সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বুয়েটের

এ বছরই অংশ নিচ্ছে না চবি ঢাবি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ২৬ ফেব্রুয়ারি

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধানে চলতি বছরের অনুষ্ঠিতব্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এই বছরই অংশ নিচ্ছে না বলে জানা গেছে। ইউজিসির তত্ত্বাবধানে চলতি বছরে অনুষ্ঠিতব্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে চবি প্রশাসন। ফলে আগের নিয়মানুযায়ী চলতি বছরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভা ডেকেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। সোমবার বিকেল ৩টায় ঢাবির সিনেট ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে (সমন্বিত) ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটসহ বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আসবে কি না তা আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি জানা যাবে। ওইদিন ইউজিসিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব উপাচার্যকে নিয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছে। সভায় এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে।

বুয়েটসূত্রে জানা যায়, গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই বিষয়ে বুয়েটের শিক্ষা পরিষদের সদস্য ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদকে বলেন, গত বুধবার আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ছিল। সে সভা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বিগত বছরগুলোতে আমরা যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছি, সেভাবেই পরীক্ষা নেয়া হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় আমরা যাব না। তিনি বলেন, ইউজিসি চাইলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে সমন্বিত পরীক্ষা নিতে পারে, এ বিষয়ে আমাদের কোন মন্তব্য নেই।

তবে, বিষয়টি নিয়ে বুয়েট শিক্ষকদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষার উদ্যোগই ভালো ছিল। আবার কেউ কেউ বলছেন, কেন্দ্রীয় পরীক্ষাই ভালো হবে।

বুয়েট আগে থেকে বলে আসছে, একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একেকটি গুচ্ছ করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইউজিসি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার কথা বলেছে। তখন একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছিল তারা। গত বুধবার সেই একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় যাবে না বুয়েট।

এই বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, নতুন এই পদ্ধতিতে কেউ আপত্তি করছে না। অনেকেই এখন ইতিবাচক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বক্তব্য হলো, তাদের কিছু প্রক্রিয়াগত বিষয় আছে। তবে যে কয়টা বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হবে, তাদের নিয়েই সামনে এগুনো হবে বলে জানান তিনি।

এই বছরই অংশ নিচ্ছে না চবি :

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় এই বছরই অংশ নিচ্ছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। ইউজিসির তত্ত্বাবধানে চলতি বছরের অনুষ্ঠিতব্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে চবি প্রশাসন। ফলে আগের নিয়মানুযায়ী চলতি বছরও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের ২৩৮তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চবির একটি অনুষদের ডিনসহ দু’জন অধ্যাপক। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্ত এখনও জানায়নি।

সভায় অংশ নেয়া দু’জন অধ্যাপক জানান, একাডেমিক কাউন্সিলে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সব দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বিচ্ছিন্ন ভর্তি পরীক্ষার শ্রম, অর্থ ও সময়ের ব্যয় কমাতে যে দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছেন, এর প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সম্মান জানিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্রবোধ, ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের বিষয়টিকেও অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। তারা বলেন, ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকিসহ বিভিন্ন বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পরীক্ষা কেন্দ্র, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক হুমকি ও প্রভাবের বিষয়গুলোও প্রাধান্য পেয়েছে আলোচনায়। আলোচনা শেষে এই বছরই অংশগ্রহণ না করে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

একাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভা ডেকেছে ঢাবি :

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা ডেকেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। আগামী সোমবার বিকেল ৩টায় ঢাবির সিনেট ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। একাডেমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্ষদ একাডেমিক কাউন্সিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অধ্যাপক, বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য। ইতোমধ্যে একাডেমিক কাউন্সিলের সভার বিষয়ে সদস্যদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে সভার আলোচ্য বিষয় হিসেবে দুটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ও অন্যটি হলো সান্ধ্য কোর্স।

একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। বিশেষ সভার বিষয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সিদ্ধান্ত ব্যক্তি পর্যায় থেকে নেয়া হয় না। সব সিদ্ধান্তই সংশ্লিষ্ট পর্ষদ আলোচনা করে মতামতের ভিত্তিতে নেয়া হয়। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা হবে। এজন্য আমরা একটি যৌক্তিকতা যাচাই কমিটি গঠন করেছিলাম। সেই কমিটি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ বিষয়টিও সভায় উত্থাপন করা হবে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ২৬ ফেব্রুয়ারি

