেন্দ্রে ভোট শুরু হতে না হতেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান রাব্বির লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এতে এক নারীসহ দু’জন গুরুতর আহত হন, আর ১৪ জন স্থানীয় হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে অভিযোগ হাবিবুরের। উত্তর সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান তার এজেন্টদের নিয়ে নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে গেলে ভেতরে ঢোকার সময় তাদের বাধা দেন ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আফসার উদ্দিন খানের লোকজন। কিন্তু বাধা উপেক্ষা করে মোস্তাফিজুর রহমান তার এজেন্টদের নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে আফসার উদ্দিন খানের লোকজন তাদের হাত দিয়ে ধাক্কা দেন। একপর্যায়ে পুলিশের সামনেই মোস্তাফিজুর রহমানকে মারধর করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সাংবাদিকদের ওপর হামলা, খবর সংগ্রহে বাধা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জাফরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে অস্ত্র মহড়ার ছবি তুলতে গিয়ে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্যাডার বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান সুমন নামে এক সাংবাদিক। ক্যাডাররা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ওই সাংবাদিককে জখম করে। গুরুত্বর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একাধিক সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা এসব হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঢাকা উত্তরের মোহাম্মদপুর ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের জাফরাবাদ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকের খোকনের সমর্থকরা অস্ত্র নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছিল। আগামী নিউজ নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ক্রাইম রিপোর্টার মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ছবি তোলেন। ছবি তোলার সময় কাউন্সিলর প্রার্থী খোকনের সমর্থকরা দেখে ফেলে এবং ছবি তোলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুমনকে কোপাতে থাকে। এ সময় তারা ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়েও সুমনের মাথায় আঘাত করে। ব্যাপক রক্তক্ষরণ হওয়ায় ঘটনাস্থলে অচেতন হয়ে পড়েন সুমন। ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তারা এগিয়ে আসেননি। পরে সহকর্মীরা সুমনকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আলোকিত সময়ের সাংবাদিক আজমী আনোয়ার জানান, সাদেক খান রোডের একটি ভোটকেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হচ্ছিল। খবর পেয়ে সুমন সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে যায়। ওই সময় জাফরাবাদ এলাকার সাদেক খান রোডে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী খোকনের সমর্থকরা ২০-৩০ জনের একটি দল নিয়ে শোডাউন করছিলেন। সুমন সেই ছবি তুললে তারা সুমনকে আক্রমণ করে। এদিকে মোহাম্মদপুরে আরও কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সমকাল, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ কয়েক পত্রিকার সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের হামলার শিকার হন। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণের গেন্ডারিয়া এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ওই এলাকার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রিয়াদের নেতৃত্বে একটি ইংরেজি দৈনিকের ক্রাইম রিপোর্টার নুরুল আলম জাহাঙ্গীরকে লাঞ্চিত করা হয়। তাকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধে করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়। পরে মোবাইলে তোলা ছবি ডিলিট করে দেয়া হয়। পুলিশের সামনে এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এগিয়ে আসেনি। পরে এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে উদ্ধার করে। এদিকে, নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সংবাদকর্মীই নানা ধরনের বাধার মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সারাবাংলার কর্মী রাজনীন ফারজানা নামের এক সাংবাদিক রোষানলে পড়েন। তিনি বলেন, ‘বাড্ডা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আমরা কয়েকজন সংবাদকর্মী দাঁড়িয়ে তথ্য আদান-প্রদান করছিলাম। এ সময় ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা (এএসআই দেলোয়ার) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন ১০ মিনিটের বেশি সেখানে থাকা যাবে না। এর জবাবে আমি ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে এ ধরনের কোন নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আপনি মহিলা মানুষ, আপনি কেন কথা বলেন?’ ভোটারদের অসুবিধা হচ্ছে জানিয়ে এএসআই দেলোয়ার আমাদের চলে যেতে বলেন। অথচ ওই সময় সেখানে কোন ভোটারই ছিল না। একপর্যায়ে আমরা ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হই। পরিবর্তন ডটকমের ফটো সাংবাদিক ওসমান গনি বেলা সোয়া ১১টা নাগাদ মারধরের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, টিকাটুলি কামরুননেছা উচ্চবিদ্যালয়ে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছিল। এ সময় আমি ছবি নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ২০/২৫ জন মানুষ আমার ওপর চড়াও হন। তারা আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। তারা আমার মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা কেড়ে নেন। পরে সেখানে উপস্থিত অন্য সংবাদকর্মীরা আমাকে তাদের হাত থেকে বাঁচান। এ সময় তাদের অনুরোধে আমার মোবাইল ও ক্যামেরা ফেরত দেয়া হলেও তারা আমার সব ছবি আর ভিডিও ডিলিট করে দেন। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় খবর সংগ্রহের সময় মারাত্মকভাবে আহত হন বার্তাসংস্থা প্রেস বাংলা এজেন্সি পিবিএর বিশেষ প্রতিনিধি জিসাদ ইকবাল। সাংবাদিক জিসাদ জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে নিকুঞ্জের জান-ই-আলম সরকার উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইসহাক মিয়ার সমর্থকদের হাতে তিনি মারধরের শিকার হয়েছেন। ওই কেন্দ্রে ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়ার পর ভোটারদের বের করে দিয়ে শিশুদের দিয়ে ভোট দেয়া হচ্ছিল। এ ঘটনা ক্যামেরাবন্দী করতে গেলে বাধা দেয়া হয়। একপর্যায়ে তার ওপর হামলা করা হয়। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন ও তার ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। পরে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রাজধানী টিকাটুলি কামরুননেছা? উচ্চবিদ্যালয়ে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়ার ছবি তোলার সময় পরিবর্তন ডটকমের ফটো সাংবাদিক ওসমান গনিকে মারধর করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তার মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা কেড়ে নেয়া হয়েছে। ডিএসিসির খবর সংগ্রহের সময় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন সাংবাদিক জিসাদ ইকবাল। তিনি বার্তাসংস্থা প্রেস বাংলা এজেন্সি-পিবিএ’র বিশেষ প্রতিনিধি। তবে সিসি টিভির ফুটেজ দেখে সাংবাদিকদের ওপর হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক।

ঢামেক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৬ জন : ঢামেক হাসপাতাল পুলিশবক্সের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সকাল-দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলায় সাংবাদিকসহ প্রায় ১৬ জন আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগই ইট-পাটকেলের আঘাত পেয়েছেন। এছাড়া দু’জনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। রাজধানীর ডেমরা, তেজগাঁও নাখালপাড়া, কাঁঠালবাগান, মোহাম্মদপুর ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকার এসব ঘটনায় আহতরা চিকিৎসা নিয়েছেন।