গড়াই নদীর উজানে একদিকে চলছে খনন কাজ অন্য দিকে নদীর উৎসমুখ থেকে ৩০ কিলোমিটার ভাটিতে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার হিজলাবট থেকে গনেশপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গড়াই নদীর পানি শুকিয়ে জেগে উঠেছে ডুবুচর। নদীর বিভিন্ন স্থানে পানির শুকিয়ে যাওয়ায় পায়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছে উপজেলার নদী বিচ্ছিন্ন ওসমানপুর ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ। গড়াই নদী খননের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হলেও কুষ্টিয়ার খোকসা জানিপুর বাজার খেয়াঘটে পানি কমে যাওয়ায় জেগে ওঠা চরের উপর বাঁশ ও নৌকা দিয়ে সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে সাধারন মানুষ ।
জানা গেছে, এর আগে কয়েক দফা গড়াই খনন করেও তেমন কোনো সুফল মেলেনি। সঠিক পরিকল্পনার অভাব, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, অতিরিক্ত পলি পড়া ও অনিয়মের কারণে গড়াই খনন প্রকল্প নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ।
গড়াই নদীর নাব্য রক্ষায় ২০ বছর ধরে শুধু টাকার ছড়াছড়ি চলেছে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। খনন কাজে ১ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা ব্যয় হলেও গড়াইয়ের বুকজুড়ে শুধু বালুচর। এরপরও সরকার চলতি অর্থ বছরে গড়াই খনন ও তীর সংরক্ষণের জন্য ৫৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। চলতি বছর জুন মাসে গড়াই নদী খননের কাজ শেষ হবে বলে আশা করেছেন গড়াই নদী খনন কাজে সংশ্লিষ্ট কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
গড়াই খনন প্রকল্প নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে নানা অভিযোগ ওঠেছে। ২০১৩ সালে কুষ্টিয়া জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় অভিযোগ উঠার পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন নদী খনন পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি নানা অনিয়ম দেখতে পান এবং সেগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। এরপর মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব তদন্ত শেষে খনন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আবদুল বাতেনকে ওএসডি এবং প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদ আহম্মেদকে প্রত্যাহার করে নেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মিঠা পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস পদ্মার শাখা নদী গড়াই। ১৯৯৭ সালে নদীটি প্রথম খনন করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সে সময় ৪২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় কোদাল দিয়ে নদী খনন করা হলেও খননের নামে টাকা হরিলুট করা হয়। ১৯৯৯ সালে ২৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে নদী খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে সরকারের অর্থায়নে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে গড়াই খনন কাজ হাতে নেয়া হয়। ৯৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০০৯-১০ সালে ৪ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। পরবর্তী সময়ে দরপত্রের মাধ্যমে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড’ নদী খননের দায়িত্ব পায়। ২ বছরের চুক্তিতে কোম্পানিটি ২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে গড়াই নদীর উৎস মুখ তালবাড়িয়া থেকে খোকসা জানিপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার ভাটিতে খনন কাজ শেষ করে। পরের ২ বছর পাউবোর নিজস্ব প্রকৌশলীরা এ খনন কাজ তদারকি করেন। এরপর ফের ২০১৫-১৭ সালে ৩ বছরের একটি খনন প্রকল্প নেয়া হয়।
সর্বশেষ এ বছর নতুন করে ৫৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ খনন কাজের সঙ্গে সাত কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজও রয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ চলছে। গড়াই নদীর উজানে খনন কাজ পরিচালিত হলেও কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার হিজলাবট থেকে শুরু করে গনেষপুর পর্যন্ত নদী শুকিয়ে জেগে উঠেছে চর।
সরেজমিনে শুকিয়ে যাওয়া গড়াই নদী দেখতে গিয়ে নদীর কোন কোন স্থানে সরু চ্যানেল দিয়ে সামান্য পানি প্রবাহিত হতে দেখ গেছে। গড়াই নদী খনন কাজে সার্বক্ষণিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানজির আহম্মেদ বলেন, বর্তমান প্রকল্পের আওতায় আমরা গড়াই নদীর উৎসমুখ থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীগর্ভ থেকে ৬০ লক্ষ ঘনমিটার পলি অপসারণ করব। আমরা আমাদের নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণ করছি। এই কাজ শেষ হলে পরবর্তীতে ৬ কিলোমিটার পরবর্তী অংশের ব্যপারে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আমি যেহেতু বর্তমান ড্রেজিং এর কাজের দায়িত্বে আছি, নদীর এই ৬ কিলোমিটার ড্রেজিং এর বিষয়ে বলতে পারব।
বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২২ মাঘ ১৪২৬, ১০ জমাদিউল সানি ১৪৪১
