জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস

এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া

৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পড়ব বই গড়ব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। এবার তৃতীয়বারের মতো উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিবসই গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও কোন কাজের অধিকতর গুরুত্ব বোঝাতে আমরা সুনির্দিষ্ট তারিখকে ‘বিশেষ দিবস’ হিসেবে আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন করি। তেমনই ৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর একটি পরিপত্র জারি করে। তাতে বলা হয়, সরকার ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ঘোষণা করেছে এবং উক্ত তারিখকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে উদযাপনের নিমিত্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘খ’ শ্রেণীভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলো যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করে।

গ্রিক শব্দ Libre থেকে `Library’ শব্দের উৎপত্তি। যার বাংলা অর্থ ‘গ্রন্থাগার’। গ্রন্থাগার হচ্ছে বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা-সাময়িকীসহ অডিও ভিজ্যুয়াল সামগ্রীর ভাণ্ডার, সংগ্রহশালা, সংরক্ষণাগার। পাঠক গ্রন্থাগারে বসে বই পড়ে থাকেন। শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পড়ার সামগ্রী বাড়িতেও নিতে পারেন। প্রবাদ আছে ‘একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য তার গ্রন্থাগার, মহাফেজখানা (আর্কাইভ/সংগ্রহশালা), জাদুঘর ধ্বংস করে দাও। ব্যস, আর কিছু লাগবে না।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রন্থাগার সম্পর্কে লিখেছেন- ‘এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়িয়া আছে।’ যে জাতির গ্রন্থাগার যত সমৃদ্ধ, সে জাতি তত উন্নত।

আমাদের দেশে ওপর থেকে চাপিয়ে না দিলে সৃজনশীল কোন কাজ সহজে হয় না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে (স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা) ‘একাডেমিক গ্রন্থাগার’ পরিচালনার নির্দেশনা জারি আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা প্রতিপালন হতে দেখা যায় না।

২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (শাখা-১৩) জনবল কাঠামো বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দশম) ও উচ্চ মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ) স্তরে সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্কুল-কলেজে পদটি এমপিওভুক্ত হলেও সমমানের মাদরাসায় করা হয়নি। এ বৈষম্যের অবসান জরুরি। এছাড়া সরকার ইতিমধ্যে ক্লাসরুটিনে ‘গ্রন্থাগার বিজ্ঞান’কে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দিলেও অনেক প্রতিষ্ঠান তা পালন করছে না। বিষয়টি ‘মনিটরিং’ করা দরকার। আমরা মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মতো দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টির দাবি জানিয়ে আসছি।

বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোকে টেকসই করার লক্ষ্যে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি : ১. বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলো ক, খ ও গ শ্রেণীভুক্ত করে স্থায়ী মঞ্জুরির আওতায় আনা। গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি ও পদটি এমপিওভুক্ত করে মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিকের সমান বেতন স্কেল দেয়া। ২. অনুদান প্রদানে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ চালু করা। বেসরকারি গ্রন্থাগার টিকিয়ে রাখতে এবং জ্ঞানভিত্তিক, অলোকিত, বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে এর বিকল্প নেই।

[লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি]

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২২ মাঘ ১৪২৬, ১০ জমাদিউল সানি ১৪৪১

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস

এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া

৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পড়ব বই গড়ব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। এবার তৃতীয়বারের মতো উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিবসই গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও কোন কাজের অধিকতর গুরুত্ব বোঝাতে আমরা সুনির্দিষ্ট তারিখকে ‘বিশেষ দিবস’ হিসেবে আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন করি। তেমনই ৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর একটি পরিপত্র জারি করে। তাতে বলা হয়, সরকার ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ঘোষণা করেছে এবং উক্ত তারিখকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে উদযাপনের নিমিত্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘খ’ শ্রেণীভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলো যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করে।

গ্রিক শব্দ Libre থেকে `Library’ শব্দের উৎপত্তি। যার বাংলা অর্থ ‘গ্রন্থাগার’। গ্রন্থাগার হচ্ছে বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা-সাময়িকীসহ অডিও ভিজ্যুয়াল সামগ্রীর ভাণ্ডার, সংগ্রহশালা, সংরক্ষণাগার। পাঠক গ্রন্থাগারে বসে বই পড়ে থাকেন। শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পড়ার সামগ্রী বাড়িতেও নিতে পারেন। প্রবাদ আছে ‘একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য তার গ্রন্থাগার, মহাফেজখানা (আর্কাইভ/সংগ্রহশালা), জাদুঘর ধ্বংস করে দাও। ব্যস, আর কিছু লাগবে না।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রন্থাগার সম্পর্কে লিখেছেন- ‘এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়িয়া আছে।’ যে জাতির গ্রন্থাগার যত সমৃদ্ধ, সে জাতি তত উন্নত।

আমাদের দেশে ওপর থেকে চাপিয়ে না দিলে সৃজনশীল কোন কাজ সহজে হয় না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে (স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা) ‘একাডেমিক গ্রন্থাগার’ পরিচালনার নির্দেশনা জারি আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা প্রতিপালন হতে দেখা যায় না।

২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (শাখা-১৩) জনবল কাঠামো বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দশম) ও উচ্চ মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ) স্তরে সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্কুল-কলেজে পদটি এমপিওভুক্ত হলেও সমমানের মাদরাসায় করা হয়নি। এ বৈষম্যের অবসান জরুরি। এছাড়া সরকার ইতিমধ্যে ক্লাসরুটিনে ‘গ্রন্থাগার বিজ্ঞান’কে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দিলেও অনেক প্রতিষ্ঠান তা পালন করছে না। বিষয়টি ‘মনিটরিং’ করা দরকার। আমরা মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মতো দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টির দাবি জানিয়ে আসছি।

বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোকে টেকসই করার লক্ষ্যে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি : ১. বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলো ক, খ ও গ শ্রেণীভুক্ত করে স্থায়ী মঞ্জুরির আওতায় আনা। গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি ও পদটি এমপিওভুক্ত করে মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিকের সমান বেতন স্কেল দেয়া। ২. অনুদান প্রদানে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ চালু করা। বেসরকারি গ্রন্থাগার টিকিয়ে রাখতে এবং জ্ঞানভিত্তিক, অলোকিত, বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে এর বিকল্প নেই।

[লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি]