করোনায় মৃত্যুর চেয়ে সুস্থতার হার বেশি

সুস্থ ৭৯ শতাংশ মৃত্যু ২১ শতাংশ

করোনাভাইরাসে (কোভিড -১৯) বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। চীন থেকে ইতালি হয়ে আমেরিকা, বাংলাদেশের উপরও থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস। করোনা চিকিৎসায় এখনও কার্যকর ওষুধ বা ভ্যাকসিন মেলেনি। তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন ট্রায়াল চলছে। করোনাভাইরাসকে ঘিরে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক ক্রমেই বেড়ে চলেছে। নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের মাঝেও কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে মরণঘাতী এই ভাইরাসে মৃতের চেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার হার বেশি। দেশে দেশে যেভাবে দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, এতে সুস্থ হয়ে ওঠার হার বেশ আশাব্যাঞ্জক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শরীরে জটিলতা না থাকলে করোনা রোগী চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হচ্ছেন বলে জানান তারা। তাদের মতে, করোনাভাইরাস হঠাৎ করেই ভয়ানক হয়ে ওঠে না। আক্রান্তের প্রথম দিন থেকে লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে ছয়-সাত দিন লাগে মারাত্মক রূপ নিতে। তবে শরীরে অন্য কোন জটিলতা না থাকলে ছয়-সাত দিনে এমনিতেই সেরে যায় মরণঘাতী রোগটি। বিভিন্ন জরিপ সংস্থার হিসাব বলছে, করোনা মরণ ফাঁদ হলেও আক্রান্ত হওয়ার পরেও পাঁচ লাখের অধিক মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। প্রক্ষান্তরে মৃতের সংখ্যা সোয়া লাখ। বর্তমানে করোনায় সুস্থ ও মৃত্যু হার যথাক্রমে ৭৯ শতাংশ ও ২১ শতাংশ।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ করোনা রোগী চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যাচ্ছেন। তবে শরীরে অন্য কোন জটিলতা থাকলে ভাইরাসটি সমস্যা সৃষ্টি করে। এমন রোগীদের আইসিইউতে সাপোর্ট দিতে হয়। আর যাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, তাদেরও তেমন একটা ওষুধ লাগে না বলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। চীনে প্রাদুর্ভাব এখন নেই বললেই চলে। দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃতের হার এখন প্রায় শূন্যের কোটায় রয়েছে। যেখান থেকে এই সংক্রমণের উৎপত্তি সেই চীনের উহানে মৃতের শতকরা হার দুই থেকে চার ভাগ। যা চীনের বাইরে এক শতাংশরও নিচে।

চীনে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ৩৪১ জনের মধ্য ৭৭ হাজার ৮৯২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজার ৩৪২ জন। বর্তমানে করোনার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মাত্র ১১০৭ জন মানুষ। চীনের বাইরেও আক্রান্ত সব দেশেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবায় ধীরে ধীরে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে বিভিন্ন জরিপ সংস্থা জানায়।

চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। এখন করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমেরিকা। সেখানে মোট ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪৮ জন মানুষ করোনা আক্রান্ত। আমেরিকায় মৃত ২৮ হাজার ৫৫৪ জন, কিন্তু সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৮ হাজার ৭০৮ জন। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত উভয় দিক দিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে দেশটি।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও হিসাবটা কিছুটা একই রকমের। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই মহাদেশটির। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক হারে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। আমেরিকার পর আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ইউরোপের দেশ স্পেন। দেশটিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৮২ হাজার ৮১৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭৪ হাজারের অধিক মানুষ। এখানে ১৯ হাজার ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপর ইউরোপের দেশ ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ১৫৫ জনে। দেশটিতে ২১ হাজার ৬৪৫ জন মারা গেছেন। ইতালিতে সুস্থ হয়েছেন ৩৮ হাজার ৯২ জন।

ইউরোপের দেশ জার্মানিতে মোট আক্রান্ত ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫৩ জন। মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৮০৪ জন ও সুস্থ হয়েছেন ৭৭ হাজার জন। ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সে রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৩ জন আর মৃতের সংখ্যা ১৭ হাজার ১৬৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩০ হাজার ৯৫৫ জন। আক্রান্তের সংখ্যায় ৬ষ্ঠ অবস্থানে এখন যুক্তরাজ্য। দেশটির আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮ হাজার ৪৭৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৮৬৮ জন।

