টাঙ্গাইল মেডিকেলে অর্ধশত কোটি টাকা লুট

অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটার নামে অর্ধশত কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই অর্থ বছরে এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বাধীন টিম এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে। অনুসন্ধান টিমের সদস্য হিসেবে কাজ করছে উপ-সহকারী পরিচালক শাহিদুল ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান।

দুদক সূত্র জানায়, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মালামাল সরবরাহের কাজ দেয়া হয়। এরপর মালামাল সরবরাহ না করেই বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্ধশত কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকাল লি. এবং মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লি. এর মালিক স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঠিকাদার মো. জাহের উদ্দিন এ মালামাল সরবরাহের কাজ পান। ২০১৭-২০১৮ এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও দরপত্র আহ্বান দেখিয়ে মালামাল সরবরাহের কাজ দেয়া হয় ঠিকাদার জাহের উদ্দিনকে। দরপর্তের শর্ত অনুযায়ী সেখানে বিদেশি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের কথা থাকলেও বাংলাদেশি নিম্নমানের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে ৩০ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোন মালামাল সরবরাহ না করেই ২০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুদকে করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহের জন্য কলেজের প্রজেস্ট ডিরেক্টর ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আলীর সহয়তায় বাজারদরের চেয়ে দশগুণ বেশি দরে ঠিকাদার জাহের উদ্দিনের অফিসে বসে একটি স্টিমেট (চাহিদা) তৈরি করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঠিকাদার জাহের উদ্দিনের ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেশি মূল্য দেখিয়ে টেন্ডারে অংশ নেয়। ২ অর্থ বছরে ৮০ কোটি টাকার বিদেশি চিকিৎসাসরঞ্জামসহ বিভিন্ন মালামাল এবং ২০ কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ না করেই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আলীর সহযোগিতায় ভুয়া বিল ভাউচার উপস্থাপন করে ২০ কোটি টাকার বিল উঠিয়ে নেয়া হয় ২০১৯ সালের জুন মাসের অর্থবছরে। দুদকের করা অভিযোগে বলা হয়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোন রোগী না থাকা এবং মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু না হওয়া সত্ত্বেও ১০ কোটি টাকার ডায়ালাইসিস মেশিন সরবরাহ দেখিয়ে ওই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুদকের করা অভিযোগে বলা হয়, বিদেশি চিকিৎসা সরঞ্জামের পরিবর্তে নিম্ন মানের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে বিদেশি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের বিল উত্তোলন করা এবং মালামাল সরবরাহ না করে বিল তুলে নেয়াসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনায় অডিট করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে। কিন্তু অডিট কমিটি মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে প্রতিবেদন দেয় সরবরাহ করা মালামাল ঠিক আছে।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিমের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ এবং ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারের হাসপাতালের মালামাল এবং দরপত্র আহ্বান সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সরবরাহের জন্য হাসপাতালের পরিচালককে চিঠি দেয়া হবে। এ বিষয়ে যাবতীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। দুদক টিম সরেজমিনও মালামাল পরিদর্শনে যাবে। মালামাল সরবরাহকারী ঠিকাদার জাহের উদ্দিনের নামে এর আগে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে জাহের উদ্দিন দুর্নীতির মামলায় জেলে রয়েছে।

উল্লেখ স্বাস্থ্য অধিদফতরের যাবতীয় টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লুটপাট, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ স্বাস্থ্য সেক্টরে নানা দুর্নীতির বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বেশ কয়েকজন পরিচালক, চিকিৎসক এবং কর্মচারীর নামেও মামলা হয়েছে। সাবেক ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএসদের দুদকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২২ মাঘ ১৪২৬, ১০ জমাদিউল সানি ১৪৪১

চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার নামে

টাঙ্গাইল মেডিকেলে অর্ধশত কোটি টাকা লুট

অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক

সাইফ বাবলু

টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটার নামে অর্ধশত কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই অর্থ বছরে এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বাধীন টিম এ বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে। অনুসন্ধান টিমের সদস্য হিসেবে কাজ করছে উপ-সহকারী পরিচালক শাহিদুল ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান।

দুদক সূত্র জানায়, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মালামাল সরবরাহের কাজ দেয়া হয়। এরপর মালামাল সরবরাহ না করেই বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্ধশত কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকাল লি. এবং মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লি. এর মালিক স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঠিকাদার মো. জাহের উদ্দিন এ মালামাল সরবরাহের কাজ পান। ২০১৭-২০১৮ এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও দরপত্র আহ্বান দেখিয়ে মালামাল সরবরাহের কাজ দেয়া হয় ঠিকাদার জাহের উদ্দিনকে। দরপর্তের শর্ত অনুযায়ী সেখানে বিদেশি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের কথা থাকলেও বাংলাদেশি নিম্নমানের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে ৩০ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোন মালামাল সরবরাহ না করেই ২০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুদকে করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহের জন্য কলেজের প্রজেস্ট ডিরেক্টর ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আলীর সহয়তায় বাজারদরের চেয়ে দশগুণ বেশি দরে ঠিকাদার জাহের উদ্দিনের অফিসে বসে একটি স্টিমেট (চাহিদা) তৈরি করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঠিকাদার জাহের উদ্দিনের ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেশি মূল্য দেখিয়ে টেন্ডারে অংশ নেয়। ২ অর্থ বছরে ৮০ কোটি টাকার বিদেশি চিকিৎসাসরঞ্জামসহ বিভিন্ন মালামাল এবং ২০ কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ না করেই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আলীর সহযোগিতায় ভুয়া বিল ভাউচার উপস্থাপন করে ২০ কোটি টাকার বিল উঠিয়ে নেয়া হয় ২০১৯ সালের জুন মাসের অর্থবছরে। দুদকের করা অভিযোগে বলা হয়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোন রোগী না থাকা এবং মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু না হওয়া সত্ত্বেও ১০ কোটি টাকার ডায়ালাইসিস মেশিন সরবরাহ দেখিয়ে ওই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুদকের করা অভিযোগে বলা হয়, বিদেশি চিকিৎসা সরঞ্জামের পরিবর্তে নিম্ন মানের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে বিদেশি চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের বিল উত্তোলন করা এবং মালামাল সরবরাহ না করে বিল তুলে নেয়াসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনায় অডিট করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে। কিন্তু অডিট কমিটি মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে প্রতিবেদন দেয় সরবরাহ করা মালামাল ঠিক আছে।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট টিমের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ এবং ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারের হাসপাতালের মালামাল এবং দরপত্র আহ্বান সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সরবরাহের জন্য হাসপাতালের পরিচালককে চিঠি দেয়া হবে। এ বিষয়ে যাবতীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। দুদক টিম সরেজমিনও মালামাল পরিদর্শনে যাবে। মালামাল সরবরাহকারী ঠিকাদার জাহের উদ্দিনের নামে এর আগে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে জাহের উদ্দিন দুর্নীতির মামলায় জেলে রয়েছে।

উল্লেখ স্বাস্থ্য অধিদফতরের যাবতীয় টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লুটপাট, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ স্বাস্থ্য সেক্টরে নানা দুর্নীতির বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বেশ কয়েকজন পরিচালক, চিকিৎসক এবং কর্মচারীর নামেও মামলা হয়েছে। সাবেক ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএসদের দুদকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।