আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি

শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অপর্ণের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় গতকাল রাজধানীসহ সারাদেশে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। প্রায় সাত দশক আগে বাঙালি জাতি (১৯৫২ সালের এই দিনে) রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের নির্মম বুলেটের আঘাতে বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল। রাষ্ট্রভাষার গণ্ডি পেরিয়ে আজ সেই বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে বাঙালি জাতি। পাশপাশি দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার এবং অন্য জাতিসত্তার ভাষা ও বর্ণমালা সংরক্ষণের দাবিও উঠেছে।

দিবসটি উপলক্ষে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশের প্রথম প্রহরেই হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। একুশের প্রথম প্রহরেই ফুলে ফুলে ভরে উঠে বাঙালির শোক আর অহংকারের এই মিনার। ভোর থেকে সাদা-কালো পোশাকে সর্বসাধারণের প্রভাত ফেরি শুরু হয়। কণ্ঠে থাকে কালজয়ী সব গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’; ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’।

একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে (রাত ১২টা ১ মিনিটে) রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাজানো হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তাকে স্বাগত জানান।

এরপর, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুনরায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও শাজাহান খান, তথ্যমন্ত্রী ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলের সংসদ সদস্যরা শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মেয়র সাঈদ খোকন। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির নেতারা শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর শহীদ বেদীতে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী প্রধান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে মহাপুলিশ পরিদর্শক পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। র‌্যাবের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

পরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, বিদেশি সংস্থার প্রধানরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের অগণিত মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় উপস্থিত হন। এ সময় হাজার হাজার মানুষ খালি পায়ে বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-আমি কি ভুলিতে পারি’- গানে কণ্ঠ মিলিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যান। একই সঙ্গে তারা সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের এবং অন্য জাতিসত্তার ভাষা ও বর্ণমালা সংরক্ষণের দাবি জানান।

অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জমানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কেন্দ্রীয় ১৪ দল, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, সাম্যবাদী দল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।

এছাড়াও বিএনপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও সিনেট সদস্য, সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম, গণফোরাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ থ্রোবল অ্যাসোসিয়েশন, শিল্পকলা একাডেমি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, গণতন্ত্রী পার্টি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

এদিকে সকালে প্রভাতফেরী করে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ও সাধারণ মানুষ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাদেশে অবস্থানরাত বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেন। গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকাল ৭টায় আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ, কুরআনখানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও এদিন বেলা ১১টায় ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত এবং দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কুরআনখানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে গতকাল ঢাকাসহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাতফেরি সহকারে কেন্দ্রীয় ও নিজ নিজ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উপস্থিত বক্তৃতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতার আয়োজন করে। শহরের পাড়া-মহল্লা, সমস্বলের থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা আয়োজন ছিল দিবসটি পালনে। এসব আয়োজনে শিশুদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকের বুকের রক্তের বিনিময়ে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরে জন্ম নেয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গের এই দিনটিকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালে। অমর একুশে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের চেতনার প্রতীক ‘শহীদ মিনার’ এখন এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ সবকটি মহাদেশের বহুভাষিক চেতনার স্মারক।

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ৯ ফল্গুন ১৪২৬, ২৭ জমাদিউল সানি ১৪৪১

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ফুলে ফুলে ভরা -সংবাদ

শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অপর্ণের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় গতকাল রাজধানীসহ সারাদেশে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। প্রায় সাত দশক আগে বাঙালি জাতি (১৯৫২ সালের এই দিনে) রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের নির্মম বুলেটের আঘাতে বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল। রাষ্ট্রভাষার গণ্ডি পেরিয়ে আজ সেই বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে বাঙালি জাতি। পাশপাশি দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার এবং অন্য জাতিসত্তার ভাষা ও বর্ণমালা সংরক্ষণের দাবিও উঠেছে।

দিবসটি উপলক্ষে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশের প্রথম প্রহরেই হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। একুশের প্রথম প্রহরেই ফুলে ফুলে ভরে উঠে বাঙালির শোক আর অহংকারের এই মিনার। ভোর থেকে সাদা-কালো পোশাকে সর্বসাধারণের প্রভাত ফেরি শুরু হয়। কণ্ঠে থাকে কালজয়ী সব গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’; ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’।

একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে (রাত ১২টা ১ মিনিটে) রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাজানো হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তাকে স্বাগত জানান।

এরপর, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুনরায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও শাজাহান খান, তথ্যমন্ত্রী ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়াসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলের সংসদ সদস্যরা শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মেয়র সাঈদ খোকন। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির নেতারা শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর শহীদ বেদীতে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী প্রধান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে মহাপুলিশ পরিদর্শক পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। র‌্যাবের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

পরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, বিদেশি সংস্থার প্রধানরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের অগণিত মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় উপস্থিত হন। এ সময় হাজার হাজার মানুষ খালি পায়ে বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-আমি কি ভুলিতে পারি’- গানে কণ্ঠ মিলিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যান। একই সঙ্গে তারা সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের এবং অন্য জাতিসত্তার ভাষা ও বর্ণমালা সংরক্ষণের দাবি জানান।

অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জমানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কেন্দ্রীয় ১৪ দল, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, সাম্যবাদী দল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।

এছাড়াও বিএনপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও সিনেট সদস্য, সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম, গণফোরাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ থ্রোবল অ্যাসোসিয়েশন, শিল্পকলা একাডেমি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, গণতন্ত্রী পার্টি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

এদিকে সকালে প্রভাতফেরী করে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ও সাধারণ মানুষ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাদেশে অবস্থানরাত বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেন। গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকাল ৭টায় আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ, কুরআনখানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও এদিন বেলা ১১টায় ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত এবং দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কুরআনখানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে গতকাল ঢাকাসহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাতফেরি সহকারে কেন্দ্রীয় ও নিজ নিজ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উপস্থিত বক্তৃতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতার আয়োজন করে। শহরের পাড়া-মহল্লা, সমস্বলের থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা আয়োজন ছিল দিবসটি পালনে। এসব আয়োজনে শিশুদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকের বুকের রক্তের বিনিময়ে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরে জন্ম নেয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গের এই দিনটিকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালে। অমর একুশে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের চেতনার প্রতীক ‘শহীদ মিনার’ এখন এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ সবকটি মহাদেশের বহুভাষিক চেতনার স্মারক।