‘জিপিএ-৫ এর দিকে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা বই পড়ার দিকে নয়’

শিক্ষার্থীরা এখন জিপিএ-৫’এর দিকে ঝুঁকছে। এজন্য তারা স্কুল-কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা, কোচিং, প্রাইভেটে বেশি সময় ব্যয় করছে। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে অন্য বই পড়ার ফুসরতই মিলছে না তাদের। এর বাইরে বাকি সময় তারা মোবাইল-ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। তারা এখন আগের মতো বই কিনছে না। তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রসারের ফলে সবাই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে; মোবাইল, কম্পিউটারে তারা বেশি সময় ব্যয় করছে। যারা গবেষণা করে, বইয়ের প্রতি যাদের ঝোঁক বেশি, তারাই কেবল বই কিনছে। আক্ষেপ করে সংবাদকে কথাগুলো বলছিলেন মিজান পাবলিশার্সের প্রকাশক আ.ন.ম মিজানুর রহমান পাটওয়ারী। গতকাল মেলা প্রাঙ্গণে আলাপচারিতায় বই পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমছে বলে জানান এই প্রকাশক।

মেলায় পাঠকদের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে মিজান বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রচিত এবং তাকে নিয়ে লিখিত বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ বেশি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমাদের প্রকাশনা থেকে ৫০টি নতুন বই বের হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টি ইতোমধ্যে স্টলে চলে এসেছে। বাকিগুলো মেলার বাকি সময়ে চলে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রাসেলকে নিয়ে রচিত বইগুলোও ভালো বিক্রি হচ্ছে। খেলাধুলা, গোয়েন্দা কাহিনী ও সায়েন্স ফিকশনের বইও ভালো বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, কম বয়সী পাঠকদের ঝোঁক সায়েন্স ফিকশন ও গোয়েন্দা কাহিনীর প্রতি বেশি বলে জানান আ.ন.ম মিজানুর রহমান।

মেলায় বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বইমেলার শুরুর দিকে পাঠকরা কম আসে। যারা আসেন, তারা ঘোরাঘুরির জন্যই আসেন। পছন্দ হলে দুয়েকটা বই কিনেন। তবে, ছুটির দিনে বই বিক্রির হারটা একটু বেশি থাকে। গত শুক্রবারে বই বিক্রি হয়েছে ভালো। আজ ছুটির দিন নয় বলে লোকসমাগম অনেক কম। এজন্য বিক্রিও কম। তবে, গত বছরের তুলনায় এবার লোকসমাগম বেশি বলে জানান মিজান। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

লেখকের চোখে :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেবেকা সুলতানা। এবারের বইমেলায় ‘কথা রেখেছি’ নামে তার লেখা প্রথম গল্পের বই বের হয়েছে। এছাড়া, গতবছর বইমেলায় ‘পরিচয় জানা হলো না’ নামে তার একটি কবিতার বই বের হয়েছিল। আ.ন.ম মিজানুর রহমান পাটওয়ারীর মতো তিনিও জিপিএ-৫’এর দিকে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়া মানেই সে খুব ভালো পড়াশোনা করেছে বা অনেক বেশি জানে এমন নয়। এখানে পিতা-মাতার ভূমিকা অনেক বেশি। কারণ, তারাই পারে পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে অন্য বই পড়তে তাদের সন্তানদের উৎসাহিত করতে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে রেবেকা সংবাদকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম বেশি সময় ব্যয় করছে। এটা নিশ্চয়ই ক্ষতিকর আমাদের জন্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয়ের জন্য দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় রাখা উচিৎ আমাদের। সর্বক্ষণ যদি একজন শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহারে কাটায়, তাহলে এর বাইরে যে একটি জগত আছে, তা তার অজানা থেকে যাবে। শিক্ষার্থীদের উচিত বই পড়ায় সময় বাড়ানো। বই পড়ার মাধ্যমে সে নিত্যনতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবে। কারণ, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।

বই রচনায় প্রেরণার বিষয়ে জানতে চাইলে রেবেকা বলেন, ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষার দুই মাস আগে আমার বাবা মারা যায়। এজন্য আমার পরীক্ষা খারাপ হয়। ফল প্রকাশিত হওয়ার পর আমাকে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের অনেক কথা শুনতে হয়েছে। তখন তাদের কিছু বলতে না পেরে আমি তা লিখে রাখতাম। পরবর্তীতে বন্ধুদের সহযোগিতায় ও পরামর্শে আমি গল্প লেখা শুরু করি, যা এ বছর বই আকারে বের হয়েছে। এই বইতে যে গল্পগুলো রয়েছে, তাতে গ্রাম থেকে উঠে আসা একটা মেয়ের জীবনের ধাপে ধাপে যেসব প্রতিবন্ধকতা, সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মেলার চতুর্থ দিন আমার বইটি বাজারে এসেছে। তারপর থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৭ মাঘ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

