এক মশার কামড়ে চার ধরনের ভাইরাস ছড়ায়

এক মশার কামড়ে চার ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এটি অ্যাডিস মশা। এ মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস ও ইউলোফিবার বা হলুদজ্বর হয়। চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বর মারাত্বক অবস্থা ধারন করতে পারে। এখনই অ্যাডিস মশা দমনে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলেও মশানিধন ওষুধ না ছিটালে অবস্থা আরও অবনতি হতে পারে বলে। বিশিষ্ট কীটতত্ব বিশেষজ্ঞ রেজাউল করিম খান জানিয়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে এ মশার উপদ্রব শুরু হয়। প্রতিদিন অ্যাডিস মশার কামড়ে শিশু ও বৃদ্ধসহ নানা পেশার মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। গত পহেলা জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ২২৬জন আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিস্তার তো থামছে না। বরং নতুন করে কিউলেক্র মশা যোগ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টি হলে মশার উপদ্রব আরও বাড়তে পারে।

২০১৯ সালে দেশজুড়ে মরণব্যাধি ডেঙ্গুজ্বর ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। তখন এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুসহ অনেকেই মারা যায়। ডেঙ্গুজ্বরের পাশপাশি অনেকেই চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়। হাত পায়ের প্রচ- ব্যাথায় অনেকের চলাচলা করা কষ্টকর ছিল। প্রথমে রাজধানীতে দেখা দিলেও পরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসায় বিশেষ ওয়ার্ড চালু করা হয়। চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করেও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তখন অ্যাডিস মশা দমন ও মশার ওষুধ ছিটানো নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছে। এরপর ওষুধ আমদানি ও ওষুধ ছিটানো নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ শীত মৌসুমে আস্তে আস্তে অ্যাডিস মশার উপদ্রব কিছুটা কমতে থাকে। কিন্তু নতুন বছর আবার অ্যাডিস মশার বিস্তার শুরু হয়েছে।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলর্থ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া এক তথ্যে জানা গেছে, ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে গতকাল ১২ ফেরুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ২২৬ জন। প্রতিদিন কেউ না কেউ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। চলতি বছরের গত এক মাস ১২ দিনের ব্যবধানে ২২৬ জন আক্রান্ত হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

কীটতত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান দেশের আবহাওয়া, তাপমাত্রা, আদ্রতা, আকাশ মেঘলা ও মাঝেমধ্যে বৃষ্টির কারণে অ্যাডিস মশার বংশবিস্তার বাড়ে। নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে জমে থাকা পানি, ফুলের টব, এসি ও ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানিতে মরণব্যাধি অ্যাডিস মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। বছরের শুরুতে কীটনাশক প্রয়োগ না করলে বর্তমান আবহাওয়া অ্যাডিস মশার বিস্তারে সহায়ক হবে। এইবার অ্যাডিস মশার কামড়ে শুধু ডেঙ্গুই নয় চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হতে পারে। আবার ভাইরাস পরিবর্তন হলে জিকা বা ইউলো ফিবার বা হলুদ জ্বরও হওয়ার সম্ভবনা বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখনই মশার বিস্তার বাড়ছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একজন প্রিজাডিং অফিসার ভোট কেন্দ্রের টেবিলে অ্যাডিস মশা দেখেছেন বলে জানান। তার মতে, এখনই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এভাবে রাজধানীর পুরানা পল্টন, নয়া পল্টন, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, পুরনো ঢাকা, যাত্রাবাড়ি, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, ইস্কাটনসহ বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব দেখা গেছে। অনেকেই বাড়তি খরচ করে এখন মশার বিদেশি অ্যারোসল কিনে বাসায় ব্যবহার করছে। অনেকেই এখনও দিনে মশারি টানিয়ে ঘুমায়। ওষুধ এখনও ছিটানো হচ্ছে বলে বহু নগরবাসী অভিযোগ করেন।

বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৩০ মাঘ ১৪২৬, ১৮ জমাদিউল সানি ১৪৪১