চীনের পর এশিয়া মহাদেশের মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৭ হাজার ৯৯৫ আর মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৮৬৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৫২ হাজারের অধিক। চীনের প্রতিবেশী দেশ জাপানে এদিন পর্যন্ত ৮ হাজার ৬২৬ জন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৭৮ জন। সুস্থ হয়েছেন ৯০১ জন। প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় এদিন পর্যন্ত ১০ হাজার ৬১৩ জন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২২৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৭৫৭ জন।

বাংলাদেশে গতকাল পর্যন্ত ১৫৭২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। সুস্থ হয়েছেন ৪৯ জন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এদিন পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪২৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫১৩ জন।

বাংলাদেশ সময় গতকাল বিকেল ৬টায় জরিপ সংস্থা ওয়াল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৩ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ জন।

সুস্থ হচ্ছেন সব বয়সের মানুষ : বয়স্ক এবং অন্য শারীরিক সমস্যায় ভোগা মানুষকে বেশি আক্রান্ত করছে করোনাভাইরাস। তবে উহানের ১০০ বছর বয়সী আক্রান্ত এক ব্যক্তি সেরে ওঠেছেন। গত ৭ মার্চ তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়াও হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি আলঝেইমার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ হুবেইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

নিউটন ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে প্রভাব ফেলবে তা বলা হয়। গবেষণায় ৩৫ বছর বয়সী এক আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্য তথ্য পর্যালোচনা করা হয়, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তার প্রথম লক্ষণটি ছিল- শুকনো কাশি এবং তারপরে জ্বর। আক্রান্তের তৃতীয় দিন তিনি অসুস্থতাবোধ করেন। ষষ্ঠ দিনে তার ডায়রিয়া হয় এবং পেটে অস্বস্তিবোধ করেন। পরে তার বমি বমি ভাব হয় এবং বমি করেন। নবম দিনে তার নিউমোনিয়া দেখা দেয় এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। দ্বাদশ দিনের মধ্যে তার অবস্থার উন্নতি হয়েছিল এবং তার জ্বর কমতে থাকে। তবে তার সর্দি বেড়ে যায়। ১৪তম দিনে তার হালকা কাশি ছাড়া আর কোন উপসর্গ ছিল না। সমীক্ষা প্রকাশের সময় তিনি হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন।

অনেক আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়নি : বেশিরভাগ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর আসলে হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। সেক্ষেত্রে রোগীকে একা হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেই চিকিৎসা করানো যায়। অধিকাংশ রোগী ১৪ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রায় ৯০% করোনাভাইরাস রোগী হাসপাতালের চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ প্রায়ই তাদের জীবনের কোন না কোন সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়, সুস্থ হয়ে ওঠে এবং কয়েক মাস পরে আবার সংক্রমিত হতে পারে। সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সময় থেকে প্রকাশ পাওয়ার পর পুরোপুরি সুস্থ হতে ৩০ দিন সময় লাগে।

করোনার লক্ষণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে প্রথম দিন থেকে তৃতীয় দিন উপসর্গ হালকা জ্বর, তাপমাত্রা ১০০ থেকে ১০২। চতুর্থ দিনে এসে বাড়বে জ্বরের মাত্রা, বাড়তে থাকবে গলা ব্যথা। মাথাব্যথা, ক্ষুধা কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেখা দিবে ডায়রিয়া। পঞ্চম দিনে শরীরে দেখা দিবে অবসাদ, শুকনো কাশি আর মাংশপেশিতে ব্যথা শুরু হবে। এর পরদিনে জ্বর থাকবে ১০০ ডিগ্রির মতো, পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি, ডায়রিয়া বা বমি। সপ্তম দিনে এসব উপসর্গ আরও তীব্র হয়। অষ্টম ও নবম দিনে জ্বরের ও শ্বাসকষ্ট আরও তীব্র হয়ে নিউমোনিয়ায় রূপ নেবে। তবে অধিকাংশের ক্ষেত্রে তা পাঁচ কিংবা ছয় দিনের মাথায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। শরীরে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ কিংবা কিডনিজনিত সমস্যা থাকলেই কেবল মারাত্মক দিকে যায় রোগটি।

আরও খবর
সারাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ
জাতিসংঘ তহবিল গঠন না করলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে ডাব্লিউএফপি সংবাদ ডেস্ক করোনাভাইরাসের কারণে থমকে যাওয়া বিশ
আরও ৫০ লাখ দরিদ্র লোককে রেশনকার্ড দেয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী
বাদুরের দুই প্রজাতির মধ্যে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে
আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস
করোনা সৃষ্টি করছে দীর্ঘমেয়াদি প্রাণঘাতী সংকট
ইরানের ম্যাজিকাল ডিভাইসে ৫ সেকেন্ডে শনাক্ত হবে করোনা রোগী
মাঠে নামছে ‘দুর্যোগে আলোর গেরিলা’
আইইডিসিআরের ৬ কর্মী আক্রান্ত
এসএসসি ফল নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ হচ্ছে না
টিভি চ্যানেলের আরও ৪ জন করোনা আক্রান্ত
২৫০ ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ডিলার আটক
করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশি ১৩০০ ছাড়াল

শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল ২০২০ , ৪ বৈশাখ ১৪২৭, ২২ শাবান ১৪৪১

উদ্বেগ আতঙ্কে কিছুটা স্বস্তি

করোনায় মৃত্যুর চেয়ে সুস্থতার হার বেশি

সুস্থ ৭৯ শতাংশ মৃত্যু ২১ শতাংশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

করোনাভাইরাসে (কোভিড -১৯) বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। চীন থেকে ইতালি হয়ে আমেরিকা, বাংলাদেশের উপরও থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস। করোনা চিকিৎসায় এখনও কার্যকর ওষুধ বা ভ্যাকসিন মেলেনি। তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন ট্রায়াল চলছে। করোনাভাইরাসকে ঘিরে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক ক্রমেই বেড়ে চলেছে। নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের মাঝেও কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে মরণঘাতী এই ভাইরাসে মৃতের চেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার হার বেশি। দেশে দেশে যেভাবে দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, এতে সুস্থ হয়ে ওঠার হার বেশ আশাব্যাঞ্জক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শরীরে জটিলতা না থাকলে করোনা রোগী চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হচ্ছেন বলে জানান তারা। তাদের মতে, করোনাভাইরাস হঠাৎ করেই ভয়ানক হয়ে ওঠে না। আক্রান্তের প্রথম দিন থেকে লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে ছয়-সাত দিন লাগে মারাত্মক রূপ নিতে। তবে শরীরে অন্য কোন জটিলতা না থাকলে ছয়-সাত দিনে এমনিতেই সেরে যায় মরণঘাতী রোগটি। বিভিন্ন জরিপ সংস্থার হিসাব বলছে, করোনা মরণ ফাঁদ হলেও আক্রান্ত হওয়ার পরেও পাঁচ লাখের অধিক মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। প্রক্ষান্তরে মৃতের সংখ্যা সোয়া লাখ। বর্তমানে করোনায় সুস্থ ও মৃত্যু হার যথাক্রমে ৭৯ শতাংশ ও ২১ শতাংশ।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ করোনা রোগী চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যাচ্ছেন। তবে শরীরে অন্য কোন জটিলতা থাকলে ভাইরাসটি সমস্যা সৃষ্টি করে। এমন রোগীদের আইসিইউতে সাপোর্ট দিতে হয়। আর যাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, তাদেরও তেমন একটা ওষুধ লাগে না বলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। চীনে প্রাদুর্ভাব এখন নেই বললেই চলে। দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃতের হার এখন প্রায় শূন্যের কোটায় রয়েছে। যেখান থেকে এই সংক্রমণের উৎপত্তি সেই চীনের উহানে মৃতের শতকরা হার দুই থেকে চার ভাগ। যা চীনের বাইরে এক শতাংশরও নিচে।

চীনে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ৩৪১ জনের মধ্য ৭৭ হাজার ৮৯২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজার ৩৪২ জন। বর্তমানে করোনার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মাত্র ১১০৭ জন মানুষ। চীনের বাইরেও আক্রান্ত সব দেশেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবায় ধীরে ধীরে রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে বিভিন্ন জরিপ সংস্থা জানায়।

চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। এখন করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আমেরিকা। সেখানে মোট ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪৮ জন মানুষ করোনা আক্রান্ত। আমেরিকায় মৃত ২৮ হাজার ৫৫৪ জন, কিন্তু সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৮ হাজার ৭০৮ জন। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত উভয় দিক দিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে দেশটি।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও হিসাবটা কিছুটা একই রকমের। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই মহাদেশটির। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক হারে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। আমেরিকার পর আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ইউরোপের দেশ স্পেন। দেশটিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৮২ হাজার ৮১৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭৪ হাজারের অধিক মানুষ। এখানে ১৯ হাজার ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপর ইউরোপের দেশ ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ১৫৫ জনে। দেশটিতে ২১ হাজার ৬৪৫ জন মারা গেছেন। ইতালিতে সুস্থ হয়েছেন ৩৮ হাজার ৯২ জন।