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ঢাবি-বুয়েটসহ বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আসবে কি না তা আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি জানা যাবে। ওইদিন ইউজিসিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছে। সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়ার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একটি নম্বর (স্কোর) দেয়া হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের শর্তানুযায়ী আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন আহ্বান করবে। এর ভিত্তিতে নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরকে বিবেচনা করে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাবনার ভিত্তিতে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভার আলোকেই পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। ইউজিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন এই পদ্ধতিতে এখনও অনাগ্রহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।

প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে আগে যেভাবে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে তার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে থেকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার বিষয়গুলোর জন্য তিন দিনে তিনটি পৃথক ভর্তি পরীক্ষা (অভিন্ন প্রশ্ন) হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নিয়ে তিনটি শাখার জন্য পৃথক তিনটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্র থাকবে। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি তাদের পরীক্ষা নেয়ার সামর্থ্যরে বেশি আবেদন জমা পড়ে, তখন মেধা অনুযায়ী (উচ্চ মাধ্যমিক ফল) নিকটতম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু শিক্ষার্থীর একটি স্কোর বা নম্বর নির্ধারণ করে দেয়ার পর কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির কাজ শেষ হবে।

খসড়ায় বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষার পরের কাজটি করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রচলিত পদ্ধতিতে (তারা যেভাবে উপযুক্ত মনে করে) নিজ নিজ প্রয়োজনীয় শর্ত যুক্ত করে পৃথকভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এবং কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার নম্বরকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা পরিষদ (একাডেমিক কাউন্সিল) বা ভর্তি কমিটি প্রয়োজনীয় শর্তারোপ করার সুযোগ পাবে। বিশেষায়িত বিভাগগুলো যেমন, স্থাপত্য, চারুকলা ও সংগীত বিষয়ের জন্য প্রয়োজনমতো শুধুমাত্র ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া যাবে। তবে সে ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার নম্বরকে যুক্ত করেই মেধাতালিকা করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি এবং আর্থিক ব্যয় কমাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই গুচ্ছ বা সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষার নেয়ার চেষ্টা চলছে। তারই আলোকে কোন ঝামেলা ছাড়াই গত বছর সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভিত্তিতে বা সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এখন আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়েই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। তবে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এগুলোতে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে প্রায় ৬০ হাজার আসন রয়েছে। পরীক্ষা দেয় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী।

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৮ ফল্গুন ১৪২৬, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪১

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বুয়েটের

এ বছরই অংশ নিচ্ছে না চবি ঢাবি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ২৬ ফেব্রুয়ারি

প্রতিনিধি, ঢাবি

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তত্ত্বাবধানে চলতি বছরের অনুষ্ঠিতব্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এই বছরই অংশ নিচ্ছে না বলে জানা গেছে। ইউজিসির তত্ত্বাবধানে চলতি বছরে অনুষ্ঠিতব্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে চবি প্রশাসন। ফলে আগের নিয়মানুযায়ী চলতি বছরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভা ডেকেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। সোমবার বিকেল ৩টায় ঢাবির সিনেট ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে (সমন্বিত) ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটসহ বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আসবে কি না তা আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি জানা যাবে। ওইদিন ইউজিসিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব উপাচার্যকে নিয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছে। সভায় এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে।

বুয়েটসূত্রে জানা যায়, গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই বিষয়ে বুয়েটের শিক্ষা পরিষদের সদস্য ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদকে বলেন, গত বুধবার আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ছিল। সে সভা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বিগত বছরগুলোতে আমরা যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছি, সেভাবেই পরীক্ষা নেয়া হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় আমরা যাব না। তিনি বলেন, ইউজিসি চাইলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে সমন্বিত পরীক্ষা নিতে পারে, এ বিষয়ে আমাদের কোন মন্তব্য নেই।

তবে, বিষয়টি নিয়ে বুয়েট শিক্ষকদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষার উদ্যোগই ভালো ছিল। আবার কেউ কেউ বলছেন, কেন্দ্রীয় পরীক্ষাই ভালো হবে।

বুয়েট আগে থেকে বলে আসছে, একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একেকটি গুচ্ছ করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইউজিসি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার কথা বলেছে। তখন একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছিল তারা। গত বুধবার সেই একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় যাবে না বুয়েট।

এই বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, নতুন এই পদ্ধতিতে কেউ আপত্তি করছে না। অনেকেই এখন ইতিবাচক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বক্তব্য হলো, তাদের কিছু প্রক্রিয়াগত বিষয় আছে। তবে যে কয়টা বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হবে, তাদের নিয়েই সামনে এগুনো হবে বলে জানান তিনি।

এই বছরই অংশ নিচ্ছে না চবি :