এক মশার কামড়ে চার ধরনের ভাইরাস ছড়ায়

বাকিবিল্লাহ |

এক মশার কামড়ে চার ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এটি অ্যাডিস মশা। এ মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস ও ইউলোফিবার বা হলুদজ্বর হয়। চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বর মারাত্বক অবস্থা ধারন করতে পারে। এখনই অ্যাডিস মশা দমনে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলেও মশানিধন ওষুধ না ছিটালে অবস্থা আরও অবনতি হতে পারে বলে। বিশিষ্ট কীটতত্ব বিশেষজ্ঞ রেজাউল করিম খান জানিয়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে এ মশার উপদ্রব শুরু হয়। প্রতিদিন অ্যাডিস মশার কামড়ে শিশু ও বৃদ্ধসহ নানা পেশার মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। গত পহেলা জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ২২৬জন আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিস্তার তো থামছে না। বরং নতুন করে কিউলেক্র মশা যোগ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টি হলে মশার উপদ্রব আরও বাড়তে পারে।

২০১৯ সালে দেশজুড়ে মরণব্যাধি ডেঙ্গুজ্বর ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। তখন এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুসহ অনেকেই মারা যায়। ডেঙ্গুজ্বরের পাশপাশি অনেকেই চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়। হাত পায়ের প্রচ- ব্যাথায় অনেকের চলাচলা করা কষ্টকর ছিল। প্রথমে রাজধানীতে দেখা দিলেও পরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসায় বিশেষ ওয়ার্ড চালু করা হয়। চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করেও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তখন অ্যাডিস মশা দমন ও মশার ওষুধ ছিটানো নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছে। এরপর ওষুধ আমদানি ও ওষুধ ছিটানো নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ শীত মৌসুমে আস্তে আস্তে অ্যাডিস মশার উপদ্রব কিছুটা কমতে থাকে। কিন্তু নতুন বছর আবার অ্যাডিস মশার বিস্তার শুরু হয়েছে।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলর্থ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া এক তথ্যে জানা গেছে, ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে গতকাল ১২ ফেরুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ২২৬ জন। প্রতিদিন কেউ না কেউ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। চলতি বছরের গত এক মাস ১২ দিনের ব্যবধানে ২২৬ জন আক্রান্ত হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

কীটতত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান দেশের আবহাওয়া, তাপমাত্রা, আদ্রতা, আকাশ মেঘলা ও মাঝেমধ্যে বৃষ্টির কারণে অ্যাডিস মশার বংশবিস্তার বাড়ে। নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে জমে থাকা পানি, ফুলের টব, এসি ও ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানিতে মরণব্যাধি অ্যাডিস মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। বছরের শুরুতে কীটনাশক প্রয়োগ না করলে বর্তমান আবহাওয়া অ্যাডিস মশার বিস্তারে সহায়ক হবে। এইবার অ্যাডিস মশার কামড়ে শুধু ডেঙ্গুই নয় চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হতে পারে। আবার ভাইরাস পরিবর্তন হলে জিকা বা ইউলো ফিবার বা হলুদ জ্বরও হওয়ার সম্ভবনা বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে শুরু করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখনই মশার বিস্তার বাড়ছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একজন প্রিজাডিং অফিসার ভোট কেন্দ্রের টেবিলে অ্যাডিস মশা দেখেছেন বলে জানান। তার মতে, এখনই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এভাবে রাজধানীর পুরানা পল্টন, নয়া পল্টন, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, পুরনো ঢাকা, যাত্রাবাড়ি, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, ইস্কাটনসহ বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব দেখা গেছে। অনেকেই বাড়তি খরচ করে এখন মশার বিদেশি অ্যারোসল কিনে বাসায় ব্যবহার করছে। অনেকেই এখনও দিনে মশারি টানিয়ে ঘুমায়। ওষুধ এখনও ছিটানো হচ্ছে বলে বহু নগরবাসী অভিযোগ করেন।