ইউরোপের দেশ জার্মানিতে মোট আক্রান্ত ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫৩ জন। মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৮০৪ জন ও সুস্থ হয়েছেন ৭৭ হাজার জন। ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সে রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৩ জন আর মৃতের সংখ্যা ১৭ হাজার ১৬৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩০ হাজার ৯৫৫ জন। আক্রান্তের সংখ্যায় ৬ষ্ঠ অবস্থানে এখন যুক্তরাজ্য। দেশটির আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮ হাজার ৪৭৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৮৬৮ জন।

চীনের পর এশিয়া মহাদেশের মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৭ হাজার ৯৯৫ আর মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৮৬৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৫২ হাজারের অধিক। চীনের প্রতিবেশী দেশ জাপানে এদিন পর্যন্ত ৮ হাজার ৬২৬ জন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৭৮ জন। সুস্থ হয়েছেন ৯০১ জন। প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় এদিন পর্যন্ত ১০ হাজার ৬১৩ জন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২২৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৭৫৭ জন।

বাংলাদেশে গতকাল পর্যন্ত ১৫৭২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। সুস্থ হয়েছেন ৪৯ জন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এদিন পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪২৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫১৩ জন।

বাংলাদেশ সময় গতকাল বিকেল ৬টায় জরিপ সংস্থা ওয়াল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৩ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ জন।

সুস্থ হচ্ছেন সব বয়সের মানুষ : বয়স্ক এবং অন্য শারীরিক সমস্যায় ভোগা মানুষকে বেশি আক্রান্ত করছে করোনাভাইরাস। তবে উহানের ১০০ বছর বয়সী আক্রান্ত এক ব্যক্তি সেরে ওঠেছেন। গত ৭ মার্চ তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়াও হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি আলঝেইমার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ হুবেইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

নিউটন ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে প্রভাব ফেলবে তা বলা হয়। গবেষণায় ৩৫ বছর বয়সী এক আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্য তথ্য পর্যালোচনা করা হয়, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তার প্রথম লক্ষণটি ছিল- শুকনো কাশি এবং তারপরে জ্বর। আক্রান্তের তৃতীয় দিন তিনি অসুস্থতাবোধ করেন। ষষ্ঠ দিনে তার ডায়রিয়া হয় এবং পেটে অস্বস্তিবোধ করেন। পরে তার বমি বমি ভাব হয় এবং বমি করেন। নবম দিনে তার নিউমোনিয়া দেখা দেয় এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। দ্বাদশ দিনের মধ্যে তার অবস্থার উন্নতি হয়েছিল এবং তার জ্বর কমতে থাকে। তবে তার সর্দি বেড়ে যায়। ১৪তম দিনে তার হালকা কাশি ছাড়া আর কোন উপসর্গ ছিল না। সমীক্ষা প্রকাশের সময় তিনি হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন।

অনেক আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়নি : বেশিরভাগ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর আসলে হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। সেক্ষেত্রে রোগীকে একা হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেই চিকিৎসা করানো যায়। অধিকাংশ রোগী ১৪ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রায় ৯০% করোনাভাইরাস রোগী হাসপাতালের চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে ওঠেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ প্রায়ই তাদের জীবনের কোন না কোন সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়, সুস্থ হয়ে ওঠে এবং কয়েক মাস পরে আবার সংক্রমিত হতে পারে। সাধারণত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সময় থেকে প্রকাশ পাওয়ার পর পুরোপুরি সুস্থ হতে ৩০ দিন সময় লাগে।

করোনার লক্ষণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে প্রথম দিন থেকে তৃতীয় দিন উপসর্গ হালকা জ্বর, তাপমাত্রা ১০০ থেকে ১০২। চতুর্থ দিনে এসে বাড়বে জ্বরের মাত্রা, বাড়তে থাকবে গলা ব্যথা। মাথাব্যথা, ক্ষুধা কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেখা দিবে ডায়রিয়া। পঞ্চম দিনে শরীরে দেখা দিবে অবসাদ, শুকনো কাশি আর মাংশপেশিতে ব্যথা শুরু হবে। এর পরদিনে জ্বর থাকবে ১০০ ডিগ্রির মতো, পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি, ডায়রিয়া বা বমি। সপ্তম দিনে এসব উপসর্গ আরও তীব্র হয়। অষ্টম ও নবম দিনে জ্বরের ও শ্বাসকষ্ট আরও তীব্র হয়ে নিউমোনিয়ায় রূপ নেবে। তবে অধিকাংশের ক্ষেত্রে তা পাঁচ কিংবা ছয় দিনের মাথায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। শরীরে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ কিংবা কিডনিজনিত সমস্যা থাকলেই কেবল মারাত্মক দিকে যায় রোগটি।