প্রতিনিধি, খোকসা (কুষ্টিয়া)
গড়াই নদীর উজানে একদিকে চলছে খনন কাজ অন্য দিকে নদীর উৎসমুখ থেকে ৩০ কিলোমিটার ভাটিতে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার হিজলাবট থেকে গনেশপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গড়াই নদীর পানি শুকিয়ে জেগে উঠেছে ডুবুচর। নদীর বিভিন্ন স্থানে পানির শুকিয়ে যাওয়ায় পায়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছে উপজেলার নদী বিচ্ছিন্ন ওসমানপুর ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ। গড়াই নদী খননের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হলেও কুষ্টিয়ার খোকসা জানিপুর বাজার খেয়াঘটে পানি কমে যাওয়ায় জেগে ওঠা চরের উপর বাঁশ ও নৌকা দিয়ে সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে সাধারন মানুষ ।
জানা গেছে, এর আগে কয়েক দফা গড়াই খনন করেও তেমন কোনো সুফল মেলেনি। সঠিক পরিকল্পনার অভাব, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, অতিরিক্ত পলি পড়া ও অনিয়মের কারণে গড়াই খনন প্রকল্প নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ।
গড়াই নদীর নাব্য রক্ষায় ২০ বছর ধরে শুধু টাকার ছড়াছড়ি চলেছে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। খনন কাজে ১ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা ব্যয় হলেও গড়াইয়ের বুকজুড়ে শুধু বালুচর। এরপরও সরকার চলতি অর্থ বছরে গড়াই খনন ও তীর সংরক্ষণের জন্য ৫৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। চলতি বছর জুন মাসে গড়াই নদী খননের কাজ শেষ হবে বলে আশা করেছেন গড়াই নদী খনন কাজে সংশ্লিষ্ট কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
গড়াই খনন প্রকল্প নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে নানা অভিযোগ ওঠেছে। ২০১৩ সালে কুষ্টিয়া জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় অভিযোগ উঠার পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন নদী খনন পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি নানা অনিয়ম দেখতে পান এবং সেগুলো চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। এরপর মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সচিব তদন্ত শেষে খনন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আবদুল বাতেনকে ওএসডি এবং প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদ আহম্মেদকে প্রত্যাহার করে নেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মিঠা পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস পদ্মার শাখা নদী গড়াই। ১৯৯৭ সালে নদীটি প্রথম খনন করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সে সময় ৪২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় কোদাল দিয়ে নদী খনন করা হলেও খননের নামে টাকা হরিলুট করা হয়। ১৯৯৯ সালে ২৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে নদী খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে সরকারের অর্থায়নে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে গড়াই খনন কাজ হাতে নেয়া হয়। ৯৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০০৯-১০ সালে ৪ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। পরবর্তী সময়ে দরপত্রের মাধ্যমে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড’ নদী খননের দায়িত্ব পায়। ২ বছরের চুক্তিতে কোম্পানিটি ২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে গড়াই নদীর উৎস মুখ তালবাড়িয়া থেকে খোকসা জানিপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার ভাটিতে খনন কাজ শেষ করে। পরের ২ বছর পাউবোর নিজস্ব প্রকৌশলীরা এ খনন কাজ তদারকি করেন। এরপর ফের ২০১৫-১৭ সালে ৩ বছরের একটি খনন প্রকল্প নেয়া হয়।
সর্বশেষ এ বছর নতুন করে ৫৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ খনন কাজের সঙ্গে সাত কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজও রয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ চলছে। গড়াই নদীর উজানে খনন কাজ পরিচালিত হলেও কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার হিজলাবট থেকে শুরু করে গনেষপুর পর্যন্ত নদী শুকিয়ে জেগে উঠেছে চর।
সরেজমিনে শুকিয়ে যাওয়া গড়াই নদী দেখতে গিয়ে নদীর কোন কোন স্থানে সরু চ্যানেল দিয়ে সামান্য পানি প্রবাহিত হতে দেখ গেছে। গড়াই নদী খনন কাজে সার্বক্ষণিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানজির আহম্মেদ বলেন, বর্তমান প্রকল্পের আওতায় আমরা গড়াই নদীর উৎসমুখ থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীগর্ভ থেকে ৬০ লক্ষ ঘনমিটার পলি অপসারণ করব। আমরা আমাদের নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণ করছি। এই কাজ শেষ হলে পরবর্তীতে ৬ কিলোমিটার পরবর্তী অংশের ব্যপারে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আমি যেহেতু বর্তমান ড্রেজিং এর কাজের দায়িত্বে আছি, নদীর এই ৬ কিলোমিটার ড্রেজিং এর বিষয়ে বলতে পারব।