বিভিন্ন দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তদন্তের দাবি শিক্ষক সংগঠনের

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ এর অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে নবগঠিত শিক্ষকদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের মাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য বুনিয়াদি কোর্সের নামে তার স্ত্রীর কাছে শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনতে বাধ্য করা নির্ধারিত সেলুন থেকে চুল কাটানোসহ বেশকিছু অভিযোগ এনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছে।

বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান। বক্তব্য রাখেন সদস্য সদস্য সচিব খায়রুল আলম সুমন, ড. তুহিন ওয়াদুদ। উপস্থিত ছিলেন অধিকার সুরক্ষা কমিটির সদস্য শিক্ষকরা। লিখিত অভিযোগে জানানো হয়, ২০১৭ সালে অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ উপাচার্য হিসেবে যোগদান করার পর থেকে রাষ্ট্রপতির দেয়া নিয়োগের শর্ত লঙ্ঘন করে ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তিনি নিজেই অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদের মধ্যে ৩টি অনুষদের ডিন ও একটি অনুষদের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একই অর্ধশতাধিক কোর্সের দায়িত্ব নিলেও কোন কোর্সই তিনি পড়ান না কিন্তু কোর্স পড়ানোর জন্য লাখ লাখ টাকা গ্রহণ করছেন। শুধু তাই নয় অনার্স মাস্টার্স কোর্সের ধারাবাহিক মূল্যায়ন কোর্সের পরীক্ষা গ্রহণ করান তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে। নিওয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি এবং এমফিল পর্যায়ে একটি সেশনেই তত্ত্বাবধায়ক হয়েছেন ১৪ জনের। এককভাবে এতজন গবেষককে একই সঙ্গে গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক থাকার কোন নজির নেই।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়েছে উপাচার্য নিজেও ক্যাম্পাসে আসেন না, রেজিস্ট্রারও একই পথ অনুসরণ করে তিনিও আসেন না। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলামকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকও করা হয়েছে কিন্তু আজ অবধি তিনি ক্যাম্পাসে থাকতে শুরু করেননি।

নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাচার্য সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে চলেছেন। নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সার্বিক কর্তৃত্ব স্বকেন্দ্রিক করতে তিনি ১০০ নম্বরের পরীক্ষা চালু করেছেন। তার ৬০ নম্বরের রচনা লিখিত পরীক্ষায় যে কোন বিভাগের হোক না কেন প্রশ্ন তিনি নিজেই করেন, নিজেই মূল্যায়ন করেন। তার পছন্দের প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় এমনভাবে নম্বর দেন যেন ভাইভা পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের মধ্যে যত নম্বরই দেয়া হোক না কেন তার প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তার পছন্দের প্রার্থী টিকে যায় এবং তাকেই নিয়োগ দেয়া হয়। উপাচার্য তার মা নীলুফা বেগমকে একাধিক নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করেছেন অথচ তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের আহ্বায়ক করেছেন তার একান্ত সচিব এবং সদস্য সচিব করেছেন তার পিএকে। এভাবেই তিনি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, উপাচার্য সদ্য নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ইউজিসির নিষেধ করার পরেও ফাউন্ডেশন কোর্স চালু করেছেন। যা ঢাকায় লিয়াজো অফিসে করেন। সেখানে কোর্সে অংশ নেয়াদের তার স্ত্রীর কাছে শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনতে বাধ্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের পড়ার জন্য অভিন্ন ব্লেজার শার্ট, টাই, প্যান্ট ও জুতা চালু করেছেন। এগুলো তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতে বাধ্য করা হয়। এমনকি নির্ধারিত সেলুন থেকে চুলও কাটতে হয়। শুধু তাই নয় শিক্ষক কর্মচারী কর্মকর্তা এমনকি সুইপার, ড্রাইভারসহ সবাইকে জার্নাল কিনতে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও আরও অনেক অভিযোগ উত্থাপন করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। শিক্ষকরা জানান, আগামী রোববার উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয় তাকে জানিয়ে এসব কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসার কথা বলা হবে। এরপর আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।

বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৩ মাঘ ১৪২৬, ১১ জমাদিউল সানি ১৪৪১

বেরোবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে

বিভিন্ন দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তদন্তের দাবি শিক্ষক সংগঠনের

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ এর অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে নবগঠিত শিক্ষকদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের মাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য বুনিয়াদি কোর্সের নামে তার স্ত্রীর কাছে শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনতে বাধ্য করা নির্ধারিত সেলুন থেকে চুল কাটানোসহ বেশকিছু অভিযোগ এনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছে।

বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান। বক্তব্য রাখেন সদস্য সদস্য সচিব খায়রুল আলম সুমন, ড. তুহিন ওয়াদুদ। উপস্থিত ছিলেন অধিকার সুরক্ষা কমিটির সদস্য শিক্ষকরা। লিখিত অভিযোগে জানানো হয়, ২০১৭ সালে অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ উপাচার্য হিসেবে যোগদান করার পর থেকে রাষ্ট্রপতির দেয়া নিয়োগের শর্ত লঙ্ঘন করে ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তিনি নিজেই অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদের মধ্যে ৩টি অনুষদের ডিন ও একটি অনুষদের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একই অর্ধশতাধিক কোর্সের দায়িত্ব নিলেও কোন কোর্সই তিনি পড়ান না কিন্তু কোর্স পড়ানোর জন্য লাখ লাখ টাকা গ্রহণ করছেন। শুধু তাই নয় অনার্স মাস্টার্স কোর্সের ধারাবাহিক মূল্যায়ন কোর্সের পরীক্ষা গ্রহণ করান তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে। নিওয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি এবং এমফিল পর্যায়ে একটি সেশনেই তত্ত্বাবধায়ক হয়েছেন ১৪ জনের। এককভাবে এতজন গবেষককে একই সঙ্গে গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক থাকার কোন নজির নেই।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়েছে উপাচার্য নিজেও ক্যাম্পাসে আসেন না, রেজিস্ট্রারও একই পথ অনুসরণ করে তিনিও আসেন না। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলামকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকও করা হয়েছে কিন্তু আজ অবধি তিনি ক্যাম্পাসে থাকতে শুরু করেননি।

নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাচার্য সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে চলেছেন। নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সার্বিক কর্তৃত্ব স্বকেন্দ্রিক করতে তিনি ১০০ নম্বরের পরীক্ষা চালু করেছেন। তার ৬০ নম্বরের রচনা লিখিত পরীক্ষায় যে কোন বিভাগের হোক না কেন প্রশ্ন তিনি নিজেই করেন, নিজেই মূল্যায়ন করেন। তার পছন্দের প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় এমনভাবে নম্বর দেন যেন ভাইভা পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের মধ্যে যত নম্বরই দেয়া হোক না কেন তার প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তার পছন্দের প্রার্থী টিকে যায় এবং তাকেই নিয়োগ দেয়া হয়। উপাচার্য তার মা নীলুফা বেগমকে একাধিক নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করেছেন অথচ তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের আহ্বায়ক করেছেন তার একান্ত সচিব এবং সদস্য সচিব করেছেন তার পিএকে। এভাবেই তিনি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, উপাচার্য সদ্য নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ইউজিসির নিষেধ করার পরেও ফাউন্ডেশন কোর্স চালু করেছেন। যা ঢাকায় লিয়াজো অফিসে করেন। সেখানে কোর্সে অংশ নেয়াদের তার স্ত্রীর কাছে শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনতে বাধ্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের পড়ার জন্য অভিন্ন ব্লেজার শার্ট, টাই, প্যান্ট ও জুতা চালু করেছেন। এগুলো তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতে বাধ্য করা হয়। এমনকি নির্ধারিত সেলুন থেকে চুলও কাটতে হয়। শুধু তাই নয় শিক্ষক কর্মচারী কর্মকর্তা এমনকি সুইপার, ড্রাইভারসহ সবাইকে জার্নাল কিনতে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও আরও অনেক অভিযোগ উত্থাপন করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। শিক্ষকরা জানান, আগামী রোববার উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয় তাকে জানিয়ে এসব কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসার কথা বলা হবে। এরপর আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।