‘জিপিএ-৫ এর দিকে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা বই পড়ার দিকে নয়’

আবদুল্লাহ আল জোবায়ের

শিক্ষার্থীরা এখন জিপিএ-৫’এর দিকে ঝুঁকছে। এজন্য তারা স্কুল-কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা, কোচিং, প্রাইভেটে বেশি সময় ব্যয় করছে। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে অন্য বই পড়ার ফুসরতই মিলছে না তাদের। এর বাইরে বাকি সময় তারা মোবাইল-ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। তারা এখন আগের মতো বই কিনছে না। তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রসারের ফলে সবাই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে; মোবাইল, কম্পিউটারে তারা বেশি সময় ব্যয় করছে। যারা গবেষণা করে, বইয়ের প্রতি যাদের ঝোঁক বেশি, তারাই কেবল বই কিনছে। আক্ষেপ করে সংবাদকে কথাগুলো বলছিলেন মিজান পাবলিশার্সের প্রকাশক আ.ন.ম মিজানুর রহমান পাটওয়ারী। গতকাল মেলা প্রাঙ্গণে আলাপচারিতায় বই পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমছে বলে জানান এই প্রকাশক।

মেলায় পাঠকদের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে মিজান বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রচিত এবং তাকে নিয়ে লিখিত বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ বেশি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমাদের প্রকাশনা থেকে ৫০টি নতুন বই বের হচ্ছে। এর মধ্যে ১০টি ইতোমধ্যে স্টলে চলে এসেছে। বাকিগুলো মেলার বাকি সময়ে চলে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রাসেলকে নিয়ে রচিত বইগুলোও ভালো বিক্রি হচ্ছে। খেলাধুলা, গোয়েন্দা কাহিনী ও সায়েন্স ফিকশনের বইও ভালো বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, কম বয়সী পাঠকদের ঝোঁক সায়েন্স ফিকশন ও গোয়েন্দা কাহিনীর প্রতি বেশি বলে জানান আ.ন.ম মিজানুর রহমান।

মেলায় বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বইমেলার শুরুর দিকে পাঠকরা কম আসে। যারা আসেন, তারা ঘোরাঘুরির জন্যই আসেন। পছন্দ হলে দুয়েকটা বই কিনেন। তবে, ছুটির দিনে বই বিক্রির হারটা একটু বেশি থাকে। গত শুক্রবারে বই বিক্রি হয়েছে ভালো। আজ ছুটির দিন নয় বলে লোকসমাগম অনেক কম। এজন্য বিক্রিও কম। তবে, গত বছরের তুলনায় এবার লোকসমাগম বেশি বলে জানান মিজান। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

লেখকের চোখে :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেবেকা সুলতানা। এবারের বইমেলায় ‘কথা রেখেছি’ নামে তার লেখা প্রথম গল্পের বই বের হয়েছে। এছাড়া, গতবছর বইমেলায় ‘পরিচয় জানা হলো না’ নামে তার একটি কবিতার বই বের হয়েছিল। আ.ন.ম মিজানুর রহমান পাটওয়ারীর মতো তিনিও জিপিএ-৫’এর দিকে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়া মানেই সে খুব ভালো পড়াশোনা করেছে বা অনেক বেশি জানে এমন নয়। এখানে পিতা-মাতার ভূমিকা অনেক বেশি। কারণ, তারাই পারে পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে অন্য বই পড়তে তাদের সন্তানদের উৎসাহিত করতে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে রেবেকা সংবাদকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম বেশি সময় ব্যয় করছে। এটা নিশ্চয়ই ক্ষতিকর আমাদের জন্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয়ের জন্য দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় রাখা উচিৎ আমাদের। সর্বক্ষণ যদি একজন শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহারে কাটায়, তাহলে এর বাইরে যে একটি জগত আছে, তা তার অজানা থেকে যাবে। শিক্ষার্থীদের উচিত বই পড়ায় সময় বাড়ানো। বই পড়ার মাধ্যমে সে নিত্যনতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবে। কারণ, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।

বই রচনায় প্রেরণার বিষয়ে জানতে চাইলে রেবেকা বলেন, ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষার দুই মাস আগে আমার বাবা মারা যায়। এজন্য আমার পরীক্ষা খারাপ হয়। ফল প্রকাশিত হওয়ার পর আমাকে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের অনেক কথা শুনতে হয়েছে। তখন তাদের কিছু বলতে না পেরে আমি তা লিখে রাখতাম। পরবর্তীতে বন্ধুদের সহযোগিতায় ও পরামর্শে আমি গল্প লেখা শুরু করি, যা এ বছর বই আকারে বের হয়েছে। এই বইতে যে গল্পগুলো রয়েছে, তাতে গ্রাম থেকে উঠে আসা একটা মেয়ের জীবনের ধাপে ধাপে যেসব প্রতিবন্ধকতা, সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মেলার চতুর্থ দিন আমার বইটি বাজারে এসেছে। তারপর থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।