ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার পুনর্বিবেচনার আশ্বাস অর্থমন্ত্রীর

ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল সচিবালয়ে অর্থনীতি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশ্বাস দেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আমি আবার বিবেচনা করবো। এবার যদি না পারি নেক্সট বাজেটে করব। দেশের গরিব মানুষ কষ্ট পাক আমি তা চাই না। সঞ্চয়পত্রে বলা ছিল, সুদহার কমাতে হলে আমাদের কম সুদে ফান্ড দিতে হবে ব্যাংকগুলোর কাছে। তা না হলে ব্যাংকগুলো কিভাবে কাস্টমারকে লোন দেবে? সেজন্য এই কাজটি করতে হয়েছে আমাদের। এগুলো ফাইন্যান্সিয়াল টুল হিসেবে অর্থনীতিতে ভালো ফল দেয় না। তবে এখান থেকে সরকার লোন নিয়েছে। আমাদের এখন মূল কাজ হচ্ছে, কোথাও কিছু পেতে হলে, কোথাও ছাড় দিতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এক পরিপত্র জারি করা হয়। সেই পরিপত্রের নির্দেশে, ডাকঘরে যে সঞ্চয় ব্যাংক রয়েছে, সেই ব্যাংকের সুদের হার সরকারি ব্যাংকের সুদের হারের সমপর্যায়ে নিয়ে আসা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ডাকঘরে চার ভাবে টাকা রাখা যায়। ডাকঘর থেকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাব ও সাধারণ হিসাব খোলা যায়। আবার ডাক জীবন বীমাও করা যায়। এবার ডাকঘরের সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদি হিসাব ও সাধারণ হিসাবে সুদের হার কমেছে। সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে সুদের হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

সুদের হার এক অঙ্কে নিয়ে আসার মূল লক্ষ্য জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এর সঙ্গে যতগুলো রিলেটেড রয়েছে তাতে হাত দিতে হবে, সঞ্চয়পত্রে হাত দিতে হবে। সঞ্চয়পত্র করা হয়েছিল পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য। এখানে কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টাকা এখানে আসুক আমরা চাই। এজন্য এগুলোকে একটি বিধি-বিধানের মাধ্যমে নিয়ে এসেছি। প্রথমে ২৫, পরে ৫০ এবং পরে যৌথ এক কোটি টাকা করলাম। তবে আজ যেটা করলাম, কাল পরিবর্তন করতে হতে পারে। এটি বাস্তবায়ন হবে ১ এপ্রিল থেকে। আমরা পোস্ট অফিসে হাত দেইনি। তাই অনেকে সেখানেই চলে গেছে বেশি ইন্টারেস্টের আশায়। সবাই এখন এ কথা বলছে। দেখি আমরা কিছু করতে পারি কিনা।

ডাকঘরে গরিব ও প্রান্তিক মানুষ স্কিমগুলো নিয়ে থাকে, তাদের জন্য কিছু করা হবে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এদের জন্য কিছু করতে হলে করব, আমাদের জানতে হবে তারা কারা, তাদের আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দেব যেন বেশি কিনতে না পারে, সেটি আমরা দেখব। এসব মানুষদের জন্য ট্যাক্স রেট রিকনসিডার করব, এখান থেকে ওখানে যেতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা করে দেব। মানুষ সুদ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করছে। পৃথিবীতে কোন দেশে এভাবে ব্যাংকে টাকা রাখলে ইন্টারেস্ট দেয়া হয় না। যে দেশে ব্যবসা আছে সে দেশে ব্যাংকে টাকা রাখে না। আমাদের কাছে সবাই সমান। ব্যবসায়ীদের এফেকটিভ রেটে টাকা দিতে হবে, এটি আমাদের কমিটমেন্ট। না হলে ব্যবসা প্রসার হবে না, ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান হবে না।

উল্লেখ্য, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্যনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছেন গ্রাহক। সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ নিরুৎসাহ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ বছর গত বছরের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে আয়কর কর্তনের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। অবশ্য ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানতের ক্ষেত্রেও সুদের ওপর উৎসে করের হার ১০ শতাংশ এবং যাদের টিআইএন নেই, এ হার তাদের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ। ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে উৎসে কর বাড়ালেও এখনও ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্যান্য সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমায়নি সরকার।

আরও খবর
উৎপাদনে এগিয়ে সঞ্চালনে পিছিয়ে
নদীতীরের ১১৩ ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করা হবে নৌপ্রতিমন্ত্রী
সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশির অবস্থা আশঙ্কাজনক
গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে
দুর্বৃত্তের গুলিতে ইউপিডিএফ কর্মী নিহত
বনায়নের নামে চলছে হরিলুট
ঘনিয়ে আসছে মামলার রায়ের দিন
খালেদার জামিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে নয় : কাদের
কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে আগের মতোই
নিহত ৬৭ জনের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত
চাকরি ৯৭৭ দিন, ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ৭৫০ দিন
গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু
অমর একুশ উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন
ক্ষণগণনা : আর ২৫ দিন
আ-মরি বাংলা ভাষা

বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৭ ফল্গুন ১৪২৬, ২৫ জমাদিউল সানি ১৪৪১

ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার পুনর্বিবেচনার আশ্বাস অর্থমন্ত্রীর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল সচিবালয়ে অর্থনীতি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশ্বাস দেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আমি আবার বিবেচনা করবো। এবার যদি না পারি নেক্সট বাজেটে করব। দেশের গরিব মানুষ কষ্ট পাক আমি তা চাই না। সঞ্চয়পত্রে বলা ছিল, সুদহার কমাতে হলে আমাদের কম সুদে ফান্ড দিতে হবে ব্যাংকগুলোর কাছে। তা না হলে ব্যাংকগুলো কিভাবে কাস্টমারকে লোন দেবে? সেজন্য এই কাজটি করতে হয়েছে আমাদের। এগুলো ফাইন্যান্সিয়াল টুল হিসেবে অর্থনীতিতে ভালো ফল দেয় না। তবে এখান থেকে সরকার লোন নিয়েছে। আমাদের এখন মূল কাজ হচ্ছে, কোথাও কিছু পেতে হলে, কোথাও ছাড় দিতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এক পরিপত্র জারি করা হয়। সেই পরিপত্রের নির্দেশে, ডাকঘরে যে সঞ্চয় ব্যাংক রয়েছে, সেই ব্যাংকের সুদের হার সরকারি ব্যাংকের সুদের হারের সমপর্যায়ে নিয়ে আসা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ডাকঘরে চার ভাবে টাকা রাখা যায়। ডাকঘর থেকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাব ও সাধারণ হিসাব খোলা যায়। আবার ডাক জীবন বীমাও করা যায়। এবার ডাকঘরের সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদি হিসাব ও সাধারণ হিসাবে সুদের হার কমেছে। সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে সুদের হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

সুদের হার এক অঙ্কে নিয়ে আসার মূল লক্ষ্য জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এর সঙ্গে যতগুলো রিলেটেড রয়েছে তাতে হাত দিতে হবে, সঞ্চয়পত্রে হাত দিতে হবে। সঞ্চয়পত্র করা হয়েছিল পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য। এখানে কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টাকা এখানে আসুক আমরা চাই। এজন্য এগুলোকে একটি বিধি-বিধানের মাধ্যমে নিয়ে এসেছি। প্রথমে ২৫, পরে ৫০ এবং পরে যৌথ এক কোটি টাকা করলাম। তবে আজ যেটা করলাম, কাল পরিবর্তন করতে হতে পারে। এটি বাস্তবায়ন হবে ১ এপ্রিল থেকে। আমরা পোস্ট অফিসে হাত দেইনি। তাই অনেকে সেখানেই চলে গেছে বেশি ইন্টারেস্টের আশায়। সবাই এখন এ কথা বলছে। দেখি আমরা কিছু করতে পারি কিনা।

ডাকঘরে গরিব ও প্রান্তিক মানুষ স্কিমগুলো নিয়ে থাকে, তাদের জন্য কিছু করা হবে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এদের জন্য কিছু করতে হলে করব, আমাদের জানতে হবে তারা কারা, তাদের আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দেব যেন বেশি কিনতে না পারে, সেটি আমরা দেখব। এসব মানুষদের জন্য ট্যাক্স রেট রিকনসিডার করব, এখান থেকে ওখানে যেতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা করে দেব। মানুষ সুদ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করছে। পৃথিবীতে কোন দেশে এভাবে ব্যাংকে টাকা রাখলে ইন্টারেস্ট দেয়া হয় না। যে দেশে ব্যবসা আছে সে দেশে ব্যাংকে টাকা রাখে না। আমাদের কাছে সবাই সমান। ব্যবসায়ীদের এফেকটিভ রেটে টাকা দিতে হবে, এটি আমাদের কমিটমেন্ট। না হলে ব্যবসা প্রসার হবে না, ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান হবে না।

উল্লেখ্য, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্যনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছেন গ্রাহক। সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ নিরুৎসাহ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ বছর গত বছরের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে আয়কর কর্তনের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। অবশ্য ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানতের ক্ষেত্রেও সুদের ওপর উৎসে করের হার ১০ শতাংশ এবং যাদের টিআইএন নেই, এ হার তাদের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ। ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে উৎসে কর বাড়ালেও এখনও ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্যান্য সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমায়নি সরকার।