আ-মরি বাংলা ভাষা

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায় ও মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে বুলেটের সামনে বুক পেতে দিতেও পিছ পা হয়নি বাঙালি। বুলেট বুকের পাঁজর ভাঙতে পারলেও বাঙালির মনোবলকে ভাঙতে পারেনি। রক্তে লাল হয়েছে নিরস রাজপথ। তবুও ভ্রুক্ষেপ নেই কারও- বিরাম নেই এ চলার।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র মিছিলের ওপর পুলিশের এ গুলিবর্ষণের কারণেই ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায়। দুই হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি নিজ দেশে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র মিছিলে পুলিশের এ গুলির ঘটনা বাঙালির স্বাধীন সত্ত্বা, স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এর ফলেই এদেশের জনগণ দীর্ঘদিনের শোষণকে তাড়িয়ে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। একুশের কারণেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশ্বের ১৯০টি দেশে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়। বিশ্বের অনেক দেশের অধিবাসী বাংলা ভাষা সম্পর্কে আগ্রহী হচ্ছেন। তাদের অনেকে এ ভাষা শেখারও চেষ্টা করছেন।

যাদের কারণে এ মহোত্তম অর্জন সম্ভব হয়েছে তাদের অনেকে ইতিহাসের নিচে চাপা পড়ে গেছেন। নারী ভাষাসৈনিকদের ক্ষেত্রে ইতিহাস যেন অনেকটাই চুপ করে গেছে। ১৯৫২ সালে নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ভাষাসৈনিক মমতাজ বেগম যেমন একচক্ষু ইতিহাসের খপ্পরে পড়েছিলেন এতদিন। ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্ছু তাই ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ভাষা সংগ্রামীদের কথা ইতিহাস থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। এছাড়াও লেখা হয়েছে ভুল ইতিহাস, অসম্পূর্ণ ইতিহাস। প্রশ্ন তোলেন তিনি, কেন তাদের কথা ভুলে যাওয়া হলো, নারী ভাষাসৈনিকদের কথা ইতিহাস কেন চেপে গেল। এ ইতিহাসের রচয়িতা কারা?

ভাষাসৈনিকদের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোন ভাষাসৈনিকের পরিবার প্রতিষ্ঠিত না হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার ইতিহাস সংরক্ষণ করা একেবারেই অসম্ভব। আর কোন ভাষা সৈনিকই নিজের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেনি। ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। জাতীয়ভাবে ভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস দ্রুত সংরক্ষণ করা না হলে চিরকালের অনেক ইতিহাস আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ১ ফল্গুন ১৪২৬, ১৯ জমাদিউল সানি ১৪৪১

আ-মরি বাংলা ভাষা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায় ও মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে বুলেটের সামনে বুক পেতে দিতেও পিছ পা হয়নি বাঙালি। বুলেট বুকের পাঁজর ভাঙতে পারলেও বাঙালির মনোবলকে ভাঙতে পারেনি। রক্তে লাল হয়েছে নিরস রাজপথ। তবুও ভ্রুক্ষেপ নেই কারও- বিরাম নেই এ চলার।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র মিছিলের ওপর পুলিশের এ গুলিবর্ষণের কারণেই ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায়। দুই হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি নিজ দেশে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র মিছিলে পুলিশের এ গুলির ঘটনা বাঙালির স্বাধীন সত্ত্বা, স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এর ফলেই এদেশের জনগণ দীর্ঘদিনের শোষণকে তাড়িয়ে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। একুশের কারণেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশ্বের ১৯০টি দেশে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়। বিশ্বের অনেক দেশের অধিবাসী বাংলা ভাষা সম্পর্কে আগ্রহী হচ্ছেন। তাদের অনেকে এ ভাষা শেখারও চেষ্টা করছেন।

যাদের কারণে এ মহোত্তম অর্জন সম্ভব হয়েছে তাদের অনেকে ইতিহাসের নিচে চাপা পড়ে গেছেন। নারী ভাষাসৈনিকদের ক্ষেত্রে ইতিহাস যেন অনেকটাই চুপ করে গেছে। ১৯৫২ সালে নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ভাষাসৈনিক মমতাজ বেগম যেমন একচক্ষু ইতিহাসের খপ্পরে পড়েছিলেন এতদিন। ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্ছু তাই ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ভাষা সংগ্রামীদের কথা ইতিহাস থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। এছাড়াও লেখা হয়েছে ভুল ইতিহাস, অসম্পূর্ণ ইতিহাস। প্রশ্ন তোলেন তিনি, কেন তাদের কথা ভুলে যাওয়া হলো, নারী ভাষাসৈনিকদের কথা ইতিহাস কেন চেপে গেল। এ ইতিহাসের রচয়িতা কারা?

ভাষাসৈনিকদের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোন ভাষাসৈনিকের পরিবার প্রতিষ্ঠিত না হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার ইতিহাস সংরক্ষণ করা একেবারেই অসম্ভব। আর কোন ভাষা সৈনিকই নিজের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেনি। ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। জাতীয়ভাবে ভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস দ্রুত সংরক্ষণ করা না হলে চিরকালের অনেক ইতিহাস আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।