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় এই বছরই অংশ নিচ্ছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। ইউজিসির তত্ত্বাবধানে চলতি বছরের অনুষ্ঠিতব্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে চবি প্রশাসন। ফলে আগের নিয়মানুযায়ী চলতি বছরও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের ২৩৮তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চবির একটি অনুষদের ডিনসহ দু’জন অধ্যাপক। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্ত এখনও জানায়নি।

সভায় অংশ নেয়া দু’জন অধ্যাপক জানান, একাডেমিক কাউন্সিলে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সব দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বিচ্ছিন্ন ভর্তি পরীক্ষার শ্রম, অর্থ ও সময়ের ব্যয় কমাতে যে দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছেন, এর প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সম্মান জানিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্রবোধ, ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের বিষয়টিকেও অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। তারা বলেন, ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকিসহ বিভিন্ন বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পরীক্ষা কেন্দ্র, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক হুমকি ও প্রভাবের বিষয়গুলোও প্রাধান্য পেয়েছে আলোচনায়। আলোচনা শেষে এই বছরই অংশগ্রহণ না করে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

একাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভা ডেকেছে ঢাবি :

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা ডেকেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। আগামী সোমবার বিকেল ৩টায় ঢাবির সিনেট ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। একাডেমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্ষদ একাডেমিক কাউন্সিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অধ্যাপক, বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য। ইতোমধ্যে একাডেমিক কাউন্সিলের সভার বিষয়ে সদস্যদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে সভার আলোচ্য বিষয় হিসেবে দুটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ও অন্যটি হলো সান্ধ্য কোর্স।

একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। বিশেষ সভার বিষয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সিদ্ধান্ত ব্যক্তি পর্যায় থেকে নেয়া হয় না। সব সিদ্ধান্তই সংশ্লিষ্ট পর্ষদ আলোচনা করে মতামতের ভিত্তিতে নেয়া হয়। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা হবে। এজন্য আমরা একটি যৌক্তিকতা যাচাই কমিটি গঠন করেছিলাম। সেই কমিটি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ বিষয়টিও সভায় উত্থাপন করা হবে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ২৬ ফেব্রুয়ারি

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ঢাবি-বুয়েটসহ বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আসবে কি না তা আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি জানা যাবে। ওইদিন ইউজিসিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছে। সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়ার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একটি নম্বর (স্কোর) দেয়া হবে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের শর্তানুযায়ী আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন আহ্বান করবে। এর ভিত্তিতে নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরকে বিবেচনা করে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাবনার ভিত্তিতে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভার আলোকেই পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। ইউজিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন এই পদ্ধতিতে এখনও অনাগ্রহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।

প্রাথমিক খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে আগে যেভাবে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে তার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে থেকে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার বিষয়গুলোর জন্য তিন দিনে তিনটি পৃথক ভর্তি পরীক্ষা (অভিন্ন প্রশ্ন) হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের নিয়ে তিনটি শাখার জন্য পৃথক তিনটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্র থাকবে। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি তাদের পরীক্ষা নেয়ার সামর্থ্যরে বেশি আবেদন জমা পড়ে, তখন মেধা অনুযায়ী (উচ্চ মাধ্যমিক ফল) নিকটতম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে শুধু শিক্ষার্থীর একটি স্কোর বা নম্বর নির্ধারণ করে দেয়ার পর কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির কাজ শেষ হবে।

খসড়ায় বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষার পরের কাজটি করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রচলিত পদ্ধতিতে (তারা যেভাবে উপযুক্ত মনে করে) নিজ নিজ প্রয়োজনীয় শর্ত যুক্ত করে পৃথকভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এবং কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার নম্বরকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা পরিষদ (একাডেমিক কাউন্সিল) বা ভর্তি কমিটি প্রয়োজনীয় শর্তারোপ করার সুযোগ পাবে। বিশেষায়িত বিভাগগুলো যেমন, স্থাপত্য, চারুকলা ও সংগীত বিষয়ের জন্য প্রয়োজনমতো শুধুমাত্র ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া যাবে। তবে সে ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার নম্বরকে যুক্ত করেই মেধাতালিকা করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক ভোগান্তি এবং আর্থিক ব্যয় কমাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই গুচ্ছ বা সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষার নেয়ার চেষ্টা চলছে। তারই আলোকে কোন ঝামেলা ছাড়াই গত বছর সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভিত্তিতে বা সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এখন আসন্ন শিক্ষাবর্ষ থেকে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়েই কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। তবে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এগুলোতে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে প্রায় ৬০ হাজার আসন রয়েছে। পরীক্ষা দেয় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী।